বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমরা গর্ভের সন্তান রাখতে চাইনা। এছাড়া অনাকাঙ্খিত গর্ভ ধারণ অনেকের জন্যই খুশি সংবাদ হয় না তাই বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়ে থাকে তা অনেকেই জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং বাচ্চা নষ্ট করার পর নিজের যত্নে করণীয় বিষয় সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাচ্চা নষ্ট করার ট্যাবলেট পাওয়া যায় যেগুলো মূলত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই সেবন করা উচিত নয়। কেননা বাচ্চা নষ্ট করার ট্যাবলেটের অবশ্যই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।
তাই ওষুধ সেবন করা পূর্বা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে বাজারে পাওয়া যাওয়া বাচ্চা নষ্ট করার ট্যাবলেট উল্লেখ করা হলো-
- Pregnot 200 mg
- Mifepristone
- Misoprostol
বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
রক্তক্ষরণ- বাচ্চা নষ্ট করার পর বেশিরভাগ মায়েদের যে সমস্যা বেশি দেখা দেয় তাহলেও যৌনপথে রক্তক্ষরণ এ সময় রক্তক্ষরণ প্রায় অনেকদিন থাকে। আবার কয়েকদিন পরপর হয়ে থাকে। যদি রক্তক্ষরণের পরিমাণ খুব বেশি হয় তবে একজন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বমি হওয়া- বাচ্চা নষ্ট করার পর বেশিরভাগ যেসব সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম মাথা ঘোরা বমি হওয়া বমি বমি ভাব থাকা গা গলানো এসব সমস্যা সাধারণত নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে যায় ।এবং বাচ্চা নষ্ট করার পরবর্তী এক সপ্তাহে সব সমস্যা খুব বেশি দেখা দিবে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেশি বমি হলে বা মাথা ব্যাথা করলে ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু- বাচ্চা নষ্ট করার পর পরই প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা মেডিসিনের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে থাকেন। তবে কোনভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীর রক্তশূন্য দেখা দিলে রোগীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পেটে ব্যথা- অনেকেই জানেন না যে বাচ্চা নষ্ট করলে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে এবং এই পেটে ব্যথা খুব বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। অনেকেরই লম্বা সময়ই পেটে ব্যথা থাকে তবে গর্ভপাতের পর মাঝে মাঝেও পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
এই ব্যথা বিশেষ করে যখন হালকা রক্ত ক্ষরণ হয় ঠিক তখনই দেখা দেয়। এজন্য পেটের মধ্যে গরম পানি শেক দেওয়া যেতে পারে।
দুর্বলতা- বাচ্চা নষ্ট করার পর বাচ্চা ডেলিভারি করার মতই কিছুটা শরীরে ধকল যায় তাই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া সবার শারীরিক অবস্থা একই রকম হয় না তাই বাচ্চা নষ্ট করার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা নষ্ট করতে হবে।
রক্তস্বল্পতা- যেহেতু বাচ্চা নষ্ট করা বা ডেলিভারির সময় মায়েদের অনেক বেশি ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ হয়। যার ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। অনেক সময় বাচ্চা নষ্ট করার ট্যাবলেট এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও বেশি বিল্ডিং হয়। তাই শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
থেমে থেমে রক্ত ক্ষরণ বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে শারীরিক দুর্বলতা সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানসিক অবসাদ- গর্ভের বাচ্চা যেভাবেই হোক নষ্ট হলে মনের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করে বারবার নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। তাই যেভাবেই হোক সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে মানসিকভাবে প্রচন্ড অশান্তি সৃষ্টি হওয়া তাই এ সময় যে কাজটি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে বা পছন্দের কাজগুলো বেশি বেশি করে করতে হবে।
এবং পরিবারের সময় সবার সঙ্গে মিলেমিশে সময় কাটাতে হবে।
পুনরায় গর্ভধারণের সমস্যা- বাস্তব বাচ্চা নষ্ট করা ঠিক পর পরই কখনো গর্ভধারণ করা উচিত নয় বা যাতে খুব সহজে গর্ভধারণ না হয় সে সম্পর্কে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে করে পরবর্তী বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে আবার অনেক সময় দেখা যায় যে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার পর কখনোই গর্ভধারণ করা যায় না।
শারীরিক সমস্যা- বাচ্চা নষ্ট করার ফলে শারীরিক দুর্বলতা রক্তস্বল্পতা মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে না পারম্লিডিং হওয়া তাদের কারণে শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি মানুষিক অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
তাই যেকোন শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চা নষ্ট করার পর করনীয়
বাচ্চা নষ্ট করার পর অবশ্যই নিজের যত্নের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বাচ্চা নষ্ট করার বাচ্চা ডেলিভারি করার জন্য প্রায় একই সমান। শরীরের উপর ধকল যায়। যার ফলে শরীরের অনেক বেশি ইন্টারনাল ড্যামেজ হয়ে যায়। বাচ্চা নষ্ট করার পর নিজে যত্নে করণীয় বিষয়গুলো হলো-
বিশ্রাম নেওয়া– বাচ্চা নষ্ট করার পর শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই এ সময় বেশি বেশি বিশ্রাম নিতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে দিনের বেলায় কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারেন।
সুষম খাবার গ্রহণ করা- গর্ভপাতের পর পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়ার উপর বেশি মনোযোগ দিতে হবে। সবুজ শাকসবজি মৌসুমী ফল আদা রসুন তেল এবং দুধের তৌরি খাদ্য তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এসময় বাইরের যে কোন খাবার একদমই গ্রহণ করা উচিত নয়।
এমনকি বিভিন্ন ধরনের তরল পানি ও পান করা নিষেধ কারণ এগুলো আপনার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করবে।
ভারী ব্যায়াম না করা- গর্বপাতের পরবর্তী সময়ে ভারী যে কোন ওয়ার্ক আউট বা ব্যায়াম করা উচিত নয়। বাচ্চা নষ্ট করার পর পরে অনেকে সময় কাটাতে জিমে যাওয়া শুরু করে। এ সময় গর্ভপাতের পর ভারি যেকোনো কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকি কাপড় কাচা সংসারে ভারী কাজ করা পানির বালতি তোলার মতো কাজ করা যাবে না।
ভারী কাজ করলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
গরম পানি পান করা- গর্ভপাতের পর শরীরে পানি শূন্যতাও দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় কষ্টকাঠিন্য থেকে বাঁচানোর জন্য এবং শরীর ডিহাইড্রেট রাখার জন্য হালকা গরম পানি পান করতে পারেন। প্রতিদিন সুস্থ থাকতে একজন ব্যক্তিকে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হয় আর এ সময় শরীরে বেশি বেশি পানি প্রয়োজন হয়।
হট কম্প্রেশন- গর্ভপাতের পর বা বাচ্চা নষ্ট করার পর শরীরের মোচড় দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে হট ব্যাগ ব্যথা কম করতে সাহায্য করে। সেজন্য প্রায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে শরীরে ব্যথা দেখা দেয় সেখানে হট কম্প্রেশন নিতে পারেন।
পুনরায় গর্ভধারণে তাড়াতাড়ি না করা- গর্ভপাতের পর অবশ্যই পরেরবার বাচ্চা নেওয়ার জন্য সময় নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই বাচ্চা নষ্ট করার পরপরই আবার গর্ভধারণ করার চেষ্টা করেন। গর্ভপাতের তিন মাসের পর গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে পারেন। তবে ছয় মাস বা এক বছর পরে গর্ভধারণের চিন্তা করার সবচেয়ে উত্তম।
নিয়মিত চিকিৎসা করা- গর্ভপাত বা বাচ্চা নষ্ট করার পর নিয়মিত নিজের চিকিৎসা করতে হবে। নিজের শরীরে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে তার চিকিৎসককে জানাতে হবে। এ সময়ে রক্তের পরিমান কমে যেতে পারে। মাথা ঘোরা বমি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
মিস ক্যারেজ বা বাচ্চা নষ্ট হওয়ার কারণ
ইচ্ছাকৃতভাবে বাচ্চা নষ্ট না করলেও বিভিন্ন কারণে বাছা নষ্ট হয়ে থাকে। যেমন-
- বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি
- মায়ের অসুস্থতা
- যেমন ডায়াবেটিস
- ব্লাড প্রেসার
- কিডনি সমস্যা
- থাইরয়েড থাকলে
- মায়ের বিভিন্ন ইনফেকশন যেমন রুবেলা এইচআইভি গনোরিয়া ম্যালেরিয়া
- মায়ের বয়স যদি ৩০ বছরের উর্ধ্বে হয় তাহলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে
- হরমোন বিভিন্ন সমস্যার কারণে গর্ভপাত হয়
- মা অতিরিক্ত পরিশ্রম বা অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে
- সিগারেট
- মদ্যপান
- মাদক নিলে
- প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ করলে
- জরায়ু ত্রুটি থাকলে
- অস্বাভাবিক আকৃতি টিউমার বা বাচ্চা উল্টা পজিশনে থাকলে
- ডিম স্বাভাবিক চেয়ে বড় হলে
- জরায়ুর আকার অত্যন্ত ছোট থাকলে
- যেখানে বাচ্চা বড় হতে পারে না একসাথে একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ করলে
- জরায়ুর মুখ দুর্বল এবং খুলে যাওয়া
- বিষাক্ত খাবার এবং ঔষধ
- মা-বোন ঘনিষ্ঠ স্বজনগত ইতিহাস থাকলে
- স্থূলতা অতিরিক্ত মেদ ওজন থাকলে
বাচ্চা নষ্ট করার কতদিন পর আবার বাচ্চা নেওয়া যাবে?
বাচ্চা নষ্ট করার পর সাধারণত তাড়াহুড়া করে বাচ্চা পুনরায় গর্ভধারণ করার চেষ্টা না করা উচিত। এর ফলে দ্বিতীয়বার মিস ক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চা নষ্ট করার কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছর পরে বাচ্চা নেওয়ার জন্য পুনরায় চেষ্টা করলে মিসক্যারেজ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
আজকে আমরা বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত হবে পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীগ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়
- বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়ানোর সহজ উপায়
- বাচ্চাদের গলায় মাছের কাঁটা বের করার উপায়