বিড়াল নিয়ে হাদিস, বিড়াল নিয়ে ইসলামিক উক্তি

বিড়াল নিয়ে হাদিস

ইসলামে বিড়াল পালা জায়েজ কিনা বা বিড়াল সম্পর্কে হাদিস আছে কিনা এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা বিড়াল নিয়ে হাদিস বা বিড়াল নিয়ে ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

বিড়াল নিয়ে হাদিস

Untitled design 2023 11 07T140041.826

 

বিড়াল সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত আছ্। নিচে বিড়াল নিয়ে হাদিস বর্ননা করা হল-

১। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন- “বিড়াল কখনো নামাজ বিনষ্ট করে না কারণ তারা ঘরের অন্তর্ভুক্ত”

২। এক হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি বলেন- “ইমাম কুতুবী রাহমাতুল্লাহি বলেছেন এই হাদিস থেকে বিড়াল পালা এবং বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয় যদি তাকে খানাপিনা দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (হাদিস নাম্বার ৬/ ৪১২)

৩। পশু পাখি সহ আল্লাহর সৃষ্টি করা যে কোন জীবের প্রতি দয়া করলে মহান আল্লাহ তা’আলা অনেক খুশি হন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত- “এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন আমাদের রাসূলের এক আদরের বিড়াল ছিল। একদিন তার পবিত্র পরিচ্ছেদের একটা একাংশে বিড়াল পরম আনন্দে ঘুমিয়ে ছিল। হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাকে টেনে তোলেননি।

পোশাক ঝাড়া দেননি অথবা লাথি মেরে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেননি। ঘুম ভেঙ্গে যাবে ভেবে পাছে বিড়ালটির কষ্ট হয় নাকি তাই তার গায়ে হাত বুলিয়েও ডাকেননি। তিনি যা করেছেন তা কেউ কল্পনা করতে পারে না। আলতো করে ঘুমন্ত বিড়ালটি সমপরিমাণ জায়গায় রেখে বাকি কাপড়টুকু কেটে ফেলেছিলেন। ছেড়া পোশাকটি গায়ে দিয়ে তিনি নামাজের দিকে রওনা দিলেন।

৪। বিড়াল পোষে তাড়াও ইদূর তবে ময়লা হবে দূর। – গাজীবর রহমান

৫। হাদিসে বর্ণিত আছে এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আযাব দেয়া হয়েছে। কারণ বিড়াল কে আটকে রাখায় সেটি মারা গিয়েছিল। ফলে সে জাহান্নামি হয়েছে। বিড়াল কে আটকে রেখে খাবার পানি ও দেয়নি আবার ছেড়েও দেয়নি যাতে করে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। (মুসলিম হাদিস নাম্বার ৫৭৪৫)

৬। পশুপাখি সহ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে মহান আল্লাহ তাআলা তার উপর দয়া করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন- “দয়াবানদের উপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো তাহলে জিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ৪৯৪১)

৭। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসূল পশু পাখিদের মধ্যেও কি আমাদের জন্য সোয়াব রয়েছে। তখন রাসুল সাঃ বললেন প্রতিটি তাজা কলিজায় সওয়াব রয়েছে। (বুখারি হাদিস ৩৪৬৭)

৮। এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম নিজের ওযুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করানোর কথা ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

৯। হযরত কাশপ  ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু বলেন আবু কাদাহ রাদিয়াল্লাহু আমার কাছে আগমন করলেন আমি তার জন্য পানি ভর্তি অযুর পানির পাত্র উপস্থিত করলাম। এ সময় একটি বিড়াল তা থেকে পানি পান করল। বিড়াল টির জন্য পাত্রটি কাত করে দিলেন যাতে সে আরাম করে পানি পান করতে পারে।

কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু বলেন তখন কাশফ রাদিয়াল্লাহু বলেন তখন রাদিয়াল্লাহু দেখলেন আমি তার থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তিনি বললেন হে ভাতিজী তুমি যা আশ্চর্য বোধ করছ? আমি বললাম হ্যাঁ । তখন তিনি বললেন আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন বিড়াল অপবিত্র নয়। এটা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী এবং বিচরণকারীনি। (হাদিস নাম্বার ৩৪১)

১০। রাসুলের প্রিয় সাহাবী আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু বিড়াল পালন খুব পছন্দ করতেন। তিনি জামার ভিতরে পোসা বিড়াল নিয়ে ঘোরাফেরা করতেন। একদিন তার জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়ালের ছানা নিয়ে রাসুল সালাম এর দরবারে উপস্থিত হন। সেই সময় বেড়াল ছানা সবার সামনে বেরিয়ে পড়ল।

এ অবস্থা দেখে রাসূল রসিকতা করে বললেন হে আবু হুরায়রা অর্থাৎ হে বিড়ালের পিতা। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের নামটা বদলে ফেলবেন তাই তার আসল নাম আব্দুর রহমান ঢাকা পড়ে তিনি হয়ে যান আবু হুরায়রা। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ও তাকে এই নামে ডাকতেন।

ইসলামে বিড়াল পালন

অনেকেই ইসলামী বিড়াল পালা হারাম নাকি হালাল তা জানেন না। তবে আল্লাহ তা’আলা বিড়ালকে একটি চতুষ্পদ পানি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রাণী খুব একটা মানুষকে আক্রমণ করে না এবং মানুষের জন্য কোন দিক দিয়ে ক্ষতি করা নয় বরং বিভিন্নভাবে মানুষের উপকার করে।

কুকুরের সাথে বিড়ালের অনেক পার্থক্য। কুকুর নোংরায় থাকে কিন্তু বিড়াল খুবই পরিচ্ছন্ন থাকে কখনো নোংরা খাবার খায় কিন্তু বিড়াল নোংরা খাবার পছন্দ করে না। বিড়াল লালন পালনে ইসলামিক কোন নিষেধ নেই। কারণ বিড়াল কোন নাপাক প্রাণী নয়। বিড়ালের মুখ লাগানো পানি বা খাবার খাওয়াও জায়েজ।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালাম বলেন বিড়াল কখনো নামাজ বিনষ্ট করে না। কারণ তারা ঘরের অন্তর্ভুক্ত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রিয় প্রাণী ছিল বিড়াল। তিনি বিড়ালকে খুব পছন্দ করতেন বলেই তার নাম আবু হুরায়রা রাখা হয়েছে। আবু হুরাইয়ার অর্থ বিড়ালের পিতা।

বিড়াল সম্পর্কে ইসলামিক উক্তি

Untitled design 2023 11 07T140212.036

বিড়াল নিয়ে ইসলামিক উক্তি হল-

.১। ভালবেসে বিড়াল পুষি নবীর সুন্নত পালন করি।

২। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন বিড়াল পোষা ভালো কাজ।

৩। মহানবী সাঃ বলেছেন বিড়াল একটি পরিচ্ছন্ন নিরীহ প্রাণী।

৪। বিড়ালের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি আছে।

৫। নবী করিম সাঃ যেসব প্রাণীদের খুব বেশি ভালোবাসতেন তাদের মধ্যে বিড়াল অন্যতম।

৬। ইসলামিক দৃষ্টিতে বিড়াল পোষা অনেক ভালো কাজ কারণ আল্লাহ তা’আলা বিড়ালকে সৃষ্টি করেছেন।

৭। বিড়াল পরিষ্কার থাকে এবং বিড়ালকে অন্যান্য প্রাণীদের চাইতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন প্রাণীও বলা হয়।

৮। বিড়াল কাউকে কামড়ায় না বা হিংস্র প্রাণী নয় তাই বিড়ালকে কুকুরের সাথে কখনো তুলনা করা যাবে না।

৯। বিড়াল কোন নোংরা খাবার খায় না সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ভালবাসে আর ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ভালোবাসে এমন প্রাণী এবং মানুষদের ভালোবাসে।

বাড়িতে বিড়াল পালনের বিধান

ইসলামিক বিশারদ রা বলেছেন বিড়াল পালা বৈধ। তবে তাকে কোন ধরনের কষ্ট বা দুঃখ দেওয়া যাবে না। বিড়াল পালতে চাইলে অবশ্যই তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য এবং পানীয় দিতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ অনুগ্রহ দেখাতে হবে। মসজিদে হারাম কিংবা মসজিদে নববীতে প্রচুর বিড়াল প্রবেশ করতে দেখা যায়।

মুসল্লিরাও তাদেরকে পানি এবং খাবার দিয়ে থাকেন। রাসূল সাঃ বলেছেন এক মহিলাকে বিড়ালের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে আজাব দেয়া হয়। সে বিড়ালকে বন্দী করে রাখে অবস্থায় মারা যায় এমনকি বন্দি করে রেখে তাকে পানি দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।

বিড়াল কেনাবেচা সম্পর্কে হাদিস

বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করা হারাম। বিড়াল এমন একটি প্রাণী যার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না এবং বন্দি করাও নাজায়েজ। এজন্য বিড়াল ব্যবসায়ী পণ্য নয়। কারণ বেড়াল মানুষের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে রাসূল সাল্লালাহ সালামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ধমক দিয়েছেন।

আবু জুবায়ের রহমতুল্লাহি বলেন আমি সাবের রাদিয়াল্লাহু এর কাছে কুকুর এবং বিড়াল কেনাবেচার করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। (মুসলিম হাদিস নাম্বার ১৫৬৯)। জাবির ইবনে আব্দুল্লা রাঃ বলেন রাসুল সাঃ এবং বিড়ালের ক্রয় বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

বিড়াল স্পর্শ করার বিধান

মক্কায় এবং মসজিদে নববী সহ বিভিন্ন মসজিদের বিড়াল প্রবেশ করে। এরাই ইবাদতকারীর পাশে ঘুমায় মানুষ আদর ভালোবাসায় গড়ায় অদ্ভুত এই প্রাণী জড়িয়ে আছে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী বিড়ালের প্রস্রাব নাপাক অর্থাৎ যদি কাপড়ে বা জায়নামাজে দিরহাম বা তার চেয়েও বেশি পরিমাণ বিড়ালের প্রস্রাব লেগে যায় তাহলে সে জায়নামাজে বা কাপড়ে নামাজ আদায় করা নাজায়েজ।

Untitled design 2023 11 07T140112.018

বিড়াল নিয়ে হাদিস

আজকে আমরা বিড়াল নিয়ে হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply