মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেয়ার নিয়ম

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং

কিছুদিন আগেও যাত্রীদের রেলস্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার জন্য অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হতো। বর্তমানে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখন আর প্রিয়জনের সাথে দেখা করার জন্য ট্রেন টিকেট এর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েট করতে হয়না।

ঘরে বসে যে কেউ মোবাইলে অগ্রিম ট্রেনের টিকেট বুকিং দিতে পারেন। মোবাইলে কিভাবে ট্রেন টিকেট বুকিং করা যায় তা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। আজকে আমরা আপনাদের সহজভাবে জানাব কিভাবে ঘরে বসে মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়া যায়।চলুন জেনে নেওয়া যাক।

মোবাইলে ট্রেনের টিকেট বুকিং দেওয়ার নিয়ম

ঘরে বসে ট্রেনের টিকেট কাটতে নির্দিষ্ট কয়েকটি ধাপ অনুসরন করতে হবে। নিচে আমরা কয়েকটি ধাপে

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং
ধাপ – ১

ধাপ-১ঃ মোবাইলে ট্রেনের টিকেট কাটার অ্যাপস রয়েছেন যার নাম হল রেল সেবা। অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুকিং করতে হলে আপনাকে প্রথমেই আপনার ফোনের গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে রেলসেবা নামক অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে হবে। রেলসেবা অ্যাপ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এখানে।

অথবা আপনার ফোনে থাকা গুগল ক্রোম এর মাধ্যমে ভিসিট ক্রুন এই লিঙ্ক এ railapp.railway.gov.bd

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং
ধাপ – ২

ধাপ-২ঃ এই পর্যায়ে দুটি অপশন দেখতে পাবেন Login এবং Register ইতঃপূর্বে একাউন্ট থাকলে লগিন করতে হবে এর আগে একাউন্ট না থাকলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং
ধাপ – ৩

ধাপ-৩ঃ লগিন করার জন্য শুধু মোবাইল আর পাসওয়ার্ড লাগবে। ইতঃপূর্বে একাউন্ট খোলা না থাকলে রেজিস্ট্রেশন করতে ন।হবে। রেজিস্ট্রেশন এর জন্য নাম, মোবাইল নাম্বার ও আইডি কার্ডের নাম্বার সহ কিছু তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং
ধাপ – ৪

ধাপ-৪ঃ এই পর্যায়ে আপনি মোবাইলে টিকেট ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত। From, To, Select Class, Date এই ৪ টি অপশন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কোন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবেন, গন্তব্য কোন স্টেশন, ট্রেনের ক্লাস, ও ভ্রমনের তারিখ এই ৪ টি অপশন সিলেক্ট করতে হবে।

ধাপ – ৫ঃ এই পর্যায়ে ট্রেনের লিস্ট থেকে সিট সিলেক্ট করে পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট অপশন হিসেবে বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা যেকোন ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেন।

সহজেই আপনি আপনার জন্য টিকেট বুকিংকরতে পারলেন। আশা করছি উপরের ধাপগুলো পড়ার পর আপনি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে অনলাইনে ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বুকিং করতে পারেন।

কোন এপ্স এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটা যায়

রেলসেবা (Rail Sheba) মোবাইল অ্যাপ অথবা Bangladesh Railway E-Ticketing Service এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ট্রেনের টিকেট ক্রয় করা যাবে। রেলসেবা মোবাইল অ্যাপ শুধুমাত্র মোবাইলে ইন্সটল করা যাবে কিন্তু Bangladesh Railway E-Ticketing Service এই ওয়েবসাইট মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ যেকোন ডিভাইস থেকে ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়াও বিকাশের মত থার্ড পার্টি কোম্পানি আছে যারা ট্রেনের টিকেট বুকিং সার্ভিস দিয়ে থাকে তবে আমাদের সাজেশন থাকবে সুযোগ থাকলে সরাসরি রেলের অফিশয়াল মোবাইল অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট থেকে টিকেট কাটুন। এতে করে ঝামেলা কম হবে।

বিকাশে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম

ঘরে বসে কিভাবে সহজেই মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বুকিং করা যায় তার সবচেয়ে বড় সুযোগ করে দিয়েছে লেনদেনের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অ্যাপস বিকাশ। বিকাশ এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার টিকেট বুকিং করতে পারেন। মাত্র কয়েকটা ধাপ অনুসরন করলেই আপনার টিকিট কাটা হয়ে যাবে।

আপনি বিকাশ থেকে ট্রেনের টিকেট কাটতে চাইলে নিচের নিয়ম গুলো ফলো করতে হবে। ধাপগুলো সহজে আপনাদের কাছে বর্ণনা করছিঃ

  • প্রথমে আপনার মোবাইলের বিকাশ অ্যাপস এ লগইন করতে হবে
  • লগ ইন করার পর মেইন মেনু্তে টিকিট অপশন সিলেক্ট করতে হবে
  • এরপর বাস-ট্রেন বিমান বিভিন্ন অপশন আসলে আপনি ট্রেন অপশনটি সিলেক্ট করুন
  • অপশনটি সিলেক্ট করার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে অপশন টি ক্লিক করুন
  • এরপর আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে
  • লগইন করতে লাগবে আপনার নাম ফোন নাম্বার এবং ইমেইল
  • এরপর আপনাকে গন্তব্যস্থান আপনার বর্তমান স্থান এবং ভ্রমণের তারিখ সিটের সংখ্যা বিভিন্ন তথ্য প্রদান করতে হবে
  • যদি সিডাকশন এভেলেবেল থাকে তাহলে আপনাকে পারচেজ অপশনে ক্লিক করতে হবে
  • সেখানে বাংলাদেশ রেলওয় নিবন্ধিত ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে
  • তারপর বিকাশের অপশনে ক্লিক করে বিকাশের ভেরিফিকেশন কোড এবং পিন নাম্বার দিয়ে টিকেট কাটার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়ার নিয়ম

আপনার ট্রেন ভ্রমণের জন্য ভ্রমণের নির্দিষ্ট তারিখ থেকে কয়েকদিন পূর্বে আপনি যে ট্রেন টিকেট বুকিং দিয়ে রাখেন তা যেকোনো কারণে বাতিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে টিকিট ফেরত দেওয়ার জন্য টিকিট কাউন্টারে যেতে হবে। ট্রেনের টিকেট ফেরত দেওয়ার কিছু শর্তাবলী রয়েছে। সেগুলো হলোঃ

  • যাত্রা শুরুর ৪৮ ঘন্টা পূর্বে টিকেট ফেরত দিতে হলে এসিডের জন্য 40 টাকা শ্রেণীর জন্য 30 টাকা এবং অন্য শ্রেণির জন্য 25 টাকা সহ সার্ভিস চার্জ ফেরত দেওয়া হয় না
  • ৪৮ ঘণ্টার কম বা ২৪ ঘণ্টার বেশি হলে  ভাড়ার ২৫% কাটা হবে
  • ২৪ঘন্টা ১২ ঘন্টার বেশি হলে ৫০% টাকা হবে
  • ৬ ঘণ্টা বা তারও চেয়ে কম কোন ভ্রমনের জন্য কোন টিকেট ফেরত দেওয়া হয় না
  • অনলাইনে টিকিট কিনলে সার্ভিস চার্জ অফেরৎযোগ্য

মোবাইল এ ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার সুবিধা

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। নিজের সিট নাম্বার ইচ্ছামত পছন্দ করা যায়। ট্রেনের টিকিট কাউন্টার ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। কোন ট্রেন কখন ছাড়বে কয়টি টিকিট খালি আছে তার সব ঘরে বসেই জানা যায়।

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার জন্য তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। ট্রেন ট্রেনের টিকিটের মূল্য মোবাইলে বিভিন্ন এপস এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। এতে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ছাড় বা  ডিসকাউন্ট লক্ষ্য করা যায়। টিকিটের মূল্য বেশি রাখার কোনো সম্ভাবনা নেই।

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার অসুবিধা

অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার সুবিধার পাশাপাশি অনেকগুলো অসুবিধা হয়েছে। সেগুলো হলো অনেক সময় অনলাইনে টিকিটের জন্য নির্দিষ্ট কতগুলো সিট বরাদ্দ থাকে এর বাইরে সিটগুলো বুকিং হয়ে গেলে পরবর্তী তা ফিরে পাওয়া যায় না। তখন রেল স্টেশনে গিয়ে টিকেট কাটতে হয়।

অনলাইনে মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং দেওয়ার সিস্টেম চালু হওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসেই টিকিট বুকিং দিচ্ছে ফলে স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটে তারা টিকেট ঠিক ভাবে পায়না। সব টিকেট বুকিং থাকার ফলে জরুরী প্রয়োজনে শেষ মুহূর্তের টিকিট পাওয়া যায় না।ফলে তাদেরকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের দাম

সাধারণত স্টেশনে গিয়ে যেভাবে জায়গা এবং ট্রেনের ধরন অনুযায়ী আপনি টিকেটের মূল্য পরিশোধ করেন অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের দাম একি কিন্তু অনলাইন সার্ভিসের জন্য 20 টাকা সার্ভিস চার্জ আপনাকে অতিরিক্ত পে করতে হবে। অনলাইনে টিকিট কাটার পর আপনি স্টেশনে গিয়ে টিকিট কালেক্ট করতে পারেন।অথবা আপনি আপনার টিকেট প্রিন্ট আউট করে নিতে পারেন।

ট্রেনের টিকিট কতদিন আগে কাটা যায়

অনলাইনে মোবাইলের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য 5 দিন আগে বুকিং দিতে হয়। এর আগে দেখা যায় না। এবং এর পরবর্তীতে সিট বুকিং দেওয়া হয় না সুতরাং আপনি কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে 5 দিন আগে থেকে ট্রেনের টিকিট বুকিং দিতে পারেন।

ট্রেনের টিকিট হারিয়ে গেলে করণীয়

যদি আপনি স্টেশন থেকে টিকেট ক্রয় করার পর ট্রেনের টিকেট হারিয়ে যায় তাহলে আপনি অতি দ্রুত স্টেশন মাস্টারের সাথে অথবা টিকিট কাউন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি তিনি আপনাকে কোন ভাল সমাধান না দিতে পারেন তাহলে আপনি নিকটস্থ থানায় জিডি করতে পারেন।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকিট কাটার পর সেটি প্রিন্ট আউট করার অপশন চালু করেনি সুতরাং টিকেট হারালে তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। থানায় জিডি করতে আপনার যা যা লাগবে তা হল আপনার টিকিটের নাম, গন্তব্যস্থান এবং যাত্রা করার স্থান বগি নাম্বার ট্রেনের নাম ইত্যাদি। স্টেশন কাউন্টারে জিডির কপি জমা দিলে আশা করি আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন।

অনলাইনে এক সপ্তাহে কতবার টিকেট কাটা যায়

সাধারণত অনলাইনে টিকিট কাটতে হলে সপ্তাহে দুই বারের বেশি টিকেট কাটা যায় না। সেক্ষেত্রে দু বারে ২ টি টিকেট থেকে শুরু করে আপনার কতটি টিকেট কাটে সেটা মুখ্য বিষয় নয়।

মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং

মন্তব্য

আজকে আমরা মোবাইলে ট্রেন টিকেট বুকিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হলে আপনাদের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এবং এ বিষয়ে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানান আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply