ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া
বিয়ে হল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এক রহমত। কিন্তু অনেকেই বিয়ে করতে চাইলে পছন্দমত পাত্র কিংবা পাত্রী না পাওয়ায় সঠিক সময়ে বিয়ে করতে পারে না। বিয়ে করা অনেক ক্ষেত্রে ফরজ আবার কখনো সুন্নত। এজন্য দ্রুত বিয়ে করে নেওয়াই ভালো আজকে ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
দ্রুত এবং ভালো বিয়ে হওয়ার আমল সমূহ
১। ইয়া ফাত্তাহু পড়া- বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভালো কোন প্রস্তাব আসছে না। তাদের জন্য যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতে কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজর নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে ৪০ বার চল্লিশ দিন পর্যন্ত ইয়া ফাত্তাহু অর্থ- হে উন্মুক্ত কারী বা প্রস্তুতকারী পড়বে।
২। সালাতুল হাজত পড়া- পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হওয়ার জন্য সালাতুল হাজত পড়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা খালি হাতে ফেরায় না। সালাতুল হাজত দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এই নামাজ পড়ে দোয়া করলে ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করে।
৩। নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখা- জীবনে পবিত্র এবং দ্বীনদার স্বামী বা স্ত্রী পেতে হলে নিজেকেও পবিত্র রাখা অত্যন্ত জরুরি। কেননা আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেছেন- “প্রত্যেক ব্যক্তি অনুরূপ তাঁর জন্য তার জীবনসঙ্গী নির্ধারণ করা হয়েছে”। তাই নিজেকে পবিত্র রাখলে পবিত্র জীবনসঙ্গী পাওয়া সম্ভব।
৪। তাজবীহের ফাতেমি পড়া- নিয়মিত নামাজের পর তাসবিহে ফাতেমি পড়লে ভালো বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাসবীহে ফাতেমি পড়ার আগে কুরআন তেলাওয়াত ও দুরুদ পাঠ করা সর্বোত্তম। তাজবিহ ফাতেমী হলো আলহামদুলিল্লাহ 33 বার পড়া। এ এই আমল ছেলে এবং মেয়ে উভয় করতে পারে।
৫। সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়া- “আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্তানি ওয়া আনা আব্দুকা ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া অয়াদিকা মাস্তাতাতু আউজুবিকা মীন শাঋই মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু উলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহুলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা ”
ফজর এবং মাগরিবের নামাজের পর এই ইস্তেগফার পড়তে ভুল করা যাবেনা। হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি এই ইস্তেগফার সকাল পড়ে এবং সন্ধ্যার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে যাবে।
৬। সঠিক সময় দোয়া করা- দোয়া কবুলের সময় ও স্থানগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা। যেমন- যে সব সময় দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহর নিকট যে সব সময় খুবই পছন্দনীয় সেসব সময়ে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা উত্তম। যেমন- ফরজ নামাজের পর, আজান এবং একামতের মধ্যবর্তী সময়্, বৃষ্টির সময়, সেজদা গত অবস্থায়।
৭। সূরা তাওবা পড়া- দ্রুত এবং ভালো বিয়ে হওয়ার আমল সমূহের মধ্যে সুরা তাওবা পাঠ করা অন্যতম।” ফাইন তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম”। এ আয়াত পাঠের মাধ্যমে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভ করা যায়।
৮।বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করা- সারাদিনের কাজের ফাঁকে সব সময় ইস্তেগফার বা তওবা করতে থাকলে দ্রুত এবং ভালো বিবাহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ “আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ” পড়া। কেন না যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নেন তার দোয়া আল্লাহ কখনো ফেরত দেন না।
৯। সূরা আল ফুরকান পাঠ করা– বিয়ের জন্য দ্বীনদার ও যোগ্য পাত্র পাত্রীর জন্য দোয়া করতে হবে। কারণ দ্বীনদার স্বামী বা স্ত্রী আল্লাহর রহমত। এজন্য প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দোয়া মাসুরা পড়ার পর সূরা আল ফুরকানের এই আয়াতটি পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে। আয়াতটি হল-“রাব্বানা হাবলানা মিম আজও আজি না ওয়া জুঋয়াতিনা কুররাতা আয়ুনিয়ু অয়াজালনা লিল মুত্তাকিনাইমামা” বিবাহিত দম্পতিরাও এই আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করতে পারলে জীবন দাম্পত্য জীবন আরো সুখের হয়।
১০।সূরা আদ দোহা ও সূরা কাসাস এর এই আয়াত পাঠ করা- “ফাসাকা লাহুমাছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজ্জিল্লি ফালাক্বা রাব্বি ইন্নিলিমা আংজালতা ইলাইয়া মীন খাআয়্রিং ফকির”। হযরত মুসা আলাই সালাম যখন খুব একা বিষন্নতা অনুভব করতেন তখন এই আয়াত বেশি বেশি পাঠ করতেন। যদি কোন ছেলে এই আয়াত দিয়ে ১০০ বার পাঠ করে তাহলে শীঘ্রই আল্লাহতালা তার জন্য ভালো পাত্রীর ব্যবস্থা করে দিবেন। এবং যদি কোন মেয়ে নিয়মিত সূরা দোহা ১১ বার তেলাওয়াত করে তবে তাদের জন্য আল্লাহতালা সর্বোত্তম পাত্র এর ব্যবস্থা করে দিবেন।
১১। সূরা মুজাম্মিল পড়া- যদি কোন মেয়ে বিয়ের বয়স হঅয়া সত্বেও বিয়ে না হয় কিংবা বিয়ের জন্য ভালো প্রস্তাব না পায় তাহলে মা-বাবা অথবা পরিবারের অভিভাবকদের যে কোন একজন শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে ২১ বার সূরা মুজাম্মিল তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমতে খুব শীঘ্রই ভালো বিয়ের প্রস্তাব পাবে।
১২। সুরা ইয়াসিন পাঠ করা- সুরা ইয়াসিন সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। যাদের ভালো পাত্রী এবং প্রয়োজন এবং দ্রুত বিয়ে প্রয়োজন তারা প্রতিদিন সূরা ইয়াসিন পাঠ করতে পারেন। সূরা ইয়াসিনের সাতটি মুবিন রয়েছে যখন সকালে প্রতিদিন পূর্ব আকাশ লাল হয়ে ওঠে তখন পশ্চিম মুখী হয়ে সুরা ইয়াসিন পাঠ করতে হবে। আর যখনই মুবিন উচ্চারণ হবে তখনই পেছনের দিকে অর্থাৎ সূর্যের দিকে ইশারা করতে হবে।
১৩। সূরা মরিয়ম পাঠ করা- ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া এর আরেকটি দোয়া হচ্ছে প্রতিদিন যে কোন ওয়াক্তের নামাজ আদায়ের পর সূরা মরিয়ম তেলাওয়াত করতে হবে। যে বিয়ে করবেন অর্থাৎ ছেলে অথবা মেয়ে এই আমলটি করতে পারে। যদি ছেলে মেয়েরা না পরে বা পড়তে না পারে তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকরাও তাদের হয়ে পড়তে পারবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স
তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উপায়
ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া জানার পাশাপাশি নিজেরও কিছু করণীয় রয়েছে। যার মাধ্যমে ভালো বিয়ে বা দ্রুত বিয়ের জন্য দোয়া কবুল করা সম্ভব।
- ধৈর্য সহকারে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা
- সূরা ওয়াকিয়া সূরা লোকমান সূরা মূলক সূরা শুয়ারা এবং সূরা আল বাকারা যতটুকু সম্ভব বেশি বেশি পড়তে থাকা
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা
- মিথ্যা কথা না বলা
- হারাম খাদ্য পরিত্যাগ করা
- বেশি বেশি নফল নামাজ এবং নফল রোজা আদায় করা
- গোপনে দান সদকা করা
- আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা
কিভাবে বিয়ে হওয়ার আমল করবেন
পছন্দের মানুষটিকে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নিক ট দোয়া করতে দ্বিধা করা উচিত নয়। আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় একান্ত বিনয় নম্রতা ভক্তি সহকারে দোয়া করতে হবে। দোয়া করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো ভোররাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পর, আজান এবং ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব নামাজের মধ্যবর্তী সমইয়, শবে কদরের রাতে, সেজদা অবস্থায়, রোজা রাখা অবস্থায় এবং সফরত অবস্থায়।
উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের দোয়া
পবিত্র কুরআনুল কারীমে মুসা আলাই সালাম এর একটি দোয়া এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহতালা তার বিয়ে ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীর ও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দোয়াটি হল- “রাব্বি ইন্নি লিমা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফকির” অর্থ হে আমার পালনকর্তা তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে আমি তার মুখাপেক্ষী।
মন্তব্য
আজকে আমরা ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এটি দৈনন্দিন জীবনে সবার অনেক কাজে লাগবে। ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতিশীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –