সেক করলে কি হয়
বিভিন্ন কারণে আমরা সাধারণত সেক ব্যবহার করে থাকি। সেটা হতে পারে গরম সেক বা ঠান্ডা সেক। তাই সেক কি বা কোন ধরনের সেক কখন দিতে হয় তা অনেকেই জানতে চান। অনেকেই সেক করলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা সেক করলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে উক্তি, বানী, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন
গরম বা ঠান্ডা সেক করলে কি হয়
সাধারণত আমরা সেক কি তা কম বেশি সবাই চিনি। সাধারনত সেক ব্যথা কমাতেই আমরা অনেকে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও সেক এর বিভিন্ন ধরনের উপকার আছে। শরীরের কোথাও ব্যথা পেলে অথবা ফুলে গেলে কিংবা রগে টান লাগলে বিভিন্ন ধরনের শেক ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও ফুলে গেলে বা কোন জায়গা লাল হয়ে গেলে ব্যথা পেলে অথবা রক্ত জমাট হয়ে গেলেও অনেক সময় আমরা সেক ব্যবহার করে থাকি। তাই সেক এর মাধ্যমে শরীরের অনেক উপকার হয়।
আরো পড়ুন – হঠাৎ মাথা ঘুরানোর কারণ কি?
গরম সেক কি
শুকনো তোয়ালে সাধারণত গরম করে গরম সেক দেওয়া হয়। তোয়ালে গরম জলে ভিজিয়ে ও সেক দেওয়া যায়। তাছাড়া বর্তমানে রাবারের ব্যাগে গরম পানি ভরে বা গরম সেঁকের প্যাড ব্যবহার করেও অনেকে গরম সেক দেন। গরম সেক এর আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
গরম সেক আঘাত পাওয়া অংশে রক্ত চলাচল করার জন্য ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ গরম সেক আঘাত লাগা অংশে ব্যবহার করলে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে এবং ব্যথা দ্রুত কমে যায়। মূলত হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা বা পেশীতে টান ধরার ব্যথায় এটি খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
ব্যথা পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গরম সেক না দেওয়াই ভালো। গরম সেক দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গরম সেক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
এখন আমরা গরম সেক সম্পর্কে কিছু তথ্য জানব। গরম সেক কার্যক্রম ক্রনিক ইনজুরি প্রকোপ ঘটায়। যেমন- পেশীতে টান পড়া, রগে টান লাগা, ব্যাথা পাওয়া, বিভিন্ন কাজে গরম সেক টিস্যু ও আক্রান্ত স্থান শিথিল করতে অনেক সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও হিটিং প্যাড বা গরম পানিতে ভেজা তোয়ালে দিয়ে তা প্রয়োগ করতে পারেন।
তবে গরম সেক একটানা ২০ মিনিটের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘুমানোর সময় কখনই গরম সেক নেওয়া যাবে না। নিজেকে না পোড়াতে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
গরম সেক দেওয়ার নিয়ম
গরম সেক কেন দিতে হয় তা উপরে উল্লেখ করেছি। এখন বলব গরম সেক দেওয়ার নিয়ম-
১। হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে সেক দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে সতর্কতা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ অনেক সময় ব্যাগ ফেটে বা অসাবধানতায় কর্ক খুলে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ডায়াবেটিস বা স্নায়ুর রোগীদের অনুভূতি কম অতিরিক্ত গরমে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
২। এছাড়াও গরম পানি দিতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে নিন। এরপর এটি দিয়ে যে গরম তাপ থাকবে তা ব্যথার স্থানে ১৫ থেকে বিশ মিনিট করে দিনে তিন থেকে চারবার দিতে পারেন।
৩। দিনের শুরুতে গরম পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করলেও উপকার পেতে পারেন। এতে বাত রোগীদের সকালবেলায় স্টিফ প্লেস বা জড়তা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। গোসলের পানির তাপমাত্রা ৯২ থেকে একশো ফারেনহাইট হওয়া উচিত। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা হাটতে বের হন তারা ব্যায়ামের আগে গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। এতে আঘাতের ঝুঁকিও কমবে।
৪। ওইসব রোগীদের বাত বা আর্থাইটিস রয়েছে তারা সুইমিংপুলে হালকা গরম পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন। প্রত্যেক সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ৩০ মিনিট করে সাঁতার কাটলে অনেক উপকার পাবেন। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু থেরাপি ব্যায়াম করতে পারেন।
যেসব ক্ষেত্রে গরম সেক উপযোগী নয়
বিভিন্ন সময়েই গরম সেক দেওয়া যায় না। সেক করলে কি হয় তা জানার পাশাপাশি এটাও জানতে হবে-
- যদি ত্বক গরম লালচে হয়ে যায় বা ত্বকে কোন প্রদাহ থাকে
- যাদের চর্মরোগ আছে।
- কোন খোলা আঘাত থাকে
- শরীরের এমন কোন জায়গা যেখানে বোধশক্তি নেই
- পেরিফেরাল নিউপ্যাথির কারণে
- যেসব ব্যক্তি তাপের প্রতি অসহনীয় হয়
- উচ্চ রক্তচাপ অথবা
- যাদের হৃদপিন্ডে কোন রোগ রয়েছে
ঠান্ডা সেক
বরফ তোয়ালে ভিজিয়ে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরেও ঠান্ডা সেক দেওয়া যায়। এছাড়াও রাবারের ব্যাগে বরফ এবং ঠান্ডা পানি নিয়ে সেক দেওয়া যেতে পারে। তবে ঠান্ডা সেক দেওয়ার আগে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত অংশটি অসাড় করে দেয় ঠান্ডা। তাতেই ব্যথা কমে অনেকের ধারণা ঠান্ডা সেক দিলে জ্বর আসতে পারে।
তবে সেটা মোটেও সঠিক না। খোলা বা প্রদাহ কমাতে ঠান্ডা সেক দেওয়া হয়। রক্তপাত বন্ধ করতে ঠান্ডা সেক দেওয়া হয় গরম সেক এর তুলনায় এটি অনেক নিরাপদ। তবে তারপরেও এটি ব্যবহারে পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ঠান্ডা সেক সম্পর্কে তথ্য
কোন জায়গায় পোড়ার পর বরফ বা ঠান্ডা সেক দিতে পারেন। যেমন গোড়ালি মচকানো অথবা ক্রনিক ইনজুরি প্রকোপ বাড়ায় এমন কার্যক্রম বরফের টুকরা ভর্তি আইসপ্যাক কিংবা আইসপ্যাক অথবা আইস মাসাজ করতে পারেন। আইস প্যাক বা আইস কিউব না থাকলে বরফ জনিত প্যাড প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
বরফের মাঝখানে একটি পাতলা তোয়ালে রাখুন। ঠান্ডা সেক একবারে বিশ মিনিটের বেশি সময় ব্যবহার করা উচিত নয়। অধিক সময় বরফ ব্যবহার করলে অনেক সমস্যা হতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে হবে যে বরফ প্রয়োগ আক্রান্ত অংশ অবশ হয়েছে এবং তারপর আবার নিশ্চিত ত্বক সম্পন্নভাবে পুরো আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে কিনা।
ঠাণ্ডা সেক দেওয়ার নিয়ম
সেক করলে কি হয় বা গরম সেক কেন দিতে হয় তা উপরে উল্লেখ করেছি। এখন আমরা জানব ঠান্ডা সেক দেওয়ার নিয়ম-
১। কোন একটা পটে বা ব্যাগে পানি নিয়ে ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থানে চার থেকে ছয় ঘন্টা পর পর ২0 মিনিট করে ঠান্ডা সেক দিতে পারেন। এটি তিন দিন পর্যন্ত বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে বা ব্যথা বা আক্রান্ত স্থানে দেওয়া যেতে পারে।
২। একটি নরম কাপড়ে বরফের টুকরা বা প্যাক নিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেক দিতে হয়। এটি দিনে দুই থেকে চার বেলা পর্যন্ত করতে পারেন। কখনো কখনো বরফ সরাসরি ত্বকের উপর মাসাজ করবেন না। এতে করে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া খুব বেশি সময় ঠান্ডা পানি শেয়ার দেওয়া যাবে না।
ঠান্ডা সেক নেওয়ার সময় সাবধানতা
কখনো সরাসরি ত্বকের উপর বরফ মালিশ করবেন না। এতে করে আইস বার্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কখনো একই জায়গায় দীর্ঘক্ষন বরফ মালিশ করা যাবে না এতে করে রোস্ট বাইট আশঙ্কা বেশি থাকে। খুব জটিল কোন আঘাতে ঠান্ডা সেক নেওয়া যাবে না। এতে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে।
ডায়াবেটিস রেনস সিনড্রোম এর কারণে যদি শরীরে কোন স্থানে স্নায়ুর কাছে সংবেদনশীলতা কমে যায় বা আগে থেকে রক্তনালীতে রক্ত চলাচল কম থাকে। তবে সেখানে বরফ মাসাজ করা যাবে না। মেরুদন্ডের হাড়যুক্ত স্থানে সরাসরি বরফ মালিশ করবেন না। যাদের কোন খোলা আঘাত বা রেস্তার টক রয়েছে সেখানে কোন ঠান্ডা সেক দেওয়া যাবে না।
যাদের ঠান্ডা পথে সংবেদনশীলতা বেশি তারা ঠান্ডা সেক থেকে দূরে থাকবেন। যাদের রক্ত সম্পর্ক সঞ্চালন জনিত সমস্যাও রয়েছে তারা ঠান্ডা সেক দেওয়া উচিত নয়।
কখন গরম সেক ঠান্ডা ব্যবহার করা যাবে?
তাপ শরীরের অংশে রক্ত এবং পুষ্টি প্রবাহকে বাড়িয়ে তোলে। এটি প্রায়ই ব্যাথা বা টান লাগা সমস্যায় বেশি গরম সেক এর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। ঠান্ডা শরীরের রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়। ফোলা ভাব এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি স্বল্পমেয়াদী ব্যথার জন্য খুবই উপকারী হল এই সেক। যেমন- কোথাও মোচ বা স্ক্রেন হলে।
কখন গরম ঠান্ডা দুই ধরনের সেক ই দেওয়া যাবে?
ঘাড়ে কোমরে ব্যথা হলে প্রথমে বরফ তার পরে গরম সেক দেওয়া উচিত। তবে কতক্ষণ পরপর গরম বা ঠান্ডা শেক দেবেন সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নেবেন। হাটু এবং পায়ে বেশি যন্ত্রণা কমাতে একই সঙ্গে বরফ এবং ঠান্ডা শেষ দেওয়া যেতে পারে। সেক কি হয় তা জানার পাশাপাশি এটাও জানা জরুরি।
সেক করলে কি হয়
আজকে আমরা সেক করলে কি হয়, গরম সেক বা ঠান্ডা সেক এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি সেক করলে কি হয় আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- কিভাবে লম্বা হওয়া যায়, লম্বা হওয়ার উপায়
- love status bangla, সাহিত্যিক ভালোবাসার ক্যাপশন
- হঠাৎ মাথা ঘুরানোর কারণ কি?