পাই নেটওয়ার্ক কি? পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

পাই নেটওয়ার্ক কি

গত পাঁচ বছরে টেক দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় বিপ্লব নিয়ে আসা জিনিসটির নাম হচ্ছে ক্রিপটোকারেন্সি। ক্রিপটোকারেন্সির নাম শুনলেই প্রথমে আমাদের মাথায় বিটকয়েন কিংবা ইথারিয়ামের মতো কারেন্সি এক্সচেঞ্জার এর নাম আসে। কিন্তু বাস্তবে বিটকয়েন ইথিরিয়াম ছাড়াও সর্বমোট ৭০ টি রেজিস্টার ক্রিপ্টো কারেন্সি রয়েছে।

তেমনি একটি নতুন কারেন্সি পাই নেটওয়ার্ক নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে। যদিও এটি এখনো রেজিস্টার্ড হয়নি তবে ধারণা করা যায় খুব দ্রুত এটিও ক্রিপ্ট কারেন্সি জগতে আলো সৃষ্টি করবে।

আজকে আমরা পাই নেটওয়ার্ক কি? পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পাই নেটওয়ার্ক নিয়ে সকল তথ্য

২০১৯ সালে শুরু হওয়া পাই নেটওয়ার্ক নামের একটি কোম্পানি ক্রিপটোকারেন্সির  জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সহজ ভাষায় বললে, পাই নেটওয়ার্ক হচ্ছে একটি নতুন  কারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েনের মতোই। পাই নেটওয়ার্ক জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে এটি বর্তমানে ফ্রিতে মাইনিং করতে দিচ্ছে।

বর্তমানে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি। যদিও পাই নেটওয়ার্ক এখনো ক্রিপটোকারেন্সি এক্সচেঞ্জার হিসেবে রেজিস্টার্ড নয় তবে ধারণা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই রেজিস্টার্ড হয়ে গেলে বর্তমানে ফ্রিতে মাইন করা পাইকয়েন গুলো তখন বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে ব্যবহারকারীরা।

পাই নেটওয়ার্ক অফিশিয়াল ওয়েবসাইট লিংক – https://minepi.com/

পাই নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে?

যেমনটা আমরা বলেছিলাম পাই নেটওয়ার্ক অন্যান্য ক্রিপ্ত কারেন্সি এক্সচেঞ্জার যেমন বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েনের মতোই কাজ করে অর্থাৎ আপনি তাদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে এবং মাইনিং করে কিছু পাইকরেন জমাতে হবে।

পরবর্তীতে যখন পাই নেটওয়ার্ক ক্রিপটোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের হিসেবে রেজিস্ট্রেশন হবে তখন বেশি দামে সেই পাইকয়েন গুলো বিক্রি করতে পারবেন অথবা চাইলে ব্যাংক একাউন্ট কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ বা নগদে তুলে নিতে পারবেন।

পাই নেটওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম

সাধারণত বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েন এর মত কৃতকারেন্সিতে মাইনিং করতে হলে ভালো মানের কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় কিন্তু পাই নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ মোবাইল দিয়ে মাইনিং করা যায় যা খুবই অল্প সময়ের ব্যাপার।

এ পর্যায়ে আমরা দেখাবো কিভাবে মাত্র ৫ টি ধাপ অনুসরণ করে খুব সহজে ই পাই নেটওয়ার্ক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

ধাপ ১ – প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে পাইনেটওয়ার্ক মোবাইল এপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। বর্তমানে পাই নেটওয়ার্ক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটির ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন এর বেশি যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি সরাসরি ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

ধাপ ২ – এ পর্যায়ে আপনার সামনে দুইটি অপশন আসবে –

  1. continue with Facebook
  2. continue with phone number

নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো একটি অংশ নেন পছন্দ করতে পারেন। আমরা মোবাইল নাম্বার দিয়ে একাউন্ট খোলার নিয়ম দেখাচ্ছি।

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

ধাপ ৩ – এই পর্যায়ে দুটি অপশন দেখতে পাবেন –

  1. Country
  2. Phone Number

কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ সিলেট করতে হবে এবং ফোন নাম্বারে জায়গায় 0 ব্যতীত আপনার মোবাইল নাম্বারটি দিতে হবে।

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

ধাপ ৪ – এ পর্যায়ে আপনাকে একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই স্ট্রং হতে হবে অর্থাৎ একটি ইংরেজি ছোট অক্ষর, একটি ইংরেজি বড় অক্ষর, একটি স্পেশাল ক্যারেক্টার ও একটি সংখ্যা এই কম্বিনেশন করে থাকতে হবে এবং সবশেষে পাসওয়ার্ডটি কমপক্ষে ৮ ডিজিটাল হতে হবে। যেমন Abc@1234

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

ধাপ ৫ – পাঁচ নম্বর অর্থের সর্বশেষ ধাপে আপনাকে তিনটি জিনিস দিতে হবে।

  1. First Name
  2. Last Name
  3. Username

ইউজার নেম অবশ্যই ইউনিক হতে হবে এবং সেই সাথে সব গুলো লেটার ছোট হাতের ইংরেজি বর্ণ হতে হবে।

উপরের পাঁচটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খুব সহজেই পাই নেটওয়ার্ক একাউন্ট খুলতে পারবেন। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে স্টার্ট মাইনিং এ ক্লিক করুন তাহলে অটোমেটিক মাইনিং শুরু হয়ে যাবে।

একজন ইউজার ২৪ ঘন্টা পর পর একবার করে মাইনিং করতে পারবেন।

আরো পড়ুন – ছাত্রদের জন্য অনলাইন চাকরি, ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয়

পাইনেটওয়ার্ক থেকে কত টাকা আয় করা যায়

বর্তমানে পাই নেটওয়ার্ক থেকে কোন আয় করা সম্ভব নয়। এটি এখনো ক্রিপটোকারেন্সি রেজিস্টার্ড নয় অর্থাৎ আপনি বর্তমানে মাইনিং করে যে কয়েন গুলো জমাবেন তার নরমাল পাইকয়েন হিসেবে আপনার একাউন্টে জমা হবে।

ভবিষ্যতে যখন নেটওয়ার্ক ক্রিপ্টো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ হিসেবে রেজিস্টার্ড হবে তখন চাইলে পাই কয়েন গুলো বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন অথবা তার টাকায় কনভার্ট করে ব্যাংক একাউন্ট কিংবা বিকাশে তুলে নিতে পারবেন।

যেমন বিটকয়েন রেজিস্টার্ড হওয়ার পূর্বে সাধারণ কয়েন হিসেবে মানুষ মাইন করত কিন্তু বর্তমানে এক বিটকয়েন সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় 30 লক্ষ টাকা। তাই বর্তমানে পাইনেটওয়ার্ক থেকে কোন টাকা আয় করা না গেলেও ভবিষ্যতে হয়তো বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েন এর মত এটিও ভালো একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি হতে পারে।

পাই নেটওয়ার্ক কি বিশ্বস্ত?

পাইনেটওয়ার্ক বিশ্বস্ত কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয় কেননা এটি এখনও ক্রিপটোকারেন্সি হিসেবে রেজিস্টার্ড নয়। অর্থাৎ পাইনেটওয়ার্ক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে মাইনিং করে যে পাইকয়েন গুলো পাবেন তা এখনো কোন রকম খরচ বা কাজে লাগাতে পারবেন না। ভবিষ্যতে বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েনের মত পাই নেটওয়ার্ক রেজিস্টার্ড হবে কিনা তা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত দিচ্ছেন।

তবে এটি সম্পূর্ণ ফ্রি তাই চাইলে একাউন্ট খুলে ট্রাই করতে পারেন। তাছাড়া কোম্পানিটি ২০১৯ সাল থেকে মার্কেটে রয়েছে এবং ৫০ মিলিয়নের বেশি একটিভ ইউজার রয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটিতে। এছাড়াও সম্প্রতি টুইটার পাই নেটওয়ার্কের একাউন্টে ভেরিফাইড করেছে। তাই আশা করা যায় বাই নেটওয়ার্ক বিশ্বস্ত ক্রিপটোকারেন্সি হবে ভবিষ্যতে।

পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে

পাইনেটওয়ার্ক ২০১৯ সাল থেকে মার্কেটে রয়েছে। তবে বর্তমানে এটি কোন রেজিস্টার্ড ক্রিপ্টোকারেন্সি নয় অর্থাৎ এখানে ফ্রিতে মাইনিং করা গেলেও সেই পাই কয়েন গুলো কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। কোম্পানিটি কথা দিয়েছিল ২০২২ সালের মধ্যে তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে পা রাখবেন কিন্তু এখনো তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি তে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি।

তাই পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে এই ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

পাই নেটওয়ার্ক এর সুবিধা

মোবাইলে মাইন করা যায় – সাধারণত অন্য কারেন্সি গুলোতে মাইনিং করতে গেলে ভারী কম্পিউটার সেটআপ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়ে কিন্তু পাই নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ আলাদা। একজন ব্যবহারকারী চাইলে খুব সহজে মোবাইল দিয়ে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই মাইনিং করতে পারে।

২৪ ঘন্টা পর পর মোবাইল এপ্লিকেশনটি ঢোকে স্টার্ট মাইনিং এ ক্লিক করলে আপনার কাজ শেষ। পাই কয়েন অটোমেটিক মাইনিং হয়ে আপনার একাউন্টে জমা হয়ে যাবে।

সম্পূর্ণ ফ্রি – বিটকয়েন লাইট কয়েন কিংবা ইথেরিয়াম এর মত অন্যান্য ক্রিপ্ট কারেন্সি গুলোতে মাইনিং করতে গেলে কিছু অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য পে করতে হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত পাই নেটওয়ার্কিং ব্যবহারকারীর জন্য সম্পন্ন ফ্রি। এছাড়া মাইনিং করতেও কোনরকম খরচ করতে হয় না। তাই হাতে সময় থাকলে ২৪ ঘন্টা পর পর একবার করে মাইনিং করে আসতে পারেন যা হয়তো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

সময় কম লাগে – মাইনিং করতে গেলে ভারী কম্পিউটার সেটআপ এবং ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে কেউ না কেউ বসে থাকতে হয় এবং এটা নিয়ে রিসার্চ করতে হয়। কিন্তু পাই নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

শুধুমাত্র মোবাইল এপ্লিকেশন দিয়ে ২৪  ঘন্টা পর পর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া একজন ব্যবহারকারী মাইনিং করতে পারবে এবং মাইনিং করার জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় ব্যয় হবে।

পাইনেটওয়ার্কের অসুবিধা সমূহ

রেজিস্টার্ড নয় – যেমনটা আমরা বলেছি বর্তমানে ৭০ টির মত রেজিস্ট্যান্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি রয়েছে কিন্তু পাই নেটওয়ার্ক সেরকম কোন কোম্পানি নয়। তাই ফ্রিতে হলেও ভবিষ্যতে এটি ক্রিপ্টোকারেন্সি  রেজিস্টার্ড হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়া সম্ভাবনা – অতীতে এমন অনেক কোম্পানি ছিল যারা টাকা আয় করার লোভ দেখিয়ে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ফোনের সকল তথ্য চুরি করে নিয়েছে। তাই এই ধরনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো ইন্সটল করার আগে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।

পাই নেটওয়ার্ক থেকে টাকা তোলার নিয়ম

এখন পর্যন্ত প্রায় নেটওয়ার্ক থেকে টাকা তোলার কোন ব্যবস্থা নেই যেহেতু এটি এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে রেজিস্টার্ড নয়। ভবিষ্যতে যখন একটি বিটকয়েন কিংবা লাইট কয়েন এর মত রেজিস্টার্ড হবে তখন মাইনইন করা পাই-কয়েন গুলো বেশি দামে বিক্রি করে দিতে পারবেন অথবা দেশীয় যেকোনো ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদে ট্রান্সফার করে তুলে নিতে পারবেন।

মন্তব্য

উপরে আমরা পাই নেটওয়ার্ক কি? পাই নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে। ভালো লাগলে আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও সাথে শেয়ার করতে পারেন এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply