বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের কঠিন রোগ গুলোর মধ্যে বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা রোগ অন্যতম। বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের এই রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া সমস্যা দেখা দেয়। তবে অনেকেই বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় আছে কিনা বা বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় কতটা কার্যকরী তা জানতে চান।
আজকে আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
- আরো পড়ুনঃ ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা হবার কারণ
বাচ্চাদের বিভিন্ন কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত দেখা যায়-
- শিশু গর্ভাবস্থায় থাকার সময় মায়ের যদি পুষ্টিহীনতা থাকে
- মায়ের শরীরের আয়রন ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে
- কোন কারণ রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে বা
- মায়ের প্লাসসেন্টারে যদি কোন রক্তক্ষরণ হয় তাহলে শিশুর রক্তশূন্যতা হতে পারে
- এ ছাড়াও জন্মের সময় যদি ওজন কম থাকে
- নির্দিষ্ট তারিখের আগে জন্মগ্রহণ করে
- সে ক্ষেত্রে ছয় মাসের পর থেকে অন্যান্য খাবার না দিলেও শিশু রক্ত শূন্যতা হতে পারে
- দুই বছরের আগে গরুর দুধ খেলে
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ
বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো লক্ষ্য করলে বুঝা যায় বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে। নিচে বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো-
- বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়ায় অরুচি হওয়া
- শিশু শরীর ধীরে ধীরে ফুলে যাওয়া
- শিশু হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা
- শিশুর শ্বাসকষ্ট হওয়া
- অল্প পরিশ্রমে শিশু দুর্বল হয়ে যাওয়া
- মেজাজ সবসময় খিটখিটে হওয়া
- সব সময় ক্লান্তি বোধ করা
- শিশুটির জীর্ণ হাত এবং পায়ের তালু ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে সব সমস্যা দেখা যায়
- দুর্বলতা
- মাথাব্যথা
- মাথা ঘোরা
- চোখে অন্ধকার দেখা
- অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা
- বুক ধরফর করা
- মাথা ঝিমঝিম করা
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- মনোযোগ নষ্ট হওয়া
- মুখের কোনায় জিহ্বায় ঘা হওয়া
- নখ এবং ভঙ্গুরতা দেখা দেওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- হজমে ব্যাঘাত ঘটা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার চিকিৎসা
শিশুদের এই রক্তশূন্যতার চিকিৎসার জন্য প্রথমে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগতে পারে। রক্তশূন্যতার কারন প্রথমে যাচাই করতে হবে। শরীরের যে উপাদান গুলোর খাদ্যের জন্য রক্তশূন্যতা হয়েছে সেসব ভিটামিন উপাদান গুলো পূরণ করতে হবে এবং ফলিক এসিড প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দিতে হবে।
যদি মারাত্মক ধরনের রক্তশূন্যতা থাকে এবং হার্টফেলিয়ারের দিকে যায় সে ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের দরকার হতে পারে। এজন্য হাসপাতালে ভর্তি ও হওয়া লাগতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিশু বিভিন্ন কারণে রক্তস্বল্পতায় ভোগে যেগুলো দূর করা খুব কঠিন কোন রোগ নয়।
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের রক্ত শূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- বাচ্চার খাবার তালিকায় কালো কচু ধনেপাতা কাটা শাক কাঁচকলা শাক আটা কালো জাম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
- বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে
- মৌসুমী টাটকা ফল বাচ্চাকে বেশি বেশি খাওয়াতে হবে
- বাচ্চাকে মুরগির সুপ ডিম কলিজা কালোজাম খাওয়াতে হবে
- আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্য তাহলে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার এবং ঔষধ খেতে হবে
- রক্তস্বল্পতা বেশি হলে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে
শিশু রক্ত শূন্যতা ঔষধ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রক্তশূন্যতার ওষধ পাওয়া যায়। তবে বাচ্চাদের কোন ঔষধই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করানো উচিত নয়। বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার জন্য যেসব ঔষধ পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো-
- Recover 500 mg injection
- Feroglobin
- Folic acid
- Iron Tablet
- Deras keu mare
- B12 syrup
- Calboral d
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার হোমিও ঔষধ
এলোপ্যাথি ঔষধের পাশাপাশি রক্ত বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য হোমিও ঔষধ পাওয়া যায়। তবে বাচ্চার রক্তশূন্যতার পরিমাপ যদি বেশি হয় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে হোমিও ওষুধের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। বিধায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করাতে পারেন। Ferrum met -6 হ্ল বাচ্চাদের হোমিও ঔষধ।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে বিভিন্ন খাবার
বিভিন্ন খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকা বাচ্চাদের রাখলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এমনি বেড়ে যায়। এতে করে রক্ত শূন্যতা সমস্যা দেখা দেয় না। নিচে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে খাবার তালিকা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
মাংস জাতীয় খাবার- আয়রনসমৃদ্ধ প্রাণীজ খাবার গুলো সব সময় বাচ্চাদের খাবার খাওয়াতে হবে। গরুর লাল মাংস কলিজা মুরগির কলিজা ডিম সামুদ্রিক মাছ দই ইত্যাদি খাবারের প্রচুর পরিমাণে আয়রন সহ বিভিন্ন প্রোটিন থাকে। এসব খাদ্য তালিকায় রাখলে বাচ্চাদের কখনোই রক্তশূন্যতা রোগ দেখা দেয় না।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার- ভিটামিন সি আমাদের শরীরে বাচ্চাদের শরীরে প্রচুর প্রয়োজন রয়েছে। ভিটামিন সি এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। লেবু কমলা জলপাই আঙ্গুর আমলকি জাম্বুরা পেয়ারা আমড়া স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা খুব সহায়তা করে।
বিট- আয়রনের একটি ভালো উৎস হল বিট। বিটের রসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন খাদ্য আঁশ পটাশিয়াম ফলিক এসিড ইত্যাদি উপাদান থাকে যা বাচ্চাদের দেহে লাল রক্ত কণিকা বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে।
ফলিক অ্যাসিড- ফলিক এসিডের ভিটামিন বি বা ফলের নামে মানব দেহে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হয়। লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে এই ফলিক এসিডের অনেক ভূমিকা থাকে। সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড রয়েছে এছাড়াও কাচ কলা ব্রকলি সিমের বিচি ডুমুর কলার মোচা অঙ্কিত মুগ ডাল ইত্যাদিতে রয়েছে।
আপেল- আয়রনের খুব ভালো উৎস হলো আপেল। খোসা সহ একটি আপেল বাচ্চারা প্রতিদিন খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে। এছাড়াও আপেলের এবং বিটের রস সমানুপাতে পান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বেদানা- রক্তিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এবং দেহে রক্ত চলাচল সবসময় সচল রাখতে বেদানা ফলটি কোন জুড়ি নেই। বেদানায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন এবং ক্যালসিয়াম এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন শর্করা এবং খাদ্য রস রয়েছে। যেসব শিশুর রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের প্রতিদিন একটি করে বেদানার খাওয়ালে রক্তস্বল্পতা অত তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়।
কলা- কলা কে ভিটামিনের সর্বভিটামিনের উৎস বলা হয়। কলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম যা মানব দেহে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর করতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের কলা চটকে অথবা দুধের সঙ্গে ব্লেন্ড করেও খাওয়ালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
বাদাম- বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল কিসমিস খেজুর বা বাদাম আলু বোখারা বিভিন্ন ধরনের বাদাম যথেষ্ট পরিমাণে খনিজ লবনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি শরীর বাচ্চাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
শিশুর রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে করণীয়
বাচ্চাদের সব সময় অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া কঠিন বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির জন্য অনেক বেশি যত্নে প্রয়োজন হয়। নিচে শিশুর রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে করণীয় কি সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি
- শিশুকে সবসময় ঘরে তৈরি খাবার দিতে হবে
- শিশুকে তিন থেকে চার মাস পর পর কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে
- যদি জন্মের সময় শিশুর ওজন কম থাকে তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন এবং ফলিক এসিড খাওয়ানো যেতে পারে
- শিশুর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ফলমূল কলা পেপে ইত্যাদি থাকা উচিত
- প্রতিদিন খাবার তালিকায় কলিজা গোস্ত ডিম মাছ ইত্যাদি খাবার অল্প পরিমাণ শিশুকে দিতে হবে
- শিশুকে বাইরের খাবারের চেয়ে ঘরের তৈরি খাবার দিতে হবে
- সব সময় শিশুকে পরিষ্কার রাখতে হবে
- মায়ের শারীরিক কারণে শিশু রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে
- শিশু অতিরিক্ত অসুখ হলেও রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে তাই শিশুর যত্ন নিতে হবে
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আজকে আমরা বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- পৃথীবির দামি রক্তের গ্রুপ কোনটি? রক্তের গ্রুপ কয়টি
- বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করনীয়
- বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির ঔষধ