ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স
সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক বিশেষ এক ধরনের গার্ডের ব্যবস্থা করেছে আর তা হল ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট বা ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট। ইতিপূর্বে ব্যাংক এশিয়া স্বাধীন মাস্টার কার্ড, কিংবা ওয়েস্টার্ন ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সার কার্ড থাকলেও বেশ কিছু কারণে ব্রাক ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আজকে আমরাব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কি, ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কিভাবে আবেদন করবেন এবং এর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কি
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যাট্রিক্স একাউন্টে মূলত ERQ (এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা) নামক বিশেষ ধরনের ব্যাংক একাউন্ট। সাধারণত যারা আমদানি রপ্তানি রিলেটেড ব্যবসা করে তাদের কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিশেষ ধরনের অ্যাকাউন্ট সুবিধা দেয়া হয় যাতে করে তারা দেশে এবং বিদেশে সমানভাবে ট্রানজেকশন চালিয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ব্রাক ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ERQ (এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা) টাইপ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা নিয়ে এসেছে যা ইতোপূর্বে অন্য কোন ব্যাংক দিতে পারেনি। অর্থাৎ এখন থেকে আপনি চাইলে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার কিংবা আপওয়ার্ক এর মত ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে সরাসরি আপনার ব্যাংকে একাউন্টে ডলার নিয়ে আসতে পারবেন আলাদা এনডোর্স করার প্রয়োজন নেই।
ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কত ধরনের?
ব্র্যাক ব্যাংকের ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট মূলত ৩ ধরনের হয়ে থাকে।
- ফ্রিল্যান্সার-ম্যাট্রিক্স একাউন্ট (ডুয়েল কারেন্সি)
- ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স সেভিংস একাউন্ট
- ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কারেন্ট একাউন্ট
উপরের ৩ ধরনের একাউন্ট ই শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সারদের এর কথা মাথায় রেখে নিয়ে আসা হয়েছে তবে এর মধ্যে শুধুমাত্র ১ নাম্বার একাউন্টে অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স অ্যাকাউন্টটি ডুয়েল কারেন্সি একাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি দুইটি অ্যাকাউন্ট অন্যান্য ব্যাংকের নরমাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর মতই কাজ করবে।
অন্য ব্যাংকের সাথে ম্যাট্রিক্স একাউন্ট এর পার্থক্য
যেমনটা আমরা এত পূর্বে বলেছি ব্র্যাক ব্যাংকে প্রথম নয় যারা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ কার্ড নিয়ে এসেছে। ইত পূর্বে ডাচ বাংলা ব্যাংক, ওয়েস্টার্ন ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ডুয়েল কারেন্সি একাউন্ট সুবিধা দিয়েছিল ফ্রিল্যান্সারদের জন্য।
কিন্তু এই সবগুলো একাউন্টের সাথে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যাট্রিক্স একাউন্ট এর মূল পার্থক্য হচ্ছে বাইরে মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইবার থেকে ডলার ট্রান্সফার করলে ম্যাট্রিক্স একাউন্টে তা সরাসরি ডলার হিসবেই জমা হয়। এবং পরবর্তীতে ডলার খরচ করতে চাইলে সরাসরি কার্ড থেকেই ডলার খরচ করতে পারবেন, আলাদা ডলার এনডোর্স করার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু ব্রাক ব্যাংক ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ড ব্যতীত অন্যান্য ব্যাংকের বাইরের মার্কেটপ্লেস থেকে ডলার ট্রান্সফার করলে তা টাকায় কনভার্ট হয়ে যায় এবং টাকা হিসেবে আপনার একাউন্টে যোগ হয়। এক্ষেত্রে কোনো কারণে ডলার খরচ করতে চাইলে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডে আলাদাভাবে ডলার এনডোর্স করতে হয় ব্যাংকে গিয়ে।
ব্র্যাক ব্যাংক মেট্রিকক্স একাউন্ট খোলার নিয়ম
যেহেতু এটি একটি স্পেশাল অ্যাকাউন্ট তাই শুধুমাত্র ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় এই একাউন্ট খোলা যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অন্য কোন লোকাল ব্রাঞ্চ থেকে ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট খোলা যাবে না।
ধাপ ১ – প্রথমে একটি ERQ ফরম এবং একটি রেগুলার ব্যাংক একাউন্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে যা ব্যাংক থেকে দিয়ে দিবে।
ধাপ ২ – এই পর্যায়ে একটি (KYC) কেওয়াইসি ফর্ম নামের বিশেষ ফরম পূরণ করতে হবে যা ব্যাংক থেকে দিয়ে দিবে।
ধাপ ৩ – উপরের তিনটি ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে এ পর্যায়ে আপনার কিছু ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। যেমন –
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- পাসপোর্ট এর ফটোকপি
- ১২ ডিজিটের ই টিন নাম্বার
- নিজেকে ফ্রিল্যান্সার প্রমাণ করার জন্য যে কোন একটি মার্কেটপ্লেস এর প্রোফাইলের স্ক্রিনশট প্রিন্ট করে নিয়ে আসতে হবে।
ধাপ ৪ – এই পর্যায়ে আপনার নমিনি র তথ্য দিতে হবে। অর্থাৎ সাধারণত ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় যেভাবে একজন নমিনের তথ্য দিতে হয় ঠিক একইভাবে আপনার অবর্তমানে এই একাউন্টের মালিক যিনি হবেন তার কিছু সাধারণ তথ্য দিতে হবে। যেমন
- নমিনির ভোটার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট এর ফটোকপি
- এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- নবীনের ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট থাকলে সেই অ্যাকাউন্ট নাম্বার
- নমিনির স্বাক্ষর
উপরের সব ডকুমেন্টস এবং নিয়মকানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খুব সহজেই ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান একাউন্ট থেকে ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের ৭ কর্ম দিবসের মধ্যেই একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে যা আপনাকে ফোন অথবা ইমেইল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ড এর সুবিধা
উপরে আমরা ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কি এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট খুলতে হয় সেই ব্যাপারে দেখেছি। এই পর্যায়ে আমরা ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট এর কিছু সুবিধা নিয়ে আলোচনা করব।
অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স ফি – এই একাউন্টে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আলাদা অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স ফ্রি। অর্থাৎ আলাদাভাবে বাৎসরিক একাউন্ট মেইনটেনেন্স ফি দিতে হয় না।
ডেবিট কার্ড – ডেবিট কার্ডে প্রথম বছর কোন চার্জ নেই তবে পরবর্তী বছর থেকে ১০ ডলার হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। অর্থাৎ প্রথম বছর ফ্রি হলেও পরবর্তী বছর থেকে ১০ ডলার করে সার্ভিস চার্জ মূল ব্যালেন্স থেকে কেটে নেওয়া হবে।
কনভার্সন রেট – অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ডলার টু টাকায় ভালো রেট দেয়া হয়। সাধারণত ডলার থেকে টাকায় কনভার্ট করার সময় ব্যাংক কিছু কমিশন কেটে নেয় কিন্তু এই কার্ডে সে কমিশন এর পরিমাণ খুবই কম তাই ভালো রেট পাওয়া যায়।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন – এই কার্ডে ডলার ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো দেশে এটিএম বুথ থেকে ক্যাশ উইথ ড্র করা যাবে। এছাড়াও অনলাইনে যে কোন সার্ভিস কিংবা যে কোন ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন এই কার্ডের ডলার ব্যবহার করে।
ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ডের বিশেষত্ব
যেহেতু বর্তমানে অনেক ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের ব্যবস্থা রেখেছে তাই আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ফ্রিল্যান্সিং ম্যাট্রিক্স কার্ডের বিশেষত্বটা কি? বর্তমানে অনেক ব্যাংক ফিন্যান্স ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা রাখলেও ম্যাট্রিক্স কার্ডে কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে। যেমন –
- একাউন্ট খুলতে জামানত রাখতে হয় না। সাধারণত সেভিংস একাউন্ট খোলার সময় ৫০০ বা ১০০০ টাকা জামান রাখতে হয়ে যায় তোলা যায় না কিন্তু ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ড খুলতে কোন জামানত রাখতে হবে না।
- ব্র্যাক ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিং, এবং ই-স্টেটমেন্ট এ সকল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- দেশ-বিদেশের যেকোনো বুথ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তলণ করা যাবে করা যাবে।
- যে কোন ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন করা যাবে এই কার্ডের মাধ্যমে।
ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ডের অসুবিধা
সুবিধার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স কার্ডের বেশ কিছু অসুবিধা বা লিমিটেশন রয়েছে। যেমন –
কার্ডের খরচ – ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স অ্যাকাউন্টের সবচেয়ে বড় অসুবিধারগুলার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রথম বছর এই কার্ডের কোন সার্ভিস চার্জ না থাকলেও এর পরের বছর থেকে ১০ ডলার করে কার্ডের সার্ভিস চার্জ দিতে হবে যা অনেকের জন্য বড় একটি সমস্যা হতে পারে।
৩৫% ডলার – বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ERQ ব্যাংক একাউন্ট গুলোতে মোট টাকার ৩৫ শতাংশ ডলারে এবং ৬৫% টাকায় জমা হবে। অর্থাৎ ফাইবার মার্কেটপ্লেস থেকে যদি আপনার একাউন্টে ১০০ ডলার ট্রান্সফার করেন সেক্ষেত্রে ৩৫ ডলার জমা হবে ডলারে এবং বাকি ৬৫ টাকা টাকায় কনভার্ট হয়ে টাকায় জমা হবে।
এছাড়াও ১০ ডলারের নিচে যে কোন ট্রানজেকশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার টাকায় কনভার্ট হয়ে যাবে।
এই দুটি সীমাবদ্ধতা ছাড়া কার্ডের আর তেমন কোন অসুবিধা নেই তাই আপনার কাছে এই দুটি সমস্যা যদি বড় মনে না হয় তাহলে নিশ্চিন্তে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যাট্রিক্স একাউন্টে ব্যবহার করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সার ম্যাট্রিক্স একাউন্ট খরচ কেমন
- অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স খরচ ফ্রি – ০.০ ডলার।
- ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ ১০ ডলার যা ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।
- দেশের বাইরে যে কোন এটিএম বুথ থেকে ক্যাশ উইথড্র করার সময় ৩ ডলার করে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।
- কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে রিপ্লেসমেন্ট চার্জ ১০ ডলার।
- কার্ডের পিন ভুলে গেলে পিন রিসেট চার্জ ২ ডলার।
মন্তব্য
উপরে আমরা ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কি? কিভাবে আবেদন করে – Freelancer Matrix Account নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলে আপনাদের ভাল লেগেছে। আর্টিকেল ভালো লাগলে আপনার বন্ধুও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন –
- ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন নিয়ম
- জামানত ছাড়া ব্যাংক লোন কিভাবে পাবো