ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড
বর্তমান সরকার দরিদ্র মানুষের যেসব সুবিধা বা ভাতা দিয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভবতী ভাতা। গর্ভবতী ভাতার জন্য প্রথমে ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে হয়। এজন্য সরাসরি বা অনলাইনেও আবেদন করা যায়। ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর্টিকেল কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আর্টিকেলটি স্কিপ না করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
আরো পড়ুন – গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন
ইউনিয়ন এর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি
সাধারণত গ্রামের দরিদ্র মহিলাদের অর্থ উপার্জনের জন্য পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভারী কাজ করতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বা মাতৃকালীন অবস্থায় কোন কঠিন কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই পুষ্টিকর খাবার বা ভরণপোষণের অভাবে মা অসহায় অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। দরিদ্র মায়েদের এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে মাতৃকালীন ভাতা সরকার দিয়ে থাকে।
কমপক্ষে ২০ বছর বা তার বেশি বয়সের গর্ভকালিন অবস্থায় যেকোনো মহিলা এ ধরনের সেবা পেতে পারে। মাসে ৮০০ টাকা হারে প্রতি ছয় মাস অন্তর করে ৪ বার বার ২৪ মাস ভাতা প্রদান করা হয়।
ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
এই পর্যায়ে আমরা দেখবো ২০২৩ সালে এসে ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে। সময়ের সাথে সাথে কাগজপত্র কিছুটা কম বা বেশি লাগতে পারে। প্রয়োজনে আপনার ইউনিয়নে আবেদনের পূর্বে যোগাযোগ করার জন্য বলা হচ্ছে।
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তিক গর্ভকালীন সনদ
- নাগরিক সনদ
- ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
মাতৃকালীন ভাতার অনলাইন আবেদনের নিয়ম
মাতৃকালীন ভাতার জন্য ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করা যায়। সেজন্যই সবচাইতে নিশ্চিন্ত ওয়েবসাইট হলো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ওয়েবসাইটটি। সেখানে গেলেই অনলাইনে মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করা যাবে।
অনলাইনে মাতৃত্বকাল ভাতা মঞ্জুরীর আবেদন ফরম আবেদনের নিয়ম বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন –
- নিজের নাম
- জন্ম সাল
- পিতার নাম
- মাতার নাম
- স্বামীর নাম
- বর্তমান ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
এইসকল তথ্য দিয়ে খুব সহজেই আবেদন করতে পারবেন।
এই কার্ডের জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিজে নিজের মোবাইল বা ল্যাপটপ কম্পিউটার দিয়ে করা যায়। তবে যাদের নিজে নিজে আবেদন করা নিয়ম জানা নেই তারা যে কোন কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের দোকানে গিয়েই খুব সহজে আবেদন করতে পারবেন।
মতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম পিফিএফ ডাউনলোড
২০২৩ সালে ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে উপরে আমরা তা আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে বাসায় বসে মতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম পিফিএফ ডাউনলোড করে নিজে নিজে পূরন করে ইউনিয়ন অফিসে জমা দিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার দোকানে অতিরিক্ত আর কোন টাকা খরচ করতে হবে না।
মতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম পিফিএফ ডাউনলোড করতে নিচের বাটনে ক্লিক করে পিডিএফ ডাউনলোড করে নিন। ফরম পূরন করে আপনার ইউনিয়নে জমা দিতে পারেন।
ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড প্রক্রিয়া বিস্তারিত
কোন দরিদ্র মা ভাতার জন্যই মনোনয়ন পরিষদের যোগাযোগ করতে হবে এবং নিজের নাম প্রথমে তালিকাভুক্ত করতে হবে। অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দরিদ্র কতজন গর্ভধারণের মা আছেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়ভাবে জড়িত এবং তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। তখন জরিপে প্রাপ্ত তথ্য প্রাথমিকভাবে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রাপ্ত তথ্য পরীক্ষা করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করবেন। আরো কিছু দাপ্তরিক কাজ শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ভাতা ভোগীদের নিকট ভাতার কার্ড বিতরণ করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা
ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড আবেদনের যোগ্যতা
দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১১ অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়ে থাকে সে অনুযায়ী যোগ্যতা গুলো হল-
- প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল যেকোনো একবার
- বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে হতে হবে
- মোট মাসিক আয় পনেরশো টাকার নিচে হতে হবে
- দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবে
- কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গা বাস করে এমন মায়েদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে
- নিজের বা পরিবারের কোন কৃষি জমি নেই এমন সুবিধা বঞ্চিতদের ভাতা দেওয়া হয়
- জুলাই মাসে উপকার ভোগীকে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে
- অধিক তর দরিদ্র মায়েরা অগ্রাধিকার বেশি পাবেন।
- প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভে সন্তান গর্ভাবস্থায় বা জন্মের দুই বছরের মধ্যে মারা গেলে তৃতীয় গর্ভধারণকালে ভাতা প্রাপ্ত হবে।
- একজন ভাতা ভোগী জীবনে একবার দুই বছর সময় কালের জন্য মাতৃকাল ভাতা পাবে।
- কোন কারনে সন্তানের মৃত্যু হলে অথবা গর্ভপাতের কারণে নির্দিষ্ট চক্র অসম্পূর্ণ থাকলে তিনি পুনঃরায় গর্ভবতী হলে পরবর্তীতে দুই বছরের মাতৃত্ব ভাতা প্রাপ্ত হবে
ভাতার জন্য আবেদনের খরচ
মাতৃকালের ভাতার জন্য যে কোন জায়গায় আবেদন করার কোন ফি নেওয়া হয় না। এসব কাজ বিনামূল্যেই করা হয়ে থাকে। সেজন্য যদি কোন ব্যক্তি বা অসাধারণ চক্র মাতৃকালীন ভাতার কার্ডের জন্য টাকা চেয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আইনের সুবিধা নিতে হবে।
ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড প্রাপ্তির সময়
মাতৃকালীন ভাতা মোট ৯৮ দিনের মধ্যে দেওয়া শুরু হয়ে থাকে। প্রতি ছয় মাসে পর পর চারবার অথবা ২৪ মাসের জন্য গর্ভবতীদের ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। তবে প্রতিবছর ই ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড আবেদনের নিয়ম ও যোগ্যতা চেঞ্জ হয়। তাই আপনি আবেদনের পূর্বে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড সুবিধা
- দরিদ্র মা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে
- গর্ভ ভাতা মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন
- অর্থের অভাবে তাকে কষ্ট করতে হয় না
- পরিবারের ভরণপোষণ ও সম্ভব হয়ে যায়
- এবং শিশু স্বাস্থ্য এবং মায়ের স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়
মাতৃকালীন ভাতার আবেদনের সময়
মাতৃকালীন ভাতার জন্য বছরের যে কোন সময় আবেদন করা যায়। অর্থাৎ মাত্রকালীন ভাতার মেয়াদ সারা বছর সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে কোন সময় মাতৃকালীন ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করা যাবে। তবে এইজন্য গর্ভবতীদের জুলাই মাসে গর্ভবতী থাকতে হবে। কেননা প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদের গর্ভবতীদের তালিকা তখন তৈরি করা হয়ে থাকে।
মাতৃকালীন ভাতা সম্পর্কে তথ্য
মাতৃকালীন ভাতা সম্পর্কে তথ্য জানতে অথবা গর্ভকালীন ভাতা বা কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসে যাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মাত্রকালীন ভাতা না পেলে বা মাতৃকালীন ভাতার মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অথবা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে।
ইউনিয়ন গর্ভবতী ভাতা কয় টাকা দেয়?
বাংলাদেশ সরকার মাসে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা মূল্যে এই ভাতা গর্ভবতীদের দিতে পারে। প্রতি ছয় মাসে পর পর চারবার অথবা ২৪ মাসের জন্য গর্ভবতীদের গর্ভকালীন ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও দুই সন্তানের মায়েদের ক্ষেত্রে ৩৬ মাস বা তিন বছর পর্যন্ত গর্ভবতী ভাতা পেয়ে থাকেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রার্থীদের পরিসংখ্যান এবং সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্বাক্ষর হলে উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব ফাইলগুলো পরীক্ষা করেন এবং উপজেলা কমিটির চেয়ারম্যান আবেদন করে।
ইউপিতে অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
ইউপিতে বর্তমান অনলাইনেও গর্ভবতী ভাতার কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন করতে হবে এবং ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্র হতে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে। ইউপিতে সমাজসেবা এড্রেস হতে আবেদন অনলাইনে করা যায়। মূলত জাল-জালিয়াতি রোধে সরকার অনলাইন পোর্টালে আবেদনের মাধ্যমে এ ভাতার টাকা প্রেরণ ও পরিশোধ করে থাকে।
দারিদ্র সীমার নিচের জনসাধারণ ও গর্ভবতীদের সন্তানদের ভরণ পোষণ ও সেবার জন্য মূলত ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। অনলাইন সফটওয়্যারে এন্ট্রি করার লিঙ্ক-
Http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/online registration
সাবধানতা
যেহেতু গর্ভবতী ভাতা নগদ অর্থ প্রদান করা হয় তাই বিভিন্ন প্রতারক চক্র সে সময় সক্রিয় হয়ে থাকে। আবার এই কার্ড গর্ভবতীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় প্রতারকগণ টাকা নেয়ার কথা বলে কোন কোন ক্ষেত্রে ঘুষ বা বাড়তি টাকা নিয়ে দেওয়ার কথা বলে থাকে। তাই ভাতা কার্ড পাওয়ার পূর্বে এবং টাকা নেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোন খারাপ মানুষের পাল্লায় না পড়ে থাকে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় গর্ভবতী মহিলাদের কাছ থেকে মাতৃকালীন ভাতা কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা করে ঘুষ নিয়ে থাকে। বৈধভাবে কার্ড করে দিতে কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। তাদেরকে ভুয়া গর্ভবতী কার্ড পরিশোধ করে তাদের থেকে টাকা হাতে নিয়ে যায়।
মন্তব্য
আজকে আমরা ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
- ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়