বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায়

বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায়

সাধারণত শিশুর সম্পূর্ণ মেধাবিকাশ হয় ১ থেকে ৫ বছরের সময়ের মাঝে। এসময় বাচ্চাকে তার মেধাবিকাশে এবং  বাচ্চাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হয়। অনেক সময় বাবা মায়েরা বাচ্চাকে হাতে মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা টিভি তে কার্টুন দেখানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এর ফলে ধীরে ধীরে বাচ্চার রেসপন্স করা বা কোন জিনিসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

তাই অনেকেই বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য গুগল সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি অভিভাবকদের জন্য অনেক কাজে লাগবে।

আরো পড়ুন – বাচ্চাদের গলায় মাছের কাঁটা বের করার উপায়

ছয় মাস থেকে বাচ্চাদের মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়

অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগ থাকে সন্তান একদমই অমনোযোগী। কোন কথা বলে রেসপন্স করেনা কোন কথা মনোযোগ সহকারে শুনে না। অথবা কোন কাজ মনোযোগ সহকারে করেনা। শিশুরা আসলে খুবই চঞ্চল হয় তাদের এক জায়গায় বসানো খুবই মুশকিল। এছাড়াও বাচ্চাদের মেধাবিকাশে বাচ্চাদের মনোযোগী হওয়া খুবই প্রয়োজন।

গল্প বলা- ছোট থেকে বাচ্চাদের গল্পের বই পড়ার অভ্যেস করা উচিত। শোয়ার আগে কিছুক্ষণ গল্প বলার জন্য সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে। গল্প শুনতে বাচ্চারা খুবই আগ্রহী হয়। গল্পের মাঝে যখন কথা বলতে পারে বাচ্চাকে কথা বলার বা প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে করে তার গল্প বা শোনার প্রতি প্রবণতা তৈরি হয় এবং মনোযোগ বাড়বে।

খেলার ছলে কথা শোনানো– বাচ্চাকে যেকোনো কথা মানাতে হলে অথবা নিজের কথার প্রেক্ষিতে রেসপন্স করতে হলে তাকে কখনো ধমকানো যাবে না। তাকে খেলার ছলে সব সময় আঁকতে বসিয়ে দিতে হবে। বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই বই নিয়ে খেলাধুলা করলে এবং ছবি আঁকতে বসলে বাচ্চাদের মনোযোগ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সন্তানকে মাঝে মাঝে তার ইচ্ছামত খেলা খেলতে দিতে হবে এবং খেলার ছলে আপনাকে ওর সাথে মিশে যেতে হবে।

ইনডোর গেমস- বাচ্চাদের প্রচুর মনোযোগ বাড়ানোর ইনডোর গেমস বা বই পাওয়া যায়। যা বাচ্চার মনোযোগের স্কেল বাড়ায় যেমন নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি ভোট বিল্ডিং, ব্লক ইত্যাদি। স্মার্টফোনের বদলে এসব খেলা হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

বাচ্চাকে বকাঝকা করা যাবে না- বাচ্চাদের বকাঝকা করলে বাচ্চারা মূলত কথা শুনতে চায়না। অর্থাৎ বাচ্চারা দুষ্টুমি করবে এতে করে বাচ্চাকে কোনভাবে না বকে বাচ্চাকে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। এতে করে সে আপনার কথা সব সময় শুনতে চাইবে বাচ্চাকে বকাঝকা করলে বাচ্চা তার কথা শুনতে চায় না। কারণ বাচ্চারা আদর প্রিয় হয় তাই বাচ্চাকে সব সময় সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।

মা-বাবার দায়িত্ব- বাচ্চাদের সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলুন ওদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ওরা কি পছন্দ করে সেসব কাজ ওদেরকে করতে দিন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওদেরকে ভুল কাজ করতে দিন। এতে করে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং বাবা মায়ের কথা শুনবে।

সুস্থ পরিবেশ- বাচ্চাকে সুস্থ পরিবেশ দিতে হবে অর্থাৎ বার্তা বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া করা যাবে না। কিংবা বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে। বাচ্চাদের সামনে টেনশন করা যাবেনা আতঙ্কে ভুগবেন না এতে করে বাচ্চার মনে ভাব চেপে থাকার চেষ্টা করবে। বাচ্চা মনের ভাব প্রকাশ না করলে বাচ্চা মনোযোগী হয়ে ওঠে না।

বাচ্চাকে সময় দেওয়া- বাচ্চারা যখন ছয় মাসের পরবর্তী সময়ে কিছুটা বুঝতে শিখে তখন থেকে খেলতে বা বাচ্চার সাথে কথা বলা বা বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা উচিত। এতে করে বাচ্চা এবং বাবা-মার মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয় এবং বাচ্চা তাদের কথার প্রতি মনোযোগী হয়।

আরো পড়ুন – বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করনীয়

বাচ্চাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করার উপায়

বাচ্চাদের পড়ার রুটিন তৈরি করুন- শুরুতেই একটা বাচ্চা লাইফের রুটিন আনা খুবই জরুরী। সেজন্য ধীরে ধীরে বাচ্চাকে খেলতে খেলতে পড়া শুরু করতে হবে এবং প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খেলার ছলে পড়তে বসার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে এবং সেই সাথে বাচ্চাকে দিয়ে রুটিন ফলো করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হবে। তাকে জানতে হবে তার কাছ থেকে তার কোন সময় পড়তে বেশি ভালো লাগে।

বাচ্চাকে কখনো জোর করা যাবে না এতে করে তার পড়াশোনায় মনোযোগ আসবে না। তার পছন্দের সময় অনুসারে রুটিন করুন এবং সেই টাইমেই তাকে পড়তে বসান। প্রথমদিকে বাচ্চা না বসলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার শখে পরিণত হবে।

সহজ পড়া দিয়ে শুরু করা- বাচ্চার পড়া শুরু করতে হবে সহজ বিষয় দিয়ে যা সে সবচেয়ে পছন্দ করে বা যা সে খুব ভালো পারে। তাই তাকে এমন ভাবে পড়াতে হবে যাতে তার পরার প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং তার মনে হয় সেই সবই পারে। আস্তে আস্তে নতুন পরা এবং কঠিন পড়া শুরু করতে হবে তাহলে বাচ্চার মনোযোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।

বাচ্চাদের শুধু বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ না রাখা- বাচ্চাদের কোন কিছু শিখাতে হলে শুধু বই দিয়ে শিখানো যায় না। কেননা বাচ্চারা খেলার ছলে মজা করে পড়তে পছন্দ করে তাই শুধুমাত্র বই নিয়ে পড়লে তাদের পড়ার প্রতি মনোযোগ ধীরে ধীরে কমে যাবে। তাই বাচ্চাদের পড়ার শুরু করতে হলে প্রথমে মায়েদের বা অভিভাবকদের খেলার ছলে কখনো ছবি আঁকা কখনো গান করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পড়ার প্রতি আসক্তি তৈরি করতে হবে।

সঠিক স্থান নির্বাচন করা- পড়াশোনার জন্য এমন কোন জায়গা নির্ধারণ করা উচিত নয় যেখানে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটতে পারে অর্থাৎ পড়ার টেবিলে এমন স্থানে বসাতে হবে যেখানে রেডিও টিভি ও মোবাইলের মতো জিনিস নেই। যা বাচ্চার মনোযোগ নষ্ট করার উপায় বা বাচ্চার খেলার জিনিসপত্র আশেপাশে রাখবেন না এতে করে বাচ্চার পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে এবং অন্যান্য দিকে তার মনোযোগ চলে যাবে।

উৎসাহ এবং প্রশংসা করা- বাচ্চাকে পড়ার মাঝে মাঝে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। ছোট বাচ্চারা উৎসাহ পেলে এবং প্রশংসা পেলে পড়াশোনা আরো আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই তাদের মাঝে মাঝে উৎসাহ দিতে ভুলবেন না তাদের সামান্য উন্নতিতে ও প্রশংসা করুন এবং কোন কিছু না পারলে হতাশ না হয়ে থাকে বারবার ধীরে ধীরে বোঝানোর চেষ্টা করুন।

সময় নির্ধারণ করুন- বাচ্চাদের একাধারে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা বসিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে করে বাচ্চার একাধারে পড়তে ভালো লাগে না এবং এটা তার কাছে জোরপূর্বক মনে হয়। তাই বাচ্চাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায় আচাদের পড়ার জন্য তাদের পছন্দমত সময় নির্ধারণ করতে হবে অর্থাৎ এক ঘন্টা পড়াশোনা করে তাদেরকে কিছুক্ষণের জন্য বিরোতি বা খেলার সময় দিতে হবে তাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে।

খেলার সময় দিন- বাচ্চাদের অবশ্যই খেলার সময় দিতে হবে কারণ খেলাধুলা করলে বাচ্চাদের মনে সংযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সঠিকভাবে মেধাবিকাশ হয়। স্কুলের সময়টা যদি মর্নিং হয় তাহলে তাকে পড়তে বসাবেন না স্কুল থেকে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে দিবেন এরপর হোমওয়ার্ক করতে দেবেন এবং বিকালে কিছুক্ষণ খেলতে দিবেন। খেললে বাচ্চাদের মন প্রফুল্ল তা বৃদ্ধি পায় এতে করে সে পড়ার প্রতি আরো মনোযোগী হয়।

বাচ্চার পাশে বসে বই পড়া- বাচ্চার পাশে বসে যদি আপনিও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে বাচ্চা বেশি পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়। কারণ অনেক মায়েদের দেখা যায় বাচ্চাদের পড়তে বসে মোবাইল টিপছে। এতে করে বাচ্চার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে তার মনোযোগ থাকে মোবাইল কার্টুন বা বিভিন্ন জিনিসের উপর । কিন্তু বাচ্চাকে পড়তে বসে যদি নিজে একটা বই নিয়ে বসেন তাহলে বাচ্চা দেখবে তার মা-বাবা পড়াশোনা করছে তাহলে তার পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

পড়া শেষে বাচ্চাকে পছন্দের খাবার দিন- বাচ্চাকে পড়তে বসে বলুন যে নিজের প্রতিদিনের পড়া কমপ্লিট করলে তাহলে তোমার পছন্দের খাবার বানিয়ে দেয়া হবে। এতে করে তারপর আর উৎসাহ বাড়বে এবং তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করবে।এ ভাবে প্রতিদিন তাকে কিছু ছোটখাটো পছন্দের খাবার বানিয়ে দিতে পারেন।

বাচ্চাকে নিয়মিত স্কুলে যেতে দিন- বাচ্চাকে প্রতিদিন স্কুলে যেতে উৎসাহ দিতে হবে। বাচ্চা প্রতিদিন স্কুলে গেলে তার পড়ার একঘেয়েমি দূর হবে। বন্ধুদের সাথে একস না একসাথে পড়াশোনা করলে তারা আগ্রহ বাড়বে এবং কম্পিটিশন বুঝতে পারবে। এতে করে সে নিজ থেকে পড়া পড়তে চাইবে।

বাচ্চাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া- বাচ্চাকে নিয়ে মাঝে মাঝে এমন পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যাওয়া উচিৎ যেখানে বাচ্চারা আমাদের সাথে অনেক কিছু শিখতে পারে এবং তাদের সময় আনন্দের সাথে কাটাতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে শিক্ষনীয় জায়গায় বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারেন। অথবা বাচ্চাকে সপ্তাহে একদিন একঘেয়েমি দূর করতে কোন পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেন। যাতে করে তারা এক ঘামিয়ে দূর হয় এবং আনন্দের সাথে অনেক কিছু শিখতে পারে।

বাচ্চাদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখুন- বাচ্চাদের অবশ্যই মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। কেননা মোবাইল ফোনে সব কিছু খারাপ এমন না কিন্তু বাচ্চারা বেশিরভাগ কার্টুন দেখতে অভ্যস্ত। তাই কার্টুন দেখতে দেখতে বাচ্চাদের নেশায় পরিণত হয় এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারে না। তাই বাচ্চাদের হাতে মোবাইল একদমই দেয়া উচিত নয়।

বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায়

বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায়

আজকে আমরা বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এ ছাড়াও আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েব সাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply