বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয় – চোখে কেতুর হলে করণীয়

বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয়

সাধারণত শিশুর জন্মের পরে কমবেশি অনেক ধরনের অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিশুদের চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা। এর ফলে চোখের কোনে পিচুটি জমে থাকে। আজকে আমরা বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয় ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

চোখে পিচুটি হওয়ার কারণ

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সেনসিটিভ একটি অঙ্গ। চোখের পিচুটি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা জানা থাকলে চোখের যত্ন নিয়ে চোখের পিচুটি হওয়া থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

১। আমাদের চোখের ঠিক কোনায় একটি গ্রন্থী আছে এর নাম ল্যাক্টিমাল গ্রন্থি। এই ল্যাক্টরি মাল গ্রন্থি থেকে চোখের পানি বের হয় চোখের কোনায় দুটি ছিদ্র রয়েছে এর মধ্যে দিয়ে পানি নাকের ভিতরে চলে যায়। যদি কোন কারনে এই পথ বন্ধ থাকে তাহলে পিচুটি হয়।

২। শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মগত কারণে ছিদ্রটি তৈরি হয় না সে কারণে ছিদ্রের ভেতর দিয়ে পানি না বের হয়ে পানিটা বাইরের দিকে বের হয়ে আসে।ফলে চোখে পিচুটি জন্মে।

৩। আবার দেখা যায় চোখের থলের ভেতর কোন সমস্যা থাকলে পানি আর পেছন দিক থেকে নাকে যেতে পারে না।

৪। সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক বাচ্চা বা ফুল টাইম বেবি জন্মগ্রহণ করে সে সমস্ত বাচ্চাদের চোখের পানি যাওয়ার এই রাস্তাটি খুলে যায় জন্মের পরেই। তবে অপরিপক্ক শিশু হয় তখন পরিষ্কার হয় না ফলে পিচুটি জমে থাকে।.

৪। সাধারণত চোখে পিছুটি জমার এই রোগ নবজাতকদের বেশি হয়ে থাকে। জন্মের ৪ সপ্তাহ পরে পানি পড়া টা বেশি খেয়াল করা যায় প্রথম দিকে একটু কম থাকে।

৫। ছোট ছোট বাচ্চাদের নখ সাধারণত বড় থাকে। হয়তো কোন ভাবে হাতের আঙ্গুল লেগে কালো মনিতে ক্ষত হয়। এই ক্ষত যদি সঠিক সময় চিকিৎসা না নেওয়া হয় পরবর্তীকালে দ্রিস্টি হানি হতে পারে। এইসব কারণে চোখে পানি পড়ে চোখে পিছুটি জমতে পারে।

৬। চোখে যদি চাপ বেড়ে থাকে তবে তা প্রাথমিক পর্যায়ে চোখ দিয়ে পানি বের হয় সুতরাং শিশুর চোখের পানি পড়লে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে।

চোখে পিচুটি হওয়ার লক্ষণ

চোখে পিছনে হওয়ার বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ রয়েছে। তবে পিছুটি হওয়া ছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যার কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়ে চোখে ময়লা জমতে পারে।

  • বাচ্চার চোখ থেকে সবুজ রঙের এক ধরনের তরল পানি বা পিচুটি নির্গমন হওয়া
  • চোখের কো্নে পিচুটি জমার ফলে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে থাকা
  • চোখ লাল হওয়া ও ফুলে ওঠা
  • চোখে ইনফেকশন হওয়া
  • আলোর দিকে তাকালে বেশি সংবেদনশীল হওয়া
  • বাচ্চা সব সময় জোর করে চোখ চেপে বন্ধ করে রাখা
  • চোখের কোণে বা নিচে সবুজ রঙের সাদা বা হলদে পিছুটি বের হতে থাকা
  • নাকের পাশে ফুলে উঠলে
  • এক বছর বয়স হওয়ার পরেও চোখের নালি শুরু অথবা বন্ধ হয়ে থাকলে

বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে কি করা উচিত

বাচ্চাদের যে কোন অসুখ এই বাচ্চারা নাজুক হয়ে যায়। আর চোখের ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত কেননা বাচ্চারা অসুস্থ হলে অনেক বেশি অস্বস্তি অনুভব করে। চোখে পিচুটি জমার প্রাথমিক চিকিৎসা হলো-

১। বাচ্চার এক বছর বয়স হলে স্টিকি আই বা চোখে পিচুটি জমার সমস্যা দূর হয়ে যায়

২। যদি কোন ধরনের ইনফেকশনের কারণে স্টিকি আই বা চোখে পিছুটি জমে সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক অথবা মলম দিতে পারে।

৩। সাধারণত স্ট্রিকি আই বা চোখে পিচুটি জমলে নিজে নিজেই কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে সেক্ষেত্রে অবস্থান উন্নতি না হলে ডাক্তার বিশেষ এক ধরনের মাসাজ করা শিখিয়ে দেন যা বাসায় নিয়মিত করলে বাচ্চার বন্ধ হওয়া চোখের নালি খুলতে সাহায্য করে।

৪। চোখের সমস্যা বেশি হলে কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে সার্জারি করার মাধ্যমেও পিচুটি জমার চিকিৎসা করা হয়।

৫। চোখ পরিষ্কার রাখলে চোখে পিচুটি হওয়ার রোগ তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

৬। বাচ্চাদের নেত্রনালী যদি যথাযথভাবে মাসাজ করা যায় তাহলে ঠিক হয়ে যায়। চোখের ঠিক কোণায় নাকের দিকে হালকা চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। কয়েকবার চাপ দেয়ার পর দেখা যাবে চোখ দিয়ে পানি একটু বেশি আসবে তখন একটু তুলা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে চিপে পানি মুছে নিয়ে আবার একটু চাপ দিয়ে মাসাজ করতে হবে। এতে অনেকটা ভালো হয়ে যায়।

৭। চোখ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে তা দিনে চার থেকে পাঁচ মিনিট পরপর বাচ্চার চোখের পাতা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত। এতে বাচ্চার ভোগান্তি কমবে।

৮। দুটো চোখ পরিষ্কার করার সময় আলাদা আলাদা কাপড় বা তুলোর টুকরো ব্যবহার করতে হবে। এতে বাচ্চার যদি চোখে ইনফেকশন থাকে তবে এক চোখ থেকে আরেক চোখ ছড়াবে না।

৯। সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার শুকনা গামছা দিয়ে বাচ্চার চোখ মুছে দিতে হবে। স্যালাইন বা ফুটিয়ে ঠান্ডা করা বিশুদ্ধ পানিতে পাতলা কাপড় দিয়ে চোখের পানিও ময়লাগুলো মুছে পরিষ্কার করতে হবে। চোখের পাতা নিচে বা চোখ পরিষ্কার করার চেষ্টা করা উচিত নয়।

৯। মায়ের বুকের দুধ দিয়েও বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করা যেতে পারে। এতে বাচ্চার কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বরং তাই ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকরী হয়।

১০। অনেকে ভয়ের কারণে বা বাচ্চা ব্যথা পাবে এই ভেবে চাপ দিয়ে মাসাজ না করে আস্তে আস্তে টেনে মাসাজ করে থাকে। এতে কোন উপকার হয় না চোখের বাইরে নেত্রনালী যেখানে মিলেছে ঠিক সেই জায়গায় চাপ দিতে হবে।

চোখের জন্য ড্রপ

চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত বাচ্চাদের কোন ঔষধ বা ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে সমস্যার সমাধানের বদলে বিপদ বাড়তে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর চোখ দিয়ে প্রথম দুই এক দিন পানি ঝরার পর পিছুটি জমে। এক্ষেত্রে অপটিমস নামে চোখের একটি ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহ দিতে হবে দিনে চারবার প্রতি চোখে এক  ফোঁটা করে।

কিভাবে বাচ্চাদের চোখের যত্ন নিতে হয়

বাচ্চাদের জন্মের পরে চোখে সঠিকভাবে যত্ন নিলে চোখের পিচুটি হওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

১। নিজের এবং বাচ্চার নখ ছোট রাখতে হবে। কারণ বাচ্চার চোখ মুখ পরিষ্কার করার সময় বাচ্চা বাচ্চা নড়াচড়া করলেও সাবধানে বাচ্চা চোখে লেগে যেতে পারে।

২। বাচ্চার চোখে কোন ইনফেকশন হলে বা পিছুটি জন্ম নিলে দিনে দুই থেকে তিনবার চোখ পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে চোখ তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

৩। বাচ্চাদের একটুতেই ইনফেকশন বা এলার্জি হয়ে যায়। তাই বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করার আগে দুই হাত খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে জীবাণুনাশক বা কোন ভালো হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৪। প্রতিদিন বাটিতে কুসুম গরম পানি নিয়ে পুরস্কার তুলা ডুবিয়ে পানি চিপে চোখের চারপাশ আস্তে আস্তে করে মুছে দিতে হবে।

৫। বাচ্চার জন্মের পরে সঠিকভাবে বাচ্চার চোখের মাসাজ করে দিতে হবে। চোখের ভেতরের কোনার অংশে যে দিকটা নাকের দিকে থাকে সেদিকে চোখের নিচে আলতো করে চাপ দিয়ে নিচ থেকে উপরে থেকে মাসাজ করে দিতে হবে।

৬। বাচ্চার নিজের চোখে পানি ঝাপটা দিতে শিখলে প্রতিদিন চোখে পানি ঝাপটা দিতে হবে। বাইরে থেকে এসে বা সকাল এবং রাত্রে অবশ্যই চোখ পরিষ্কার করার অভ্যাস করে নিতে হবে।

বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে কি কি করা উচিত নয়

বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে অনেক ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সামান্য ভুলের কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। তাই বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে কোন কোন ধরনের কাজ করা উচিত নয় সে সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত-

  • চোখে বারবার হাত দেওয়া
  • ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া চোখের ড্রপ ব্যবহার করা
  • বাচ্চার চোখ অপরিষ্কার রাখা
  • বাচ্চা এবং মায়ের হাতের নখ বড় রাখা
  • বাচ্চাদের ব্যবহারের জিনিস অপরিষ্কার রাখা
  • কন্টাক লেন্স ব্যবহার করা

চোখের পিচুটি প্রতিরোধে মায়েদের করণীয়

বাচ্চার জন্মের সময় সুস্থতা এবং জন্মের পরবর্তী সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে বাচ্চার মায়ের উপর। চোখের সমস্যার দূর করতে মায়েরা যা করতে পারেন-

  • প্রেগন্যান্ট অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • বাচ্চার ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন এ ওষুধ খাওয়াতে হবে
  • বাচ্চাকে প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার অভ্যেস করাতে হবে
  • হলুদ সবজি বা ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে
  • বাচ্চার নিয়ম করে ভিটামিন এ টিকা দেওয়াতে হবে

ডাক্তারের পরামর্শ

বাচ্চাদের চোখের পিচটি হলে সাধারণত নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বাচ্চার চোখের অবস্থা অনুযায়ী চোখের ড্রপ বা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। তবে বারবার চোখ পরিস্কার এবং সঠিক মেসেজ এর মাধ্যমে চোখের পিচুটি দূর করা সম্ভব। তবে চোখের কোন রোগ নিয়ে হেলাফেলা করা উচিত নয়।

কখন ডাক্তারের কাছে নিবেন

বাচ্চাদের কোন অসুখ কে ছোট করে দেখা উচিত নয়। ছোটখাটো অসুখ ঘরোয়া ভাবেই সমাধান করা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে নেওয়া অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ।

১। বাচ্চার চোখ লাল হয়ে গেলে ক্রমাগত জল পড়লে বাচ্চা বার বার চুলকালে

২। বাবা মায়েরা যদি হাই পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করে থাকে। তাহলে কোন অসুবিধা না থাকলেও তিন বছর পর থেকে বাচ্চাকে নিয়মিত চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত।

৩। বাচ্চা যদি বেশিরভাগ সময় কোন কিছু দেখতে হলে ঝুকে যায় বা কাছে আসতে চায় এক চোখ চাপ দিয়ে আরেক চোখে দেখতে চেষ্টা করে।

৪। আলোর দিকে তাকাতে না চায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

৫। চার থেকে আট বছরের বাচ্চাদের চোখে যদি দেখতে সমস্যা হয় এবং ডাক্তার চশমা পরার পরামর্শ দেন তাহলে চশমা পরাই উত্তম। কন্টাক্ট লেন্স দেওয়া যাবে না।একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যায় ডাক্তারের অনুমতি নিইয়ে।

বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয়

মন্তব্য

আজকে আমরা বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয় ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটা আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply