বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের যেসকল দেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে প্রবাসীরা যায় তার মধ্যে কুয়েত অন্যতম। মধ্যপ্রাচ্যের যে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কুয়েতে কাজের বেতন ভালো হওয়ায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের প্রথম পছন্দ থাকে কুয়েত ভিসা। কিন্তু নতুন অবস্থায় অনেকেই জানেন না কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত এবং সুবিধা-অসুবিধা গুলো কি কি।
আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করব কুয়েতে ভিসার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে কুয়েত ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত
কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ৬০ কুয়েতি দিনার যা বাংলাদেশী টাকায় ২০ হাজার টাকার সমান। তবে এটা কুয়েত সরকার কতৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন। সাধারনত বেতন এর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। আপনার কাজের ধরন ও কত ঘন্টা কাজ করছেন তার উপর নির্ভর করে বেতন কম বেশি হয়ে থাকে।
এছাড়াও কুয়েতে কাজ করার সবচেয়ে বড় আরেকটা সুবিধা হচ্ছে কুয়েতে ওভারটাইম করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ আপনার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে ডিউটির জন্য ঘন্টা হিসেবে অতিরিক্ত বেতন পাবেন। তাই মূল বেতনের পাশাপাশি ওভারটাইম করে অনেক ভালো টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে।
কুয়েতে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
যারা প্রথমবারের মত কুয়েতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন তাদের অনেকেই জানতে চান কুয়েতে কোন কাজের চাহিদা বেশি। সত্যি বলতে অন্যান্য দেশের মত কুয়েতেও সব ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের কাজের জন্য ই ভিসা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে থেকে নিচে আমরা কয়েকটা সেক্টর উল্লেখ করার চেষ্টা করছি
- কুয়েত খাদেম ভিসা
- কুয়েত আজাদি ভিসা
- কুয়েত রেস্টুরেন্ট ভিসা
- ক্লিনার ভিসা
- অফিস স্টাফ, ড্রাইভিং ভিসা
- পাইপ ফিটিং ভিসা, ইলেকট্রিক ভিসা
উপরের এই কয়েকটি সেক্টরের কাজের চাহিদা অনেক বেশি। আপনি যদি এর যেকোন একটি কাজ জানেন তাহলে নিশ্চিন্তে কুয়েত যাওয়ার জন্য ট্রাই করতে পারেন।
কুয়েতে কোন কাজের বেতন বেশি
কাজের বেতন নির্ভর করে আপনার দক্ষতা ও আপনি যার আন্ডারে কাজ করছেন অর্থাৎ আপনার মালিক কেমন তার উপর। যেকোন ভিসা নিয়ে গেলেই প্রথমে আপনার বেতন হবে ৬০ দিনার বা ২০ হাজার টাকার আশেপাশে। তবে সময়ের সাথে স্বাভাবিকভাবেই আপনার বেতন বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার বেতন সর্বোচ্চ ১৫০ দিনার বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিছু কিছু ভিসায় বেতন এর চেয়েও বেশি হয়।
কুয়েতে যেসকল কাজের চাহিদা বেশি তারমধ্যে অন্যতম হলো…
- কুয়েত রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেল ভিসা। বেতন ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা।
- কুয়েত ড্রাইভিং ভিসা। বেতন ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
- কুয়েত খাদেম ভিসা। বেতন ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা।
কুয়েত ভিসা আবেদনের নিয়ম
- আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট না থাকলে খুব বর্তমানে খুব সহজেই অনলাইনে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
- পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে ২ টি খালি পাতা থাকতে হবে।
- পূর্বের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে তা প্রমানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে।
- আপনার সদ্য তোলা রঙ্গিন ৫ কপি রঙিন ছবি লাগবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আবেদনের সময় মেডিকেল রিপোর্ট দেখাতে হবে। মেডিকেল রিপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই রিপোর্ট অবশ্যই স্বিকৃত কোন মেডিকেল থেকে হতে হবে। অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার নিয়ম জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন।
- জন্ম নিবদ্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দেখাতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমানের সার্টিফিকেট। সর্বশেষ পাশ করা পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর ফটোকপি দেখাতে হবে।
কুয়েত ভিসার সুবিধা গুলো কি কি?
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কুয়েতে কাজের ভিসার কিছু সুবিধা রয়েছে।
কাজের বেতন বেশি – যেমনটা আমরা বলেছি, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগু্লোর তুলনায় কুয়েতে কাজের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি। কুয়েতে একজন শ্রমিক গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকে যা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকে বেশি।
ওভারটাইম করার সুবিধা – মধ্যপ্রাচের অনেক দেশে ওভারটাইম করার সুবিধা না থাকলেও কুয়েতে ওভারটাইম করার সুবিধা রয়েছে। অনেক সময় মূল বেতনের চেয়ে ওভারটাইম করে বেশি টাকা আয় করার সুযোগ ও থাকে যা অন্য দেশের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ওভারটাইম করার সুযোগ নেই।
কুয়েত থেকে ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ – মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ যাওয়া অনেক সহজ। এর মধ্য কুয়েত থেকে প্রতিবছর অনেক প্রাবাসী ভালো বেতনের আশায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। তাই আপনি কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে ও কুয়েত আপনার জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে।
কুয়েত থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন।
প্রতারক চক্র হতে সাবধান
কুয়েতে বেশি বেতনের চাকরি দিবে বলে অনেক এজেন্সি অতিরিক্ত টাক নিয়ে প্রতারনা করে থাকে। তাই ভিসা আবেদনের আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিবেন এবং চেক করবেন এই ভিসায় আসলেই এত বেতন পাওয়া সম্ভব কি না।
উপরে আমরা কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের উপকারে এসেছে। ভালো লাগলে আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। কুয়েত ভিসা ও কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত এই নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ
[irp]