গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
পবিত্র কুরআনের আমাদের জীবনের বিভিন্ন অবস্থার সমাধানের জন্য বিভিন্ন ধরনের দোয়া রয়েছে। গর্ভে সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া কুরআন এবং হাদিসের বিভিন্নভাবে বর্ণিত আছে।
১। গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া সম্পর্কে হযরত জাকারিয়া আলাই সালাম এই দোয়া পাঠ করেছিলেন-
“ইয়া আইয়ুহান নাসু ইত্তাকু রাব্বাকুম ইন্না জালজালা তাস সাআতি সাইয়ুন আজিম” (সূরা হজ্জ আয়াতে ১)।
২। এছাড়াও তাফসীরে ইবনে কাসীর রয়েছে- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু বলেন’
“ওয়া ইন্নি উয়িজুহা বিকা ওয়া যুররইয়াতাহা মিনাশ শায়তনির রাজিম” । অর্থাৎ, আমি তার এবং তার সন্তান সন্তদের জন্য অভিশপ্ত শয়তানের আক্রমণ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
৩। “রাব্বি হাবলি মিন লাদুনকা জুররইয়াতান তাইয়িবাহ ইন্নাকা আনতাস সামিউদ দোয়া” ।অর্থাৎ হে রব আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুতপবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনার শ্রবণকারী।
৪। “রাব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন” অর্থাৎহে আমার রব আপনি আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন।
গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার আমল
বিভিন্ন ধরনের হাদীসে গর্ভে সন্তান সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের আমলের কথা বলা হয়ে থাকে। এ সময় নিজের জন্য এবং নিজের গর্ভে সন্তানের জন্য বেশি বেশি আমল করা প্রয়োজন।
- গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করতে হবে
- প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করা। এবং তার সোয়াবি ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের প্রতি পেশ করা।
- প্রতিদিন সকালে দরুদ পাঠ করা পাঠ করা
- এবং সম্ভব হলে প্রতিদিন সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা
- গর্ভের সন্তানের ক্ষতি না হলে মাঝে মাঝে নফল রোজা রাখা
- যেহেতু গর্ভের সন্তান ২০ সপ্তাহের পর থেকে শুনতে পায় তাই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা, হাদিস পড়া, বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী পড়া।
- প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় প্রিয় নবী সাঃ এর প্রতি দুরুদ পাঠ করা
- বেশি বেশি দান খয়রাত করা
- মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা
- আল্লাহর গুণবাচক নাম গুলো বারবার পড়া
গর্ভাবস্থায় মায়েদের আমল
- প্রথম মাসে সূরা-আল ইমরান পড়লে সন্তান দামী হবে।
- দ্বিতীয় মাসে সূরা-ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।
- তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।
- চতুর্থ মাসে সূরা-লোকমান পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।
- পঞ্চম মাসে সূরা-মুহাম্মদ পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে।
- ষষ্ঠ মাসে সূরা-ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে।
- সপ্তম, অষ্ঠম, নবম ও দ্বশম মাসে সূরা-ইউসুফ, মুহাম্মদ এবং ইব্রারাহিম কিছু কিছু পড়বেন।
- ব্যাথা উঠলে সূরা-ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
গর্ভাবস্থায় কোন কোন আমল করা জরুরী
মাতৃত্ব লাভ করা আল্লাহর এক অশেষ রহমত। তাই এ সময় বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। এতে নিজের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য অনেক উপকার হয়ে থাকে। এ সময় হারাম কাজ করা অথবা বিভিন্ন ধরনের গুনাহে লিপ্ত থাকলে এর কুপ্রভাব সন্তানের উপরও পড়তে পারে। তাই সময় বেশি বেশি নেক কাজ করা উচিত।
গুনাহ থেকে বিরত থাকা- সন্তান গর্ভে আসার পর সব ধরনের গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং অনর্থক বিষয় বাদ দেওয়া উচিত। যেমন নাটক সিরিয়াল ইত্যাদি দেখা বাদ দিতে হবে। কণ্ঠস্বর সংযত রাখা উচিত, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া উত্তম। গায়রে মাহরাম পুরুষদের সঙ্গে দেখা না দেওয়া কিংবা পর্দার লঙ্ঘন না করা উচিত সময়।
সময় মতো নামাজ আদায় করা- গর্ভকালীন সময় ছাড়াও সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত। তবে গর্ভকালীন সময়ে শরীরে অশান্তি এবং অস্থিরতা কাজ করা। যথাসময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজ অন্তরকে শান্ত রাখে। এজন্যই গর্ভকালীন সময় যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা উচিত।
বেশি বেশি জিকির করা- গর্বাবস্থা প্রতিটি নারীর জন্য একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। সন্তান সুস্থ আছে কিনা, নিজের শরীর সুস্থ রাখা ইত্যাদি চিন্তায় মগ্ন থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই এই অস্থিরতা দূরীকরণে বেশি বেশি জিকির করা উচিত। এটি নিজেকে নিজের গর্ভে সন্তানকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে অন্তর প্রশান্ত হয়। (আল-কুরান)
সব সময় পবিত্র অবস্থায় থাকা– আল্লাহতালা পবিত্র ব্যক্তিকে পছন্দ করেন। অপবিত্র ব্যাক্তিকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। তাছাড়া পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। তাই গর্ভাবস্থায় সবসময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নিজের আশপাশ পবিত্র রাখা উচিত।
সবসময় ওজু অবস্থায় থাকা- দৈহিক সুস্থতা এবং আত্মার শান্তির জন্য ওযুর ভূমিকা অপরিসীম। সময় ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমানো উচিত। এতে অনিদ্রার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন- যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের ওযুর মতো অজু করবে।
কোরআন তেলাওয়াত করা– সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। এতে সন্তান নেক্কার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভের সন্তান .২০ সপ্তাহের পর থেকে সবকিছু শুনে। এ সময় মায়েরা প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করলে বাচ্চাও কোরানের মাঝে সম্পর্ক হয়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত।
আরো পড়ুন – ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
বেশি বেশি দোয়া করা- যেহেতু গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারী কিছুটাও অসহায়ত বোধ করে ভবিষ্যতে কি হবে তা কেউই জানে না। এমনও মনে হয় হয়তো মরে যাওয়া সম্ভবনা থাকে। তাই গর্ভকালীন সময় আল্লাহর কাছে প্রচুর পরিমাণে দোয়া করতে হবে। গর্ভকালীন সময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। আল্লাহ নিজেই বলেছেন- “বলতো কে অসহায় তাকে সাড়া দেয় যখন কেউ ডাকে এবং কষ্ট দূর করে দেন” (সূরা নামল ৬২)
শোকর আদায় করা এবং ধৈর্য ধারণ করা- আল্লাহর নিকট থেকে আল্লাহর ইচ্ছায় সন্তান লাভ করা আল্লাহর বড় একটি নিয়ামত। তাই বেশি বেশি নফল নামাজ এবং রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে। এবং ধৈর্য ধারণ করে নেককার বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে হবে। এই সময় বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করলে আল্লাহ খুশি হবে।
গর্ভাবস্থায় কোন কোন সূরা পড়া উচিত
বাচ্চার নেককার হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বাচ্চার মা এবং বাবাকে সব ধরনের হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। হারাম খাবার পান না করা। গর্ভাবস্থায় কোন কোন সূরার কোন কোন ধরনের ফজিলত দেয় তা জানা অবশ্যই উচিত।গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সূরার বিভিন্ন ধরনের আমল রয়েছে-
১। গর্ভের প্রথম মাসের সূরা আল ইমরান পড়লেই সন্তান দামি এবং দ্বীনের পথে আহবানকারী হবে। সূরা ইনশিকাক পড়লে গর্ভের সন্তান সকল প্রকার ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকবে।
২। দ্বিতীয় মাসের সূরা ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর রুহানি ও জিসমানি উভয় দিক থেকে সুন্দর হবে।
৩। তৃতীয় মাসের সূরা মারিয়াম পাঠ করলে সন্তান ধৈর্যশীল সহিষ্ণু পরহেজগার এবং আল্লাহ ভীরু হবে।
৪। চতুর্থ মাসের সূরা লোকমান বেশি বেশি পাঠ করলে গর্ভের সন্তান জ্ঞানী তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান এবং হেকমতওয়ালা হয়।
৫। পঞ্চম মাসের সূরা মুহাম্মদ পড়লে গর্ভে সন্তান সৌন্দর চরিত্রের অধিকারী হবে এবং বিশ্বাসী হবে।
৬। ষষ্ঠ মাসে সুরা ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী ও গুণীজনের অধীনে হবে।
৭। সপ্তম অষ্টম নবম ও দশম মাসে সূরা ইউসুফ সূরা মারিয়াম বেশি বেশি পড়বে। সূরা ইব্রাহীম এর প্রথম থেকে ১০ আয়াত পড়লে গর্ভে সন্তান নেক আমলকারী হবে।
আরো পড়ুন – ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
বাচ্চা নষ্ট না হওয়ার আমল
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আল্লাহর গুণবাচক নাম গুলো বারবার পাঠ করলে গর্ভবতী নারী বাচ্চা নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম থাকে। আল্লাহর গুণবাচক নাম এর মধ্যে “আল মুব্দিউ” অর্থ- প্রথমবার সৃষ্টিকর্তা। এটি প্রতিদিন ৯৯বার করে পড়তে হবে। এটি পেটের উপর হাত রেখে ৯৯ বার পাঠ করলে তার গর্ভপাত হবে না এবং সময়ের পূর্বে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবে না।
গর্ভবতী মায়ের নামাজের নিয়ম
নামাজ ফরজ ইবাদত বিভিন্নভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম রয়েছে। দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম হলে বসে, বসে অক্ষম হলে শুয়ে নামাজ পড়তে হয়। তবে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় পেট বড় থাকার কারণে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সমস্যা হলে চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যায়। তবে যতদিন সুস্থ থাকা যায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে শরীরের ব্যায়াম হয়।
গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখতে করনীয়
বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে মায়েদের কিছু করণীয় আমল রয়েছে। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই মাকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা হলো-
- প্রতিদিন নিয়মিত কিছুক্ষণ সময় হাটা
- বাড়ির স্বাভাবিক কাজকর্ম করা
- বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসে না থাকা
- দিনে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নেওয়া
- ভারী কোনো কিছু না তোলা
- বেশি বেশি পানি পান করা
- আয়রন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করা
- নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপে থাকা
- ডাক্তারের পরামর্শের ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন না করা
- প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো
- ঘুমানোর সময় বা বামকাত হয়ে ঘুমানো
- কোথাও বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে না রাখা এতে পা ফুলে যেতে পারে
- ঘুমানোর সময় পায়ের নিচে ছোট নরম বালিশ দেওয়া এতে পায়ে পানি জমবে না
- সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
- থাকা বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখা
- এবং ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা
মন্তব্য
আজকে আমরা গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া এবং গর্ভে সন্তান সুস্থ রাখার বিভিন্ন আমল সহ বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি অনেক কাজে লাগবে। গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কোন মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –