একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

মুসলমানদের জন্য রহমত এবং বরকতের মাস হলো রমজান মাস। আর রমজান মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে তারাবির নামাজ সাধারণত তারাবি নামাজ দুই ধরনের পড়া যায় সূরা তারাবি এবং খতম তারাবি। অনেক সময় জামাতের সাথে তারাবি পড়া সম্ভব হয় না তাই একাকি তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়।

আজকে আমরা একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম ও তারাবি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – রমজানে পার্ট টাইম জব বাংলাদেশ ২০২৩

তারাবির নামাজ কি?

তারাবি আরবি শব্দ যা তারবিয়াতুন শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো আরাম, প্রশান্তি অর্জন, বিরতি দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তরের অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সমান বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়। সেজন্য এই নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়।

তারাবির নামাজের ধরন

সাধারণত আমাদের দেশে দুই ধরনের তারাবির নামাজ প্রচলিত রয়েছে। একটি হল সূরা তারাবি আরেকটি হল খতম তারাবি। সুরা তারাবি হল পবিত্র কোরআনের যে কোন সূরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা। অন্যদিকে খতম তারাবি হলো রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি আদায় করা উপায় পদ্ধতি ইসলাম অনুমোদন করে। তবে খতমে তারাবিতে সওয়াব বেশি।

আরো পড়ুন – ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত

একা একা তারাবির নামাজ পড়া যায়?

তারাবির নামাজ একা একা পড়া যায় মসজিদে কিংবা বাড়িতে। এমন কি মহল্লার কিছু লোক জামাতে পড়লেও সবার তরফ থেকে তারাবির নামাজ আদায় হয়ে যায়। তবে জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নতে কিফায়া। একা একা পড়লে মসজিদে জামাতে পড়া সোয়াব পাওয়া যায় না তাই জামাতের সহিত মসজিদে পড়া উত্তম।

একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

ধাপ ১- এশার নামাজ এর চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ২০ রাকাত যে নামাজ আদায় করা হয় এটাই তারাবির নামাজ।

ধাপ ২- দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। আবার দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করতে হবে।

ধাপ ৩- বিশ্রামের সময় তাজবিহ পড়তে হবে দোয়া দুরুদ এবং জিকির করতে হবে

ধাপ ৪- জামাতে তারাবি নামাজ পড়লে কেরাত উচ্চস্বরে পড়তে হয় তবে একাকি নামাজ আদায় করলে উচ্চ বা নিচু যেকোনো ভাবেই পড়া যায়।

ধাপ ৫- তারাবির নামাজ বিতর নামাজের আগে বা পরে যে কোন সময় পড়া যায়। তবে ভিতরে নামাজের আগে পড়ে উত্তম। তারাবির নামাজ সুন্নতি ইবাদত। তাই রমজান মাসে জামাতের সাথে খতম তারাবির নামাজ অবশ্যই পড়া উত্তম।

ধাপ ৬- সুরা তারাবি পড়তে হলে অন্য নামাজের মত যে কোন দু রাকাতে যে কোন সূরা দিয়ে কেরাত মিলিয়ে একই নিয়মে পড়তে হয়।

জামাতের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করার নিয়ম

১। প্রথমে ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে। ইমামের সাথে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে ছানা পড়তে হবে। ইমাম শব্দ করে সূরা শুরু করার আগে সানা শেষ করতে হবে

২। এরপর ইমাম যখন সুরা ফাতিহা এবং এর সাথে মিলিয়ে অন্য সূরা পড়বে তখন নীরব থেকে সেই তেলাওয়াত শুনতে হবে। এরপর ইমাম যখন সুরা ফাতেহা এবং এর সাথে মিলিয়ে অন্য সূরা পড়বেন তখন নীরব থেকে সেই তেলাওয়াত শুনতে হবে

৩। ইমাম যখন রুকুতে যাবেন এবং মনে মনে রুকুতে গিয়ে দোয়া করবেন তখন মুসল্লী হিসেবে আপনাকেও রুকুতে গিয়ে দোয়া পড়তে হবে

৪। এরপর রুকু শেষ করে সিজদায় যাওয়ার পর সেখানেও ইমাম যখন মনে মনে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়বে আপনাকেও তখন এই দোয়াটি পড়তে হবে।

৫। এভাবে প্রথম রাকাতে দুইটি সিজদা দিয়ে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে। এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে আবার হাত বাঁধতে হবে।

৬। এরপর ইমাম যেটুকু সময় মনে মনে বিসমিল্লাহ পড়বেন আপনিও বিসমিল্লাহ সম্পূর্ণ পড়বেন। ইমাম যখন তারাবির নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সূরার ফাতিহা এবং অন্য সূরা পড়বেন তখন আপনিও নিরবে তেলওয়াত শুনবেন। কোনভাবেই নিজের তেলাওয়াত করা যাবে না

৭। এবার প্রথম রাকাতের মত রুকু দিতে হবে দুই সেজদা শেষে যখন আখেরি মোনাজাতে বসতে হয় তখন ইমাম নীরবে যে দোয়াগুলা পড়েন সেগুলো আপনাকেও মনে মনে পড়তে হবে

৮। আখেরি বৈঠকে আত্তাহিয়াতু দুরুদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে

৯। সর্বশেষে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা রোজাদার এমনকি রোজা না রাখলেও সকলেরই তারাবির নামাজ পড়া উত্তম। তারাবির নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সাধারণত তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। অনেকের মতে ২০ রাকাত আবার অনেকের মতে আট রাকাত। যে কেউই তার ইচ্ছামত পড়তে পারবে। তবে তারাবির নামাজ সর্বনিন্ম ৮ রাকাআত পড়া উচিত।

তারাবির নামাজের দোয়া

দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত পড়ার পর বিশ্রামের সময় যে দোয়াটি পড়তে হয় সেটি হল- “সুবাহানাল্লদজিল মুলকে ওয়াল মালাকুতে।সুবাহানাল্লাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কিবরিয়ায় ওয়াল জাবারুত। সুবাহানাল মালিকিল হায়াল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুবুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়ারাব্বুল মালাইকাতিওয়ার রুহ”

তারাবি নামাজের মোনাজাত

“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার।ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ানারি। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজুল ইয়া গাফফারু ইয়া কারিমু ইয়া ছাত্তারু ইয়া খালিকু ইয়া বারিয়ু। আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনার নার।ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহারামার রাহিমিন”

বাংলা অর্থ- হে আল্লাহ তায়ালা আমরা তোমায় নিকটে জান্নাতে চাওয়া প্রার্থনা করছি এবং দোযখের আগুন হতে রক্ষা পেতে প্রার্থনা করছি। হে বেহেস্ত এবং দোজখে সৃষ্টি কর্তা হে মহা প্রতাপশালী মার্জনাকারী, হে দানশীল, হে আবরণকারী, হে দয়াময়, হে শক্তিশালী। হে সৃষ্টিকর্তা হে অনুগ্রহকারী হে আল্লাহ আমাদের দোজখের আগুন হতে রক্ষা করো। হে রক্ষাকারী হে রক্ষাকারী হে রক্ষাকারী তোমার অনুগ্রহ দ্বারা সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা।

তারাবির নামাজের সময়

সাধারণত তারাবির নামাজের নির্দিষ্ট কোন সময় এর কথা উল্লেখ করা নেই হাদিসে। তবে তারাবির নামাজ শুরু হয় এশার নামাজের সময় থেকে। তারাবির নামাজের সময় গুলো এশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। এর মধ্যে রাত্রি দি প্রহরে তাহাজ্জুদ এবং তারাবি পড়া সর্বোত্তম।

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

ব্যস্ততার কারণে অনেকেই নির্ধারিত সময় তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যেতে পারে না আবার অনেককে দেখা যায় তারাবির নামাজ কয়েক রাকাত পড়ার পর মসজিদে যাচ্ছে। এমন মুক্তাদের জন্য এশা ও তারাবির নামাজের নিয়ম হল প্রথমে এশার ফরজ ও সুন্নত আদায় করা এরপরে ইমামের সঙ্গে তারাবির নামাজে অংশ নেওয়া। তারাবির জামাত শেষে ইমামের সঙ্গে বেতর নামাজেও জামাতে পড়ে নেওয়া। এরপর বাকি তারাবির নামাজ একা একা আদায় করা।

তারাবির নামাজের একসঙ্গে চার রাকাত পড়ে ফেললে করণীয়

তারাবির নামাজের সময় যদি কেউ ভুলে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করে অর্থাৎ দুই রাকাতের পর তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে আরো দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে। এখানে চার রাকাত নামাজ পড়া হয়েছে বলে ধরা হবে। তবে তারাবির নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে একসঙ্গে চার রাকাত পড়া ঠিক না। (আল বাহারুল রাযইয়া ২/৬৭)

তারাবির নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা

তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পূর্ণ লাভের আশায় রমজানের রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন তার পুর্বে করা পাপগুলো ক্ষমা করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

মাহে রমজানের রোজা তারাবির নামাজ কোরআন তেলাওয়াত ও নানা ইবাদতের কারণে আল্লাহতালা রোজাদার এর সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আরো বলেন- “যে ব্যক্তি ঈমান এর সঙ্গে সোয়াব প্রাপ্তির আশায় রোজা রাখবে নাম তারাবির নামাজ পড়বে এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে তার জীবনের আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

তারাবির নামাজ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন

সুরা তারাবি কয় রাকাত পড়তে হয়?

উত্তর- তারাবি ৮/১২ রাকাত পড়তে হয়। সূরা তারাবি কিংবা খতম তারাবি তবে ২০ রাকাত তারাবি পড়া উত্তম। আমাদের নবীজি ২০ রাকাত পড়ার জন্যই বলেছেন হাদিসে এসেছে তাই সূরা বা খতম তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়াই উত্তম।

নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে সূরা তারাবি পড়তে হবে নাকি যে কোন সূরা দিয়ে পড়লেই হবে?

উত্তর- সূরা তারাবি পড়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন সূরা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সূরা ফীল থেকে প্রথম থেকে নিচের দিকে সূরা আজ পর্যন্ত পড়া হয় এই কারণে এই সূরাগুলো ছোট এবং প্রায় সবার মুখস্ত। আর এখানে দশটি সূরা আছে দুইবার করে পড়লে ২০ রাকাত হয়ে যায়। তাছাড়া সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন একটি সূরা দিয়ে সূরা তারাবি পড়া যায়।

তারাবির নামাজ এর নিয়ত মুখে পড়তে হয় না মনে মনে?

কোন নামাজের নিয়ত মুখে পড়ার কোন বিধান নেই। তারাবির নামাজ মনে মনে নিয়ত থাকলে আল্লাহু আকবার তাকবির দিয়ে নামাজ শুরু করা যায়।

একা একা তারাবি নামাজ পড়লে তা কি হবে?

উত্তর- হ্যাঁ একা একা তার আগে নামাজ পড়লেও পড়া যায়। তবে শুধুমাত্র রমজান মাসে যেহেতু তারাবির নামাজ পড়া হয় তাই জামাতের সাথে আদায় করলে নামাজের সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

তারাবি না পড়লে কি রোজা হয় না ?

উত্তর- তারাবির নামাজ হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আর রোজা হচ্ছে ফরজ ইবাদত তাই রোজা রেখে তারাবি না পড়লেও রোজা হবে। তবে তারাবি নামাজ পড়া উচিত এতে করে রোজার সওয়াব আরো বেশি মজবুত হয়।

খতম তারাবি পড়লে বেশি সওয়াব হয় নাকি খতম তারাবি?

রমজান মাসের সবগুলো তারাবির নামাজ আপনি খতম তারাবি হিসেবে পড়লে আপনি এক খতম কোরান এর সওয়াব পাবেন সুতরাং সূরা ও তারাবির চেয়ে খতম তারাবিতে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

মন্তব্য

আজকে আমরা একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply