ভালো স্বর্ণ চেনার উপায়
মূলত সবচেয়ে খাঁটি স্বর্ণ হচ্ছে ২৪ ক্যারেট। তবে এই ২৪ ক্যারেট দিয়ে কোন গয়না তৈরি করা যায় না। কারণ খাঁটি গোল্ড একদমই নরম হয় তাই গয়না তৈরি সম্ভব হয় না। গয়না তৈরির জন্য মূলত অন্যান্য ক্যারেটের স্বর্ণগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তাই খাঁটি সোনা আসলে চেনা খুবই কঠিন ব্যাপার। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাই আজকে আমরা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় বিস্তারিত আলোচনা করব। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় লেখাটি আশা করছি ভালো লাগবে।
বিদেশি স্বর্ণ চেনার উপায়
বাংলাদেশের দেশীয় স্বর্ণগুলোর চাইতে বিদেশি স্বর্ণ সাধারণত সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে। কেননা বাইরের দেশে স্বর্ণের সাথে কোন ধাতু বা খাত মেশানো হয় না। সেখান থেকে কম দামে সলিড গোল্ড কিনা যায়। বিদেশি স্বর্ণ চেনার অন্যতম উপায় হল গোল্ডের গয়নার ভেতরে বিদেশের হলমার্ক দেওয়া থাকে। যেমন-
- ২২ ক্যারেট গোল্ডের ভেতরে ৯১৬ লিখা থাকবে।
- বিদেশি স্বর্ণ দেশি স্বর্ণের চাইতে অনেক উজ্জ্বল
- বিদেশি স্বর্ণ অনেক নরম হয়
- দীর্ঘদিন ব্যবহারেও কালো হয়ে যায় না
খাঁটি স্বর্ণ বা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায়
মূলত স্বর্ণ খাঁটি না কি লোহা মেশানো থাকে তা বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা করলেই বুঝতে পারা যায়। বর্তমানে ঘরোয়া ভাবেই ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় জানা যায়।
চুম্বক- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে চুম্বক অন্যতম। লোহা মেশানো স্বর্ণে যদি সলিড গোল্ড মিশিয়ে লোহার মেশানো হয় তাহলে চুম্বক ধরলেই সেটা টেনে নেবে মেশানো আছে কিনা তার চুম্বক ব্যবহার করে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত
সাদা চিনেমাটির প্লেট- একটি সাদা সিনেমাটি প্লেটের সাহায্যেই খাঁটি স্বর্ণ বা ভালো স্বর্ণ যাচাই করতে সহজ হয়। স্বর্ণের গয়না চিনেমাটির প্লেটে ঘষে দেখতে হবে। যদি থালার উপর কালো দাগ পড়ে তাহলে বুঝতে হবে এই স্বর্ণের জিনিস নকল। আর যদি হালকা সোনালী রং পড়ে তাহলে বুঝতে হবে সেটি আসল গোল্ড।
রাসায়নিক ও এসিড- বাজারে এমন অনেক ধরনের রাসায়নিক এবং এসিড রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে স্বর্ণের গুণগত মান যাচাই করা সম্ভব। স্বর্ণ ভালো নাকি খারাপ এবং সলিড কিনা তার রাসায়নিক ও এসিডের মাধ্যমে পরীক্ষা করা যায়। রাসায়নিক বা এসিড সলিড স্বর্ণের স্পর্শে এলে কোনরকম বিক্রিয়া ঘটেনা।
দুই গ্লাস পানি- একটি গভীর পাত্রের মধ্যে দুই গ্লাস পানি মেপে নিতে হবে। তার এই পানির মধ্যে বাজার থেকে কিনে আনা সোনার গয়না গুলো ফেলে রাখতে হবে। যদি দেখা যায় গয়নাগুলো ভাসছে তাহলে বুঝতে হবে সেটি নকল। খাঁটি গয়না ভারী হয় যা কিনা পানির উপরে ভাসে না।
দাঁত দিয়ে পরীক্ষা- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে একটি সহজ এবং অন্যতম হল দাঁত দিয়ে পরীক্ষা করা। বাজার থেকে কিনে আনা যে কোন গোল্ডের গয়নাতে হালকা কামড় দিয়ে ধরে রাখতে হবে। যদি তা আসল বা খাঁটি সোনার গহনা হয় তাহলে স্বর্ণের গহনার উপর কামড়ানোর হালকা দাগ পড়বে। কেননা খাঁটি স্বর্ণ সবসময় নরম হয়।
ঘাম- শরীরের ঘামের সংস্পর্শে এলে আসল গোল্ড কখনো ঘামের গন্ধ ধরে না। যদি গহনা থেকে ঘামের গন্ধ আসে তাহলে বুঝতে হবে স্বর্ণের গহনাতে অন্য কোন ধাতু বা খাত মেশানো আছে।
ভিনেগার- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম উপায় হল ভিনেগার দিয়ে স্বর্ণের জিনিস পরীক্ষা করা। বাজার থেকে কিনে আনা সোনার গহনার উপরে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার দিতে হবে।গহনায় ভেজাল থাকলে রং পরিবর্তন হবে। তবে খাঁটি গোল্ড হলে সেটা রং কখনোই পরিবর্তন হবে না।
নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার- সাধারণত নাইট্রিক এসিড সোনার সঙ্গে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। কিন্তু এটি অন্য ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে। ড্রপারের সাহায্যে কয়েক ফোটা নাইট্রিক এসিড গোল্ড এর উপর ফেললে যদি রং পরিবর্তন না হয় তাহলে বুঝতে হবে কেনা স্বর্ণটি খাটি। কিন্তু যদি ধাতুর রং বদলে সবুজ আস্তর পড়ে, তবে বুঝতে হবে এটি খাঁটি গোল্ড নয় এর সঙ্গে তামা বা ব্রোঞ্জ মেশানো আছে।
হলমার্ক দেখে কেনা- স্বর্ণ চেনার বর্তমানে সবচেয়ে আধুনিক এবং সহজ উপায় হল হলমার্ক দেখে কিনা। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। গয়না কেনার সময় থাকা হলমার্ক চিহ্ন অবশ্যই দেখে নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গয়নার ভেতর দিকে হলমার্কের চিহ্নগুলো দেওয়া থাকে। ক্যারেট অনুযায়ী ২২, ২৪,১৮ নাম্বার গুলি লেখা থাকে। এক্ষেত্রে .২২ এবং ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ সবচেয়ে ভালো।
কষ্টিপাথর- সাধারণত স্বর্ণের দোকানদাররা স্বর্ণের জিনিসের সত্যতা যাচাই করার জন্য এই পাথর ব্যবহার করে থাকে। এই কুষ্টিপাথরে স্বর্ণের জিনিস ঘষে পরীক্ষা করেন আসল নাকি নকল। কিন্তু এই কষ্টিপাথর সবার কাছে না থাকায় ঘরোয়া উপায়ে স্বর্ণ আসল নাকি নকল বা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় বের করা যায়।
আরো পড়ুন – কোন দেশে স্বর্ণের দাম কম
স্বর্ণ মূলত কত ধরনের হয়
স্বর্ণ মূলত বিভিন্ন ক্যারেটের হয়ে থাকে। তবে সব জায়গায় সব ধরনের স্বর্ণ পাওয়া যায় না। সবচেয়ে ভালো স্বর্ণ হল .২৪ক্যারেট। তবে ২৪ ক্যারেট দিয়ে কোন গয়না বানানো সম্ভব নয়। কারণ ২৪ ক্যারেটের গোল্ড অনেক নরম এবং সলিড হয়। ২২ ক্যারেট ২১ ক্যারেট ১৮ ক্যারেট সহ সনাতন গোল্ড বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। সনাতন গোল্ডের কোন ক্যারেট হয় না। সনাতন গোল্ডের সাথে ধাতু মেশানো হয়। যে কোন গোল্ডের সাথে 93.81 স্বর্ণ থাকে বাকি অংশ ধাতু বা গালা থাকে।
কোন ক্যারেটের স্বর্ণ ভালো হয়
সবচেয়ে ভালো সাধারণত ২৪ ক্যারেটের গোল্ড। তবে যেহেতু ২৪ ক্যারেটের গোল্ড দিয়ে কোন গয়না বানানো যায় না তাই এই ২৪ ক্যারেট গোল্ডকে ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারাটে ট্রান্সফার করে গহনা বানানো যায়। রেগুলার ব্যবহারের জন্য ১৮ এবং ২১ ক্যারেটের গোল্ড সবচেয়ে ভালো হয়।যা বাঁকা হবার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তবে সনাতন গোল্ড কেনা উচিত নয় কারণ এতে গোল্ডেন নির্দিষ্ট কোন পরিমান থাকে না।
কোন দেশের স্বর্ণ ব্যবহারের জন্য ভালো
দেশীয় গোল্ডের পাশাপাশি আমাদের দেশে বিদেশি গোল্ড ব্যবহারের প্রবণতা খুবই বেশি। মধ্যপ্রাচীর দেশগুলো থেকে কম দামে সবচেয়ে ভালো স্বর্ণের গহনা ব্যবহারে বাংলাদেশ প্রসিদ্ধ। সাধারণত সৌদি আরব, কাতার, দুবাই এর গোল্ড ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো বলে বিবেচিত হয়। কারণ এসব দেশে গোল্ডের বা স্বর্ণের খনি পাওয়া যায়। তাই এরা সলিড গোল্ডের সাথে অন্য কোন ধাতু মেশায় না।
বিভিন্ন দেশের স্বর্ণের বাজার দর
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের স্বর্ণের বাজারদর বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে আজকে স্বর্ণের বর্তমান বাজার দর হল- যুক্তরাষ্ট্রে আজ এক আউন্স স্বর্ণ এর দাম হল ১৫৮ ডলার এবং রুপার দাম হল ১৮ ডলার
- মালয়েশিয়ায় আজকের সোনার বাজার এর দাম এক আউন্স ৬৩৭৬ রিংগি
- যুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অ্যাকাউন্স স্বর্ণের দাম ৫৭২৪ দিরহাম এবং রুপার বর্তমান বাজার 66 দেরহাম।
- বাংলাদেশে বর্তমানে এক আউন্টস স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১০ হাজার টা…
- ভারতে এক আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ত্রিশ হাজার ৩৮৭ রুপি এবং রুপা বিক্রি হয় ১২৯৭ রুপি।
- এছাড়াও সৌদি আরবে প্রতি আউন্স ১ লাখ 80 হাজার এবং।
- কাতারে এক আউন্স ১ লাখ ৯৮ হাজার।
হলমার্ক করা স্বর্ণ চেনার উপায়
হলমার্ক করা স্বর্ণ চেনার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। হলমার্কিং হলো সঠিক নির্ধারণ এবং মূল্যবান ধাতু নিবন্ধন। বহুমূল্যে ধাতু আনুপাতিক বিষয়বস্তুর অধিকারী রেকর্ডিং অর্থাৎ এ হলমার্কের গহনাতে কতটুকু স্বর্ণ কতটুকু ধাতু মেশানো আছে তা বিস্তারিত মেশিনের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়ে থাকে।
স্বর্ণের জিনিস এর বিশুদ্ধতার জন্যই মূলত হলমার্ক করা হয়ে থাকে। এটি ভিতরে কত ক্যারেটের গোল্ড তা খোদাই করা থাকে এবং হলমার্কের চিহ্ন দেওয়া থাকে। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় জানলে নকল গহনা কেনা হয় না।
কোন কোন জিনিস স্বর্ণের জন্য ক্ষতিকর
ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় আমরা উপরে বর্ননা করেছি। কিন্তু গোল্ডের জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকেই এর ক্ষতিকারক দিকগুলো জানেনা।
গোল্ডের গহনা ব্যবহারের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে গহনাতে কোন পারদ বা থার্মোমিটার ভাঙ্গা না লাগে। কেননা সোনার গহনাতে পারোদ লাগলে সোণা তামাতে রূপান্তরিত হয় এবং ভেঙে যায়। এছাড়াও বর্তমানে পারফিউমের সাথে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড মিশানো হয়ে যা তামাতে রূপান্তরিত করে। তাই গোল্ডের গহনা ব্যবহার করলে এসব বিষয় থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ভালো স্বর্ণ চেনার উপায়
আজকে আমরা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় ও সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি আশা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় সবার অনেক কাজে লাগবে ভালো। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় সম্পর্কে যদি কারো কোন মন্তব্য বা মতামত থাকে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –