পাইলস এর ক্রিম এর নাম ও ব্যবহারের নিয়ম

পাইলস এর ক্রিম

যেটাকে বাংলায় বলা হয় অর্শ রোগ তা আমাদের কাছে পাইলস নামে পরিচিত। বর্তমানে আমাদের সমাজে এটি খুবই প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবর্তিত জীবনধারা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সহ নানা ধরনের কারণে এই রোগ বর্তমানে বেড়েই চলছে। তাই অনেকেই পাইলস এর ক্রিমের নাম জানার জন্য গুগলে সার্চ করতে থাকেন।

আজকে আমরা পাইলস এর ক্রিম এর নাম এবং ব্যবহারের নিয়ম সহ কি কি কারনে পাইলস হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – এলার্জি জনিত চুলকানির মলম ও ক্রিমের নাম

পাইলস কি?

পাইলস হল শরীরের মলদ্বারের একটি অংশ যা সুস্থ প্রত্যেক মানুষেরই শরীরে থাকে। পাইলস হল মলদ্বারের নিচের দিকে থাকে যা রক্তনালী দিয়ে পূর্ণ থাকে। পাইলস মল ও বাতাস ধরে রাখতে অনেক সহায়তা করে। যখন এই পাইলস মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায় বা ব্যথা করে বা ফুলে যায় তখন পাইলস রোগ হয়েছে বলে মনে করা হয়। সাধারণ ভাষায় আমরা তখন সেটাকে পাইলস বলি।

পাইলস কয় ধরনের হয়

পাইলস প্রধানত দুই ধরনের। বহিঃস্থ পাইলস এবং অভ্যন্তরীণ পাইলস।

বহিঃস্থ পাইলস- এটি মলদ্বারের মুখে এবং বাইরের দিকে থাকে। এটা চামড়ার নিচে থাকে এবং সাধারণত ব্যথা হয় না। মলত্যাগের সময় চাপ দিলে বা বেশিক্ষণ ধরে মলত্যাগ করলে বাইরের পাইলসের মধ্যে রক্ত জমা হয়ে তা শক্ত হয়ে যেতে পারে। এবং তাতে ব্যথা করতে পারে। অনেকদিন এই পাইলস থাকলে মলদ্বারে চুলকানি এবং মলদ্বার পরিষ্কার করতে অসুবিধা হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ পাইলস- এটা মলদ্বারের ভিতরে থাকে এই ধরনের পাইসে প্রধান উপসর্গ হলো মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত এবং মলদ্বার বের হয়ে আসা। এ ধরনের পাইস হলে ব্যথা হয় না তবে যদি ভেতরের পাইলস মলদ্বার দিয়ে বাইরে চলে আসে এবং ভিতরে ঢুকানো সম্ভব না হয় তাহলে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

পাইলস হওয়ার কারণ

কি কি কারণে পাইলস হয় সে সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। নিচে পাইলস হওয়ার কারণগুলো বর্ণনা করা হলো-

  • মলত্যাগের সব সময় চাপ দেওয়া
  • কষ্ট কাঠিন্য
  • ডায়রিয়া
  • গর্ভাবস্থা
  • অনিয়মিত মলত্যাগ
  • অনেকক্ষণ ধরে মলত্যাগ করা
  • উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তি
  • অস্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট
  • শাকসবজি কম খাওয়া
  • অপরিমিত পানি খাওয়া
  • মলদার ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা
  •  কষা পায়খানা
  • পায়খানার বেগ আটকে রাখা
  • শারীরিক পরিশ্রম না করা
  • অতিরিক্ত ওজন

পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস এর লক্ষণ জানা দরকার। বিভিন্ন সময় পাইলস এর লক্ষণ বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। তবে রোগের সমস্যার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো দেখা দেয়। নিচে পাইলসের লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো-

  • মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া
  • মলত্যাগের সময় ছাড়াও রক্ত দেখা যাওয়া
  • মলদ্বারে চুলকানি হওয়া
  • ব্যথা
  • মলদ্বার ফুলে যাওয়া
  • মনদ্বারে অনেক ব্যথা থাকা
  • অতিরিক্ত সমস্যা হওয়া
  • মলদার পরিষ্কার রাখতে সমস্যা হওয়া
  • মলত্যাগের সময় মলদার নিচের দিকে নেমে যাওয়া
  • মলদার বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকা যায় হাত দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়

পাইলস এর ক্রিমের নাম

পাইলসের ক্রিমের নাম এ বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। তবে বাজারে যেসব পাইলসের ক্রিম পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো-

  • Dictamini hemorrholds harbal – ১৯৯ টাকা
  • Pilex. Forte- ৫৫০ টাকা
  • Erian ointment
  • Anustat cream
  • Dobesil ld Rectocare ointment

পাইলসের ট্যাবলেট এর নাম

পাইলসের ব্যথা কমানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট পাওয়া যায়। নিচে পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম বা ট্যাবলেট উল্লেখ করা হলো-

  • Normanal 500 mg
  • Daflon 500 mg
  • Hermorif tablet
  • Pilestop tablet

পাইলস এর রক্ত পড়া বন্ধের ঔষধ

পাইলসের রক্ত পড়ার ঔষধ সম্পর্কে জানতে হবে। নীচে পাইলস এর রক্ত পড়া বন্ধের ঔষধ এর তালিকা বর্ণনা করা হলো-

  • Alvenor tablet
  • Pilestop tablet

পাইলসের হোমিওপ্যাথি ঔষধ

অনেকেই এলোপ্যাথি ওষুধ খেতে চান না। হোমিওপ্যাথি ওষুধের উপর বেশি বিশ্বাস করে থাকেন। কেননা এলোপ্যাথি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলে ও হোমিওপ্যাথি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। নিচে পাইলসের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো-

  • Adel 2
  • Aesculus Hip 30

পাইলস এর ব্যথা কমানোর ঔষধ

পাইলস এর ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি ঔষধ সেবন করা যায়। এখন আমরা জানবো পাইলসের ব্যথা কমানোর ঔষধ কি কি-

  • Pilosol ointment

পাইলস রোগের চিকিৎসা

এখন আমরা জানবো পাইলস রোগের চিকিৎসা কি। পাইলস রোগের চিকিৎসা হলো-

  • সমস্যা কম হলে শাকসবজি এবং আঁশ জাতীয় খাবার এবং তরল খাবার বেশি করে খেলে পাইলস রোগে উপকার পাওয়া যায়
  • একই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য পরিহার করা
  • মলত্যাগ অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া
  • বেশিক্ষণ ধরে মল ত্যাগ না করা
  • রক্তপাত বন্ধ করতে মেডিসিন নিতে হতে পারে
  • মলদ্বারে ব্যথা থাকলে চিজ বাথ নিলে আরাম লাগে
  • উল্লেখিত নিয়ম মেনে চলে বহিঃস্থ পাইলসের ব্যথা এবং ফোলা দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে কমে যায়
  • ঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে পাইলসের ফোলা পুরোপুরি সেরে যাবে ৪ থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে
  • বহিঃস্থ পাইলসে তীব্র ব্যাথা থাকলে অপারেশন করা লাগতে পারে

পাইলস সারানোর ঘরোয়া উপায়

পাইলসের ব্যথা উপশম করতে বা পাইলস ভালো করতে ঘরোয়া ভাবেই চিকিৎসা করা যায়। পাইলস এর ক্রিমের নাম জানার পাশাপাশি ঘরোয়া উপায় জেনে রাখা উচিত।

১। পাইলসের ব্যথা কম করতে প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এই ব্যথায় কার্যক্রমণ ঔষধ এবং মলম পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেগুলা ব্যবহার করতে পারেন।

২। পাইলসে ব্যথার জায়গাটি কুসুম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়। ছোট বাচ্চাদের গোসল করানো হয় এমন একটি বলে কুসুম পানি নিয়ে সেখানে বসতে পারেন। দিনে তিনবার পর্যন্ত এটি করা যায়। অন্য সময় কোথাও বসতে গেলে একটি বালিশ ব্যবহার করে তার উপর বসতে পারেন।

৩। একটি প্যাকেটে কিছু বরফ নিয়ে সেটি তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে পায়ু পথে গোটা গুলোর উপরে লাগানো যেতে পারে। এতে করে ব্যথা কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবে।

৪। বিছানায় শুয়ে পা উঁচু করে রাখলে পাইলস এর গোটাগুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হবে এবং ব্যথা কমে যাবে। শোবার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন। এছাড়া খাটের পায়ার নিচে কোন কিছু দিয়ে খাটের এক পাশ উঁচু করে পা দেওয়া যেতে পারে।

৫। পায়ু পথ সব সময় পরিষ্কার করে এবং শুকনা রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। টয়লেট পেপার হালকা ভিজিয়ে তারপর সেটা দিয়ে মুছতে পারেন।

৬। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি আশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শাক সবজি ফলমূল ডাল, লাল চাল এবং লাল আটা তৈরি খাবার। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

৭। মল ত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পায়খানা যাতে নরম হয় এবং সহজে মলত্যাগ করা যায় সে হিসেবগুলো মেনে চলতে হবে।

৮। মলত্যাগে প্রয়োজনের বেশি অতিরিক্ত সময় দেওয়া যাবে না। টয়লেটে বসে ম্যাগাজিন পেপার মোবাইল মনোনিবেশ করা বাদ দিতে হবে।

৯। পায়খানার চাপ আসলে আটকে রাখা উচিত নয় এতে পায়খানা আরো শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। চাপ আসলে দেরি না করে বাথরুমে চলে যেতে হবে এবং পেট পরিষ্কার করে পায়খানা করতে হবে।

১০। নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম না করে প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে। শরীরের চলমান রাখতে হাঁটাচলা হালকা স্ট্রেচিং যোগব্যায়াম ইত্যাদি করা যেতে পারে। এতে করে পাইলস ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

১১। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা। ওজন বেশি হলে অবশ্যই পাইলসর সম্ভাবনা বাড়ে তাই পাইলসের রোগীদের ওজন কমানো পরামর্শ দেয়া হয়। ওজন কমানোর কার্যকরি কপার সম্পর্কে একজন চিকিৎসক বা ডায়েটেশিয়ানের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।

পাইলস হলে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত

পাইলস হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে হবে।

  • আশ যুক্ত খাবার খাওয়া বেশি করে খাওয়া
  • শাক-সবজি
  • ফলমূল
  • প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা
  • লাল চাল
  • লাল আটা খাওয়া
  • তরল খাবার বেশি করে খাওয়া

পাইলস হলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা

পাইলস হলে যে সব খাবার খাওয়া যাবেনা তা হল-

  • পায়খানা শক্ত করে এমন খাবার
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন খাবার
  • অতিরিক্ত কলা
  • মাংস জাতীয় খাবার
  • রুটি
  • কাঁচকলা
  • অতিরিক্ত সুজি
  • অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন কোন খাবার

পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে?

না পাইলস এবং ক্যান্সারের মধ্যে কোন যোগাযোগ বা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পাইলসে যেসব উপসর্গ থাকে তা ক্যান্সার বা খাদ্যনালী বা অন্য কোন রোগেও থাকতে পারে। এ কারণে যেকোন উপসর্গ থাকলে সে বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার অবশ্যই দেখানো উচিত। কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোণ ওষুধ নিজে নিজে চিকিৎসা করা উচিত নয়।

বিশেষ করে ৫০ বছরের উর্ধ্বে হলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করা উচিত। তবে পাইলস অল্প থাকতে চিকিৎসা না করলে ক্যান্সার হতেও পারে।

পাইলস হলে কখন হাসপাতালে যাবেন

পাইলসে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া খুবই জরুরি। যেমন-

  • টানা সাত দিন বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার পরে অবস্থার উন্নতি না হলে
  • ৫৫ বছরে বেশি বয়সী হলে
  • বারবার পাইলসের সমস্যা দেখা দিলে
  • পাইলস থেকে পুজ বের হলে
  • জ্বর হলে
  •  অথবা অসুস্থ বোধ করলে
  • জ্বর বা কাপুনি হলে
  • অনবরত রক্তক্ষরণ হলে
  • অত্যাধিক রক্তপাত হলে
  • তীব্র ব্যথা হলে
  • পায়খানা রং কালচে অথবা আলকাতরার মত কালো মনে হলে

পাইলস এর ক্রিম এর নাম

পাইলস এর ক্রিমের নাম

আজকে আমরা পাইলস এর ক্রিমের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে ওয়েবসাইটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply