নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

জন্মের পর নবজাতকের যেসব রোগ হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো জন্ডিস। নবজাতকের জন্ডিস হলে করণীয় কি বা নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়েরা কি কি করবেন সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা নবজাতকের জন্ডিস হলে করণীয় কি সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।

আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

জন্ডিস কি ?

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

জন্ডিস একটি ইংরেজি শব্দ যা ইক্টেরাস নামেও পরিচিত। এটি আসলে কোন রোগ নয়। এটি একটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুপিনের মাত্রা খুব বেড়ে যায় যার ফলে ত্বক শুষ্ক এবং চোখের সাদা অংশ এবং অন্যান্য মিউকাজ ঝিল্লি হলুদ বা হালকা হলুদ রঙের হয়ে যায়।

রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব তখন ১.২ এমজি বা ডি এল এর নিচে থাকে। জন্ডিস হলে তখন ৩ এম জি এর বেশি হয়ে যায়। জন্ডিস শব্দটির ফরাসি শব্দ jaunisse  থেকে এসেছে। যার অর্থ হলুদ আ ভাবা হলুদের মত। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকা গুলো একটা সময় স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙ্গে গিয়ে বেলিরোবিন তৈরি করে থাকে যা পরবর্তী সময়ে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তর সাথে পিত্তনালী মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে ঢুকে যায়।

অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমে যে কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় এবং জন্ডিস দেখা দেয়।

নবজাতকের জন্ডিসের ধরন

সাধারণত নবজাতকের জন্ডিস দুই ধরনের দেখা যায়।

১। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বা সাধারণ জন্ডিস

২। ক্লিনিক্যাল জন্ডিস

এই ক্লিনিক্যাল জন্ডিসও আবার তিন ধরনের-

১। জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে জন্ডিস হলে বুঝতে হবে মা এবং নবজাতকের রক্তের ভিন্নতাজনিত সমস্যা রয়েছে। মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ে কোন ইনফেকশন এর কারণে এই জন্ডিস হতে পারে।

২। জন্মের ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হলে বুঝতে হবে যদি প্রিম্যাচিউর বা অপরিণতা শিশু হয়ে থাকে তাহলে জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট এসিডেসিস স্থায়ী হাইপোথারমিয়া বা শরীরে তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া কোন শিশুর ইনফেকশন ইত্যাদি থাকে তাহলে জন্ডিস হতে পারে।

৩। আর যদি জন্মের ৭২ ঘণ্টার পর হয় তাহলে বুঝতে হবে সেফটি সেমি এবার রক্তের ইনফেকশন ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস বা মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে জন্ডিস হাইপোথাইরয়েড বিক্রিইয়া ইত্যাদি সংক্রমণের কারণে জন্ডিস হয়েছে।

নবজাতকের জন্ডিস কেন হয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি সেসব সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করব। তবে তার আগে নবজাতকের জন্ডিস কেন হয় সেসব সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। নিচে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার কারণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো-

  • কম ওজনে ভূমিষ্ঠ শিশুদের জন্ডিস বেশি হয়
  • সময়ের আগে জন্ম নিলেও শিশুদের জন্ডিস হতে লক্ষ্য করা যায়
  • মা এবং শিশুর রক্তের গ্রুপ আলাদা হলে
  • শিশু সঠিক সময় পর্যাপ্ত বুকের দুধ না পেলে
  • অনেক সময় একই ব্রেস্ট ফিডিং জন্ডিসও দেখা দিতে পারে
  • মায়ের গর্ভাবস্থায় কোন রোগের সংক্রমণ থাকলে
  • শিশুর জন্মগত কোন রোগে আক্রান্ত হলে
  • জন্মের পর শিশুর রক্ত সংক্রমণ বা সেফটিসেমিয়া দেখা দিলে
  • জন্মগতভাবে শিশুর পিত্তথলিতে কোন সমস্যা থাকলে
  • এনজাইনের ঘাটতি শিশুর রক্ত সংক্রমণ থাকলে
  • জেনেটিক সমস্যা থাকলে

নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ

নবজাতকের জন্ডিস হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় তা আমরা নিচে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন-

  • শিশুর হাতের তালু বা পায়ের তালু হলুদ হয়ে যাওয়া
  • শিশুর মুখ হাত বুক পা পিঠের ওপর হলুদ হতে দেখা
  • শিশুর পায়খানার রং হালকা সবুজ হওয়া
  • শিশুর গায়ের রং বারবার পরিবর্তন হওয়া
  • শিশুর বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করলে মাত্র কমে যাওয়া
  • শিশুর প্রস্রাব একেবারে হলুদ হয়ে বাচ্চা কান্নাকাটি করা
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • দুধ খেতে না চাওয়া
  • নড়াচড়া কম করা
  • শরীরে তীব্র জ্বর থাকা
  • আবার শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারে
  • কোন কোন ক্ষেত্রে খিচুনিও দেখা যায়

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি সেসব সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো-

সাধারণত নবজাতকের শরীরের বিলির বিভিন্ন মাত্রা বেড়ে গেলে বা নবজাতকের জন্ডিস হলে শিশুকে ফটো থেরাপি বা আলোক চিকিৎসা দেয়া হয়। এর উপকারিতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করেন। তবে প্রতিদিন সকালে নবজাতককে আধাঘন্টা করে রোদে রাখতে বলা হয়।

সকালের ছাড়া অন্যান্য সময় শিশুকে রোদে রাখলে শিশু সূর্যের আলো শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই সকালের দিকে শিশুকে আধা ঘন্টার মত রোদে রাখতে হবে।

নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসা

Untitled design 2023 11 16T143052.403

সাধারণত নবজাতকের মাত্রা এবং জন্ডিসের কারণের উপর নির্ভর করে চিকিত্তসা দেয়া হয়। হালকা জন্ডিস এক থেকে দুই সপ্তাহ পরেই সেরে যায় আর ব্রেস্ট ফিডিং জন্ডিস আক্রান্ত হলে তাদের মায়েদের বেশি করে দুধ পান করানো কথা বলা হয়।

তরল সাপ্লিমেন্টারি- ডিহাইড্রেশনে ফলে উচ্চমাত্রার বিলিরুবিন হয় তাই ডাক্তাররা বাচ্চার বুকের দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে বা তরল সাপ্লিমেন্টারি দেওয়ার পরামর্শ দেন। অথবা বাচ্চার মাকে বেশি বেশি পানি পান করার কথা বলেন।

ফটো থেরাপি- ফটো থেরাপি বাচ্চাকে বিলিয়ুবনের মাত্রা বেড়ে গেলে দেয়া হয়। বাচ্চাদের কম পোশাকে আলোর নিচে শুইয়ে দেয়া হয় যাতে করে ত্বক খালি থাকে এবং আলোর মাত্রা ত্বকে লাগে। এই আলো বিলিরুবিন কোনানো পদার্থের রূপান্তরিত করা যায় সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

এক্সচেঞ্জ ব্লাড ট্রান্সফিউশন- ফটো থেরাপি যখন কাজ করে না তখন এই চিকিৎসার পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। এতে করে শিশুর বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে শিশুর রক্ত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

আইভিআইজি- নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি তখনই ব্যবহার করা হয় যখন সেসব শিশুদের মায়ের রক্তের গ্রুপের সাথে মেলে না। আই ভি আই জি শিরা গুলোতে প্রেরণ করা হয় এবং লোহিত রক্তকণিকা এন্টিবডি গুলো ক্রিয়াকে অবরুদ্ধ করে।

জন্ডিস কমাতে বুকের দুধের গুরুত্ব

শুরুতেই নবজাতক জন্মের পরবর্তী সময় যদি আর খুব ভালোভাবে বুকের দুধ পান করানো যায় তাহলে নবজাতকের সাধারণত জন্ডিস হয় না। তবে এক্ষেত্রে জন্ডিসের কারনে অনেক এ বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন বা বুকের দুধ খাওয়াবেন কিনা সে সম্পর্কে চিন্তিত থাকেন।

মূলত এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কোন ঝুঁকিরর বিষয় যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। তাহলেই জন্ডিস খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়

উপরে আমরা নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছছি। তবে জন্ডিস যাতে না হয় বা জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয় কি তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • হেপাটাইটিসের এবং ই খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য এবং পানি খেতে হবে।
  • শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই স্ক্রিনিং করে নিতে হবে
  • ডিসপোসেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই দরকার
  • মধ্যপান ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে
  • কলকারখানার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে
  • নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন
  • তাছাড়া ব্যবহার কিন্তু ইনজেকশন কিংবা নাক কান পোড়ানোর জন্য ব্যবহার করা সুই ব্যবহার করবেন না।
  • যারা সেলুনের সেভ করেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা খুর যেন আবারও ব্যবহার করা না হয়।
  • নিরাপদ যৌন মিলন হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশঙ্কা মুক্ত থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বিয়ের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
  • গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই হেপাটাইটিস বি সি স্ক্রিনিং করতে হবে
  • নব্তজাকের জন্মের পরপরই হেপাটাইটিস বি টিকা জিরো ডোজ দিতে হবে
  • মায়ের বি স্ক্রিন নেগেটিভ হলেও আর যদি পজেটিভ হয় সে ক্ষেত্রে জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নবজাতকের হেপাটাইটিস বি পাশাপাশিপাটাইটিস বি এমইউন ও গ্লুকুইন দিতে হবে

নবজাতকের জন্ডিস সম্পর্কে সতর্কতা

স্বাভাবিকভাবে নবজাতকের জন্ডিস হলে ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু জন্মে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই জন্ডিস দেখা দিলে ৭ বা ১০ দিন পরেও জন্ডিস ভালো না হলে শিশু একেবারে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে বা বুকের দুধ খাওয়া কমিয়ে দিলে জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ অতিরিক্ত থাকলে, বিলিভেনের মাত্রা দ্রুত বাট থাকলে বা শিশুর আগে মৃত্যুবরণের ইতিহাস থাকলে অবশ্যই দেরি না করে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয়

আজকে আমরা নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে খাও খাও আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতিশীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply