আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
দাঁতের যে কোন ব্যথা যেমন কষ্টদায়ক তেমনি দাঁতের চিকিৎসাও কষ্ট কর। আক্কেল দাঁত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুলে ফেলার পরামর্শ চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন এবং যত বয়স বাড়বে মুখের হাড় তত শক্ত হবে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দাঁতের মাড়িতে দেখা যেতে পারে।
আক্কেল দাঁতে ভীষণ ব্যথা হয়। তাই আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আক্কেল দাঁত কি?
আমাদের দাঁতের মাড়ির একদম শেষের দিকে উপরে এবং নিচে দুই পাশে একটি একটি করে মোট চারটি দাঁতকে আক্কেল দাঁত বলা হয়। আক্কেল দাঁতের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো হুইজডম। আক্কেল দাঁত ওঠার আগে মানুষের মুখে ২৮ টি দাঁত থাকে। এই আক্কেল দাত সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে দাতের শেষ প্রান্তে উঠে থাকে। এই দাঁত উঠার সময় প্রচন্ড ব্যথা হয়।
আক্কেল দাঁত কেন ওঠে ?
সাধারনত আক্কেল দাঁতের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ আক্কেল দাঁত তুলে না ফেললেও পশ্চিমা দেশে বা বিদেশের মানুষরা বেশিরভাগ সময় মাড়ির দাঁত তুলে ফেলে অপারেশনের মাধ্যমে। বেশিরভাগ মানুষেরই মাড়ির দাঁত বা আক্কেল দাঁতের জন্য জায়গা থাকে না।
তাই আক্কেল দাত যখন উঠে তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায় না ফলে দাঁতের আশেপাশে ফুলে উঠে এবং সেখানে খাদ্য কনা জমে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ব্যথা সৃষ্টি হয়।
আক্কেল দাঁত উঠার লক্ষণ
দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার কারণে দাঁতে ব্যথা বা দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে পারে। তবে আক্কেল দাত ওঠার জন্য বিশেষ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-
- দাঁতের মাড়ির ফুলে ওঠা
- উপরের মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি করা
- গাল এবং মুখ ফুলে ওঠা
- দাঁতের ফলে হাঁ করতে কষ্ট হওয়া
- খাবার খেতে কষ্ট হওয়া
- যাদের দাঁতের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই তাদের দাঁতের আশেপাশ অতিরিক্ত মাংস বা টিস্যু বেরিয়ে আসা
- গুরুতর সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট হওয়া
- দাঁতের এক পাশ থেকে সামান্য তরল নির্গত হওয়া
- রক্ত যাওয়া
আক্কেল দাঁত উঠতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত আক্কেল দাঁত তুলতে অনেক ব্যথা হয় বলে অনেকেই আক্কেল দাঁত উঠতে মোট কত দিন সময় লাগে সে সম্পর্কে জানতে চান। সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর সময়ের মধ্যে এই দাত উঠে। মানুষের এই চারটি আক্কেল দাঁত এক সঙ্গে গজায় না। কারো কারো এক সঙ্গে কারো কারো একটা একটা করে উঠে।
আক্কেল দাঁত ওঠার সময় প্রতিবার ৫ থেকে ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। কিছুদিন পর পর আরো বেশি সময় লাগতে পারে।
আক্কেল দাঁতের চিকিৎসা
আক্কেল দাঁত উঠার সময় যদি অবস্থা বেশি গুরুতর হয় তাহলে প্রথমে এক্সরে করতে হবে। ডাক্তার সিটি স্ক্যান করতে দিতে পারেন। এমনকি দাঁত তুলে ফেলার পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। এছাড়া যদি অপারেশন করতে না চান তাহলে রেজিস্টারের চিকিৎসকরা পেইন কিলার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক দিতে পারে যা আপনাকে ব্যাথা থেকে মুক্তি দিবে।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
ঘরোয়াভাবে অনেক টিপস ফলো করলে সহজে আক্কেল দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন-
লবণ পানি দিয়ে কুলি করা- দাঁতে যেকোনো ব্যাথা দূর করতে লবণ পানি দিয়ে কুলি করা অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। হালকা গরম পানিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড যোগ করে বা লবন যোগ করে ফেলতে হবে। এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলে এবং মাড়িকে সুস্থ রাখে।
গরম পানি এবং লবণ দাঁতের মাড়ি ব্যথা দাঁতের ব্যথা গলা ব্যথা কমাতে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
পিপারমেন্ট- পিপারমেন্ট পাতায় থাকে অনেক ধরনের উপাদান যা তাদের ব্যথা এবং প্রদাহ দূর করতে অনেক সহায়তা করে থাকে। পেপারমেন্টের নির্যাস এ টুকরো তুলো ডুবিয়ে মাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন। পিপারমেন্ট চা দাঁতের ব্যথা দূর করার জন্য খুব ভালো।
বেকিং সোডা- আক্কেল দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমাতে বেকিং সোডা দুর্দান্ত সাহায্য করে। একটি তুলার বল পানিতে ভিজিয়ে বেকিং সোডা মাখিয়ে নিতে হবে। এবার আপনি দাঁতের উপর রেখে দেখবেন ব্যথা কমতে শুরু করবে।
পেয়ারা গাছের পাতা- পেয়ারা গাছের কচি পাতা পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে ওই পাতা আক্কেল দাঁতের গোড়ায় কিছুক্ষণ রেখে দিলে ব্যথা কমে যাবে।
পেঁয়াজ- অনেকে বিশ্বাস না করলেও পেঁয়াজ দাঁত ব্যথা কমাতে খুব সাহায্য করে। কিছু টুকরো পেয়াজ ব্যাথার স্থানে রেখে দিতে হবে। এরপর দাঁত দিয়ে চেপে ধরুন। পেঁয়াজের রস ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
হলুদ- দাত এর জন্য ব্যথা নাশক এন্টিবায়োটিক বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার না করে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ গরম পানিতে হাফ চা চামচ হলুদের গুড়া মিশিয়ে নিন। পেস্ট লাগালে দাঁতের ব্যথা সেরে যাবে।
লবঙ্গ- এতে রয়েছে গ্লোবয়েলে অ্যানাল জেসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের ব্যথা কম করতে সাহায্য করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে এবং সংক্রমনের ঝুঁকি দূর করে। দাতের ব্যথা কম করতে লবঙ্গ তেল বা ৬ টি লবঙ্গ গরম পানিতে ফুটিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করতে হবে এতে করে ব্যথা থেকে মুক্তি মেলবে।
অ্যালোভেরা জেল- দাঁতের ব্যথা বা যে কোন মাড়ির ব্যথার জন্য এলোভেরা জেল অনেক কাজ করে। দাঁতের ফোলা ভাব দূর হয় এবং দাঁতের ব্যথা কম করে।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ঔষধ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের দাঁত ব্যথা বা আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ঔষধ পাওয়া যায়। নিচে দাঁত ব্যথা কমানোর ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তালিকা তুলে ধরা হলো-
- Etorikskib
- Paracetamol
- Acclofenac
- Rolac
আক্কেল দাঁতের ব্যথায় হোমিও ওষুধ
অনেকেই আক্কেল দাঁত এর ব্যাথার জন্য হোমিও ওষুধ খেতে চান। যেমন-
- Merv sol 200
- Cal cares carb 200
- Mag carb 200
- Cilicia 200
দাঁতের ব্যথার এন্টিবায়োটিক
সাধারণত যখন আক্কেল দাঁত উঠার জন্য জায়গা পায় না তখন সেখানে মাড়িতে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। তখন প্রচুর যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়। তাই বিভিন্ন ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরও ব্যথা কমে না সে ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ব্যথা কমানোর জন্য সেভ ফোক্সিম ৫০০ এমজি খাওয়া যেতে পারে।
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
অনেকেই আক্কেল দাঁত উঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা মুখের ভেতর মাড়ির উপর থাকে না। তাই দাঁতে ব্যথা এবং ইনফেকশনে দীর্ঘদিন ভুগতে হয়। এসময় ডাক্তার দাঁত তুলে ফেলার পরামর্শ দেন। কিন্তু অনেকেই দাঁত তুলতে ভয় পায় আক্কেল দাঁত তুললে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
আক্কেল দাঁত তোলার পর দাঁতের মাড়ি ব্যথা থাকতে পারে। এর জন্য ঔষধ এবং লবণ পানি কুলি করার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দেন। তবে আক্কেল দাঁত না তুললে সেখানে রক্ত পড়বে ইনফেকশন হতে পারে।
আক্কেল দাঁত অপারেশনের খরচ
অনেকেই আক্কেল দাঁত তুলতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে জানতে চান। মূলত আক্কেল দাঁত মাড়ি কাটা এক ধরনের খরচ এবং দাঁত তুলে ফেলা অন্য ধরনের খরচ। তবে দাঁতের ধরনের হিসেবে আক্কেল দাত অপারেশনে খরচ কম বেশি হয়। তবে সাধারণত সাত থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে অপারেশন করা যায়।
আক্কেল দাঁত সম্পর্কে সতর্কতা
অনেকে আক্কেল দাঁতের ব্যথায় সহ্য করতে না পারে না পেরে আক্কেল দাঁত না তুলে বারবার বিভিন্ন ব্যাথা ট্যাবলেট জেল স্প্রে ব্যবহার করেন। তবে এ সময় যতটা সম্ভব ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট জেল স্প্রে ব্যবহার করাই উত্তম। কেননা অতিরিক্ত বেদনা নাশক ট্যাবলেট খাওয়া কিডনির উপর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
আজকে আমরা আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত থাকা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- মুখে ব্রণ কমানোর উপায় – ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট
- মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম – মুখের লোম তোলা কি হারাম
- আমি চিকন হবো কিভাবে, চিকন হওয়ার উপায় কি