কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
আমরা যেমন সাধারন ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের হাত পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ শক্ত করি ঠিক তেমনি আমাদের শ্রোনী পেশি বা পেটের নিচের অংশের পেলভিক পেশির ও এক বিশের ধরনের ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়। এই বিশেষ ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে পুরুষ এবং নারীর উভয়ের ই বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যা সমাধান হয় যা আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করার আগে সম্মানিত পাঠকদের এটা আগে ভালোভাবে জানা উচিৎ কেগেল ব্যায়াম টা আসলে কি বা কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে। চলুন তাহলে আমরা ধাপে ধাপে জানার চেষ্টা করি কেগেল ব্যায়াম কি এবং কিভাবে একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষ কেগেল ব্যায়াম করতে পারে এবং সর্বষেশ কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা আসলে কি। চলুন কথা না বাড়িয়ে তাহলে শুরু করি আজকের আলোচনা।
আরো পড়ুন: পুরুষের মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার উপায়
কেগেল ব্যায়াম কি?
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন কেগেল ব্যায়াম টা কি?
কেগেল ব্যায়াম হচ্ছে প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারী ও পুরুষের পেলভিক পেশি বা শ্রোনী মাঝের পেশি মজবুত ও সুসংগঠিত করার বিশেষ ধরনের ব্যায়াম ই হচ্ছে এই কেগেল ব্যায়াম। পেলভিক পেশি হচ্ছে নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের বিশেষ এক ধরনের পেশি যা মূত্রসংবহনতন্ত্র, বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথের কার্যপ্রণালী জোরদার করে এবং যৌনক্রিয়া ক্ষমতাকে উন্নিত করতে পারে।
তাহলে সংক্ষেপে বলতে আমাদের দেহের যৌনাঙ্গের বিশেষ এক ধরনের পেশির নাম পেলভিক পেশি যা সুসংগঠিত করার বিশেষ ব্যায়াম ই হচ্ছে এই কেগেল ব্যায়াম। ১৯৪৮ সালে অ্যামেরিকান নাককরা গাইনোকলজিস্ট আর্নল্ড ক্যাগেল প্রথম এই ব্যায়ামের ব্যপারে ধারণা দেন যাতে সার্জারী ছাড়াই মহিলাদের প্রস্রাব লিক করার সমস্যা সমাধান করা যায়। কিন্তু বর্তমানে এই ব্যায়াম নারী এবং পুরুষ উভয়কেই সাজেস্ট করা হয়।
কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করতে হয়
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পূর্ন পেতে হলে আপনাকে সঠিক নিয়মে কেগেল ব্যায়াম করতে হবে। অন্যথায় কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা থেকে আপনি বঞ্চির হবে। এখন আমরা কেগেল ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম জানবো। নারী ও পুরুষের জন্য কেগেল ব্যায়ামের নিয়ম কিছুটা ভিন্ন। তাই আমরা নারী পুরুষের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করতে হয়ে তা ব্যাখ্যা করবো।
আরো পড়ুন: ব্রেস্ট টিউমার কী, ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ, চেনার উপায় ও করনীয়
মহিলাদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি
১। কেগেল ব্যায়াম শুরু করার জন্য প্রথমে পেলভিক পেশী খুঁজে বের করতে হবে। যোনির ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে পার্শ্ববর্তী পেশীগুলো ধীরে সংকুচন করার চেষ্টা করুন। তারপর পেশীগুলোকে ধীরে শিথিল করে দিন। দেখবেন শ্রোণীপেশীগুল আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে।
এছাড়া প্রস্রাব করার সময় দু-একবার প্রস্রাব করার প্রবাহ কিছুক্ষন বন্ধ করে ছেড়ে দিন । সফল হলে বুঝলেন প্রাথমিক ধাপটা পার হতে পারছেন। (প্রস্রাব করার প্রবাহ বন্ধ করাটা বার বার বা নিতমিত অভ্যসে পরিনত করবেন না।) মূত্রথলি পরিপূর্ণ অবস্থায় বা প্রস্রাব করার সময় কেগেল ব্যায়াম করা মোটেই ঠিক নয়। এতে পেশী আরো শিথিল হয়ে যাবে বা প্রস্রাব করা অপূর্ণ থেকে যাবে যা মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
২। এবার পূর্ণ পদ্ধতি। শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর অবস্থান নির্ণয় করা হয়ে গেলে কেগেল ব্যায়াম শুরুর পূর্বে মূত্রধলী সম্পূর্ন খালি করুন। তারপর ফ্লোরে বা বিছানায় সমতন যায়গায় শুয়ে পড়বেন। পেলভিস পেশী শীরে ধীরে সংকুচন করুন। ৫ সেকেণ্ড ধরে রাখুন। ৫ সেকেণ্ড পরে শীরে শীরে শিথিল করে দিন। এভাবে একটানা ৫/৬ বার করুন। এভাবে ধীরে ধীরে ৫ সেকেণ্ডের জায়গায় ১০ সেকেণ্ড করে করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ সময় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন।
৩। কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পূর্ন পেতে হলে শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য শুধু পেলভিস মাসলের উপরই মনোযোগ দেবেন। খেয়াল রাখবেন- পেটের পেশী, তলপেট, নিতম্বের পেশীতে যেন কোনভাবে টান না পড়ে বা সেগুলো অতিরিক্ত সংকুচিত না হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস ধরে বা জোর করে বন্ধ রাখবেন না। স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস নেন, এই ব্যায়ামের সময়ও সেভাবে ী নেবেন।
৪। ব্যায়ামটি ১০ বার পুনরাবৃত্তি করে ৩ টি সেট করবেন এবং দিনে ৩ বার করার চেষ্টা করবেন। এজন্য আলাদা সময়ের দরকার নাই। অন্যান্য নরমাল কাজের ফাঁকেই এটা করতে পারেন। যেমন কম্পিউটারের কাজ করার সময় বা সোফায় বসে টিভি দেখার সময়, বিছানায় গড়াগড়ি দেয়ার সময়। ব্যায়ামটি চেষ্টা করেও করতে না পারলে লজ্জিত হবার কিছু নাই। এখানে প্রশ্ন করতে পারেন বা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
৫। যদি একাগ্রতার সাথে সঠিক ভাবে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন। আর ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হবে না। যোন মিলনের সময় যোনি পথে ব্যথা কমে যাবে, বেশীক্ষণ মিলিত হতে পারবেন, মিলনে আগের চেয়ে বেশী সুখানুভূতি হবে। আরো অনেক সুবিধা পাবার জন্য এটা করা অব্যাহত রাখা উচিত।
পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা শতভাগ পেতে হলে ব্যায়ামটি সঠিক নিয়মে করতে হবে। আর কেগেল ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে পুরুষরা নারীদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন নিয়মে করবে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
এতক্ষন আমরা কেগেল ব্যায়াম কি এবং কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে তা নিয়ে বিস্তারি জানলাম। এখন আমরা জানবো কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা কতটুকু। এখানেও নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা ভিন্ন ভিন্ন। তাই আমরা নারী এবং পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা করে কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা জানবো।
মহিলাদের কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
মহিলাদের কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি হয় গর্ভাবস্থায়। গর্ভাবস্থায় নরমাল প্রসবের জন্য এই ব্যায়াম খুবই কার্যকরি। এছাড়াও প্রসব পরবর্তি শরীর পুনঃ গঠনেও এই ব্যায়াম খুব কার্যকরী। তাছাড়া ৩০ বয়সের বেশি নারীদের যৌন জীবন উন্নত করতে এবং যৌ তৃপ্তি বাড়াতে এই ব্যায়াম খুবই কার্যকরি। চলুন এক নজরে কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা গুলো দ্রুত দেখে নেয়া যাক।
- স্বাভাবিক প্রসবের জন্য শরীরের ফিটনেস টিক রাখে এবং যৌনি মধ্য পেশির জন্য সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম এটি।
- প্রসবের পর স্থুলতা এড়াতে চাইলে এবং প্রসবের পর শরীর দ্রুত পুনঃ গঠনের ক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম খুবই কার্যকরি।
- মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে এবং ঘুমের সমস্যা সমাধান করে।
- যৌনির পেশি সুগঠত করে এবং যৌন মিলন স্থায়ী ও সুখের করে।
- গর্ব কালীন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- যৌন মিলনের উত্তেজনাকে প্রশমিত করে।
পুরুষের কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
যদিও কেগেল ব্যায়াম মূলত নারীদের করতে বলা হয় কিন্তু এই ব্যায়াম পুরুষের জন্য ও সমানভাবে কার্যকরী। পুরুষের মূত্রথলীর সমস্যা সমাধান, দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা সহ নানা রকম সমস্যা সমাধানের কার্যকরী পদ্ধতি এই কেগেল ব্যায়াম। চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক পুরুষের কেগেল ব্যায়ামের উপকারিত গুলো কি কি
- নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করতে পুরুষের অনিয়মিত প্রস্রাবের সমস্যা দূর হবে।
- লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদ্ধতি ধরা হয় এই কেগেল ব্যায়ামকে। তবে এই ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে।
- দ্রুত বীর্যপাতের মত সমস্যা গুলো সমাধান হবে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে।
- এছাড়া পুরুষের মানসিক সমস্যা দূর করা ও রাতে ঘুমের সমস্যা সমাধান করে এই কেগেল ব্যায়াম।
নিয়মিত কেগেল ব্যায়ামের মাধ্যমে দ্রুত বির্যপাত দূর করা যায় এটা ক্লিনিকালি প্রমানিত।
আরো পড়ুন: থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
কেগেল ব্যায়ামের অসুবিধা
সাধারনত কেগেল ব্যায়ামের তেমন কোন অসুবিধা নেই। তবে কিছু শারিরীক পরিস্থিতিতে কেগেল ব্যায়াম ক্ষতির কারন হতে পারে। যেমন –
- নারীদের ক্ষেত্রে প্রসব হওয়ার পর পর যৌনি কিছুটা দূর্বল থাকে। তখন এই ব্যায়াম করা উচিত নয়।
- কেগেল ব্যায়াম করার পূর্বে অবশ্যই মূত্রনালী খালি করে নিতে হবে।
- শরীরের যেকোন অঙ্গে অস্ত্রপচার হয়ে থাকলে সম্পূর্ন সুস্থ হওয়ার আগে কেগেল ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।
- যৌনি অঞ্চলে কোন ব্যথা থাকলে এই ব্যায়ম থেকে বিরত থাকুন।
কাদের জন্য কেগেল ব্যায়াম জরুরী?
সাধারনত নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা সমান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম করা জরুরি হয়ে পড়ে। যেমন –
- প্রসব হওয়ার পর নারীদের যৌনি কিছুটা ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম করা উচিত।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা কেগেল ব্যায়াম করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
- বয়সের সাথে যৌন ক্ষুধা কমে গেলে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন।
- যৌনাঙ্গে বা পেলভিক পেশিতে অস্ত্রপচার হলে
- BMI 25 এর বেশি হলে নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করুন
শেষকথা: কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা বহুমূখী। নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ই খুবই কার্যকরি একটি ব্যায়াম যা যৌন জীবন সুখের করে একই সাথে মানসিক স্বাস্থ উন্নয়নে যথেষ্ট উপকার করে। তাই আমাদের ব্লগের সম্মানিত পাঠকদের বলবো সম্ভব হলে নিয়মিত এই ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ