ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গা
বর্তমানে ঢাকা শহর পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে ছোট বাচ্চাদের উপরে। বন্দী রুমের মধ্যে বড় হতে গিয়ে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে সঠিকভাবে হচ্ছে না। পরিবারের অভিভাবকদের উচিত কিছুদিন পরপর বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ যথাযথভাবে হবে।
আজকে আমরা ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গা, খরচ ও যাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি কম খরচের মধ্যে পরিবার নিয়ে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন।
বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবে?
ঢাকায় বাচ্চাদের ঘুরার জায়গা নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে প্রথমে আলোচনা করতে চাই বাচ্চাদের নিয়ে কি রকম জায়গায় ঘুরতে যাওয়া উচিত। বাচ্চাদের নিয়ে সাধারণত খোলা মাঠ, পার্ক কিংবা উন্মুক্ত জায়গায় ঘুরতে যাওয়া উচিত।
এতে করে বাচ্চারা যথেষ্ট পরিমাণ হাটাহাটি দৌড়াদৌড়ি জায়গা পাবে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে। জায়গা সিলেকশন এর ক্ষেত্রে আমরা কৃত্তিম জায়গা গুলোর চেয়ে প্রাকৃতিক, উন্মুক্ত ও সবুজ জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি।
ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গা
এই পর্যায়ে আমরা ঢাকার ভেতরে কম খরচে ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গা নিয়ে আলোচনা করব। আমরা পাঁচটি জায়গা সিলেক্ট করেছি এবং সিলেকশন এর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত ও সবুজ জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি।
১। আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত যা সাধারণত বড় কাটরা নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ আমলে এটি নবাব পরিবারের আবাসস্থল ছিল। চোখ ধাঁধানো সুন্দর বিল্ডিং উন্মুক্ত মাঠ এবং সবুজ গাছের সুন্দর একটি সংমিশ্রণ আহসান মঞ্জিল। এর পাশেই রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী। সব মিলিয়ে পরিবার এবং ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলবেলায় গেলে খুব সুন্দর একটি সময় কাটবে বলে আশা করি।
কিভাবে যাবেন – ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই গুলিস্তান বাস পাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে সদরঘাটের বাস ভাড়া মাত্র 10 টাকা। আর রিক্সায় করে গেলে 50 টাকা ভাড়া রাখতে পারে। সদরঘাট থেকে আহসান মঞ্জিল পর্যন্ত হেঁটে যেতে সর্বোচ্চ 10 মিনিট লাগবে। আপনি চাইলে গুলিস্তান থেকে সরাসরি আহসান মঞ্জিলের রিকশা নিতে পারেন। অথবা সদরঘাট থেকে আহসান মঞ্জিল রিক্সা পাওয়া যায়।
পরিদর্শনের সময় (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) – সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিলের টিকেট পাওয়া যায়। এছাড়া শুধুমাত্র শুক্রবারে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল খোলা থাকে।
পরিদর্শনের সময় (অক্টোবর থেকে মার্চ) – শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল খোলা থাকে। শুক্রবার আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।
টিকিটের মূল্য – প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য ৩০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ১৫ টাকা করে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশের নাগরিক হলে ৩০ টাকা এবং অন্য দেশের নাগরিক হলে ১০০ টাকা করে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অগ্রিম টিকেট বুকিং দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
২। লালবাগ কেল্লা
যারা ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করেন লালবাগ কেল্লা তাদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একটা জায়গা। বিশেষ করে বন্ধু পরিবারসহ ঘড়ার জন্য জায়গাটি সুন্দর একটি পছন্দ হতে পারে। লালবাগ কেল্লা একই সাথে একটি ঐতিহাসিক জায়গা এবং নবাবের হাম্মাম খানা, পরী বিবির মাজার সহ দৃষ্টিনন্দন কিছু সুন্দর স্থাপনা রয়েছে যা বাচ্চাদের মন ভালো করবে নিশ্চিত। ছাড়া সবুজ মাঠ ও উন্মুক্ত জায়গা থাকায় বাচ্চারা ছোটাছুটি করতে পারবে খুব সহজে।
কিভাবে যাবেন – লালবাগ কেল্লা আজিমপুর গোরস্থানের পাশে অবস্থিত। ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে সাইন্সল্যাবের মোড় বা নিউমার্কেট এলাকায় আসার বাস পাওয়া যায়। মার্কেট এলাকা থেকে আজিমপুর অর্থাৎ লালবাগের সরাসরি রিকশা পেয়ে যাবেন মাত্র ৪০ টাকা ভাড়া নিবে।
টিকেটের মূল্য – লালবাগ কেল্লা সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ৫ বছরে নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে টিকেটের প্রয়োজন হয় না তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা করে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩। চিড়িয়াখানা
ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গালোর মধ্যে চিড়িয়াখানা অন্যতম। মিরপুর ১০ অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি তে বাঘ, হরিণ, বানর সহ কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যা দেখে বাচ্চারা অনেক মজা পাবে এবং অনেক কিছু শিখতে পারবে আশা করি। এছাড়াও চিড়িয়াখানা এরিয়া অনেক বড় হওয়ায় ইচ্ছামত ছোটাছুটি করতে পারবে।
কিভাবে যাবেন – ঢাকার প্রায় সব জায়গা থেকে মিরপুর ১০ এর বাস পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঢাকা সদরঘাট, গুলিস্তান, মতিঝিলম ফার্মগেট, গাবতলী থেকে সরাসরি চিড়িয়াখানার মূল গেট পর্যন্ত বাস সার্ভিস রয়েছে। বাসে গেলে খরচ অনেক কম হবে। বাজেট বেশি থাকলে সরাসরি সিএনজি কিংবা উবার ভাড়া করতে পারেন সে ক্ষেত্রে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো খরচ পড়বে।
টিকিটের মূল্য – চিড়িয়াখানায় টিকিটের মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য টিকেটের মূল্য ৫০০ টাকা।
৪। রমনা পার্ক
ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত বিশাল বড় এই পার্টি মূলত পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের জন্য সবার কাছে সুপরিচিত। উপরের অন্যান্য জায়গাগুলো মতো রমনা পার্কে বিশেষ কোনো স্থাপনা নেই তবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ, ছোটখাটো কিছু লেক এবং সুন্দর সবুজ গাছপালায় পরিবেশিত হওয়ায় পরিবার ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য খুবই আদর্শ একটি জায়গা।
পরিবারের সবাই মিলে বিকেলে কিছু সময় অতিবাহিত করলে মন ফ্রেশ হয়ে যাবে নিশ্চিত এর সাথে ছোটখাটো পিকনিক করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পার্ক হওয়ায় টিকেটের কোন ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঘুরে আসতে পারবেন এই পার্কে।
কিভাবে যাবেন – রমাপার শাহবাগ দিয়েছি মোর ও জাতীয় জাদুঘরের কাছাকাছি অবস্থিত। সব জায়গা থেকেই শাহবাগ মোড়ে আসার বাস পাওয়া যায়। শাহবাগ থেকে পায়ে হাটা দূরত্বে অবস্থিত পার্ক টি। চাইলে রিক্সা নিয়েও খুব সহজে রমনা পার্কের গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন।
আরো পড়ুন – ঢাকায় ঘোরার জায়গা ও খরচ
৫। জিয়া উদ্যান
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর পরিবেষ্টিত বিশাল বড় জায়গা নিয়ে জিয়া উদ্যান এর অবস্থান। জাতীয় সংসদ ভবনের খুবই কাছে অবস্থিত জিয়া উদ্যান। সুবিশাল জায়গা ও সবুজে পরিবেশিত হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পছন্দ হবে নিশ্চিত। পরিবারের ছোট বাচ্চা থাকলে ঘোরাঘুরি করে মজা পাবেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
জিয়া উদ্যান রমনা পার্কের মতোই সম্পূর্ণ ফ্রি অর্থাৎ কোন রকম টিকেটের প্রয়োজন হয় না।
কিভাবে যাবেন – ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে ফার্মগেটের বাস পাওয়া যায়। ফার্মগেট থেকে জাতীয় সংসদ ভবন কিংবা জিয়া উদ্যান দুটোই পায় হাটা দূরত্বে অবস্থিত। এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে খুব সহজেই ফার্মগেট হয়ে চলে যেতে পারেন জিয়া উদ্যানে।
বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় সতর্কতা
উপরে আমরা ঢাকায় বাচ্চাদের জন্য ঘুরার জায়গা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এ পর্যায়ে আমরা পরিবার কিংবা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তা আলোচনা করার চেষ্টা করব
- সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসার মত সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে।
- বাচ্চাদের কোনভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না এতে করে হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
- মোবাইল মানিব্যাগ সাবধানে রাখতে হবে।
- কিছু অসাধু চক্র থাকে যারা ঘুরতে আসা মানুষদের টার্গেট করে এবং চুরি ছিনতাই মত সমস্যা সৃষ্টি করে। ধরনের লোক থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আরো পড়ুন – ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়া কত? খরচ, স্টেশন ও উঠার নিয়ম