কলেরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

কলেরা রোগের লক্ষণ

পূর্বে যেসব রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো কলেরা। বর্তমান সময়ে কলেরা সম্পর্কে মানুষ অনেক সচেতন হলেও পূর্বে এত সচেতনতা ছিল না। তার পরেও কলেরা রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।

আজকে আমরা কলেরা রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

কলেরা কি?

Untitled design 2023 11 07T203000.965 1

কলেরা ভিব্রিও কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্তের একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগ উপসর্গ বিহীন অথবা মারাত্মক হতে পারে। কলেরা প্রধান উপসর্গ হলো ঘনঘন চাল ধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হওয়া। এছাড়াও পেটে ব্যথা শারীরিক দুর্বলতা বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ থাকতে পারে। চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় কলেরা হলে শেষ পর্যন্ত পানি শূন্যতার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

কলেরা রোগের কারণ

কলেরা রোগের কারন হল-

  • সাধারণত কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো বাতাস খাবার বা জল পানি দূষিত দূষিত প্রাণী গ্রহণ করার ফলে হয়ে থাকে।
  • জনসাধারণের ব্যবহার করা দূষিত কুয়োর পানি বা পুকুরের পানি ব্যবহারে ফলে কলেরা হতে পারে
  • কাঁচা জিনিস
  • রান্না করা সমুদ্রের বিভিন্ন জিনিস কাঁচা খেলে কলেরা হতে পারে
  • বিভিন্ন দূষিত অঞ্চল থেকে কাটা ফল বা সবজি অথবা কম্পোস্ট বিহীন সব্জির
  • পয় নিষ্কাশন পণ্যগুলোকে দূষিত করে এমন ফল খেলে
  • অপরিষ্কার খাবার গ্রহণ করলে
  • অপরিষ্কার পানি পান করলে
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে বসবাস
  • পেটে এসিডের মাত্রা কমে যাওয়া

কলেরা রোগের লক্ষণ

কলেরা সংক্রমণ প্রায় হালকা বা উপসর্গ হীন হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের অনেক গুরুতরও হতে পারে। সাধারণত ভিব্রীয় কলেরা দ্বারা দূষিত খাবার পানি অথবা দূষিত খাদ্য গ্রহণের পর বারবার ঘণ্টায় ঘন্টায় পাতলা পায়খানা পরিমাণ বেড়ে থেকে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে কলেরার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কলেরা রোগের লক্ষণ গুলো হল-

  • ঘন ঘন চাল ধোয়ার মত পাতলা পায়খানা হওয়া
  • পায়ের শিরা টান হওয়া
  • ঘন ঘন বমি হওয়া
  • শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া

কলেরা রোগ নির্ণয় করার উপায়

কলেরা হলে মল পরীক্ষা করার মাধ্যমে কলেরার ব্যাকটেরিয়াকে সনাক্ত করা যেতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ডাক্তাররা এই কলেরা রোগ নির্ণয় করার জন্য কলেরা ডিপোস্টিক টেস্ট করে থাকেন। দ্রুত নিশ্চিত করা হলে তা সরকারকে কলেরা দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করেন।

তাছাড়া কলেরা রোগের অন্যতম লক্ষণ হল আক্রান্ত ব্যক্তির চাল ধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হওয়া। বমি হওয়া পেটে ব্যথা থাকা এছাড়া একজন থেকে অনেক জনের ছড়িয়ে যাওয়া।

কলেরা রোগের চিকিৎসা

কলেরা রোগ যেহেতু কলেরা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে তাই কলেরা রোগ চিহ্নিত করার পরবর্তীতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। যাতে জটিলতা গুলো এড়ানো যায় কলেরা রোগের চিকিৎসা হলো নিষ্কাশিত ইলেকট্রোলাইট এবং তরল কে প্রতিস্থাপন করার জন্য ডাক্তার ওরাল ডিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস খেতে বলবে।

ত্বরণ নিষ্কাশন কে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ধমনীর মধ্যে স্যালাইন দেওয়া হবে। এছাড়া কলেরা কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টক্সিসাইক্লিন এন্টি বায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

কলেরা রোগের ঔষধ

অনেকেই কলেরা রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানতে চান। মূলত পূর্বে কলার রোগের কোন ঔষধ না থাকলেও বর্তমানে কলেরা রোগ হলে সাথে সাথে খাবার স্যালাইন বা তরল জাতীয় খাবার দেয়া হয় এবং হাতে স্যালাইন পুশ করা হয়। তাছাড়া এন্টিবায়োটিক হিসেবে কলেরার জন্য ডক্সিসাইক্লিন নামক ট্যাবলেট সেবন করতে হয়।

কলেরা হলে করণীয়

কলেরা হলে করণীয় কি নিচের সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি পান করা
  • ঘরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা
  • দূষিত বা পচাবাসী খাবার না খাওয়া
  • কলেরা টিকা নেওয়া
  • চলাচল সীমাবদ্ধ করা
  • যেসব মানুষ অসুস্থ তাদের সাথে যোগাযগ বন্ধ করা
  • কলেরা সংক্রমিত অঞ্চল থেকে খাবার আনা বন্ধ করা
  • বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ানো
  • পরিষ্কার পানি পান করানো
  • ওর স্যালাইন খাওয়া
  • ডাবের পানি ভাতের মাড় বিভিন্ন তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া

কলেরা প্রতিরোধে করণীয়

Untitled design 2023 11 07T202929.091

কলেরা প্রতিরোধ করার জন্য-

  • জীবানু ফোটানো জল সবসময় পান করতে হবে
  • ঠান্ডা পানির বরফ অথবা বরফ খাওয়া বন্ধ করতে হবে
  • খাবার আগে দুধ ভালো ভাবে ফুটে নিতে হবে
  • ভালোভাবে রান্না করা খাবার খেতে হবে
  • গরম খাবার খেতে হবে
  • বাঁশি বা পচা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • কাঁচা ফল শাকসবজি অথবা কাঁচা মাছ মাংস খাওয়া যাবেনা
  • কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ করা খাবার বা তার প্লেট বাটি আলাদা করে রাখতে হবে
  • পথে ঘাটে উন্মুক্ত হোটেল রেস্তর এবং অন্যান্য অনিরপদ উৎস থেকে পানি বা খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে
  • নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
  • জিনজিবা নোংরা পরিবেশ বা পয়েন্ট নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যেখানে নিম্নমানের সেসব জায়গায় এড়িয়ে চলতে হবে
  • বাড়ির চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে

কলেরার টিকা

যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে কলেরা বর্তমানে পাওয়া যায় যা ভ্যাক্স করা নামক টিকা নামে পরিচিত। এটি এক ডোজ নিলে কলেরা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি বাচ্চাদের এই কলেরা টিকা অবশ্যই দিতে হবে। পোলিও টিকার মতোই কলেরার টিকা মুখে খেতে হয়।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই রোগের টিকা খেলে তা কলেরার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কলেরার প্রতিরোধ করতে কলেরার টীকার হার 85% কার্যকর। টিকা খাওয়ার প্রথম ছয় মাসের সবচেয়ে বেশি কার্যকর থাকে বিশ্বের অনেক জায়গাতে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়।

কলেরা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কলেরার টিকা নেওয়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য-

  • পেটে হালকা ব্যথা হতে পারে।
  • তাছাড়া হালকা পাতলা পায়খানাও হতে পারে
  • এছাড়াও ক্ষুধা মন্দা
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি অনুভব করা
  • বমি ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে
  • কলেরা টিকা গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ
  • এমনকি যারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে  নিরাপদ
  • কোন টিকার যদিও শতভাগ প্রতিরোধ সক্ষমতা নেই তবে অবশ্যই কলেরা টিকা দেওয়া উচিত

কলেরা হাসপাতাল

কলেরার জন্য কোন হাসপাতাল ভালো তা অনেকেই জানতে চান। আমাদের দেশে কলেরা সর্বোত্তম চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের হাসপাতাল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আই সি ডি ডি আর বি হাসপাতাল। যা মহাখালীতে অবস্থিত এই হাসপাতালকে কলেরা হাসপাতাল নামেও ডাকা হয়।

ঢাকার বাইরে মানুষের জন্য কলেরা আক্রান্ত হলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ যেকোনো হাসপাতালে নেওয়ায় সবচেয়ে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত হবে। কারণ বাইরের জেলা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগবে ততক্ষণের রোগী পানি শূন্যতায় মারা যেতে পারে। তাই কলেরা লক্ষণ দেখা দিলে স্যালাইন সরবরাহ করার জন্য যেকোন নিকটতম হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং রোগীকে স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে ঢাকায় মহাখালী হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

কলেরার ভ্যাকসিন এর নাম

বর্তমানে কলেরার জন্য তিন ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় । বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত তিনটি ওরাল ভ্যাক্সিন রয়েছে যেগুলো হল-

  • Dukol
  • Shanchol
  • Euvichol plus

Untitled design 2023 11 07T203049.695

মন্তব্য

আজকে আমরা কলেরা রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply