১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
শিশুর জন্মের পর শিশুর সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখেন শিশুর মা। কিন্তু শিশুকে কিভাবে খেয়াল রাখলে শিশু সুস্থ থাকবে সে সম্পর্কে নবজাতকের মায়েরা খুব বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। সাধারণত ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা এর মধ্যে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধে রাখা উচিত। এ সময় শিশুকে অন্য কোন খাবার খাওয়ানো যাবে না। শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের কে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়।
তবে অনেক সময় এই বয়সে অনেকের বাচ্চাই বুকের দুধ পায় না। তাই অনেকেই ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা কি হওয়া উচিত সে সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা এক মাসের শিশুর খাবার তালিকা এবং এক মাসের শিশুকে কোন ধরনের ফর্মুলা দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়
১ থেকে ৬ মাস বয়সে বাচ্চাদের জন্য কোন কোন পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ
ফুলেট- এটি শিশুর দেহের কোষগুলিকে বিভক্ত করতে প্রয়োজনীয়তা সহায়তা প্রদান করে।
ক্যালসিয়াম- এটি আপনার শিশুর শক্ত দাঁত এবং হাড় নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
ফ্যাট- সংক্রমনে বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর চুল এবং ত্বককে নিশ্চিত করে। এটি মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও কার্যকর এবং শক্তি বৃদ্ধি করে।
আয়রন- রক্তকণিকার বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ করতে সহায়তা করে এবং আপনার শিশুর একচেটিয়া ভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে আপনার ডাক্তার আয়রন সাপ্লিমেন্ট গুলোর পরামর্শ দিতে পারেন।
জিংক- সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর চুল এবং ত্বককে নিশ্চিত করে। এটি মস্তিষ্কে বিকাশের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কোষ মেরামতের এবং বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদান করে এই জিংক।
শর্করা এবং প্রোটিন- শর্করা এবং প্রোটিন আপনার বাচ্চার প্রয়োজনীয় শক্তি বৃদ্ধিকে সঠিক পথে রাখতে নিশ্চিত করে।
ভিটামিন- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, বি এক, বি দুই, তিন দুই, ছয় দুই ১২ ভিটামিন সি ডি ই ও কে মস্তিষ্ককে সাধারণ ক্রিয়াকলাপে সহজতর করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তের জন্য এসব ভিটামিন খুবই প্রয়োজনীয়। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধে এসব পুষ্টিগুণ মজুদ থাকে।
আরো পড়ুন – নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করনীয়
১ মাসের শিশুকে বুকের দুধ কয়বার খাওয়ানো উচিত
জন্মের পর শিশুর যখন এক থেকে ছয় মাস বয়স হয় তখন শুধুমাত্র শিশুকে মায়ের বুকের দুধেই খাওয়াতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে অনেকেই বুকের দুধ সঠিক ভাবে খাওয়াতে না পারলে বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধ দিয়ে থাকে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে শিশুকে কত পরিমান এবং দিনে কতবার বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
আপনার শ্বশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুকের দুধ খাওয়ানোর সংখ্যার হ্রাস পাবে এবং বাচ্চারও দীর্ঘ সময় ঘুমাবে এবং অন্তর্ভুতি কম থাকবে। তবে এক মাসের বাচ্চা গড়ে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে ১২ বার খাবে। যদি আপনার শিশুটি সুখী সক্রিয় এবং সঠিকভাবে ওজন বাড়তে থাকে ভালোভাবে বিকাশ হয় এবং প্রতিদিন পর্যাপ্ত সংখ্যক ডায়াপার নষ্ট করে তাহলে বুঝতে হবে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাচ্ছে।
তবে যদি বাচ্চাই সময় বেশি ঘ্যান ঘ্যানরা প্রচুর চিৎকার কান্নাকাটি করে তাহলে বুঝতে হবে সঠিকভাবে বুকের দুধ পাচ্ছে না। বুকের দুধের পাশাপাশি থাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে।
১ মাসের বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো উচিত কিনা?
সাধারণত মায়ের দুধের বিকল্প কোন কিছুই নেই। মায়ের বুকের দুধে সব ভিটামিন মজুদ থাকে যেসব ভিটামিন বাচ্চার প্রয়োজন হয়। তবে ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ হজম করা বাচ্চাদের জন্য সহজ হয়। কেননা অনেক সময় ফর্মুলা দুধ বাচ্চার পেটে হজম হয় না সুতরাং বারবার পেট খারাপ হতে পারে। ফরমুলা দুধ খেতে থাকা বাচ্চারা বুকের দুধ খাওয়ানোর চেয়ে কম ঘন ঘন খাওয়াতে হবে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর সংখ্যা আরো কমিয়ে দিতে হবে। তবে শিশু কে অতিরিক্ত পরিমাণে ফর্মুলাতে দুধ ঘন ঘন না দেওয়াই উত্তম এ বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নজর রাখতে হবে। কারণ বাচ্চার পক্ষে স্তনের চেয়ে বোতলে পান করা সহজ। এছাড়াও মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে ফর্মুলা দুধের মধ্যে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই অনেকেই বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাইয়ে কেনা দুধ খাওয়াতে চায়।
মূলত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত বাচ্চাকে ফর্মুলা উচিত না। কেননা অনেক বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ বাচ্চার ওজন বয়সের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। তাই বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
আর পড়ুন – ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
নবজাতককে ঢেকুর তুলানো প্রয়োজনীয়তা
সাধারণত জন্মের পর শিশুরা যখন বুকের দুধ খায় অথবা ফর্মুলা দুধ বোতলে খায় তখন তারা খাবারের সাথে বাতাস খেতে পারে। এছাড়া যখন কান্নাকাটি করে তখন তার সাথে বাতাস গিলে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে বুকের দুধ এর চাইতে বোতলে দুধ খাওয়ানোর সময় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই গিলে ফেলা বাতাস তাদের জন্য অস্বস্তিকর হয় তাদের অস্বস্তি কমাতে বোতলের দুধ খাওয়ানোর সময় বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে সবসময় কাঁধে রেখে হালকা পিঠে ঝাঁকে দিতে হবে।
এতে করে শিশুর ঢেকুর উঠবে এবং পেট থেকে বাতাস বের হবে। এক্ষেত্রে শিশুকে উত্তোলনের আগে আপনার কাঁধে অবশ্যই একটি হালকা কাপড় নিয়ে রাখুন এতে করে আপনার জামা কাপড় নোংরা হবে না। ঢেকুর তুলানোর নিয়ম হলো-
- আপনার শিশুর মাথা আপনার কাঁধে রেখে সোজা হয়ে ধরুন এবং আপনার অন্য হাত দিয়ে তাদের পিঠে হালকা চাপ দিন।
- তাদের পেট নামিয়ে আপনার কোলে বিশ্রাম নেবেন এবং তাদের পিঠে আলতো করে হাত ঘোসুন বা চাপ দেন।
- এছাড়াও শিশুকে কোলে বসিয়ে এক হাত দিয়ে তাদের চিবুক এবং বুক ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে তাদের পিঠে ঘষে বা চাপ দিলে শিশু সহজেই ঢেকুর তুলবে।
১ মাসের বাচ্চার ঘুমের সময়সূচী
অনেকেই ভাবতে থাকেন একমাস বাচ্চার বয়সে শিশুর কতটা ঘুমানো উচিত। প্রায় চার সপ্তাহ বয়সের মধ্যে অনেক শিশুর দিনে প্রায় ১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমায়। জন্মের পর শিশুরা প্রথম এক থেকে দুই মাস প্রচুর পরিমাণে ঘুমকাতুরে হয়। যার মধ্যে প্রায় পাঁচটি দিনের ঘুম রয়েছে যাই হোক প্রতিটি শিশুরই ভিন্ন কিছু কিছু শিশু এর থেকে আলাদা হতে পারে।
তবে ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে রাতে দীর্ঘ সময় ঘুমানোর শুরু হতে পারে। যদিও এক মাস বয়সী শিশুর সারারাত ঘুমানো সম্ভব নয়।
বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের খাবার তালিকা
শূন্য থেকে ছয় মাস- এই ছয় মাস শিশুদের জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধে যথেষ্ট। এছাড়া কোন খাবারই তাকে দেয়া যাবে না যে বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ পায় তারা সব ধরনের পুষ্টি বুকের দুধ থেকে পেয়ে যায়। আর যদি কোন বাচ্চাকে দুধ দিতে না পারে তবে সে ক্ষেত্রে ফরমুলা দিয়ে দুধ দেওয়া যেতে পারে।
ছয় থেকে বারো মাস- এ সময়টা বাচ্চাদের বাড়ন্ত সময় সময়। বাচ্চাকে মায়ের দুধ দিতে হবে দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধ দেওয়া যাবে তবে এই সময় আস্তে আস্তে বাচ্চাকে অন্যান্য খাবারের অভ্যস্ত করতে হবে। সেইসাথে বিভিন্ন করাতে হবে প্রথমে খাবার শুরু করতে হবে আয়রন জাতীয় খাবার দিয়ে যা বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশ করতে সহায়তা করে। যেমন- মুরগির কলিজা, মাছ, নরম খিচুড়ি, ডিমের কুসুম, কলা, আপিল পিয়রি ইত্যাদি।
১২ থেকে ২৪ মাস- এসময় বাচ্চার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের খাবার দেওয়া প্রয়োজন। খাবারের সময় ঠিক করার এখনই সময় ৫ থেকে ৭ বার বাচ্চাকে একই সময় খাবার দেন। পরিবারের সবার সাথে তাকে খেতে দেন এবং সকলের জন্য রান্না করা খাবার থেকে বিভিন্ন করা খাবার দিয়ে তাকে অভ্যস্ত করতে থাকুন। এতে করে বাচ্চারা ভালো খাবারের অভ্যাস করতে পারবে।
মাছ মাংস ডিম সহ্য অন্যান্য খাবারগুলোতেও বাচ্চাকে অভ্যস্ত করতে থাকুন। মনে রাখবেন শিশুদের খাবার অবশ্যই মজাদার হতে হবে কারণ তারা খাবারের স্বাদ বোঝে।
বাচ্চা কে কতটুকু ফর্মুলার দুধ দেওয়া উচিত
বাচ্চাকে কতটুকু ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হয় তা নির্দিষ্ট ভাবে বর্ণনা করা আসলে কঠিন। তবে কিছু বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে যেমন-
- বাচ্চার বয়স
- বাচ্চা ওজন
- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় কিনা
- বাচ্চা শক্ত খাবার খায় কিনা ইত্যাদি
নবজাতককে দৈনিক কতটুকু ফর্মুলা দুধ দিতে হয়
বাচ্চা যদি এখনো শক্ত খাবার না খায় অর্থাৎ নবজাতক বাচ্চাদের জন্য প্রত্যেক বাচ্চার প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ মিলি লিটার থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত ফর্মুলা দূর দিতে পারেন। অর্থাৎ বাচ্চা যদি তিন কেজি হয় তাহলে বাচ্চাকে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলি লিটার যেতে পারে। ফর্মুলা দুধ দেওয়া যেতে পারে তবে সব পরিমাণ সব বাচ্চার জন্য সমান হবে না।
বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী এবং বাচ্চা কতটুকু সহ্য করতে পারে তার উপর নির্ভর করেই তাকে ফর্মুলা দূর দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে জন্মের প্রথম দিকে বাচ্চার পেট ছোট থাকে তাই স্বাভাবিকভাবে কম খেতে চাইবে। এছাড়াও বাচ্চাকে খাবারের ক্ষেত্রে জবরদস্তি করা উচিত না। জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে বাচ্চাকে প্রতিবারে ৬0 থেকে ৭0 মিলি ফর্মুলা দিন। এর বেশি দিলে বাচ্চা হজম করতে পারবে না।
দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে প্রতিবারে ৭৫ থেকে ১০৫ মিলি পর্যন্ত দিন। সম্ভবত প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৭৩৫ মিলিম পর্যন্ত খেতে পারবে। দ্বিতীয় মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চা প্রতিবার ১০৫ থেকে ২১০ মিলি লিটার পর্যন্ত প্রতিবারে খেতে পারবে এবং বাচ্চার ছয় মাস থেকে সে প্রতিবারে ২১0 থেকে ২৪০ মিলি পর্যন্ত খেতে পারবে।
প্রতিদিন সে হয়তো ৯০০ মিলে পর্যন্ত খেতে পারে। এ সময় বাচ্চাকে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করার পর তার ফর্মুলা চাহিদা কমতে কমতে ৬00 মিলিতে নেমে আসতে পারে।
বাচ্চাকে কখন ফর্মুলা দেয়া বন্ধ করতে হয়
সাধারণত বাচ্চাকে ছয় মাসের সময় শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করতে হয়। এ সময় শুরুতে সে সব ধরনের খাবার খাবে না তাই সময় ফর্মুলা চালিয়ে যাওয়ার জরুরী। কারণ এতে সে প্রয়োজনে সব পুষ্টিগুণ পাবে। তবে বাচ্চার বয়স এক বছর হলে সে বিভিন্ন খাবারে কম বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাবে তাই তখন ফর্মুলা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এছাড়াও বাচ্চা ছয় মাসের সময় দৈনিক ফর্মুলা খেলে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ ভিটামিন দেওয়া যেতে পারে।
১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- ১ মাসের শিশুর ঠান্ডা হলে করণীয়
- ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতাল শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তালিকা
- শিশুর ওজন কম হলে করনীয়