ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য রহমতের মাস। এ মাস আল্লাহতালা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে জান্নাতে দরজা খুলে দেন এবং রোজাদারদের পূর্বে সকল গুনাহ মাফ করে দেন। এছাড়াও রোজার অনেক বিশেষত্ব রয়েছে। আজকে আমরা ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – রমজানের ইসলামিক স্ট্যাটাস 2023
ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত বিস্তারিত
বিভিন্ন উলামায়ে কেরামের মতে রমজানের একেক রোজার দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাকে একেক রকম ফজিলত দিয়ে থাকেন। নিজের ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
প্রথম রোজার ফজিলত – রোজাদার কে নবজাতকের মত নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়
দ্বিতীয় রোজার ফজিলত – রোজাদারের মা-বাবাকে মাফ করে দেওয়া হয়
তৃতীয় রোজার ফজিলত – একজন ফেরেশতা আবারো রোজাদারের ক্ষমার ঘোষণা দেয়
চতুর্থ রোজার ফজিলত – রোজাদার কে আসমানী বড় বড় চার কিতাবের বর্ণ সমান সওয়াব প্রদান করা
পঞ্চম রোজার ফজিলত – মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে নামাজে আদায়ের সওয়াব দেয়া হয়
ষষ্ঠ রোজার ফজিলত – ফেরেশতাদের সাথে সপ্তম আকাশ অবস্থিত বায়তুল মামুর তাওয়াফের সওয়াব প্রদান করা হয়
সপ্তম রোজার ফজিলত – ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা আলাই সালাম এর পক্ষে সহযোগিতা করার সময় সমান সওয়াব প্রদান করা হয়
অষ্টম রোজার ফজিলত – রোজাদারের উপর হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর মত রহমত বর্ষিত হয়
নবম রোজার ফজিলত – নবী রাসূলদের সাথে দাড়িয়ে ইবাদতের সমান সওয়াব দেয়া হয়
১০ ম রোজার ফজিলত – বিনা হিসাবে জান্নাত দেওয়া হয়
১১ তম রোজার ফজিলত – রোজাদারের মৃত্যু নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ নিশ্চিত হয়
১২ তম রোজার ফজিলত – হাশরের ময়দানে রোজাদারের চেহারা পূর্ণিমা চাঁদের মত উজ্জ্বল করা হবে
১৩ তম রোজার ফজিলত – হাশরের ময়দানের সকল বিপদ থেকে নিরাপদ করা হবে
১৪ তম রোজার ফজিলত – হাশরের ময়দানে হিসাব নিকাশ সহজ করা হবে
১৫ তম রোজার ফজিলত – সমস্ত ফেরেশতারা রোজা তাদের জন্য দোয়া করে
১৬ তম রোজার ফজিলত – আল্লাহপাক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দান করবে
১৭ তম রোজার ফজিলত – একদিনের জন্য নবীগণের সমান সওয়াব দেওয়া হবে
১৮ তম রোজার ফজিলত – রোজাদার এবং তার মা-বাবার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয়
১৯ তম রোজার ফজিলত – পৃথিবীর সকল পাথর ঢিলা টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে
২০ তম রোজার ফজিলত – আল্লাহর পথে জীবন দানকারী শহীদের সমান সোয়া প্রদান করা হয়
২১ তম রোজার ফজিলত – রোজাদারের জন্য জান্নাত একটি উজ্জ্বল প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়
২২ তম রোজার ফজিলত – হাশরের ময়দানে সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করা হয়
২৩ তম রোজার ফজিলত – জান্নাতের রোজাদার জন্য একটি শহর নির্মাণ করা হয়
২৪ তম রোজার ফজিলত – রোজাদারের যেকোনো ২৪ টি দোয়া কবুল করা হয়
২৫ তম রোজার ফজিলত – কবরে শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়
২৬ তম রোজার ফজিলত – ৪০ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়
২৭ তম রোজার ফজিলত – চোখের পলকে পুলসিরাত পার করে দেয়া হয়
২৮ তম রোজার ফজিলত – জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুণ করা হয়
২৯ তম রোজার ফজিলত – ১০০০ কবুল হজের সওয়াব প্রদান করা হয়
৩০ তম রোজার ফজিলত – পুরা রমজানের ফজিলত দ্বিগুণ দেওয়া হয়
আরো পড়ুন – রমজানে পার্ট টাইম জব বাংলাদেশ ২০২৩
রমজানের রোজার ফজিলত
- রোজার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই জীবন এবং বিনা হিসেবে দিবেন
- প্রত্যেক মানুষের আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয় একটি নেকির ছোয়াব ১০ গুন থেকে ২৭ গুন পর্যন্ত হয়
- আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন বান্দার অন্য ইবাদত তার জন্য কিন্তু রোজা আলাদা কেননা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজে বিনিময় প্রদান করব বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তি থেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে
- আল্লাহতালা রোজাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
- রোজা হল জান্নাত লাভের পথ
- রোজাদার জান্নাতে প্রবেশ করবে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে
- রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে ঢাল ও দুর্গ
- কিয়ামতের দিন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে
- রোজাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়
- রোজা বড় বড় গুনাহের কাফফারা
- রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধযুক্ত
- রোজাদার পরকালের সিদ্দিকিন ও শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে
- রোজাদারকে আল্লাহ তাআলা খালি হাতে ফিরায় না
- রোজাদারের সব দোয়া কবুল হয়
- রোজা হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেয়
- আল্লাহর নিকট লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো রোজা রাখা
রমজানের বিভিন্ন দোয়া
১। কালেমার সর্বোত্তম তাসবিহ- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা
২। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইহি
৩। রাব্বিক ফিরলি ওয়াতুব আলাইহি ইন্নাকা আনতা তাওয়াবুর রাহিম
৪। আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাজি লা ইলাহা আল্লাহু হাইরুল কাইয়ুম অতুবু ইলাইহি
৫। সাইয়েদুল ইসতেগফার। আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়দ আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
৬। জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া- আল্লাহুমা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া আজিরনা মিনান নার
৭। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার
৮। আসতাগফিরুল্লাহ আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু আলাইহি
৯। রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহিম
রমজানের বিভিন্ন আমল
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো রমজান মাস জুড়ে বেশি বেশি তাওহীদের ঘোষণা দিতে বলেছেন। এছাড়াও বেশি বেশি ইস্তেগফার বা আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, জান্নাতের আশা ও জাহান্নাম থেকে নাজাতের জন্য দোয়া করার কথা বলেছেন। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী উল্লেখিত তাসবি ইস্তেগফার ও দোয়া গুলো বেশি বেশি পড়তে হবে। অর্থসহ কুরআন পড়তে হবে।
বেশি বেশি দান সদকা করতে হবে এবং তারাবির সেহরি ইফতার সহ বিভিন্ন ধরনের সুন্নত গুলো বেশি বেশি পালন করতে হবে। ফরজ ইবাদতের উপর জোর দিতে হবে, গরিবদের সাহায্য করা, বেশি বেশি দান সদকা করা অন্তরে হেফাজত করা, দৃষ্টির হেফাজত করা এবং নিজের আত্মাকে সংযত রাখা রমজানের সবচেয়ে উত্তম আমল গুলোর মধ্যে অন্যতম।
রমজানের যেসব কাজ করা উচিত নয়
- মিথ্যা কথা বলা
- গীবত করা
- ঝগড়া বিবাদ করা
- কারো সাথে খারাপ আচরণ করা
- কারো উপর অন্যায় বা জুলুম করা
- নিজেদের দৃষ্টি হেফাজত না করা
- কারো ব্যাপারে কুৎসা রটানো
- গালিগালাজ করা বা অশ্লীল কথাবার্তা বলা
- সাহরি না খেয়ে রোজা রাখা
- বিলম্বে ইফতার করা
- লাইলাতুল কদর তালাশ না করা
- মিথ্যা বলা সহ বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজ করা
- তারাবি সহ বিভিন্ন সুন্নত ত্যাগ করা
- বেশি বেশি দান সদকা না করা
- কোন জিনিস অপচয় বা অপব্যয় করা
- তাড়াহুড়া করে কোরআন খতম করা
- ফরজ নামাজে অলসতা করা
- দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা
- নিজের অন্তরকে সব রকম গুনাহ থেকে বিরত না রাখা
- সেহরি বা ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা
- রমজানে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করা
- রমজানে রোজা রেখে বেশি বেশি ঘুমানো
- রোজা রেখে মিথ্যা মামলা সাক্ষ্য বা মিথ্যা কথা বলা
- বেহুদা কাজে বা দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা
- রিয়া বালক দেখানো ইবাদত করা
- বেশি বেশি অশ্লীল ছবি নাটক ইত্যাদি দেখা
- ও বিদআত করা
মন্তব্য
আজকে আমরা ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি রমজান সম্পর্কে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস বা ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও রমজান সম্পর্কে কোন মতামত মন্তব্য অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আল্লাহ তাআলা রমজান জুড়ে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী তাসবিহ ইস্তেগফার দোয়া গুলো বেশি বেশি পড়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।
আরো পড়ুন –