উকুনের ডিম দূর করার উপায়
চুলে উকুন হয় না এরকম মেয়ে পাওয়া খুবই দুষ্কর। সাধারনত পুরুষের তুলনায় নারীদের মাথায় উকুন বেশি হতে লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন কারনে মাথায় উকুন বাসা বাঁধতে পারে। তার মধ্যে অপরিষ্কার থাকা, খুশকি হওয়া সহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখযোগ্য। সাধারনত উকুন দূর করা গেলেও উকূনের ডিম চুলে রয়ে যায় যার কারনে কিছুদিন পর আবার উকুনের জন্ম হয়।
আজকে আমরা উকুনের ডিম দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করব আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – উকুন মারার ওষুধের নাম, মাত্র ২ দিনে মাথার উকুন তাড়ানোর কার্যকরী উপায়
চুলে উকুন হওয়ার কারণ
উকুনের ডিম দূর করার উপায় জানার আগে মাথায় উকুন হওয়ার কারন গুলো জানা দরকার।
- হাইজেনিক কন্ডিশন ভালো না হলে
- অল্প জায়গায় অনেক মানুষের গাদাগাদি করে থাকলে
- পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হলে
- নিয়মিত গোসল না করলে
- মাথার চুল ভালোভাবে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার না করলে
- উকুন আছে এমন মানুষের সাথে কেউ ঘুমালে
- অন্যের চিরুনি শ্যাম্পু তোয়ালে ব্যবহার করলে
- নিজের ব্যবহার এর জিনিসপত্র পরিষ্কার না রাখলে
- নিয়মিত ব্যবহারের চিরুনি অপরিষ্কার রাখলে
- মাথায় খুশকি জমলে উকুন হতে পারে
উকুনের ডিম দূর করার ঘরোয়া উপায়
এই পর্যায়ে আমরা উকুনের ডিম দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে ঘরোয়া উপায়গুলো আলোচনা করবো। যেকোন মেডিসিন ব্যবহারের আগে আমরা সাধারনত ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করার সাজেশন দেই।
মেউনিস – মাথায় উকুন থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকরী উপাদান হল মেয়োনিজ। যা আমরা বার্গার বারবিকিউ স্যান্ডউইচ এর সাথে খেয়ে থাকি। যে কোন কনফেকশনারী দোকানে এটি পাওয়া যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন চুলে ভালো মতো মেয়োনিজ মেখে যেকোনো একটি পাতলা কাপড় দিয়ে অথবা ক্যাপ দিয়ে সারারাত রেখে দিলে মাথায় থাকা উকুন মারা যায় এবং উকুনের ডিম নষ্ট যায়।
সকালে ভালোমতো চিরুনি করে উকুনের ডিম চুল থেকে আলাদা করে ফেললে মৃত কোন ডিম দূর হয়ে যাবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোমতো চুল ধুয়ে ফেলুন যাতে মেয়োনিজের তৈলাক্ত আস্তরণ পরিষ্কার হয়ে যায়।
টিট্রি অয়েল – আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার একজন বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল ফিশার বলেন টিট্রিওয়েল উকুন নিরাময়ের জন্য অন্যতম। রাতে ঘুমানোর পূর্বে চুলে টি ট্রি অয়েল। অয়েল ম্যাসাজ করে সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ফেলে উকুন এবং উকুনের ডিম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সব থাকে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার টি ট্রি ব্যবহার করে ওখান থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
নারিকেল তেল – চুলের জন্য নারিকেল তেল খুবই উপকারী। তবে ওখান থেকে রেহাই পেতে নারিকেল তেল হল অন্যতম কার্যকর একটি ঘরোয়া টোটকা। নারিকেল তেল উকুনের বংশ নিপাত করার জন্য সম্ভব। চুলে নারিকেল তেল মেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখলে উকুনের উপদ্রব শুরু হয় ঠিক তখনই ওখানে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে বেশিরভাগ তখনই পড়ে যায়।
উকুনের ডিম – উকুনের ডিম খুঁজে বের করা বড় বড় উকুন চুলে চিরুনি করলে পড়ে যায় কিন্তু উকুন এর ডিম ঠিক ভাবে তুলে না ফেলার জন্য বারবার উকুন চুলে হয়। যদি এ পদ্ধতিতে বেশ সময় সাপেক্ষ। কিন্তু কোন কেমিক্যাল ব্যবহার না করে একেবারে উকুনের ডিম খোঁজে খোঁজে ফেলে দিলে সহজে মাথায় উকুন আর হয় না। এ ছাড়া উকুনের ডিম পরিষ্কারের জন্য নেট চিরুনি পাওয়া যায় যা দিয়ে চিরুনি করলে ডিম পড়ে যায় ফলে নতুন উকুনের জন্ম হয় না।
রসুন – উকুনের উপদ্রব কমানোর জন্য রসুন অনেক প্রাচীন এবং কার্যকর একটি উপাদান ঘরোয়া উপায়। রসুন ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজে উকুন এবং উকুন ডিম মেরে ফেলা সম্ভব। প্রথমে আট থেকে দশটি রসুনের কোয়া থেতলে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর তাতে কয়েক চামচ লেবুর রশ মিশিয়ে সে মিশ্রণ চুলের ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রসুনের তীব্র গন্ধ এবং ধ্বংস করার জন্য কার্যকরী সপ্তাহে একদিন করে কয়েক মাস ব্যবহার করলে ওখান থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পেঁয়াজের রস – মাথায় উকুন তাড়াতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর চুলের গোড়ায় এবং ভালোভাবে পড়ে চলে লাগাতে হবে কিছুক্ষণ চুল ঢেকে রেখে তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। দুই থেকে তিনবার পেঁয়াজের রসের এই পেস্ট লাগালে খুব সহজে মাথা থেকে উকুন এবং উকুনের ডিম দূর হয়ে যাবে।
এসেন্সিয়াল অয়েল – এসেন্সিয়াল অয়েল উকুন এবং উকুনের ডিম দুই ক্ষেত্রে উপকারী। যে কোন এসেনসিয়াল উকুন মারার জন্য বেশ কাজে দেয়। রান্নার জন্য বাড়িতে যে ভেজিটেবল অয়েল থাকে এই তেলের সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর মাথার উপরে চুলে লাগান রান্নার জন্য ভেজিটেবিলের না থাকলেও শুধুমাত্র এসেন্সিয়াল ওয়েল লাগানো যেতে পারে। তেল লাগিয়ে ৪০ মিনিট ভালো দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলা যাবে।
নিমপাতা – নিম পাতার পানি নিম পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানি তুলে দিলে খুব সহজেই চুল থেকে কোন দূর হয়ে যায় এবং সহজে আর মাথায় উকুন ছড়ায় না।
উকুনের ডিম দূর করার চিরুনি
উকুনের ডিম দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো চিকন চিরনি ব্যবহার করা। বাজারে কসমেটিকস এর দোকানে চিরুনি পাওয়া যায় যা দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার চুল আঁচড়ালে বড় বড় উকুন পড়ে যায়। তবে অনেক সময় থেকে যায় সেজন্য বর্তমানেও কোনদিন বের করার উকুনের ডিম বের করার জন্য বাজারে বিশেষ এক ধরনের চিরুনি পাওয়া যায়। যার নাম নিড কম্ব বিভিন্ন কসমেটিকের দোকানে এই চিরুনিগুলো পাওয়া যায়।
এর চিরুনিগুলোর দাম ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে। এর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে মৃত উকুনের ডিম সহজেই দূর হয়ে যায়।
উকুন দূর করার ঔষধ
বর্তমানে বাজারে মাথার উকুন দূর করার জন্য অনেক ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। বাজারে উকুনের ওষুধ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- Alice lotion,Tablet Scabo, ইংলিশ উকুন নাশক শ্যাম্পু। এদের মধ্যে এলাইস লোশন এর সবচেয়ে ভালো রিভিউ পাওয়া যায়। ইয়ম মেনে কয়েক সপ্তাহ ইউজ করলে মাথার উকুন এবং উকুন এর ডিম একেবারে চলে যায়।
এলাইস লোশন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
উপরে আমরা উকুন নাশক শ্যাম্পু বা লোশনের নাম জানলাম। কিন্তু তা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা অনেকেই জানে না। প্রথমে মাথা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সামান্য এলআইস লোশন হাতের আঙ্গুলে নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। আস্তে আস্তে চুলের অন্যান্য অংশেও লাগাতে হবে এমন ভাবে লোশন লাগাতে হবে যেন চুলের আগা থেকে গোড়া সম্পূর্ণ ভাবে লাগে।
এতে করে চুলে বড় উকুনের সাথে সাথে চুলের অন্যান্য অংশে থাকে উকুনের ডিম মারা যাবে। লোশনটি লাগানো হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। যদি সম্ভব হয় রোদে গিয়ে বসার চেষ্টা করুন এতে করে ওষুধের কার্যকারী আরও দ্বিগুণভাবে কাজ করবে। ১0 মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখতে হবে চুল ধোয়ার সময় মাথায় কোন ভাবে শ্যাম্পু বা সাবান দেওয়া যাবে না। এভাবে টানা দুই দিন ব্যবহার করলে মাথায় উকুন সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়ে যাবে।
উকুন নাশক শ্যাম্পু এবং তেল
বাজারে উকুন নাশক এর জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু এবং তেল পাওয়া যায়। ঘরোয়া ভাবে উকুন নির্মূল করা সম্ভব না হলে সেসব শ্যাম্পু এবং তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি উকুন নাশক শ্যাম্পু এবং তেল ব্যবহার করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর চুলে উকুনের চিরুনি দিয়ে বারবার চিরুনি করতে হবে। সপ্তাহে তিন দিন টানা ব্যবহার করলে চুল থেকে উকুনের ডিম সম্পূর্ণভাবে দূর হয়ে যাবে।
উকুন নাশক শ্যাম্পুর মধ্যে অন্যতম হলো ইংলিশ উপন্যাসক শ্যাম্পু। যা অনেক আগে থেকেই বাজারে উকুন নাশক শ্যাম্পু খুবই নাম করা দোকানে ১০ থেকে ১৫ টাকায় এটি কিনতে পাওয়া যায়। শ্যাম্পু ব্যবহারে সামদ্রিক উপদ্রব কমলেও উকুনের ডিম সম্পূর্ণভাবে মারা যায় না। ফলে আবারও মাথায় উকুন হতে পারে।
চুলে উকুন না হওয়ার জন্য করণীয়
এতক্ষন আমরা উকুনের ডিম দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনেছি। এই পর্যায়ে আমরা দেখবো শুরু থেকে কোন কোন বিষয়গুলো শুরু থেকে খেয়াল রাখলে মাথায় উকুন হবে না।
- বেশি শ্যাম্পু করলে উকুন দূর করা যায় না বরং এতে মাথার তেলের ত্বকের তেল ধুয়ে চলে যায় ফলে করে রক্ত শুষে নেয়
- শুধুমাত্র উকুন দূর করার জন্য শ্যাম্পু তেল ব্যবহারে যথেষ্ট নয় বিছানা বালিশ তোয়ালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে
- কখনো নিজের চিরুনি বা হেয়ার ব্যান্ড তোয়ালে কাপড় ছাড়া অন্যের জিনিস ব্যবহার করা উচিত নয়
- উকুন আছে এমন মানুষের সাথে না ঘুমানো উত্তম
- মাঝে মাঝে চিরুনি তোয়ালে নিজের ব্যবহারের জিনিস গরম পানিতে পরিষ্কার করা উচিত
- বাড়িতে কারোর চুলে উকুন থাকলে তার সাথে একেবারে না শোয়াই ভালো
- চুল সব সময় পরিষ্কার রাখুন
- নিয়মিত শ্যাম্পু করুন এবং চুলের যত্ন নিন
- সমস্যা মারাত্মক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
উকুনের ডিম দূর করার উপায়
আজকে আমরা উকুনের ডিম দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি উকুনের ডিম দূর করার উপায় আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- উকুন মারার ওষুধের নামত
- চুলকানির ঔষধের নাম, চুলকানির ট্যাবলেটের নাম
- গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, গলা ব্যথার ঘরোয়া টোটকা