উপস্থিত বক্তৃতা ভালো করার উপায়

উপস্থিত বক্তৃতা 

স্টুডেন্ট লাইফে মানুষের শখের মধ্যে অন্যতম হলো উপস্থিত বক্তা হওয়া। অনেকেই ভালো কথা বলতে পারে কিন্তু উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হলে কি গুণ থাকা প্রয়োজন এবং কোন কোন বিষয়ে খেয়াল করা প্রয়োজন তা অনেকেই বিস্তারিত জানেনা। উপস্থিত বক্তৃতা ভালো করার উপায় সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – ঢাকার সেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তালিকা

উপস্থিত বক্তৃতা ভালো করার উপায়

নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে– উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে আত্মবিশ্বাসটা নিজের জন্য খুবই জরুরী। অর্থাৎ আপনার মনকে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস দিতে হবে যে আপনি বক্তব্যটি সঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন এবং দর্শকদের বোঝাতে পারবেন। যদি আপনার ভেতর আত্মবিশ্বাস না থাকে তাহলে কোনভাবেই বক্তব্য শেষ করতে পারবেন না এবং আপনি যে সকল কথাগুলো বলবেন যে সকল কথাগুলো মন থেকে হারিয়ে যাবে এবং বক্তৃতায় ভুল হবে। তাই উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করতে হবে।

দর্শকের সাথে কথা বলার সক্ষমতা থাকতে হবে- উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে দর্শক বুঝে বক্তব্য দেওয়াটা খুবই জরুরী। অর্থাৎ আপনি যে দর্শকদের সামনে বসে বক্তব্য দিবেন তারা কোন ধরনের তথ্য পেতে চায় কোন ধরনের কথাগুলো বললে তারা শুনতে আগ্রহী হবে সেগুলোর মাধ্যমে বুঝে নিতে হবে। ধরুন আপনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে বসে বক্তব্য দিচ্ছেন তাহলে এই ক্ষেত্রে আপনি ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারেন এবং বাস্তবতা মূলক কিছু জ্ঞান দিতে পারেন।

এতে করে তারা আপনার কথাটি মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং এখান থেকে ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করবে। আবার আপনি যদি বিজনেস মিটিংয়ে বক্তৃতা দিতে চান তাহলে অবশ্যই সে ধরনের দর্শকদের টার্গেট করে তারা যে বিষয়গুলো জানতে এবং শুনতে আগ্রহী সে বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য দিতে হবে।

সাবলীল ভাবে কথা বলা- যখন উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করবেন তখন অবশ্য আপনার মনকে সাহস যোগাতে হবে যে আমি বড় একটি মঞ্চে রয়েছি আমাকে এই ক্ষেত্রে সাবলীল এবং সুন্দর ভাষায় কথা বলতে হবে। অর্থাৎ আমার কথা শুনে মানুষ কিছু শিখবে এবং হিসেবে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। কোন কথাগুলো বলে দর্শক আপনার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে এবং আপনার কথার প্রতি ঝোক বাড়বে তাছাড়া সুন্দর এবং সাবলিল ভাষায় কথা বললে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়।

নম্র কন্ঠে কথা বলা- বক্তব্য শুরুর আগে অবশ্যই নিজের কন্ঠের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ দর্শকদের সামনে নম্র কন্ঠে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি কথা বলতে বলতে সবার বরাবর ঘাবড়িয়ে যান তাহলে আপনার বক্তব্যটি সুন্দর হবে না বরং বক্তব্যে ভুল হবে এবং আপনার বক্তব্যের কথা মনে থাকবে না।

তাই বক্তব্য চলাকালী সময় যদি গলা শুকিয়ে যায় তাহলে আপনি সামান্য পানি খেয়ে নিতে পারেন। তারপর আবার বক্তব্য শুরু করতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে করে দর্শকরা বিরক্ত হয়।

শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে- উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সময় অনেকেই আছেন যারা এক নিঃশ্বাসে অনেক ঘনঘন কথা বলেন। অর্থাৎ কথা খুবই দ্রুত সাথে বলতে চান যার ফলে অনেক সময় কথার মাঝে ভুল হয়ে যায় এবং কি বলছেন তাই স্পষ্টভাবে শোনা যায় না এতে করে দর্শকরা বিরক্তি অনুভব করে। তাই কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

বক্তৃতার সময় কথা বলতে হবে সুমধুর সুরে ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে। এভাবে সুন্দর করে কথা বলার চেষ্টা করলে বক্তৃতা শুনতে খুবই সুন্দর শোনা যায়। যার মাধ্যমে কথাগুলো দর্শকদের কাছে আলাদা মাত্রা পাবে।

বক্তব্যের মাঝে নিজেকে বড় না করা- অনেকে আছেন যারা উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার পর নিজেকে বড় করে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন অর্থাৎ তার কথা শুরুতে বলে থাকেন তোমরা কি কেউ জানো আমি কে আমার পরিচয় কি। আজ আমি তোমাদের সামনে এই নিয়ে কথা বলতে চাই তোমরা অনেক ভাগ্যবান যে আমি তোমাদের সামনে কথা বলছি।

তোমরা আবার আমার কাছে কথা শোনার সুযোগ পেয়েছো এসব কথাগুলো কখনোই বক্তৃতা দেওয়ার সময় দর্শকদের সামনে বলা যাবে না। কেননা এসব কথার মাঝে নিজেকে বড় করতে গিয়ে ছোটই করা হয় এবং বক্তৃতা দেওয়া সুন্দর হয় না।

দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে- উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সময় কখনই দুশ্চিন্তা মনের ভেতর রাখা যাবে না দুশ্চিন্তা মনের ভিতর থাকলে কখনোই সাবলীলভাবে বক্তব্য দেওয়া যায় না তাই অবশ্যই বক্তব্য শুরু করার আগে আপনাকে দুশ্চিন্ত হয়ে নিতে হবে তাহলে সুন্দরভাবে নিজের উপস্থিত বক্তিতা দেওয়া যাবে।

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সঠিক পদ্ধতি

প্রথমে সালাম দিতে হবে- প্রত্যেক বক্তৃতার শুরুতে সালাম দিতে হয়। যদি আপনি একজন মুসলমান হয়ে থাকে তাহলে সর্বপ্রথম বক্তব্য শুরু করার আগে আসসালামুয়ালাইকুম বলে বক্তব্য শুরু করতে পারেন বা অন্য ধর্মের হয়ে থাকলে সে তার অনুসারী সবার কল্যাণ কামনা করবেন।

গল্প বা পরিচয় দিয়ে বক্তব্য শুরু করতে পারেন- পৃথিবীর অনেক বড় বড় বক্তারা উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার আগে অনেক ছোট ছোট গল্প বলে দর্শকদের নিজের কথার প্রতি আগ্রহী করে। অর্থাৎ শুরুতে যখন পক্ষে ছোট গল্প দিয়ে শুরু করেন এতে শ্রোতাদের বক্তব্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। তাই যে অনুষ্ঠানটা যে বিষয় সম্পর্কে আপনি বক্তব্য দিবেন সেই বিষয় নিয়ে ছোট করে গল্প বলতে পারেন।

সঠিক কারণ উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে হবে- ছোট গল্প বলা শেষ হয়ে গেলে আপনি যে বিষয়ে বক্তব্য দিতে এসেছেন বা যে কারণে বক্তব্য এসেছেন তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন সেটা হতে পারে কোন বিশেষ দিন অথবা বিশেষ কোন বিষয়। এভাবেই সাধারণত আপনারা কথা দিয়ে বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

অনুষ্ঠানটি কার কর্তৃক আয়োজিত সেটা বলতে হবে- অনুষ্ঠানটি কিসের মাধ্যমে আয়োজিত হয়েছে সেটা বলতে ভুলবেন না। যেমন কোন বিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে আয়োজিত অনুষ্ঠান বা কোন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান তা উল্লেখ করতে হবে এবং তাদেরকে ধন্যবাদ প্রদান করতে হবে।

তথ্যপূর্ণ- যে বিষয় উপস্থিত বক্তৃতা দিবেন তা যেন অবশ্যই সঠিক তথ্যপূর্ণ দিয়ে লেখা হয়। এতে করে তার শত্রু তাদের কাছে নিজের সম্মান ও বৃদ্ধি পায় এবং দর্শকরাও বক্তৃতা শুনতে আগ্রহী হয়। যে বিষয়ে বক্তৃতা দেয়া হবে সে বিষয়ে অবশ্যই নিজের কিছু ধারণা থাকতে হবে।

বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করা- বক্তব্য বেশি লম্বা করলে অনেক সময় দর্শকরা বা শ্রোতারা বক্তব্য শুনার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাই যতটুকু সম্ভব কোনো প্রতিযোগিতা না হলে উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্তভাবেই বক্তৃতা প্রদান করা উচিত।

মাঝে মাঝে বিরতি দেওয়া- মাঝে মাঝে আমরা সবাই কথা বলা থেকে বিরক্তি নেই। উপস্থিত বক্তৃতার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয় বক্তৃতার কিছু বাক্য পরপর কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকতে হবে। এতে করে নীরবতা শ্রোতার মনযোগ রক্ষা করে বেড়ে যায়। কিছু শ্রোতা মনোযোগী হয় তবে নীরবতার সঙ্গে বক্তার দিকে তাকাবে এবং আপনার বক্তৃতা মনোযোগ সহকারে শুনবে।

তাছাড়া বক্তব্যের মাঝে কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে বক্তা একটু বিশ্রাম পায় এবং বক্তার কথাগুলো আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে।

উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি

যে কোন উপস্থিত বক্তৃতা বা ভাষণ দেওয়ার আগে অবশ্যই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। অর্থাৎ কিসের উপর হবে তার ব্যাপারে একটি শব্দ ধারণা থাকতে হবে যাতে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি না হয় এবং প্রয়োজনে সম্পর্কে বা বক্তব্য সম্পর্কে কিছু তথ্য লিখে নিতে হবে এবং বক্তব্য প্রদানের পূর্বে কয়েকবার অনুশীলন করতে হবে। কয়েকবার অনুশীলন করলে কথা শাবলীল হবে।

তানাহলে কথা এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বক্তব্য দেওয়ার আগে বাক্য চর্চা করলে নিজের মুখে জড়তা কেটে যাবে এবং কথা বলার সময় কোন অস্বস্তি অনুভব হবে না।

দেখে দেখে না বলা- বক্তৃতা একটু সংক্ষিপ্ত প্রতিলিপি রাখা যেতে পারে। তবে এটি হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় শ্রোতার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে শ্রোতা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে শ্রোতাও খুব মনোযোগী হয় এবং উপস্থিত বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তারও পরিষ্কার হয়। দেখে দেখে বক্তব্য দিলে বক্তার দিকে শ্রোতা মনোযোগ সহকারে তাকায় না এবং বক্তা শ্রোতা দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে।

শ্রোতা আরো আগেই বক্তার মনোযোগ হারাবেন এবং এই সমস্যা পরিহার করা উচিত। তাই বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়বার পূর্বে দেখে নেওয়া উচিত। এতে করে তেমন একটা দেখে দেখে বলার প্রয়োজন হয় না।

উপস্থিত বক্তৃতা

মন্তব্য

আজকে আমরা উপস্থিত বক্তৃতা ভালো করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও প্রতিদিন নতুন নতুন আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply