হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয়
বর্তমানে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তা হলো মাত্র ১৪ বছর বয়সি সালেহ আহমদ তাকরিম নামের একজন হাফেজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৪২ তম কিং আব্দুলাজিজ হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ১১১ দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। কে এই হাফেজ সালে হাফেয আহমদ তাকরিম।
আজকে আমরা চেষ্টা করব হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয় নিয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা নিন। আশা করছি হাফেজ তাকরিমের জন্ম, গ্রামের বাড়ি, পড়াশুনা বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং তার স্টোরি শুনে অনেক অনুপ্রানিত হবেন।
হাফেজ তাকরিমের জন্ম ও পরিচয়
ফেসবুকে সবাই হাফেজ তাকরিমকে চিনলেও সম্পূর্ণ নাম সালেহ আহমদ তাকরিম। ২০০৮ সালে ৩১ শে ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানা ভাদ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর শৈশব নিজ গ্রামে কাটানো হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম।
হাফেয সালেহ আহমদ তাকরিমের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানা ভাদ্রা গ্রামে।
তার পিতার নাম বাবা হাফেজ আব্দুর রহমান পেশায় একজন মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মা গৃহিনী।
জন্মের পর শৈশব নিজ গ্রামে কাটলেও পিতা-মাতার খুব ইচ্ছে ছিল নিজের সন্তানকে একজন ভাল মানের হাফেজ বানানোর। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ঢাকায় পড়াশোনা উদ্দেশ্যে চলে আসেন হাফেজ তাকরিম।
হাফেজ তাকরিমের পড়াশুনা
ছোট বেলা থেকেই সালেহ আহমদ তাকরিম ছিলেন অত্যন্ত মেধাবি আর তার কন্ঠ ছিলো অত্যন্ত মধুর। আর যেহেতু তার বাবা একজন হাফেজ ও পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক তাই শুরু থেকেই তিনি চেয়েছিলেন ছেলেকে ভালো মানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে যেন ছেলে আন্তর্জানিক মানের একজন হাফেজ হয়।
এর ধারাবাহিকতায় মিরপুর ১ এ অবস্থিত মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী, ঢাকা মাদ্রাসায় ভর্তি করান। এবং মাত্র ৯ বছর বয়সে তাকরিম একজন পরিপূর্ন হাফেজ হয়ে উঠেন।
মাত্র ৯ বছর বয়সে তাকরিম সম্পূর্ন কুরান খুব ভালোভাবে মুখস্থ করে ফেলে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বড় বড় হাফেজদের সাথে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে।
তার এই প্রখর মেধা দেখেই মাদ্রাসার শিক্ষকগন ও তার বাবা জাতীয় ও আন্তর্জানিক পর্যারে একজন দক্ষ হাফেজ হিসেবে প্রতিযোগিতা করানোর পরিকল্পনা করে এবং সে হিসেবে পরিশ্রম করতে শুরু করেন।
হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম অর্জন সমুহ
উপরে হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয় এর পরিচয় বলতে গিয়ে আমরা উল্লেখ করেছি তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে বিজয়ী হলে তার শিক্ষকগন প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার পরিকল্পনা করে।
তার প্রতিযোগিতা ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০২০ সালে রমজান মাস উপলক্ষে বাংলা ভিশন কতৃক আয়োজিন পবিত্র কুরআনের আলো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সে বছর সারা দেশ থেকে আসা অনেক হাফেজকে পেছনে ফেলে হাফেজ তাকরিম এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত হন।
এরপর ২২ আগস্ট ২০০১ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হাফেজ নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে এবং ইরানের তেহরানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়। এবং মার্চ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ৩৮ তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ২৯ টি দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন।
ঐতিহ্যবাহী লালবাগ শাহী মসজিদে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা লিবিয়ার জন্য একমাত্র বাংলাদেশী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় এবং লিবিয়ার রাজধানী বানগাজিতে অনুষ্ঠিত ১০ তম লিবিয়া কোরআন প্রতিযোগিতায় ৪৫টি দেশকে পিছনে ফেলে সপ্তম পুরস্কার অর্জন করে।
এবং সর্বশেষ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিফ্জুল কোরআন প্রতিযোগিতা ২২ তম ব্যাচের আব্দুল আজিজ কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ টি দেশের ১৫৩ জন হাফেজ কে পেছনে ফেলে ৩য় স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের গর্ব হাফেজ আহমদ তাকরিম।
- ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বাংলা ভিশন পবিত্র কুরানের আলো অনুষ্ঠান বিজয়ী।
- মার্চ ২০২২ সালে ইরানের অনুষ্ঠিত ৩৮ তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন।
- মে ২০২২ সালে ইরানে লিবিয়ার রাজধানী বানজাগীতে অনুষ্ঠিত ১০তম লিবিয়া কোরআন প্রতিযোগিতায় সপ্তম স্থান অর্জন।
- সর্বশেষ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সৌদি আরবে আয়োজিত 42 তম কিং আব্দুলাজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১ টি দেশকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অর্জন।
কিং আব্দুল আজিজ হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা পুরষ্কার
উপরে আমরা হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত জেনেছি। এই পর্যায়ে আমরা কিং আব্দুল আজিজ হিফজুল কুরান প্রতিযোগিতা নিয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করবো।
বিশ্বের যে কয়টি পবিত্র কুরআনুল কারীমের হিফয প্রতিযোগিতা হয় কিং আব্দুল আজিজ হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা তারমধ্যে অন্যতম একটি। প্রতিবছর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতাটি এবং এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র হারাম শরীফে।
হাফেজ তাকরিম তৃতীয় স্থান অর্জন করে পুরস্কার হিসেবে ১ লক্ষ রিয়াল বাংলাদেশি প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন।
এই প্রতিযোগিতায় ২০২২ সালে বিশ্বের ১১১ টি দেশের সর্বমোট ১৫৩ জন কোরআনে হাফেজ অংশগ্রহণ করেছিলেন। হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম তাদের মধ্যে ৩য় স্থান অর্জন করেছিলো।
এছাড়াও প্রথম ১৫ জন হাফেজ এর জন্য সর্বমোট ২৭ লক্ষ রিয়াল পুরষ্কার এর ব্যবস্থা ছিলো। সব দিক বিবেচনায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিফজুল কুর আন প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাকরিম নামের অর্থ কি?
উপরে আমরা হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু তাকরিম নামকি কিছুটা ভিন্ন অনেকেই জানতে চেয়েছেন তাকরিম নামের অর্থ কি।
তাকরিম আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে সম্মান, সভ্যতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার। ইত্যাদি
বাংলাদেশে এখনো এই নামটি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়নি। তবে এই নামের অর্থ সুন্দর। আপনি যদি নিজের সন্তানের নাম তাকরিম রাখতে চান রাখতে পারেন।
হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম ছবি
হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয়
উপরে আমরা হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম পরিচয়, হাফেজ তাকরিমের জন্ম, গ্রামের বাড়ি, পড়াশুনা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই গল্প শেয়ার করার মাধ্যমে নতুন নতুন মেধাবী হাফেজ তৈরি করতে উৎসাহিত করা।
হাফেয সালেহ আহমদ তাকরিমের তিলওয়াত শুনতে এখানে ক্লিক করুন।
ব্লগটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও আপনার কোনো অভিযোগ পরামর্শ কিংবা জিজ্ঞাসা থাকলে এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে করতে পারে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
আরো পড়ুন – মিজানুর রহমান আজহারী পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবার, ফোন নাম্বার