ফিতরা কত টাকা ২০২৪
মুসলমানদের জীবনে বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতর বলতে সাধারণত আমরা রমজানের ঈদকে বুঝাই। ফিতরা আদায় করা হয় বলে রমজান মাসের পরে তাই এইটার নাম ঈদুল ফিতর দেয়া হয়েছে।
এ বছর ফিতরা কত টাকা সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা ফিতরা কি কেন দিতে হয় কার উপর ওয়াজিব এবং কারা ফিতরা পাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – পিত্তথলির পাথর গলানোর ঔষধ, চিকিৎসা খরচ
ফিতরা কি?
ফিতরা বা ফেতরা আরবি শব্দ যা ইসলামের যাকাতুল ফিতর বা সাদকাতুল ফিতর নামে পরিচিত। ফিতর শব্দের অর্থ হল খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ ফিতর বা ফিতরা বলতে সকালের খাদ্য বস্তুকে বোঝানো হয়। যা দ্বারা রোজাদার গন রোজা ভঙ্গ করেন যাকাতুল ফিতর বলা হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরিব দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা বা খাবারের সমপরিমাণ টাকা বিতরণ করাকে বোঝানো হয়।
রমজান মাস শেষে এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহালের যাকাত বলা হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ স্বাধীন পরাধীন শিশুর বৃদ্ধ ছোট বড় সকল মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
কি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়?
ফিতরা শব্দের অর্থ যেহেতু সকালের খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ রোজাদারদের সেহেরী বোঝানো হয়। কিন্তু কি দিয়ে বর্তমান সময়ে ফিতরা আদায় করা যায় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান এ বছর ফিতরা কত ২০২৪ জানার পাশাপাশি কি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যাবে সে সম্পর্কে জানা উচিত। অর্থ সা ফিতরা আদায় করা সুন্নত বিরোধী কাজ। ফিতরা দুই ভাবে আদায় করা যায় –
১। খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দেয়া
২। টাকা দিয়ে ফিতরা দেয়া
খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা দেয়ার নিয়ম
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ইসলামের পূর্ব সময় থেকেই খাদ্যদ্রব্য দিয়েই ফিতরা দেয়া হতো। পবিত্র কুরআন মাজীদের সূরা আরাফে দলিল রয়েছে। এছাড়াও কি দাম রাহমাতুল্লাহি হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাদ ইবনে ইব্রাহিমকে বলতে শুনেছি তোমরা খাদ্যের নিকৃষ্ট অংশ দারা আল্লাহর পথে খরচ করার সংকল্প করোনা অথচ তোমরা গ্রহণ করতে প্রস্তুত না অর্থাৎ যাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে খাদ্য বস্তু দ্বারা।
অনেক ক্ষেত্রে টাকা পয়সা দিয়ে ফিতরা আদায় করার নিয়ম নেই বলে জানা যায়। তবে ধানের থেকে চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম।
টাকা দিয়ে ফিতরা দেয়ার নিয়ম
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর যুগে মুদ্রা হিসেবে দিরহাম এর প্রচলন ছিল। দিরহাম দ্বারা যে কোন দান খয়রাত করা হতো। রাসূল সালালা সালাম খাদ্যবস্তু দিয়ে ফিতরা প্রদান করতেন বলেই সাহাবীদের থেকে জানা যায়। ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহি বলেন খাদ্যদ্রব্যের ছাড়াও টাকা দিয়ে ফিতরা দিলেও ফিতরা আদায় হয়ে যাবে।
ইমাম রহমাতুল্লাহ তিনি বলেন আমি সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহুকে অবস্থায় পেয়েছি যে তারা রমজানের সাদেকায় ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। এছাড়া হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি বলেন টাকা দ্বারা সাদকায়ে ফিতরা আদায় করা কোন সমস্যা নেই।
এ বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৪
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে এ বছর ২০২৪ সালে ফিতরার হার জন প্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১ টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাইতুল মুকাররম সভাপতি অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয় যে ইসলামী শরীয়ার মতে আটা জব কিসমিস খেজুর এবং পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যাবে।
- আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১৫ টাকা প্রদান করতে হবে।
- জব দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৩৯৬ টাকা প্রদান করতে হবে
- কিশমিশ দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ৩ কেজি বা ৩০০ গ্রামের বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা আদায় করতে হবে।
- খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা য়ের বাজার মূল্য এক হাজার ৯৮০ টাকা এবং
- পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বায়ো বাজার মূল্য ২৬৪0 টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে
মুসলমানরা এ বিজ্ঞপ্তির পর নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপযুক্ত উপরে বর্ণিত পণ্যগুলোর যে কোন একটি পূর্ণ জিনিস এর বাজার মূল্য দ্বারা সাদগাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পণ্যের খুচরা বাজার মূল্য কম বেশি হতে পারে। স্থানীয় মূল্য পরিশোধ করলেও ফিতরা সঠিকভাবে আদায় হয়ে যাবে।
ফিতরা আদায়ের নিয়ম
ইসলামী বর্ণিত আছে যে গরিব-দুখিদের মাঝেই তার আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাদকাতুল ফিতর অন্যতম একটি মাধ্যম।সাজাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব বলে হাদীসে এসেছে। আবু সাঈদ খুদি রাদি আল্লাহ বলেন আমরা একসাথে দুই হাতের কব্জি একত্র করে চারখাবৃত্তি যে পরিমাণ খাবার উঠে থাকে সে পরিমাণ খাদ্য অথবা একসঙ্গে অথবা একসা পরিমাণ খেজুর অথবা একসা পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সদকাতুল ফিতার আদায় করতাম। (বুখারি হাদিস নাম্বার ১৫০৬)
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী দুই পরিমাপে পাঁচ জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। তা হল গম জব কিসমিস খেজুর এবং পনির আর এগুলোর পরিমাপ হল অর্ধসা আর বাকিগুলোর পরিমাণ হলো একসা। অর্ধসা মানে হল এক কেজি আর কেজি হিসেবে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম। ন্যূনতম পূর্ণ দুই কেজির মূল্য আদায় করা উত্তম আর একশা মানে কেজির হিসেবে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম।
কাদের উপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব
সামর্থ্যবান নারী পুরুষের উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও সামর্থ্যবানদের অধীনস্থ পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আদায় করতে হবে। পরিবারের শিশু কিশোর যদি অর্থের মালিক না হয় তবে বাবাই পরিবারের লোকদের ফিতরা হিসেবে করে আদায় করবেন।
এক কথায় সামর্থ্যবান নারী পুরুষ শিশু কিশোর যুবক বৃদ্ধ এবং সব স্বাধীন পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদায়ের উপরও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করতে হবে।
কারা ফিতরা পাবে
ফিতরা কত টাকা ২০২৪ আমরা জেনেছি। এখন আমরা জানব কাদের ফেতরা দিতে হয়। যাকাত যে আটটি খাটে খাটে প্রদান করা যায় তারাই ফিতরা পাবে।
- অর্থাৎ ফকির
- মিসকিন
- নওমুসলিম
- ক্রীতদাস
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
- বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির
- যাকাত কর্মী
- আল্লাহর পথে যারা লড়াই করে
এই আট শ্রেণীর ব্যক্তিদের ফিতরা আদায় করা যায়।
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
ঈদুল ফিতরের দিন কোন স্বাধীন মুসলমানের কাছে যাকাতের হিসাব অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরে স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপ অথবা তার সমমূল্যে নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব। সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত তার কাছে থাকতে হবে।
তবে যাকাতের জন্যই এসব তাদের কাছে পরিমান সম্পদ রয়েছে তাদের জন্য ফিতরা গ্রহণ করাও হারাম। বাড়ি ঘর আসবা পত্রস্থাপন সম্পদের মূল্য যদি যাকাতের নিছাব যাকাতের পরিমাপের অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র ঘরবাড়ি জায়গা জমি এসবের মূল্যের হিসাব ও ফিতরা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
ফিতরা কখন আদায় করতে হয়
ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সব সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এ সময় এর ঠিক আগ মুহূর্তে যদি কারো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে ওই বাচ্চার জন্য ফিতরা আদায় করতে হবে। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই সাধারণত ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম।
তবে আগে থেকেই ফিতরা আদায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যদি কেউ কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করতে না পারি তবে ঈদের নামাজের পরেও তারা আদায় করা যাবে। তবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করে দিতেন।
কেননা গরিব অসহায় মানুষ এই ফিতরার টাকায় কেনাকাটা করে ধনীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে সেজন্য। ফিত্রা কত সে অনুপাতে গরীবদের তাদের হক্ব দিয়ে দিতে হবে।
ফিতরা কেন দিতে হয়
ফিতরা কত টাকা ২০২৪ এবং কেন ফিতরা দিতে হয় তা আমাদের জানা দরকার। যাকাতের মত সাদকাতুল ফিতরা একটি আর্থিক ইবাদত। পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম পালন করতে গিয়ে সাধারণত আমাদের অনেক ভুল ত্রুটি হয়ে যায় সে ভুলত্রুটির ক্ষতিপূরণ হিসেবে মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদতের নাম হল সদকাতুল ফিতর।
একে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি উপহারের মতোই। সদকাতের ফিতরের উদ্দেশ্য শুধু গরিবদের ঈদের খুশি ভাগ করা বলে যে ধারণা প্রচলিত হয়েছে তা যথার্থ নয়। কেননা হাদিসে এসেছে রোজা অবস্থায় অবচেতন ভাবে যে তৃপ্তি বিচ্যুতি হয়ে যায় তার কাফফারা হিসেবে বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ফিতরা আদায় করতে হয়।
ফিতরা সম্পর্কে তথ্য
আমাদের সমাজে প্রায় সব মানুষই দেখা যায় ৭০ টাকা হারে ফিতরার হিসাব করে থাকেন। কিন্তু ফিতরা আদায়ের হিসাবটি মূলত এরকম নয় কারণ অনেক মানুষ আছে যাদের অঢেল সম্পদ রয়েছে তারা চাইলে জনপ্রতী সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকার বেশিও ফিতরা দিতে পারেন।
তবে এ পর্যায়ে অনেক মানুষই ৭০ টাকা হিসাব করে ফিতরা দিয়ে থাকেন তাহলে ওই ব্যক্তির ফিতরা দেয় শুদ্ধ হবে না। তবে ফিতরা সব সময় উন্নত এবং ভালো জিনিস তারাই আদায় করা উত্তম।
ফিতরা কত টাকা ২০২৪
আজকে আমরা এই বছর ফিতরা কত টাকা ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এছাড়া ফিতরা কত টাকা ২০২৪ আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –