দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও ভ্রমন গাইড

দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

হিমালয়ের পাদদেশ অবস্থিত দার্জিলিং শহরে প্রায় পুরো বছর জুড়ে ঠান্ডা থাকে। মেঘের সরবরাহ হিসেবে এই দার্জিলিং খুবই পরিচিত। তার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা এবং রেলের জন্য বিশ্বজুড়ে নাম রয়েছে। দার্জিলিংয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখার জন্য প্রায় প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এই শহরে ভ্রমণ করতে আসে।

আজকে আমরা দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত স্কিপ করা ছাড়া মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরো পড়ুন – বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং ট্যুর প্যাকেজ ২০২৩

দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন?

সাধারণত দার্জিলিং এপ্রিল থেকে জুন এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের সময়টাতে আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে। তাই এই ছয় মাস দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়। এছাড়াও যে কোন সময় দার্জিলিং ভ্রমণ করা যেতে পারে তবে ঠান্ডার কারণে এই সময়গুলোতে ভ্রমণ করতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় অর্থাৎ বাংলা বসন্ত ও শরৎকাল দার্জিলিং ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময়।

দার্জিলিং কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে- সড়কপথে বাসে যেতে চাইলে কোন ভিসা বা পোর্ট দিয়ে করা তার উপর নির্ভর করবে। ফুলবাড়ী দিয়ে ভিসা করা থাকলে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্তে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে ফুলবাড়ী থেকে বাসে শিলিগুড়ি জংশন যেতে হবে এবং চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে ভিসা করা থাকলে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের বুড়ি মারা সীমান্তে ইমিগ্রেশনে প্রক্রিয়া শেষ করে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে বাসে শিলিগুড়ি চলে আসতে হবে।

যেভাবেই যাওয়া হোক শিলিগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিঙে টাটা সুমো বা কমান্ডার জিপের টিকেট কেটে সরাসরি দার্জিলিং চলে যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

ঢাকা থেকে বিমানে- এয়ারলাইনে যেতে চাইলে ঢাকা কলকাতা বাগডোগরা ফ্লাইটে দার্জিলিং যেতে হবে। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট পৌঁছে সেখান থেকে ট্যাক্সিতে দার্জিলিং যাওয়া যায়।

কলকাতা থেকে দার্জিলিং- কলকাতা থেকে ট্রেনে দার্জিলিং যেতে চাইলে টুরিস্টদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টার ফেয়ারলি প্যালেস থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এরপর দার্জিলিঙে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে কাছের রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন। এই রেলস্টেশন থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৮৮ কিলোমিটার। কলকাতার শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭:১৫ মিনিটের দার্জিলিং মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়।

পর দিন সকাল দশটায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন পৌঁছায়। পুলিশ স্টেশন থেকে রিক্সায় শিলিগুড়ি জিপি স্টেশনে সে দার্জিলিঙে আমি টাটা সুমো বা কমান্ডার জিপে দার্জিলিং পৌঁছানো যায় খুব সহজেই।

দার্জিলিং ট্যুর গাইড

দার্জিলিংয়ে কি কি দেখবে এবং কয়দিন থাকবে তার উপর ডিপেন্ড করে ট্যুর প্ল্যান করা উচিত। তবে দার্জিলিং ঘুরে দেখার জন্য ছোট ও কম খরচে একটি ট্যুর প্ল্যানের আইডিয়া নিচে দেয়া হল-

প্রথম দিন- রাতের এসি বা নন এসি বাসে ঢাকা থেকে বুড়িমারী উদ্দেশ্যে রওনা ।

দ্বিতীয় দিন- সকালে পরিমারি স্টেশনে নেমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ইমিগ্রেশনের কাস্টমসের কাজ শেষ করে জিপে করে অথবা বাসের শিলিগুড়ি যেতে হবে। সেখান থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে সময় নিয়ে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার পাহাড়ি পথ দেখতে দেখতে দার্জিলিং পৌঁছে যাবে। হোটেলে চেকিং করে ফ্রেশ হয়ে শহরে আশপাশ ঘুরে যেতে পারেন সেই দিন বিকাল সন্ধ্যায়।

তৃতীয় দিন- সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে দার্জিলিং শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়ানো যাবে। দুপুরে কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়ে সন্ধ্যার আগে হোটেলে ফিরে আসতে হবে। সন্ধ্যার পরে সময়টা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই কাটানো যেতে পারে। ব্যক্তিগত শপিং বা অন্য কিছু করার থাকলে করে নেওয়া যায়।

চতুর্থ দিন- ফিরে আসার দিন খুব ভরে বের হয়ে পড়তে হবে জিপ নিয়ে চলে যেতে হবে টাইগার হিল। সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখে উপভোগ করে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অসাধারণ ভিউ দেখতে হবে। এরপর ঘুরে আশপাশ আর কিছু দেখার বাকি থাকলে ঘুরে নিয়ে এরপর চলে আসতে হবে শিলিগুড়ি।

শিলিগুড়ি থেকে বর্ডারে সে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে কাজ শেষ করে বর্ডার পার হয়ে সন্ধ্যায় ঢাকার বাসে উঠে পড়তে হবে।

দার্জিলিং দর্শনীয় স্থান

  • টাইগার হিল
  • বাতাসিয়া লুপ
  • বুদ্ধিস্ট মনিস্ট্রি
  • ঘুম মনেস্ট্রি
  • রক গার্ডেন
  • দার্জিলিং এর চিড়িয়াখানা
  • হিমালয়ান মাউন্টেনিং ইনস্টিটিউট
  • দার্জিলিং রঙ্গমঞ্চ ভবন
  • সেন্ট এন্ডারস চার্চ
  • মহাকাল মার্কেট বা
  • মহাকাল মন্দির
  • গঙ্গা মাইয়া পার্ক
  • নিপাং সীমানা ভিউ পয়েন্ট
  • জাপানিজ টেম্পল
  • পিস প্যাগোডা
  • আভা আর্ট গ্যালারি
  • ডলি মনস্ট্রি
  • ধের ধাম টেম্পল
  • রোপ ওয়ে
  • দার্জিলিং মিউজিয়াম
  • মিরিক
  • বিজন বাড়ি
  • সেন্ট জোসেফ স্কুল
  • হনুমান মন্দির
  • বি গার্ডেন
  • ভিক্টোরিয়া ফলস
  • লালকুঠির
  • ঘুম রেলওয়ে স্টেশন

দার্জিলিং এর হোটেল খরচ কেমন?

দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে। বাজেট হোটেলের মধ্যে হোটেল টাকার ভিউ, রেট রেট, এভারেস্ট গ্লোরি, কি কিবা ধি, হোটেল ইভি ক্যাসেল, হোটেল এভারেস্ট, পাহাড়ি ঝোল, বেনুসের মত হোটেল গুলোতে ৬০০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে দুইজনের জন্য থাকার রুম পাওয়া যাবে।

আবার একটু বেশি বাজেটের মধ্যে হলে পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় হলো নিউ সিঙ্গালিয়া পার্ক, মিসটেক মাউন্টেন গুলোতে ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে দুইজন থাকতে পারবে। অনলাইন রুম বুকিং এর ক্ষেত্রে booking.com , হোটেল ডট কম, গুলো চেক করে দেখা যায়।

দার্জেলিং কিছু হোটেলের নাম এবং নাম্বার

  • Hotel tower view-9800600985
  • Hotel wind house – 9830880990
  • Hotel sunflower-9832061545
  • Hotel manokamna- 7478989785
  • Hotel sonali- 9830235381
  • Hotel lotus in- 9434328786
  • Pradhan biwas home stay- 6294972243
  • Crown vile guest house- 7478572742
  • Hotel hill crown retreat
  • Hotel pena

দার্জিলিং ভ্রমণ খরচ

সাধারণত দার্জিলিং ভ্রমণ খরচ কত হবে তা নির্ভর করবে কোন সময় যাচ্ছেন কতদিন থাকবেন এবং কোন মানে হোটেলে থাকবেন বা কেমন খাবার খাবেন এমন অনেকগুলো বিষয়ের উপর। তবে মোটামুটি বাজেটের কথা চিন্তা করলে ঢাকা থেকে দার্জিলিঙে যাতায়াত খরচ থাকতে প্রতি জন ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আরো কম খরচে ঘুরতে চাইলে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু সুন্দর করে সবকিছু ঘুরে আসা সম্ভব।

দার্জিলিং এর খাবার তালিকা

দার্জিলিং এর স্থানীয়রা ভাতের সাথে গরুর মাংস এবং মসুর ডাল খেতে খুব পছন্দ করে। রেস্টুরেন্টের মধ্যে কোন গ্রাহাজটি, টেস্টে সোনামচ কিচেন, গ্লেনারিস লুনার মত রেস্টুরেন্ট গুলোতে দার্জিলিংয়ের স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি থাই ইন্ডিয়ান বা বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। আর জনপ্রিয় স্থানীয় খাবারের মধ্যে গান ট্রাক অর্থাৎ গাঁজানো সরিষা পাতা, মোমো, আলুর দম, নাগাপ রিটার্ন এবং চ্যাং চাইলে খেয়ে দেখা যেতে পারে।

আর অবশ্যই মাটির ছোট কাপে দার্জিলিংয়ের স্পেশাল চা এবং দার্জিলিংয়ের কমলা খেতে মিস করা যাবে না।

দার্জিলিং এ কেনাকাটা

দার্জিলিং শহরের লাদেন না রোডে বেশ কিছু ছোট বড় মার্কেট দোকান রয়েছে এসব মার্কেট থেকে সুন্দর সুন্দর শীতের পোশাক, হাতমোজা, মাফলার সোয়েটার, লেদার জ্যাকেট, নেপালি শাল, শাড়ি বিভিন্ন ধরনের গিফট আইটেম পাওয়া যায়। টাইগার হিলের বেশ কিছু লোকাল সবথেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে কিনতে পাওয়া যায়।

আর ভালো চা পাতা কেনার জন্য লোকাল কোন দোকান থেকে না কিনে সবচেয়ে ভালো হয় ভালো কোন টি টেস্ট থেকে কেনা। এতে করে কম দামে ভালো ও বিভিন্ন গ্রেডের চা পাতা পাওয়া যাবে।

দার্জিলিং ভ্রমন টিপস

  • বর্ষা মৌসুমে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ধডস ঘটে তাই সময় দার্জিলিং না যাওয়াই ভালো
  • পিকনিক সিজনে পর্যটকদের প্রচন্ড ভিড় থাকে এবং তাই হোটেলগুলোতে রুম পাওয়ার জটিলতা এড়ানোর জন্য অবশ্যই আগে আগে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে হবে
  • পাহাড়ের উপর অবস্থিত টুরিস্ট স্পটে যাওয়ার জন্য হিল স্যান্ডেল না পড়ে ভালো মানুষ স্লিপার স্যান্ডেল পড়ে যেতে হবে
  • দার্জিলিংয়ের লোকাল দোকানে ও কম থাকবে থেকে কেনাকাটা করার চেয়ে বড় বড় শপিং মল থেকে বা মার্কেট থেকে কেনাকাটা করলে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যাবে এবং ঠকার সম্ভাবনাও কম থাকবে
  • দার্জিলিং রক গার্ডেন থেকে খাবারের রেস্টুরেন্ট গুলো বেশ দূরে তাই এখানে ঘুরতে গেলে সাথে খাবার নিয়ে যাওয়া উচিত
  • অবশ্যই টাকা বা ডলার সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকে রুপিতে পরিবর্তন করে নিতে হবে
  • দার্জিলিঙে হোটেল রুম বুক করার আগে হোটেলে গরম পানি আর রুম হিটারের ব্যবস্থা আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে
  • হিমালয়ান পার্ক যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি পার্ক তাই পার্কে ঘোরাঘুরি করার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং কোন প্রাণীদের অযথা বিরক্ত করা যাবে না

মন্তব্য

আজকে আমরা দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও ভ্রমণ গাইড সহ দার্জিলিং সুমন সম্পর্কে সব প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। আশা করছি মানুষদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগবে। দার্জিলিং ভ্রমণ আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন প্রশ্ন অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

দার্জিলিং ভ্রমণ প্যাকেজ

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply