নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায়

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায়

জন্মের পর নবজাতক শিশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো নবজাতকের বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়া। নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন কমানোর উপায় কি সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

বিলিরুবিন কি ?

Untitled design 2023 11 09T211652.034

বিলিরুবিন একটি যৌগ পদার্থ যা সাধারণত আমাদের শরীরে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে। আমাদের শরীরে বিলিরুবিনের সাধারণ মাত্রা হলো এক বা ১.২ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসি লিটারের নিচে। রক্তের মাধ্যমে বিলিরুবিন প্রথমে পৌঁছায় লিভার। এর পর লিভার থেকে বাইলডাক্ত হয়ে যায় খাদ্যনালীতে।

মোটকথা হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয় হলুদ পিত তরঙ্গ বিলিরুবিন তাদের অন্যতম।

নবজাতকের বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো-

  • নবজাতকের চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
  • মুখ থেকে শুরু করে বুক পেট বা পা এবং পায়ের তালু হলুদ হয়ে যাওয়া
  • খুব ক্লান্তি বোধ করা
  • খেতে না চাওয়া
  • কান্নাকাটি করা
  • হাত পায়ের ত্বক ফ্যাকাস হয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া
  • কখনো কখনো প্রস্রাব বা পায়খানা করতে না যাওয়া
  • বুকের দুধ খেতে না চাওয়া

নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন বাড়ার কারণ

বিভিন্ন কারণেই নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় নিমিষে সব কারণ তুলে ধরা হলো-

  • জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে সঠিক সময়ের পূর্বে নবজাতক জন্মগ্রহণ করলে
  • মা এবং শিশু রক্তের গ্রুপ আলাদা হলে
  • শিশু জন্মের পর মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ না পেলে
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের কোন সংক্রমঞ্জনিত রোগ থাকলে
  • শিশুর জন্মগত কোন রোগ থাকলে
  • জন্মের পর শিশুর রক্তে সংক্রমণ দেখা দিলে
  • শিশুর পিত্তথলিতে কোন সমস্যা থাকলে
  • জেনেটিক সমস্যা থাকলে

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায়

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় রয়েছে। নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন বেশি হলে ফটো থেরাপি দিতে হয়। আবার যদি জন্ডিসের মাত্রা ১৪ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসি লিটারির নিচে হয় তাহলে সূর্যের আলোয় রাখলে ভালো হয়ে যায়। এছাড়া কোন নবজাতকের মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে জন্ম গ্রহনের পর নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে।

  • এ ক্ষেত্রে নবজাতকের শর্করা লেভেল স্বাভাবিক রাখতে হবে
  • কাউন্টার দা ব্লগ ফিটিং বা ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে
  • এছাড়া বুকের দুধ খেলে যদি রক্তে বিড়ি-রুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে শিশুর থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়
  • এছাড়া লিভার ব্লক এজ অর্গান ডিফেক্ট পিত্তথলিতে কোন সমস্যা গ্লুকোসিক্স পাকস্থলীতে খাদ্য নির্মাণে কোন বাধা থাকলেও শিশুর রক্তে বিলিরুবেলে মাত্রা বাড়তে পারে।
  • তাই সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে
  • নবজাতকের প্রতি আধা ঘন্টা করে প্রতিদিন সূর্যের আলোতে রাখতে হবে

নবজাতকের বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি হয়

নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা ১৫ মিলিগ্রাম বা ডেসিলেটার নিচে থাকলে এটা সাময়িক জন্ডিস এটাতে জন্য কোন চিকিৎসায় প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যদি বিলিরুবিনের মাত্রা ০.৫ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসি লিটার বা প্রতি ঘন্টায় বাড়তে থাকে বা প্রতি ডেসিলিটারে ২৫ গ্রাম হয়।

তবে তা বিপদজনক বলে ধারণা করা হয়। নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক কালো হয়ে যায়। চোখ সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। হাত-পা পেট হলুদ রং ধারণ করে। প্রস্রাব হলুদ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নবজাতক কান্নাকাটি করে দুধ বুকের দুধ খেতে চায় না ঘুমাতে চায় না।

নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে করণীয়

Untitled design 2023 11 09T211713.105

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় আমরা জানলাম। নিচে নবজাতকের বিলিরুবিন ঠিক রাখার উপায় উল্লেখ করা হল-

  • নবজাতকের মাত্রা ঠিক রাখতে গর্ভধারণের সময় মাকে সব ধরনের অ্যান্টিসেপটিক টিকা নিতে হবে।
  • প্রতিদিন মায়ের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার থাকতে হবে।
  • বাচ্চা যাতে আন্ডার ওয়েট না হয় বা সময়ের পূর্বে জন্মগ্রহণ না করে সে হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • বাচ্চা জন্মের পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে নবজাতককে জন্ডিসের টিকা দিতে হবে।
  • বাচ্চা জন্মের পরবর্তী সময়ে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখতে হবে।
  • নবজাতক জন্মের পূর্বে নবজাতকের মা এবং বাবার রক্তের গ্রুপ কি রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে
  • থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তা চিকিৎসা করতে হবে

বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ মিলিগ্রাম প্রতিটি শ্রেণির নীচে থাকলে সেটি স্বাভাবিক মাত্রা। যদি প্রতি ডেসিন লিটারে ঘন্টায় পাঁচ মিলিগ্রাম করে বাড়তে থাকে বা ২৫ মিলিগ্রাম ডেসিলিটারে বেশি হয় তবে তা বিপদজনক বলে ধরা হয়। অর্থাৎ রক্তে বিলি রুবিনের ঘনত্ব ১.২ mg disletter এর নিচে থাকলে তিন এমজি লিটার বা ৫০ লিটারের বেশি হলে জন্ডিস হয়।

নবজাতকের জন্মের পর করণীয়

নবজাতকের জন্মের পর কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-

  • নবজাতকের কোন সর্দি আছে কিনা
  • নবজাতকের কান্নাকাটি করছে কিনা
  • ঠিকভাবে বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা
  • নবজাতকের রক্ত পরীক্ষা করা
  • রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করা
  • ডেলিভারির পর অন্তত ৪৮ ঘন্টা হসপিটালে থাকা
  • নবজাতকের জন্মের পর মা এবং শিশুর সুস্থ আছে কিনা তা চেকআপ করা
  • জন্মের পর থেকে প্রতিদিন বিশ মিনিট করে সকালে রোদে রাখা
  • হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে নবজাতককে গোসল করানো
  • নবজাতককে ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই সাধারণত ডাক্তারের কাছে সঙ্গে সঙ্গে যেতে হবে। কেননা নবজাতকের ক্ষেত্রে যে কোন রোগ হলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা করা বিপদজনক হতে পারে। তাই নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে বা জন্ডিসের কোন লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

Untitled design 2023 11 09T211738.316

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায়

আজকে আমরা নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply