দামি রক্তের গ্রুপ কোনটি?
পৃথিবীতে বিভিন্ন রক্তের গ্রুপের মানুষ পাওয়া যায়। কিছু রক্তের গ্রুপ আছে যা খুবই অ্যাভেলেবেল কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক রক্তে গ্রুপ আছে যা খুবই দুর্লভ। অনেকেই জানতে চায় দামি রক্তের গ্রুপ কোনটি এবং বাংলাদেশের কোন রক্তের গ্রুপের মানুষ সবচেয়ে বেশি এবং কোনটি রেয়ার রক্তের গ্রুপ। তাদের জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটি। আজকে আমরা দামি রক্তের গ্রুপ এবং সকল রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – প্রেমে পড়লে কি হয়? কিভাবে বুঝবেন প্রেমে পড়েছেন?
রক্তের গ্রুপ কয়টি?
সাধারণত রক্তের কোষগুলো ৩৪২টি এন্ড ডিজাইন থাকে। এই এন্টিজেন গুলোর কম্বিনেশন এর নির্ধারণ করে কোন রক্তের গ্রুপ কি হবে এই এন্টিজানে ভিত্তিতে। মানুষের রক্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলো হলো- এ, বি, এবি এবং ও। প্রত্যকটি রক্তের গ্রুপ আবার দুই ভাগে বিভক্ত পজেটিভ এবং নেগেটিভ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মানুষের শরীরে মোট আট রকমের রক্ত পাওয়া যায়। সেগুলো হল-
- এ পজেটিভ
- এ নেগেটিভ
- বি পজেটিভ
- বি নেগেটিভ
- ও পজেটিভ
- ও নেগেটিভ
- এবি পজেটিভ
- এভি নেগেটিভ
দামি রক্তের গ্রুপ কোনটি
অনেকেই হয়তো সবচেয়ে দামি রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ও নেগেটিভ বি নেগেটিভ বা এবি নেগেটিভ বলবে। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ দামি ব্লাড গ্রুপটি হল বোম্বে ব্লাড গ্রুপ। ডক্টর ওয়াইএম ভেন্ডি ১৯৫২ সালে বোম্বে শহরে কেইএম নামের হাসপাতালে একটি রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন এবং তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন তার রক্ত সবার থেকে আলাদা।
অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর জানা গেল এটি নতুন একটি ব্লাড গ্রুপের। যেহেতু এটি তৎকালীন বোম্বে শহরে পাওয়া গিয়েছিল তাই এই ব্লাড গ্রুপের নাম বোম্বে ব্লাড গ্রুপ রাখা হয়। এটি এতটাই দুর্লভ যে ১০ লাখ লোকের মধ্যে মাত্র চারজনের পাওয়া যায়। সারা ভারতবর্ষে জুড়ে এই রক্তের গ্রুপে শুধুমাত্র ৪০০ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও রেয়ার রক্তের গ্রুপ
এমন কোন রক্তের গ্রুপের কথা হয়তো কেউ জানেই না যে গ্রুপের মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে ৫0 ও এর কম। অবিশ্বাস্য হলেও এটি বিশ্বের বিরলতম রক্তের গ্রুপ। রক্তের এই গ্রুপের নাম গোল্ডেন ব্লাড। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই নিউজটি জানিয়েছে এ রক্তের আর এই এইচ সিস্টেমে ৬১ অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল না। এ রক্তের নাম দেওয়া হয় আর এইচ নাল।
১৯৬১ সালের এই প্রথম এই রক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর থেকে পর্যন্ত বেশি মাত্র ৪0 জন মানুষের গোল্ডেন ব্লাডের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এ ধরনের রক্ত বিরল হওয়ার কারণে এই গ্রুপটির নাম দেওয়া হয়েছে গোল্ডেন ব্লাড। বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় 800 কোটি ৮০০ কোটি জনসংখ্যা ৭.৬ বিলিয়নেরও বেশি। যাদের মধ্যে গত ৫৭ বছরের ৩৯ জনকে পাওয়া গেছে যাদের শরীরে বিরল রক্তের গ্রুপ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যাদের শরীরে আর এইচ লাল গ্রুপের রক্ত রয়েছে তারা যেকোনো গ্রুপের মানুষকে রক্ত দিতে পারেন। তবে সবার থেকে রক্ত নিতে পারেন না। তাই চিকিৎসকদের মতে যাদের শরীরে এই গ্রুপের রক্ত রয়েছে তাদের খুব সাবধানে জীবন যাপন করা জরুরী।
গোল্ডেন ব্লাড এমন হবার কারণ
মূলত জিনগত কারণে গোল্ডেন ব্লাড দেখা যায়। আগের প্রজন্ম থেকে পরের প্রজজননেই এই ধারা প্রবাহিত হতে পারে। সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তবে কয়েকজন প্রজন্ম পর হঠাৎ একজন এর গোল্ডেন ব্লাড গ্রুপ এর ব্লাড এর দেখা মিলতে পারে।
বিখ্যাত কিছু দেশের রক্তের গ্রুপের বিন্যাস
অস্ট্রলিয়া
মোট জনসংখ্যা- ২৫ কোটি ৪৬৬ লক্ষ ৪০০৯
ও পজেটিভ- ৪০%
এ পজেটিভ- ৩১%
বি পজেটিভ- ১২%
এবি পজেটিভ- ২%
ও নেগেটিভ- ৯%
এ নেগেটিভ- ৭%
বি নেগেটিভ- ২%
এবি নেগেটি- ১%
বাংলাদেশ
জনসংখ্যা- ১ লক্ষ ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ১৮
ও পজেটিভ- ২১%
এ পজেটিভ- ২৬.৩%
বি পজেটিভ- ৩৩.১২ পার্সেন্ট
এবি পজেটিভ- ৯.৬৯%
ও নেগেটিভ- ০.৫৩%
এ নেগেটিভ- ০.৪৮ পার্সেন্ট
বি নেগেটিভ- 0.৬%
এবি নেগেটিভ- ১৭%
কানাডা
মোট জনসংখ্যা- ৩৭ কোটি ৬৯ লক্ষ চার চার হাজার ৮৫
ও পজেটিভ- ৩৯.০%
এ পজেটিভ- ৩৬ পার্সেন্ট
বি পজেটিভ- ৭.৬%
এবি পজেটিভ- ২.৫%
ও নেগেটিভ- ৭%
এ নেগেটিভ- ৬%
বি নেগেটিভ- ১.৪%
এবি নেগেটিভ- ০.৫%
ডেনমার্ক
মোট জনসংখ্যা- ৫৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪১0
ও পজেটিভ- ৩৫ পার্সেন্ট
এ পজেটিভ- ৩৭ পার্সেন্ট
বি পজেটিভ- ২২%
এ বি পজেটিভ- ৪%
এ নেগেটিভ- ৭%
ও নেগেটিভ- ২%
বি নেগেটিভ- ০.৩%
এবি নেগেটিভ- ১%
ফ্রান্স
মোট জনসংখ্যা- ৬৭ কোটি ৮৪ লক্ষ ৮১৫৬
ও পজেটিভ- ৩৬.৫%
এ পজেটিভ- ২%
বি পজেটিভ- ৭.৭%
এ বি পজেটিভ- ২.৫%
ও নেগেটিভ- ৬.৫%
এ নেগেটিভ- ৬.১%
বি নেগেটিভ- ১.৪%
এবি নেগেটিভ- ০.৪%
ইন্ডিয়া
মোট জনসংখ্যা- ১৩৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ত্রিশ হাজার ৫১৪
এ পজেটিভ- ২২%
ও পজেটিভ- ৩২.৩%
এবি পজেটিভ- দশমিক ৮%
বি পজিটিভ-৩২.১%
ও নেগেটিভ- ২.৩%
এ নেগেটিভ- ১.৩৬ পার্সেন্ট
বি নেগেটিভ- ২0%
এভি নেগেটিভ- ০.৪৮ পার্সেন্ট
পাকিস্তান
মোট জনসংখ্যা- ২৩ কোটি ৮১ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৪
ও পজেটিভ- ৩০.৪%
এ পজেটিভ- 53%
বি পজেটিভ- ৩.২৪ পার্সেন্ট
এবি পজেটিভ- ৮.৮৩%
ও নেগেটিভ- ৩.১%
এ নেগেটিভ- ২.৫%
বি নেগেটিভ- ০,১৩%
এবি নেগেটিভ- ০.৯১%
সৌদি আরব
মোট জনসংখ্যা- ৩৪ কোটি ১৭৩ হাজার ৪৯৮
ও পজেটিভ- ৪৭.৮%
এ পজেটিভ- .৯%
এ বি পজেটিভ- ৪%
ও নেগেটিভ- ৪%
এ বি নেগেটিভ- ০.৩%
এ নেগেটিভ- ২%
বি নেগেটিভ- ১,২%
রক্তের গ্রুপ পজেটিভ এবং নেগেটিভ হওয়ার কারণ
আমাদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার জন্য আমাদের রক্তে অবস্থিত লোহিত কণিকার গায়ে অবস্থিত এন্ড ডিজাইন এবং প্লাসমে অবস্থিত থাকে। কনিকায় এ থাকলে তাকে বলে এ গ্রুপ, বি থাকলে বি গ্রুপ, এ বি দুটোই থাকলে তাকে বলে এবি গ্রুপ। আর কোন এন্টিজেন না থাকলে তাকে বলি ও গ্রুপ। এখন এ ,বি, এবি অথবা ও গ্রুপের সকল লোহিত কণিকার গায়ে আরও এক ধরনের এক ডিজাইন থাকে যাকে আমরা বলি আর এইচ ডিজাইন থাকলে আমরা রক্তের গ্রুপ পজেটিভ বলি আর না থাকলে রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ বলি।
ঝুঁকিপূর্ণ রক্তের গ্রুপ
ঝুঁকিপূর্ণ রক্তের গ্রুপ হল নেগেটিভ গ্রুপের সবগুলো রক্ত। এই গ্রুপের রক্ত যাদের আছে তাদের বড় কোন রোগ সহজেই হামলা করে বসে। এসব নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের মানুষদের নেগেটিভ গ্রুপে রক্তের মধ্যে ও নেগেটিভ সবচেয়ে বেশি মারাত্মক ও রেয়ার। তাই ওর নেগেটিভ গ্রুপের মানুষকে আগে থেকে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে।
বাংলাদেশের রেয়ার রক্তের গ্রুপ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যে যে ব্লাড গ্রুপের মানুষ লক্ষ্য করা যায় তা হল ও পজেটিভ। বাংলাদেশের প্রায় ১০০ জনের ১০ জনের ও পজেটিভ রক্ত। বাংলাদেশের সবচেয়ে নেগেটিভ রক্তের সংখ্যা খুবই কম। নেগেটিভ গ্রুপে রক্ত এ নেগেটিভ, ও নেগেটিভ এবং এবি নেগেটিভ রক্তের মধ্যে ও নেগেটিভ এবং এবি নেগেটিভ রক্ত সবচেয়ে বেশি দুর্লভ।
কেননা দশ হাজারে একজনের রক্ত এই গ্রুপের হয়ে থাকে। তাই যেকোনো প্রয়োজনে ও নেগেটিভ রক্ত খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় না। তাই নেগেটিভ রক্ত যাতে রয়েছে তারা খুব সাবধানে চলাচল করতে হবে।
মন্তব্য
আজকে আমরা পৃথিবীর দামি রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি রক্তের গ্রুপ নিয়ে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। অথবা আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপলাই দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ, আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
- প্রেমে পড়লে কি হয়? কিভাবে বুঝবেন প্রেমে পড়েছেন?
- ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ