ভূমিকম্পের কারণ কয়টি
প্রাকৃতিক ভয়াবহ দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অনেকেই ভূমিকম্পের কারণ কয়টি বা কি কি কারণে ভূমিকম্প হয় ভূমিকম্পের উৎস ভূমিকম্পের সময় করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।
আজকে আমরা ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও অজানা তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
ভূমিকম্প কি?
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখনই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পৃথিবীর উপরিভাগের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা নড়েচড়ে ওঠা কে ভূমিকম্প বলা হয়। হঠাৎ যদি ঘরে কোন জিনিস দুলতে শুরু করা যেমন দেয়াল ঘড়ি টাঙানো যে কোন আসবাবপত্র তখনই বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে।
সহজ কথায় পৃথিবী কেঁপে ওঠাকে ভূমিকম্প বলা হয়। সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৬০০০ এর বেশিও ভূমিকম্প হয়। এগুলো বেশিরভাগই মৃত যেগুলো আমরা টের পাইনা।
ভূমিকম্পের ধরন
সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
- প্রচন্ড
- মাঝারি
- এবং মৃত
আবার গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- অগভীর
- মধ্যবর্তী এবং
- গভীর ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূপৃষ্ঠে ৭০ কিলোমিটার এর মধ্যে হলে অগভীর। ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার এর মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়।
ভূমিকম্প কেন হয়?
ভূমির অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা নিকেলের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটিকে ফাঁকা হয়ে পড়ে। আর পৃথিবীর উপরে দলের চাপ ওই ফাঁকে স্থানে ডেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে।
তখনই ভূপৃষ্ঠে প্রবল কম্পনির অনুভূত হয় যা আমরা ভূমিকম্প নামে জানি। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে। তাহল-
- পরিবর্তন জনিত কারণে
- আগ্নেয়গিরি সংগঠিত হওয়ার কারণে এবং
- শিলা চুক্তি জনিত কারণে
- এছাড়াও ভূপাত তাপ বিকিরণ
- ভূগর্ভস্থ বাষ্প
- হিমবাহের প্রভাবেও ভূমিকম্প হয়
ভূমিকম্পের কারণ কয়টি?
এই পর্যায়ে আমরা ভূমিকম্পের কারন নিয়ে আলোচনা করবো। ভূমিকম্পের মূলত কারণ হলো তিনটি-
১। ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে
২। আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণ এবং
৩। শিলা চুত্যি জনিত কারণ
ভূমিকম্পের স্থায়িত্বের সময়
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাপক ধ্বংস সংঘটিত হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষয় ক্ষতি হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তার নাম রিক্টার স্কেল।
এই স্কেল এর এককের এক থেকে দশ পর্যন্ত হয়ে থাকে এই স্কেলের মাত্রা অনুযায়ী পাঁচ এর বেশি ভূমিকম্প হওয়া মানে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা। ভূমিকম্প ১০ থেকে ৩২ কোন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিক্টারে স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ থেকে ৫.৯৯ মাঝারি, ছয় থেকে ছয় দশমিক ৯৯ তীব্র, ৭ থেকে ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং 8 এর উপরে হলে অত্যন্ত ভয়াবহ বলে ধরা হয়।
ভূমিকম্পের সময় কি করবেন
উপরে আমরা ভূমিকম্পের কারণ কয়টি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো ভূমিকম্প হলে আমাদের কি কি করা উচিত-
- ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা বা উন্মুক্ত খোলার স্থানে আশ্রয় নিতে হবে
- উঁচু ভবন থাকলে এবং বের হতে না পারলে জানালা বা দেওয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোন জায়গায় অবস্থান করুন
- হতাশ বা তাড়াহুড়া না করে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার চেষ্টা করুন
- আপনার মুঠোফোন বা মোবাইল ফোনে ফায়ার সার্ভিস এবং দরকারি মোবাইল নাম্বার গুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই সেভ করে রেখে দিন যাতে করে ভূমিকম্প সহ বিভিন্ন বিপদের সময় আপনার কাজে লাগে।
- লম্বা বহুতল ভবনে একই জায়গা অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ ভাগ হয়ে আশ্রয় নিতে পারেন
- ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার উপর শক্ত করে বালিশ অথবা অন্য কোন শক্ত বস্তু ধরে রাখুন
- গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান করুন
- উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না
- ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন
- কোন কলাম বা পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন
- রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে
- দেওয়াল এর নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন যাতে ধুলাবালি শ্বাসনালীতে না ঢুকে।
- ব্যাটারি চালিত রেডিও টর্চলাইট পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিস সবসময় বাড়িতে রাখুন
ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি ?
অনেকেই ভূমিকম্পের কারণ কয়টি এর পাশাপাশি ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম জানতে চান। ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম হল রিকার স্কেল বা ভূমিকম্প মাপক। এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রধানত ভূমিকম্প অগ্নুৎপাত যেকোনো কারণে সংগঠিত ভূত্বকে গর্ভস্থ কম্পনের তীব্রতা মাপার জন্য ব্যবহার করা হয়।
পুরনো যুগের ব্যবহৃত ভূমি কম্পের মাপক যন্ত্রকে সাধারণত ইংরেজিতে সিজমোগ্রাফ নামে ডাকা হতো। বর্তমানে সিসমোমিটার দ্বারা ব্যবহৃত আধুনিক মাপক পরিমাপ এবং বিশ্লেষণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে এমন ভূমিকম্প মাপককে বোঝায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ
সাধারণত আমরা যারা মুসলমান এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করে তারা জানি বিভিন্ন ধরনের পাপের প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো মানুষের অপকর্ম। মহান আল্লাহতালা যখন মানুষের উপর নারাজ হন তখনই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে মানুষকে শাস্তি দেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে কাউকে বিশ্বাস করা সম্পত্তিতে রাখা হবে কিন্তু সে তা আত্তসাত করবে যাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরুপ আচরণ করবে বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
মসজিদে উচ্চস্বরে সরগোল করবে যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজে শাসক রুপে আবির্ভূত হবে সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো, রক্তিম বর্ণের এসিড বা ভূমিকম্পের এবং ভূমিধসের লিঙ্গ পরিবর্তন পাথর বৃষ্টি এবং সুতো ছেঁড়া দানার্য একটির পর একটি নিদর্শন গুলির জন্য।
অর্থাৎ রাসূল সাঃ বলেছেন যে পর্যন্ত না এলেম উঠিয়ে নেয়া হবে অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে এবং সংকুচিত হয়ে আসবে। ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুন-খারাবি বাড়বে তোমাদের সম্পদ এত বাড়বে যে উপচে পড়বে তখনই কিয়ামত হবে। সুতরাং বলা যায় যে ইসলামে ভূমিকম্প কে কেয়ামতের একটা আলামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাই ভূমিকম্প হলে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহতালা নিকট তওবা করা উচিত এবং নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া উচিত।
ভূমিকম্পের সময় সর্তকতা
মূলত যখন ভূমিকম্প হয় তখন আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজেকে নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। বাড়ির বাচ্চাদেরকে নিরাপদে স্থানে রাখতে হবে এবং ভূমিকম্প হলে করণীয় কি সেগুলো পরিবারের সবাইকে আগে থেকে সতর্কতা জন্য জানিয়ে রাখতে হবে।
বিল্ডিং বা ভবন ধসে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বা প্রাথমিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ভূমিকম্প হলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে।
ভূমিকম্পের কারণ কয়টি
আজকে আমরা ভূমিকম্পের কারণ কয়টি ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির জন্য শেয়ার করতে পারেন এবং কোন মন্তব্য মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- ইতালি ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা
- বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
- নিজের জন্মদিনের স্ট্যাটাস, ফেসবুক পোষ্ট, ক্যাপশন
- হুন্ডি কি? হুন্ডি কিভাবে করে? বিস্তারিত জানুন