১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয়
সর্দি কাশি হয় না এমন বাচ্চা খুব কমই দেখা যায়। সর্দি কাশি এমন একটি রোগ যা বাচ্চাদের কিছুদিন পরপরই হয়ে থাকে। কারণ বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে। বিশেষ করে নবজাতকের বেশি হয়ে থাকে। তাই নবজাতক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। কেননা এ সময় বাচ্চারা মায়ের গর্ভের বাইরের আবহাওয়া সাথে খারাপ খাওয়াতে পারেনা।
তাই অনেকে ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয় কি এসব বিষয়ে জানতে চায়। আজকে আমরা তাদের জন্যই ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
নবজাতকের সর্দি হবার লক্ষণ
নবজাতকের সর্দি হলে অনেক সময় বাচ্চা কান্নাকাটি করে কিন্তু কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছু লক্ষণ দেখলেই বুঝা যায় শিশুর সর্দি হয়েছে কিনা। তা হল –
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- নাক চুলকানো
- ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
- ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া
- নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- কান চুলকানো
- বুকের দুধ খেতে না চাওয়া
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে না পারা
আরো পড়ুন – ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
নবজাতকের সর্দির কারণ
সাধারণত নবজাতকদের সর্দি হওয়ার অনেকগুলো সাধারণ কারণ থাকে। নরমাল সর্দি কাশি সাধারণত সহজেই সেরে যায় কিন্তু অন্য কোন কারণে সর্দি হলে তা সহজে সারতে চায় না। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চা প্রচন্ড গরম আবহাওয়া থাকে জন্মের পর পৃথিবীর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লাগে
- ফ্লু জনিত সর্দি কাশি হতে পারে
- ঋতু পরিবর্তনের সময়
- গরমে অতিরিক্ত ঘাম হলে
- শীতের সময় অতিরিক্ত গরম জামা কাপড় পরালে
- অথবা দুগ্ধ পান শিশুদের জন্য বাচ্চার মায়ের সর্দি লাগার ফলেও সর্দি হতে পারে
- ধুলাবালির ফলে
- এলার্জির ফলেও সর্দি কাশি হতে পারে
আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়
নবজাতকের সর্দি হলে করণীয়
- শিশুকে সব সময় আলো বাতাস পূর্ণ ঘরে রাখতে হবে
- খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট না হয়
- সব সময় পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে
- পুষ্টি সম্পন্ন খাবার এর সময় মাকে বেশি বেশি খেতে হবে
- শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে
- রাতে ঘুমানোর সময় শিশু মাথার নিচে একটু উঁচু বালিশ দিতে হবে যেন নাকের ভিতর জমে থাকা পানি বের হতে পারে
- এ সময় ঘরে কোন পোষা প্রাণী রাখা যাবে না
- শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- শিশুকে যারা কোলে নেবে তাদের হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- শিশুকে গরম সরিষার তেল মালিশ করা যেতে পারে
- শিশুকে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য রোদে রাখুন এতে শরীরে ভিটামিন ডি ঢুকবে এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে
- পাতলা জ্যাকেট বা সোয়েটার পরিয়ে রাখা যেতে পারে বিশেষ করে রাতে এবং ভোরের সময়
- এসময় বাচ্চার মাকে কোন ঠান্ডা পানীয় বা ঠান্ডা খাবার খাওয়ানো যাবে না
নবজাতকের সর্দির ঔষধের নাম
বাজারে নবজাতকের সর্দির বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়।১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয় কি তা অনেকেই না বুঝে ঔষধ খাওয়াতে চান। তবে যে কোন সিরাপ সেবন করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নবজাতকের সর্দির কিছু উল্লেখযোগ্য ঔষুধের নাম হল-
- prosma
- pediamine
- Tofen
- perasolin
নবজাতকের সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয়
বাচ্চাদের সর্দি হলে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে রাতে ঘুমানোর সময় ঘরঘর শব্দ হয়। এবং বাচ্চা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। তাই সর্দির সময় বাচ্চাদের নাক পরিষ্কার রাখা জরুরী। না্ক পরিস্কার রাখার ড্রপ হলো-
- Norsol drop
- লবণ পানির ড্রপ (ড্রপারে করে হাল্কা গরম পানির সাথে লবন মিশিয়ে দেওয়া)
আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয়
১ মাসের শিশুর ঠান্ডা সারানোর ঘরোয়া উপায়
রোদে রাখা- সাধারণত আগে গ্রামে বাচ্চাদের জন্মের পরবর্তী সময়ে দিনের কিছু সময় রোদে রাখলেও এখনকার বাচ্চাদের রোদে রাখতে দেখা যায় না। নবজাতকের সর্দি হলে অবশ্যই নবজাতকের প্রতিদিন কিছুক্ষণ সময় রোদে রাখতে হবে এতে করে শরীরের সর্দির স্লেষমা বের হয়ে আসবে এবং ভিটামিন ডি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।
সরিষার তেল মালিশ- নবজাতকের সর্দি সারানোর জন্য বিশেষ করে বাচ্চার এক থেকে তিন মাস বয়সে সর্দি লাগলে অবশ্যই সরিষার তেল হালকা গরম করে দুই হাতের তালুতে ঘষে বাচ্চার বুকে হাতে পায়ের তালুতে মাথার তালুতে দিতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার এরকম মালিশ করলে বাচ্চার সর্দি সেরে যাবে।
বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা- এক থেকে তিন মাস বয়সী নবজাতকদের সর্দি লাগলে অবশ্যই বাচ্চাকে ধুলাবালি মুক্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় ধুলাবালীর কারণেও বাচ্চাদের সর্দি হয় তাই কি কারণে নতুন নবজাতকের সর্দি শুরু হয়েছে তার সমাধান করতে হবে।
হালকা কুসুম পানিতে গরম পানিতে গোসল করানো- অনেকেই সর্দি লাগলে বাচ্চাদের গোসল করানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মূলত সর্দি লাগলে বাচ্চাদের শরীরে স্লেশ্মা জমে আরও বেশি অস্বস্তি অনুভব করে। তাই নবজাতকের সর্দি লাগলে অবশ্যই তাকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। এতে করে শরীর হালকা লাগবে এবং বাচ্চার ভালো লাগবে।
নবজাতকের মায়ের সাবধানতা অবলম্বন করা- এ সময় ঠান্ডা কোন খাবার খাওয়া যাবে না ঠান্ডা পানি ধরা যাবে না এবং বিশেষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং চাইলে গরম চা খেতে পারেন। এতে করে বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার শরীর গরম থাকবে এবং সর্দি কমে যাবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো- নবজাতাকে সর্দি লাগলে অবশ্যই নবজাতকের বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কেননা মায়ের বুকের দুধে শিশুদের জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে যার জন্মের পর শিশুর জন্য খুবই প্রয়োজন।
লবণ পানির মিশ্রণ- এক থেকে তিন মাসের বাচ্চাদের সর্দি লাগলে নাক বন্ধ হয়ে আসে তাই শিশুর সর্দি লাগলে অবশ্যই হালকা গরম পানির সাথে এক চিমটি লবন মিশিয়ে ড্রপে করে দুই নাকে দুই ফোটা করে প্রতিদিন দুইবার দিতে হবে।
নাক পরিষ্কার রাখা- বিভিন্ন ঔষধের দোকানে নবজাতক বাচ্চার কান এবং নাক পরিষ্কার জন্য চিকন কটনবাড পাওয়া যায় সেসব দিয়ে সর্দির সময়ে বাচ্চার নাক অবশ্যই সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে করে বাচ্চার নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হবে না এবং সর্দি জমে থাকবে না।
নবজাতক শিশুর দৈনন্দিন যত্ন
শিশুর ঠান্ডা লাগলে শিশুর শরীরে অলিভ অয়েল পামওয়েল বা সরিষার তেল মাসাজ করতে হবে। তবে ঠান্ডা ছাড়াও নবজাতককে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট রোদে রেখে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল দিলে ম্যাসাজ করলে নবজাতকের সর্দি কাশি কম হতে লক্ষ্য করা যায়। এতে করে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাড়ে।
এছাড়া সরিষার তেল শিশুর শরীরকে গরম রাখে যা শিশুর পক্ষে খুবই আরামদায়ক। নবজাতকের গোসলের পূর্বে অবশ্যই তেল মাসাজ করা উচিত এবং গোসলের সময় অবশ্যই ভালোভাবে তেল তুলে ফেলতে হবে নাইলে তেল লোমকূপের গোড়ায় জমে বিভিন্ন ধরনের ফোড়া বের হতে পারে।
আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয়
ঠান্ডা জনিত সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
যেকোনো রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। শিশুর সর্দি কাশি হলে এর থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কষ্টকর। তবে কিছু জিনিস মাথায় রাখলে অবশ্যই শিশুর সর্দি কাশি প্রতিরোধ করা যায়।
- ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুর শরীর চাদর বা গরম জামা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে
- হাঁপানির কারণে যদি বারবার সর্দি কাশি হয় তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
- সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা দিতে হবে
- শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
- শিশুর ব্যবহারের জিনিসপত্র এবং রুম সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- গরমে শিশুদের ঘামতে দেওয়া যাবে না
- প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করাতে হবে
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
সাধারণত শিশুদের সর্দি কাশি একটি সাধারণ রোগ। এটি খুব সহজেই ঘরে নিরাময় করা সম্ভব। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদের সর্দি কাশি খুব সহজেই সারে না ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা করলে খুব সহজেই এ থেকে মুক্তি মেলে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- দীর্ঘদিন সর্দি থাকলে
- সর্দির সাথে শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিলে
- বাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে
- সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে আসলে
- সর্দির সাথে রক্ত বের হলে
- সর্দির সাথে অতিরিক্ত জ্বর থাকলে
- চোখ লাল হয়ে থাকলে
- খাওয়া বন্ধ করে দিলে
- সর্দির কারণে অতিরিক্ত ওজন কমে
- গেলে খুব ঘন ঘন সর্দি দেখা দিলে
১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয়
আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি নতুন মায়েদের জন্য ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয় আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব এবং প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চা পেটে আসার দোয়া
- বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার আজকের দাম কত