কবুতর পোষ মানানোর সহজ পদ্ধতি
কবুতর বা পায়রা বেশিরভাগ সময় আমাদের দেশে শখের বশে পালন করে থাকে। তবে বর্তমানে অনেকেই শখের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও কবুতর পালন করে থাকে। আজকে আমরা কবুতর পোষ মানানোর সহজ পদ্ধতি এবং কিভাবে কবুতরকে নিজের অনুগত করা যায় সে হিসেবে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আশা করছি এই পদ্ধতিগুলো অনুসরন করলে কবুতর আর হারাবে না।
আরো পড়ুন – কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয় বিস্তারিত জানুন
কিভাবে নতুন কবুতরকে পোষ মানানো যায়
সাধারণত যেসব কবুতরগুলোকে খাঁচায় লালন পালন করা হয় সেগুলোকে পোষ মা্নোনা প্রয়োজন হয় না কিন্ত কবুতরকে উন্মুক্ত অবস্থায় লালন পালন করতে হলে কবুতরকে প্রথমে পোষ মানাতে হয়। কেননা কবুতর অনেক দিন পর্যন্ত তার আগের বসবাসের জায়গা চিনতে পারে।নতুন কবুতরকে পোষ মানানোর অনেকগুলো উপায় রয়েছে-
কম বয়সী কবুতর লালন পালন করা- যেহেতু কবুতরের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কবুতরের বসবাস করার জায়গা চেনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই বাইরে থেকে আনা কবুতর নিজের বাসায় পোষ মানানোর জন্য সব সময় কম বয়সের কবুতর নির্বাচন করাই উত্তম।
পাখা বেঁধে বাসস্থান চেনানো- নতুন কবুতরকে পোষ মানানোর জন্য পাখা বেঁধে কবুতরের বাসস্থান চেনানো অনেক প্রয়োজন। প্রথমত পাখার প্রথম কয়েকটি পালক ভালোভাবে কষ্টেপ বা সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে। সাধারণত পালকের মাঝামাঝি বেঁধে দেওয়াই ভালো এতে কবুতর বাধা অবস্থায় উঠতে পারবে না।
খাঁচায় আটকে রাখা- কবুতরকে যে খাচা বা রুমে পালন করবে সেই খাচা বা ঘরে অন্য কবুতর রাখতে হবে। ৩-৪ দিন একসাথে আটকে রাখলে একই সাথে খাবার এবং পানির ব্যবস্থা রাখলে সে নিজের সঙ্গী বানিয়ে ধীরে ধীরে পোষ মানতে শুরু করে।
বাসার কাছাকাছি খাবার দেওয়া- কবুতর কিনে আনার দু-তিনদিন পর তার পাখনার বাঁধন খুলে দিয়ে আবার নতুন কয়েকটি পালক নতুন করে পেঁচিয়ে দিতে হবে। ধীরে ধীরে কিছুটা উড়তে পারবে তবে এবার ঘরে খাবার না দিয়ে একটু দূরে খাবার দিতে হবে ধীরে ধীরে কবুতর পোষ মানতে শুরু করবে।
কবুতরের ভাষা চেনানো- কবুতরকে যে বাসায় বা খাঁচায় রাখা হবে প্রতিদিন বাসা থেকে বের করে তার আশেপাশে রেখে আবার খাঁচায় ঢুকালে ধীরে ধীরে কবুতর নিজের নতুন বাসস্থান চিনতে পারে। এবং উড়ে যাওয়া সম্ভব না কম থাকে। এভাবে ১০-১৫ দিন যাওয়ার পর সে নিজে ঘরে প্রবেশ করবে এবং খাবার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হবে। তখন আর বাসা থেকে চলে যাওয়া সম্ভাবনা থাকবে না।
বয়স্ক কবুতর– বয়স্ক কবুতর হলে অন্য কবুতরের সাথে জোড়া বেঁধে ডিম দেওয়া বা বাচ্চা ফুটানো পর্যন্ত তার পাখার বাঁধন না খুলে দেওয়াই ভালো। কেননা বয়স্ক কবুতর পুরাতন বাসায় বাসায় চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে এক থেকে দুইবার ডিম বা বাচ্চা দিলে আশা করা যায় সে আর পুরনো বাসায় ফিরে যাবে না।
পাখনা কেটে পোষ মানানো- পোষ মানানোর জন্য কবুতরের এই পদ্ধতিটিও অনেক পুরাতন এবং অনেক কার্যকর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কবুতরের পাখনার প্রথম দশটি পালকের মধ্যে প্রথম তিনটি পালক রেখে বাকি সাতটি পালক কেটে ফেলা হয়। ফলে কবুতর স্বাভাবিকভাবে উড়তে পারে না। পাখা কাটার পর যে খাঁচায় রাখতে হবে সে খাঁচায় খাবার এবং পানি দিয়ে ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে সে ঘর চিনে যাবে এবং পাখাগুলো নতুন করে গজাবে।
পর্যাপ্ত সময় দেওয়া- সাধারণত কবুতর কিনে আনলে বা কবুতর পালন শুরু করলে কবুতরের জন্য প্রচুর পরিমাণে সময় প্রয়োজন এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। তাই কবুতর কিনে এনে পোষ মানাতে হলে অবশ্যই তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিতে হবে তাহলে সেই সহজেই পোষ মেনে যাবে।
সঠিকভাবে জোড় দেওয়া- কবুতরকে সঠিকভাবে সঠিক সঙ্গীর সাথে জোড়া লাগালে জোড় মিললে কবুতর খুব সহজে পোষ ম্যানেজার সাধারণত ৬ মাস বা তার বেশি বয়সের নর এবং মাদি কবুতরকে এক খাঁচায় সাত থেকে আট দিন আটকে রাখলে তারা জোড়া বাধে কবুতরকে পোষ মারানোর জন্য সঠিকভাবে কবুতরের জোড় বাঁধানোর প্রয়োজন।
আরো পড়ুন – কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয় বিস্তারিত জানুন
কবুতরকে নিজের অনুগত হিসেবে তৈরি করা
সাধারণত কবুতরকে নিজের পোষ্য বা অনুগত হিসেবে তৈরি করতে হলে বাচ্চা বয়সের কবুতর লালন পালন করতে হবে। কাজটি খুব বেশি কঠিন না হলেও মোটামুটি এটি ধৈর্যের কাজ।
- কবুতরকে সময় দিতে হবে
- কবুতরের বাচ্চার বয়স ১৮ থেকে ২১ দিন সময় থেকে হাতে খাওয়ানো,
- মুখের মধ্যে খাবার রেখে খাওয়ানো
- একসঙ্গে ঘুরাঘুরি করা
- দূরের থেকে দেখে কাছে আনা সহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অনুগত করা হয়।
বয়স্ক কবুতরকে নিজের অনুগত করার নিয়ম
যদিও বয়স্ক কবুতরকে নিজের অনুগত হিসেবে তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ। তবুও অনেক কবুতর মালিক কে এটি করতে দেখা যায়।
- প্রথমে কবুতরের ভয় দূর করতে হবে
- এর জন্য তাকে আস্তে আস্তে কাছে আনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে
- এরপর তাকে হাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরির জন্য তার সামনে কোন লাঠির মাথায় ছোট পাত্র পেতে খাবার খাওয়াতে হবে
- কবুতরের সাথে ধীরে ধীরে চুমু দিয়ে নিজের বন্ধুত্ব জমে উঠলে সে দ্রুতই অনুগত হয়ে যায়
, কবুতরের কত দিনের বাচ্চা ফোটে সাধারণত কবুতর বিনীতা দেয়ার ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটায় তবে সাধারণত ১৭ থেকে ১৮ দিনই লাগে এর বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না অনেক সময় এরকম সময় ও ডিম ফুটায় তবে তা খুবই কম
কোন জাতের কবুতর পোষ মানে বেশি
সাধারণত আমাদের দেশের দেশী কবুতরগুলোকে পোষ মানানো অনেক সহজ হয়। কবুতরের বিভিন্ন জাতের মধ্যে সিরাজি, কবুতর এবং জালালি কবুতর বিখ্যাত। কবুতরকে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করলে এরা নিজের মালিকের খুব অনুগত হয়ে থাকে।
নতুন কবুতর পালন করার সময় যে ভুলগুলো করা উচিত নয়
নতুন ভাবে কবুতর পালন করার সময় বিভিন্ন ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। তবে একবার কবুতর পালন করার কৌশল রপ্ত করতে পারলে লাভজনকভাবে কবুতর পালন করা যায়।
- কবুতর পালনের শুরুতেই দামি কবুতর দিয়ে পালন শুরু করা
- বাজার থেকে অসুস্থ আক্রান্ত কবুতর চেক করে না নিয়ে আসা
- কবুতরের বসবাসের অনুকূল বাসস্থান বা খাঁচা সম্পর্কে ধারণা না থাকা
- সঠিকভাবে কবুতরের জোড়া না মিলানো
- সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখা
- কবুতরের কঠিন রোগ গুলো সম্পর্কে ধারণা না থাকা
সতর্কতা
কবুতর লালন পালন করার সময় অবশ্যই কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। কবুতর পালন খুব একটা সহজ পদ্ধতি নয় কেননা কবুতর পালন করতে হলে আগে কবুতরকে নিজের পোষ মানাতে হয়। কবুতর সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকলে খুব সহজে কবুতরকে নিজের পোষ মানানো যায়।
মন্তব্য
আজকে আমরা কবুতর পোষ মানানোর সহজ পদ্ধতি ও কবুতর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে উপরের আর্টিকেলটি শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি অনেক কাজে লাগবে। কবুতর পোষ মানানোর সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয় বিস্তারিত জানুন
- খাঁচায় দেশি কবুতর পালন করার নিয়ম
- কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয় বিস্তারিত জানুন
- কবুতরের খাবার তালিকা ও খরচ বিস্তারিত
- খাঁচায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পালন করার নিয়ম