কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে
সাধারণত বাচ্চাদের জন্মের পরে বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আজকে আমরা কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয়
বাচ্চার পায়খানা শক্ত হওয়ার কারন
শিশুদের বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সাধারণত মায়েদের সাথে তার কারণে শিশুদের এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়ে থাকে। কোন কোন খাবার হজমের ফলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে তা জানা থাকলে এসব ছোটখাটো সমস্যা থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা যায়।
- শক্ত খাবার খাওয়া
- তরল জাতীয় খাবার না খাওয়া
- পানি কম খাওয়া
- শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া
- প্যাকেট জাতীয় খাবার খাওয়া
- টিনের কৌটার দুধ খাওয়ানো
- প্রতিদিন মলত্যাগের অভ্যাস না করা
- পেটে গ্যাস হয় এমন খাবার খাওয়া
- বাচ্চাদের অতিরিক্ত খাওয়ানো
- কতক্ষণ পর পর খাওয়ানো
- খাওয়া হজম হতে সময় না দেওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চাদের কি কি সমস্যা হয়
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বাচ্চাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চাদের কষ্ট কাটিনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করলে অল্পসময়েই তার উপসম করা সম্ভব হয়।
- সারাক্ষণ কান্নাকাটি করা
- ক্ষুধামন্দা
- বমি বমি ভাব বা বমি করা
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- পেট ব্যথা হওয়া
- পেট ফুলে যাওয়া
- বারবার কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়ুপথে বিভিন্ন রোগ হওয়া
- ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অর্শ বা সব সময় পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে
যেসব খাবার বাচ্চাদের পায়খানা শক্ত করে
কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে তা জানা থাকলে সব সময় ঘরে সেসব খাবারের ব্যবস্থা রাখলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। অনেক সময় বাচ্চার মায়ের খাবারের শার্টের ফলে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
আপেল- আপেল অনেক শক্ত একটি ফল যা বাচ্চাদের হজমে সমস্যা করে। বেশিরভাগ সময় আপেলের পিউরি দেওয়া উচিত। তবে তা সপ্তাহে একবারের বেশি নইয়। কেননা আপেল ডায়রিয়ার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে সুপরিচিত। শিশুকে আপেলের সস খাওয়ানো থেকেও বিরত থাকা উচিত।
দুধ বা দুধ জাতীয় পণ্য- শিশুদের বুকের দুধ ছাড়া অন্য যেকোনো দুধের প্রোটিন শিশুর হজমে সমস্যা করতে পারে। যার ফলে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য বাচ্চাদের ফর্মুলা দেওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা দেওয়া উচিত নয়।
ফর্মুলা খাবার- শুরুর পর বিভিন্ন ধরনের ফর্মুলা খাবার দেওয়া হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বিভিন্ন ফর্মুলা দুধ সেরেলাক অথবা খাবার সিরিয়াল গুলো অনেক সময় পেটে কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে তাই এসব খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ঘরে তৈরি খাবার বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী।
গাজর- গাজরের রস বা কাঁচা গাজর বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী। এবং তার সহজে হজম হয়ে থাকে। কিন্তু স্টিম বা সেদ্ধ করা গাজর হজমের সমস্যা করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
কাঁচকলা- যেখানে প্রচুর পরিমাণে কলা জন্মে বা যেসব শিশুদের বেশি বেশি কলা কাঁচা রূপে খাওয়ানো হয়. সেসব শিশুদের বেশিরভাগ কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যায়। অপর দিকে পাকা কলা বাচ্চাদের হজমে সহায়তা করে।
ভাত বা রুটি- ভাত বা রুটিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। যা বাচ্চাদের পেট শক্ত করার জন্য প্ররিচিত। এজন্য অনেক বাচ্চাদের খাবার শুধু প্রথমে ভাত বা রোটি দিতেন মায়েরা বারবার সচেতন থাকেন। অতিরিক্ত ভাত বা রুটি বাচ্চাদের দেওয়া যাবে না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পনির- পনির সাধারণত অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। সাধারণত বাচ্চাদেরকে পনির স্নাক্স এর সাথে দেওয়া যেতে পারে। তবে পনিরে ফাইবারের পরিমাণ কম তাই বাচ্চাদের বেশি পনির দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকে।
সাদা পাউরুটি- সাদা পাউরুটি বানাতে ব্যবহৃত হয় আটা বা গম। আটা বা গমের ফাইবার থাকলেও পাউরুটিতে প্রক্রিয়াজাতক্রমে ফাইবার কমে যায়। ফাইবার কম থাকলে খাবার হজমে সমস্যা হইয় তাই বাচ্চাদের সাদা পাউরুটি বেশি দেওয়া উচিত নয়।
ইয়োগার্ট- বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার হল ইয়োগার্ট বা টক দই। প্রচুর পরিমাণে পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। যার ফলে হজমের সমস্যা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে লক্ষ্য করা যাইয়।
সুজি- সুজি খেলে অনেক বাচ্চারই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যায়। গ্রামে বেশিরভাগ বাচ্চাদেরই দুধের সাথে সুজি খাওয়ানো হয়। যা বাচ্চাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম
কোন কোন খাবার খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হয়
কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে তা সব বাবা মার ই জেনে রাখা উচিত। খাওয়ানোর সময় সচেতনতা অবলম্বন করা যায়। এবং বাচ্চার খাবারের চাটে প্রতিদিন এসব খাবার রাখা যায়।
- পাকা কলা
- বেল
- সাগু
- মটরশুটি
- ওটসমিল
- শাকসব্জি
- পাকা আম
- এপ্রিকট
- সবুজ মটর
- আলু বোখারা
- লুব্রিকেট
- নাশপাতি
- ব্রোকলি
- বেরি
- মিস্টিয়ালু
- গোটা শস্যের রুটি
- কিসমিস
বাচ্চাদের পায়খানা নরম করা
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ বাচ্চাদের সেবন করানো উচিত নয়। তবে বাচ্চাদের পায়ুপথে গ্লিসারিন বা সাপোজিটর দিলে খুব সহজেই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় মলত্যাগ করে। এছাড়াও খাবার সঠিকভাবে হজমের জন্য অমিডন সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের পায়খানা নরম করার ঘরোয়া উপায়
কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে তা জানলেও বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ঘরোয়া সমাধানের মাধ্যমে তাদেরকে কষ্ট কর অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। তবে সমাধানের চেয়ে প্রতিকার উত্তম।
সঠিক পরিমাণে পানি পান করানো- পানি আমাদের খাবার হজম সহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। পানি কম খেলে ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । তাই প্রতিদিন বাচ্চার বয়স অনুসারে আপনাকে সঠিক পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
পেট মালিশ- বাচ্চাদের সঠিক নিয়মে পায়খানা না হলে বাচ্চাদেরকে হালকা গরম সরিষার তেল পেটে মালিশ করা যেতে পারে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া- বাচ্চাদের খাবার মেনুতে প্রতিদিন খাবার রাখা উচিত যুক্ত খাবার বা ফাইবার যুক্ত খাবার হজম হাতে সময় কম লাগে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি,কলা, পেঁপে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দেখা দিলে ছোট বাচ্চাদেরকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। যার ফলে পেটের মল সহজেই বের হয়ে যায়। শক্ত হয়ে যায় না।
ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো- বাচ্চাদের নিয়মিত পায়খানা না হলে অনেক দুশ্চিন্তার একটি বিষয়। ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে এতে নরম হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
খেলাধুলা ও ব্যায়াম- সাধারণত বাচ্চাদের খাবার-দাবারের পর দৌড়ঝাঁপ ভাব শারীরিক ব্যায়াম করানো উচিত কেননা এর মাধ্যমে বাচাদেরখাবার খুব ভালোভাবে হজম হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয় না। সারা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শিশুর খেলাধুলা করা উচিত।
পরিশোধিত খাবার না খাওয়ানো- বাচ্চাকে বাইরের প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ানো হলে বেশিরভাগ সময়ই পেটের সমস্যায় ভুগতে পারে। কেননা বাইরের খাবার গুলোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান যা খাবার হজমে বাধা প্রদান করে।
মাংস কম খাওয়ানো- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে বা পেট কষা হলে ওই সময়টাতে মাংস বা মাংস জাতীয় খাবার কম খাওয়ানো উচিত এতে খাবার হজম হতে চায় না।
খাদ্যের পরিবর্তন- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে মায়েদের বুকের দুধ পান করার সময় হলে মায়েদের আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং বাচ্চার পেট নরম হয় এমন সব খাবার খাওয়া উচিত এতে বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। বুকের দুধ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
নবজাতকের পায়খানা না হলে করনীয়
সাধারণত বাচ্চারা জন্মের পরবর্তী সময়ে একেক ধরনের হয়ে থাকে। যদি জন্মের পরবর্তী সময়ে নবজাতকের কয়েক দিন পর্যন্ত পায়খানা না হলেও বাচ্চা স্বাভাবিক থাকলে তা কোন সমস্যার বিষয় নয়। তবে বাচ্চার অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নেওয়া উচিত।
নবজাতকের পেটে সকাল সন্ধ্যার সরিষার তেলের মালিশ এবং গরম কাপড়ের শেষ দিলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। এবং নবজাতকের মায়ের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন খাবার এড়িয়ে চলা।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
সাধারণত বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ঘরোয়া ভাবেই তার সমাধান করা যায়। তবে বাচ্চাদের কোন রোগ নিয়েই অবহেলা করা উচিত নয়। ঘন ঘন কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য
আজকে আমরা কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হয় এই ব্যাপারে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন-
- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয়
- বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয় – চোখে কেতুর হলে করণীয়
- বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম