শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় কন্যা। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে অনেকেই তার জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করে। সেজন্য অনেকেই শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি বা তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন গুগলে সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি তার কর্মজীবন এবং তার সম্পর্কে জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। ক
আরো পড়ুন – ফারজানা ব্রাউনিয়া জীবনী, ইনকাম, পরিবার
শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি?
শেখ হাসিনার স্বামীর নাম ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমাণু ও পদার্থবিজ্ঞানী। পদার্থবিজ্ঞান এবং বহুল পঠিত বিভিন্ন রাজনীতি বইয়ের লেখক। তিনি বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জীবনী
উপরে আমরা শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি এই ব্যাপারে জেনেছি। এই পর্যায়ে আমরা ডক্টর এম এ ওয়াজেদ আলোর জীবনী বিস্তারিত জানবো এবং উল্লেখযোগ্য সকল ঘটনা বর্ননা করবো।
পরিচয়
নাম- তার পুরো নাম এম এ ওয়াজিদ মিয়া এবং তার ডাকনাম ছিল সুধামিয়া।
জন্ম- তিনি ১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ সালের রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পথে পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বাবা এবং মায়ের নাম- তার বাবার নাম ছিল আব্দুল কাদের মিয়া এবং মায়ের নাম ময়েজুন্নেসা।
ভাইবোন- তিন বোন এবং চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া শিক্ষাজীবন
তিনি চক করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য তাকে রংপুর জেলায় স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিস্টিংশন সহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৬ সালের রংপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর .১৯৫৮ সালের রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। এমএসসি পাস করার পর .১৯৬৭ সালে লন্ডনের দারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া রাজনৈতিক জীবন
ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে রাজনীতির সাথে জড়িত হতে শুরু করেন। ১৯৬১ সালে ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালের লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর এর ডিগ্রি লাভের পর দেশে ফেরার একই বছর ১৭ই নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে তিনি বিয়ে করেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিয়ে
ডক্টরেট শেষ করার পর তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় কন্যা শেখ হাসিনা কে বিয়ে করেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া কারাবরণ
স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের কারণে তিনি কিছুদিন কারাবরণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তার আগেও পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে .১৯৯৭ সালে তিনি অবসর নেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া সন্তান
তার দুই সন্তান। এক ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলের নাম সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ের নাম সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্বভাব গুণাবলী
ওয়াজেদ মিয়া বৈজ্ঞানিক অঙ্গনে পেশাদারিত্বের জন্য বেশ পরিচিতি থাকলেও ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব এবং সমসাময়িকরাও তাকে ছাত্রনেতা হিসেবে তার ভূমিকা সাথে পরিচিত ছিল। একাধিক বন্ধু এবং সমসাময়িকরা বলেছেন যে তার গুণাবলী তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলে সহ-সভাপতি প্রদর্শন করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু তার একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং একাডেমিক অনুগতির কারণে তিনি পরমাণু বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন।
তিনি দীর্ঘদিন কর্মজীবনের সময় জার্মানি এবং ভারত সহ বিভিন্ন দেশে বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার গবেষক ও সহযোগী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং দেশের পারমাণবিক শক্তি মিশনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া জীবনযাপন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কি বিবাহ করার পরও রাজনীতিতে বড় পদ থাকার পরও তিনি সবসময় সাধারণ জীবন যাপন করেছিলেন। তার মমতাময়ী ব্যক্তিত্ব কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন এজন্য প্রতিবাদ করার কারণেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এছাড়াও তিনি গরীব মানুষকে এবং ছাত্রদের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ওয়াজেদ মিয়া ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও কখনো দুর্বলদের ওপর শক্তি দেখাননি বলে উনি বিভিন্ন কাছের মানুষজন মন্তব্য করেন। এটি তার জীবনে অন্যতম বড় দিক ছিল। তিনি ছিলেন নম্র স্বভাবজাত এবং উদার মানুষ। তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বলেন ডক্টর ওয়াজেদ মিয়াকে তীক্ষ্ণ প্রতিভা এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় হাইওয়েতে ডাক্তার ওয়াজেদ সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া কর্মজীবন
১৯৬৩ সালে ত্রিশে এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালের আগস্ট এ পি এস টি ডিগ্রী শেষ করে ইতালির ক্রিস্টস্থ আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ কেন্দ্রে তিনি.৬ মাস গবেষণা কর্ম শেষে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশনের অধীনে আণুবীক্ষণে বিভাগের যোগদান করেন।
১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর সাময়িক ও দৈনিক ভিত্তিতে ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশন থেকে পরমাণু বিজ্ঞানী ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া জনন একটি পোস্ট ডক্টর অলসিপ এর বন্দোবস্ত করা হয়। ওই ফেলোশিপের শর্ত অনুসারে বাসায় এবং অফিসে যাতায়াতের সুবিধা এর অতিরিক্ত দৈনিক ভাতা প্রদান করা হতো ৬২ রুপি ৫০ পয়সা। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের ভৌত বিজ্ঞান সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া লেখালেখি এবং প্রকাশনা
ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞান ছাত্রদের জন্য দুটি বই রচনা করেন। ইংরেজিতে লেখা গ্রন্থ এর নাম-
১। Fundamentals of Thermodynamics
২। Fundamentals of Electromagnetic
তার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে “কিছু ঘটনাও বাংলাদেশ” ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইটিতে ৪৬৪ টি পৃষ্ঠা রয়েছে এই ৪৬৪ পৃষ্ঠা সুপারিসরে এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম হল বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকারের চলচ্চিত্র যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছে।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্বীকৃতি এবং প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং মহান পুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে “ডক্টর ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট” প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানাগার “ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নাটোরে প্রস্তাবিত ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরে ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার নামে ২০১০ সালে একেএম ফরহাদুল কোভিদ বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক সংগঠন “ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া মৃত্যু
২০০৯ সালের ৯ই মে বিকাল ৪:২৫ মিনিটে দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যা এবং হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে বুকে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শেখ হাসিনার স্বামীর নাম
আজকে আমরা শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- ফারজানা ব্রাউনিয়া জীবনী, ইনকাম, পরিবার
- আমার প্রিয় শেখ রাসেল রচনা, শেখ রাসেলের জীবনী
- অনলাইনে শেখ রাসেল কুইজ বিস্তারিত