হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ
পরিবারের বয়স্কদের বেশিরভাগ হার্টের সমস্যা থাকতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকলে তা প্রতিকার এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। আজকে আমরা হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – তল পেটের চর্বি কমানোর উপায়
হার্ট অ্যাটাক কি
হার্ট অ্যাটাক মায়োকার্ডিয়াল ইনসার্কশন হিসেবে পরিচিত। এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি। সাধারণত হার্টের রক্তনালীতে ব্লক তৈরি হয়ে গেলে রক্ত চলাচল মারাত্মকভাবে বন্ধ হয়ে যায় অথবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেলে সেটাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। এ সময় হার্টের মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হার্টের বিভিন্ন রকম জটিলতা সৃষ্টি করে।
হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার
হার্ট অ্যাটাক এর পরবর্তীতে দুই ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
১। স্বল্প মেয়াদী এবং
২। দীর্ঘমেয়াদি
হঠাৎ মৃত্যু বিভিন্ন ধরনের হার্টবিট এর সমস্যা হার্ট ব্লক হার্টবিট কমে যাওয়া একিউট হার্ট ফেলিওর কার্ডিয়োজনিক ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি জটিলতা। অন্যদিকে ফেলিয়র, কিডনির সমস্যা, প্যারালাইজড হওয়া ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা।
হার্ট অ্যাটাক এর কারণ
বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। কারণগুলো হলো-
- উচ্চ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
- ধূমপান করা
- অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন
- মানসিক চাপ
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
- শরীরচর্চা না করা
- ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়া
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- মানসিক দুশ্চিন্তা করা
- তেল জাতীয় জিনিস বেশি খাওয়া
- ওজন নিয়ন্ত্রণ না করা
- জর্দা খাওয়া
- গরুর মাংস ডিম বা
- ট্রান্সফার জাতীয় খাবার খাওয়া
- অ্যালকোহল
- বা কোমল পানি বেশি পান করা
- পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা
- শারীরিক পরিশ্রম না করা
- সব সময় শুয়ে থাকা
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ
হার্টের বিভিন্ন সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের সিমটম বা লক্ষণ দেখা যায়। তবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হল-
- বুকের মাঝখানে অথবা বা পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া
- বুক ভারি ভারি মনে হওয়া
- বুকে চাপা দেওয়া
- বাম হাত ঘাড় চোয়াল বুকের পেছনে ব্যথা হওয়া
- পেটের উপরিভাগ ব্যথা হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম দেখা দেওয়া
- শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- অতিরিক্ত বমি হওয়া
- মাথা ঝিমঝিম করা
- জ্ঞান হারানো
- তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং বুক ধরফর করা
- অনিয়মিত পালস রেট থাকা
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে ভয় পাওয়া যাবে না। দ্রুত জোরে ও ঘনঘন কাশি দিতে হবে যেন কাশির সঙ্গে কফ বের হয়ে আসে। প্রতিবার কাশি দেওয়ার আগে দীর্ঘশ্বাস নিতে হবে। এভাবে ঘন ঘন কাশি ও দীর্ঘ শ্বাস প্রতি দুই মিনিট পর পর করতে হবে। এতে করে হৃদপিণ্ড কিছুটা হলেও নিয়মিত ভাবে রক্ত সঞ্চালন করবে।
এই ব্যায়ামটি প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে হাসপাতালে নেওয়ার আগে রোগীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করাবে।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাকের প্রধান চিকিৎসা হলো হার্টের রক্তনালির রক্ত চলাচল পুনরায় নরমাল করা। রক্ত চলাচল পুনরায় চালু করাই হার্ট অ্যাটাকের প্রধান চিকিৎসা। যত দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায় রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যায়। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা হলো এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ব্লক চিহ্নিত করে তা দ্রুত ঠিক করে রক্ত চলাচল পুনরায় সুস্থ করা।
বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধের মাধ্যমে রক্ত জমাট ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
আরো পড়ুন – হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায
হার্ট অ্যাটাক চিকিৎসার খরচ
বাংলাদেশের বিভিন্ন হৃদরোগ হসপিটাল গুলোতে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের চিকিৎসা রয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য এই হার্ট অ্যাটাকে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। কেননা হার্ট অ্যাটাক হলে একদিকে যেমন মৃত্যু ঝুঁকি থাকে অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসাও খুবই ব্যয়বহুল হয়।
সরকারি হাসপাতালে তুলনায় বেসরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে হার্টের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়।
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়
কোন কোন কাজ করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচা যায় এবং কোন কোন খাবার পরিহার করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা যায় সে সম্পর্কে সবার কম বেশি জানা প্রয়োজন।
- স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা
- ধূমপান ত্যাগ করা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
- চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা
- নিয়মিত শরীর চর্চা করা
- ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুড পরিহার করা
- যথাসম্ভব দুশ্চিন্ত এড়িয়ে চলা
- মানসিক চাপ মুক্ত থাকা
- নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করানো
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা
- লাইফ স্টাইল মডিফাই করা
- অতিরিক্ত ওজন কমানো
- স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করা
- লবণ কম খাওয়া
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা
কাদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়
যেকোনো বয়সের যে কেউই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক মানুষ এবং পুরুষদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা খুবই বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে নারীদের বয়স বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকে রোজ ঝুকি বাড়তে দেখা যায়। যারা ধূমপান করে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা রয়েছে।
তাদের ঝুঁকি একটু বেশি থাকে। এছাড়াও বংশে হার্টে রক্তনালীর সমস্যা থাকলে পরিবারের অন্যান্যদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে।
কোন কোন খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর
- অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি
- কোল্ড্ড্রিক্স
- মদ্যপান
- ধূমপান
- চিপস
- জাঙ্ক ফুড
- প্রক্রিয়াজাত মাছ মাংস
- অতিরিক্ত কফি বা চা
- তেল জাতীয় খাবার
- চর্বি জাতীয় খাবার
- রেড মিট
- কাঁচা ডিমের কুসুম
- সপ্তাহের তিনটির বেশি ডিম খাওয়া
হার্ট সুস্থ রাখার খাবারের নাম
- ছোলা
- কফি
- ডুমুর
- ফ্লাক্স ব্রিজ
- লালমরিচ
- আদা
- জাম্বুরা
- গ্রীন টি
- কিডনিবিনস
- সিম
- মটরশুটি
- ডাল জাতীয় শস্য
- অতিরিক্ত লবণ মুক্ত খাবার
- ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার
- মাছ
- দুগ্ধজাত খাবার
- হোল ক্রিম যুক্ত খাবার
- ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস
- কম মসলাযুক্ত খাবার
কখন ডাক্তারের কাছে নিতে হবে
বুকে ব্যথা হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে নিকটস্থ হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং খুব দ্রুত ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যত দ্রুত হার্টের চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে রোগীকে সুস্থ করাও তত দ্রুতই সম্ভব।
মন্তব্য
আজকে আমরা হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করতে পারেন।
হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়