ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি নিয়ম

ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি নিয়ম ২০২৩

ইন্ডিয়া থেকে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চকলেট। ভারতে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন মানের চকলেট খুব কম দামে পাওয়া যায়। তাই পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ভারত থেকে প্রতি বছর বছর পরিমাণে চকলেট আমদানি করা হয়। আজকে আমরা ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ভারত

ভারত থেকে চকলেট আমদানি পদ্ধতি

চকলেট এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি বস্তু। বিয়ে জন্মদিন উপহার সর্বক্ষেত্রে চকলেটের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশী চকলেট এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান চকলেট বাজারে বড় একটি অংশ দখল করে আছে। নিচে সহজ ভাবে উল্লেখ করবো কিভাবে ভারত থেকে চকলেট আমদানি করে বাংলাদেশে ব্যবসা করা যায়-

প্রথম ধাপ

বৈধ ভাবে যেকোনো রাষ্ট্র থেকে পণ্য বা চকলেট আমদানি করতে আমদানি লাইসেন্স করতে হবে। আমদানি লাইসেন্স করতে একটি ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ক্লিন করতে হবে। প্রথমে এগুলো নিয়ে আমদানি নিবন্ধকের কার্যালয় জমা দিতে হবে। তবে এইসব ঝামেলা শেষ করতে ২৫ থেকে ২৩ হাজার টাকা লাগতে পারে।

ধাপ ২

এবার কাজ হলো ইন্ডিয়ান যে চকলেট সেলার আছে তার ইম্পোর্টার এক্সপোর্টার কোড আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। কারণ ইম্পোর্টার এক্সপোর্টার কোড ছাড়া ইন্ডিয়া থেকে পন্য রপ্তানি করা যায় না। বিক্রেতা বা দোকানদারের এসব না থাকলে আপনি কোন এজেন্ট ধরে তাদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। এজন্য হয়তো তাদেরকে কিছু ফি দেয়া লাগতে পারে।

ধাপ ৩

এসব কাজ শেষ হলে স্যাম্পল দেখতে হবে। আপনি যদি অনলাইনে ইন্ডিয়ান সেলার এর সাথে কথা বলেন তবে স্যাম্পল এনে দেখে নেবেন। আর যদি আপনি সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে পণ্য দেখে আসেন তবে স্যাম্পল আনার দরকার নেই নিজেই বিভিন্ন আইটেমের চকলেট নিয়ে এসে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। সাথে কাস্টমারের ফিডব্যাক জানতে পারবেন।

ধাপ ৪

পিআই নিয়ে। এবারে কাজ হল সেলার এর কাছ থেকে পিআই নিতে হবে পিয়াই নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পিআই তে আপনার কোম্পানির একটি সিল মেরে সাইন দিয়ে আপনি যে ব্যাংক থেকে এলসি করতে চান সে ব্যাংকে চলে যাবেন। পিআইতে পণ্যের দাম, ওজন, পরিমাণ আমদানি কারকের নাম, রপ্তানি কারকের নাম, রপ্তানি কারকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।

ধাপ ৫

এবার এলসি করতে হবে। উপরের ধাপগুলো করা শেষ হলে পিআই নিয়ে কোন একটা ব্যাংকে চলে যেতে হবে। যত ডলার এলসি করতে চান তাদেরকে বলবেন। তবে আপনি যেকোন পন্য আমদানি করবেন তার ক্রয়মূল্য উল্লেখ করতে হবে। খুব সাবধানে এল সি ফরম পূরণ করতে হবে। এখানে আপনি যে পণ্য আনবেন তার নাম এবং এইচএস কোড এবং ফুল ভ্যালু উল্লেখ করতে হবে। কোনভাবেই যেন এইচএস কোড ভুল না হয়।

ধাপ ৬

এবার ব্যাংক সকল কাগজপত্র সেলারকে পাঠাবে। সেলার সব যাচাই-বাছাই করে ট্রাক চালান এল সি ফরম পি আই কমার্শিয়াল ইনভয়েস প্যাকিং লিস্ট পুনরায় ব্যাংককে পাঠাবে। ব্যাংক সকল কাগজপত্র দেখে যাচাই করে সাইন করে আপনাকে দিয়ে দিবে।

ধাপ ৭

এসব পন্য যেকোনো সীমান্ত দিয়ে আপনার কাছে আমদানি করবে। সেটা বেনাপোল বা যে কোন সীমান্ত দিয়ে আমদানি করবেন সেখানে কোন সিএনএফ এর মাধ্যমে কাস্টমসে জমা দিবেন। সিআইডিএফ আপনাকে তিন থেকে চারদিনে পণ্য খালাস করে দিবে। তবে চকলেটের জন্য বিএসটিআই থেকে অনুমতি নিতে হবে। এজন্য কিছু সময় খরচ হতে পারে।

ভারত থেকে চকলেট আনার ট্যাক্স

ইন্ডিয়ান চকলেট আনতে কত ট্যাক্স দিতে হবে এটা অনেকেই জানেনা। এ বিষয়টা খুবই জটিল অনেকেই হিসাব করতে পারে না কতটা ট্যাক্স আসতে পারে। যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় সেসব পণ্য আমদানি করলে ট্যাক্স অনেক বেশি দিতে হয়। ১০০০ টাকার ইন্ডিয়ান চকলেট আমদানি করলে ট্যাক্স দিতে হবে ৯০০ টাকা।

তবে কাস্টমস প্রতি ইন্ডিয়ান চকলেট কমবেশি ডলার ধরে অ্যাসেসমেন্ট করবে অর্থাৎ আপনি যদি পাঁচ ডলার ঘোষণা দেন তাহলেও তারা নির্ধারিত পরিমানেই ভরেই অ্যাসেসমেন্ট দিবে।

ভারতের চকলেটের পাইকারি বাজার

এই পর্যায়ে আমরা ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি করার সবচেয়ে বড় মার্কেট নিয়ে আলোচনা করবো। সাধারনত যত বড় বাজার থেকে আপনি চকলেট আমদানি করবেন খরচ তত কম হবে এবং মুনাফা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কলকাতা বড় বাজার নিউমার্কেট

পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতা। এখানে বাসে চড়ে ট্রেনে কিংবা প্লেনে করেও যাওয়া যেতে পারে। তবে সাথে অবশ্যই পাসপোর্ট বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে হবে। যদি চকলেটের ব্যবসা শুরু করতে চান এবং পাইকারি তা বাইরের দেশ থেকে আনতে চান তাহলে যেতে পারেন কলকাতার বড় মার্কেটে। দেশি-বিদেশি হওয়ার একরকম চকলেটের সাজিয়ে বসে থাকে এখানে দোকান সমূহে। স্বল্প মূল্যায়নের কাঁচামাল সংগ্রহে আজই ঘুরে আসতে পারেন এই মার্কেট থেকে।

হাওড়া বাজার সংলগ্ন কাটরা মার্কেট

দেশি-বিদেশি চকলেটের বিরাট মার্কেটে সাজিয়ে রেখেছে হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এই রাজা কাটরা মার্কেট। চকলেট ব্যবসায়ীদের জন্য দেশি-বিদেশি চকলেট পাইকারি মূল্যে এখানে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এখান থেকে চকলেটের বিভিন্ন কাঁচামাল খুব কম দামে কেনা যেতে পারে।

মুম্বাই পাইকারি বাজার

ইন্ডিয়ার মুম্বাই শহরের কাছে কেরাও ফোর্ড মার্কেট এর কাছে পাইকারি চকলেট কিনতে পাওয়া যায়। এখানে চাইলে নিজেকে কিংবা তাদের অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে বিদেশি বিভিন্ন ধরনের দামি কম দামি চকলেট কেনা যায়। এখানে চকলেট মুম্বাই থেকে সারা ভারতজুড়ে চালান দেওয়া হয়ে থাকে।

বেনাপোল বর্ডার বাজার

বাংলাদেশ এবং ভারতের বর্ডার সংলগ্ন বেনাপোল বর্ডার বাজার ইন্ডিয়ান পন্যের কেনাবেচার আরেকটি পরিচিত নাম। এই বাজারে খুব সহজে পছন্দের চকলেটের কাঁচামাল বা দেশে-বিদেশি চকলেট কিনতে পারা যায়। এছাড়া দেশের কাছাকাছি বর্ডারে হওয়ার কারণে ট্রান্সপোর্ট খরচ কম হয়ে থাকে।

হিলি সীমান্ত বর্ডার বাজার

স্বল্প পুঁজিতে কাঙ্খিত চকলেট এনে বিক্রি করতে চাইলে এই হিল সীমান্ত বর্ডার বাজারে যাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই সাথে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট নিতে ভুল করা যাবে না। এখানে ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশের পাইকারি আখাইডায় চকলেট কেনাবেচা করে থাকেন।

ভারতের অনলাইন চকলেট বাজার

আজকাল ঘরে বসে বিভিন্ন অনলাইন শপ এর মাধ্যমে দেশে বা ভারত থেকে ব্যবসার জন্য চকলেটের কাঁচামাল পাইকারি ধরে কিনতে পারা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে বুঝে যাচাই করে পাইকারি কেনা উচিত। কেননা পাইকারি কিনতে হলে প্রথমে পে করতে হয়। তাই আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি

মন্তব্য

আজকে আমরা ইন্ডিয়া থেকে চকলেট আমদানি নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply