শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ
শরীরের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার মেনু ফলো করার ফলে শরীরের মেদ বাড়ায়। একবার শরীরে মেদ জমলে তা সহজে কমানো সম্ভব হয় না এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। দ্রুত মেদ কমানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। আজকে আমরা শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব।
আরো পড়ুন – মেয়েদের পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম
কি কি কারণে শরীরে মেদ জমে
শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ কি তা জানার পূর্বে এটা জানা প্রয়োজন শরীরের জমার কারণ কি। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার মেনু ফলো করার ফলে শরীরে মেদ জমে থাকে। তবে মেদ জমার আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে-
- বিভিন্ন ধরনের মদ্যপান করা
- মিষ্টি জাতীয় অথবা চিনি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা
- ডুবো তেলে ভাজা খাবার খাওয়া
- অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পান করা
- বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- নিয়মিত লাল মাংস খাওয়া
- স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ করা
- বসে থাকার কাজ বেশি করা
- ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকা
- অলস লাইফস্টাইল থাকা
- ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ
সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। তবে বাজারে মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং পানীয় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- গ্রিন টি
- হাল্যাক্স ট্যাবলেট
- ফাইটোলাকা বেরী ট্যাবলেট
- ইন্ডিয়ান স্লিম ফার্স্ট ঔষধ
মেদ কমাতে করণীয়
অনেকেরই ধারণা থাকে পেটে মেদ জমলে তার সহজে কমানো যায় না। কিন্তু তা ভুল ধারণা নিয়ন্ত্রিত খাদ্য অভ্যাস এবং সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে শরীরের বাড়তি মেদ বা ভুড়ি কমানো সম্ভব। শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ খাওয়ার পূর্বে শরীরের মেদ কমাতে করণীয় বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
১। গ্রিন টি প্রতিদিন পান করা। কেননা গ্রিন টিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর।
২। দুধ চিনি দিয়ে বেশি চা পানের অভ্যাস বাদ দেওয়া
৩। খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা
৪। লাল চাল লাল আটা তৈরি খাবার খাওয়া
৫। রঙিন শাকসবজি এবং ফলমূল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
৬। আখরোট বাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা ৩ এটি ফ্যাটি এসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭। মিষ্টি খাবারের পরিবর্তে ঝাল খাবার খাওয়া
৮। দারুচিনি আদা গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ দৈনন্দিন খাবারে রান্নায় ব্যবহার করা। এসব মসলা স্বাস্থ্যকর এবং পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
৯। প্রতিদিন সকালে রসুনের কাঁচা তিন থেকে চারকোয়া চুষে খেতে হবে। এই অভ্যাস চালু রাখলে দ্রুত পেটের মেদ এবং ওজন দুটোই কমবে। তাছাড়া কাঁচা রসুন পেটে মেদ জমতে দেয় না।
১০। সকালে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস প্রতিদিন মিশিয়ে পান করতে হবে। এতে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরের জমাট প্রক্রিয়া বাদ হবে।
১১। অতিরিক্ত চিন্তা বাদ দেওয়া। কেননা মানুষের দুশ্চিন্তা কোমর বা পেটের চারপাশে মেদ জমাতে পারে। তাই চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।
১২। খাবারের পরপরই শুয়ে বা বসে না থাকা। তাই খাবার খাওয়ার পর শুয়ে বসে না থেকে ১০ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
১৩। কর্মক্ষেত্রে যাদের চেয়ারে বসে কাজ করতে হয় তাদের সহজেই পেটের মেদ জমে যায়। তাই তাদের উচিত প্রতি আধাঘন্টা বসে কাজ করার পর ১০থেকে ১৫ মিনিট হাটাহাটা করা।
১৪। অতিরিক্ত খাবার একবারে গ্রহণ না করা। ২৪ ঘন্টায় পাঁচ থেকে ছয় বার অল্প অল্প খাবার গ্রহণ করা ৩ বেলা প্রধান খাবার এবং দুই বেলা নাস্তা খাওয়া।
মেদ কমানোর ঘরোয়া টিপস
নিয়ম মত খাবার গ্রহন – ৩ বেলা প্রধান খাবার এবং দুই বেলা নাস্তা জাতীয় খাবার খাওয়া
শরীরের মেদ নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে কমালে খুব একটা সময় লাগে না। শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ এর নাম জানা থাকলেও ঘরোয়া ভাবে মেদ কমানো যায়। এতে কোন সাইড ইফেক্ট থাকে না।
জিরা পানি- প্রতিদিন সকালে পানি হিসেবে জিরা পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। এটি হজমের সহায়তা করে এবং পেটের ফোলা ভাব কমায় এবং মেদ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
লেবু ও গরম পানি- প্রতিদিন সকালে চা বা কফি প্রায় সবাই পান করে থাকে। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবু চিপে পান করতে হবে। সাথে এক চা চামচ মধুও যোগ করা যেতে পারে। লেবু পেটে চর্বি কমতে সহায়তা করে।
শস্য জাতীয় খাবার- শস্যজাতীয় খাবার বা আষ সমৃদ্ধ খাবার শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি খাবারের চাহিদা কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ আশ সমৃদ্ধ শস্য ওজন কমায় এবং পেটের মেদ কমাতেও সহায়তা করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা- শরীরের শক্তি জোগাতে প্রোটিনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই প্রতিদিন নাস্তায় প্রোটিন খাওয়া পেশি গঠনের পাশাপাশি সারাদিন পেট ভরা মনে হয়। ফলে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের ইচ্ছা থাকে না। দেহে চর্বি সঞ্চালনকারী ইনসুলিন এর মাত্রা কমায় প্রোটিন।
মসলা- আদা স্থূলতার সমস্যা কমায়। আদা ওজন কমাতে সাহায্য করে। দারচিনি এলাচ লবঙ্গ ইত্যাদি মসলা জাতীয় প্রতিদিন খাবারে যোগ করা যেতে পারে। এটা দেহের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমানো- মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম বা ধ্যান করা উচিত। মানসিক চাপ চর্বি বৃদ্ধিকারী হরমোন এর করটিসলের মাত্রা বাড়ায়। এর তীব্রতা ক্ষুধা বাড়ায় ও ক্যালোরি বহুল খাবারের চাহিদা বাড়ায় এবং পেটে চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে। তাই মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।
হাঁটাহাঁটি করা- বর্তমানে জিমে গেলে সাধারণত শরীরের চর্বি কমানোর বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে কেউ যদি প্রতিদিন দৈনিক এক থেকে দুই ঘন্টা নিয়ম করে হাটাহাটি করে তাহলে শরীর অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না এবং শরীরের পেশীয় মজবুত থাকে।
পর্যাপ্ত পানি পান করা- শরীরের চর্বি কমানোর জন্য বা ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি হল প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা। নিজেকে আদ্য রাখার পাশাপাশি এটি অস্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা কমায়। খাবারের আগে পানি পান করলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের সম্ভাবনা কম থাকে।
লো ফ্ল্যাট বা ফ্যাট ফ্রি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া- খাবার খাওয়ার আগেই ফ্যাটের পরিমাণ যাচাই করে নিতে হবে। খাবারটি ক্যালোরি বা ফ্যাট কতটুকু রয়েছে। লো ফ্ল্যাট বা ফ্যাট মুক্ত খাবার কে স্বাস্থ্যকর মনে করা হলেও এসব খাবারেও কখনো কখনো অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। চিনি জাতীয় খাবার খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
সাদা চাল বা সাদা আটার বিকল্প খাওয়া- সাদা চাল বা সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান ফেলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সাদাটা এবং সাদা চাল খাওয়ার সাথে মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। তাই লাল আটা এবং লাল চাল খাওয়া প্রয়োজন।
অস্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন বদলে ফেলা- গবেষণায় দেখা গেছে সঠিক পরিমাণ ঘুমের অভাবের সাথে ওজন বেড়ে যাবার একটি সম্পর্ক রয়েছে। রাত জাগলে কিছু না কিছু খাওয়া হয় তাই শরীরের ক্যালরি বাড়ে। ঘুমিয়ে থাকলে সে অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া হয় না। এছাড়া ও রাত জাগা শরীরের স্টেজ বাড়ায় যা মেদ বাড়ানোর জন্য ভূমিকা পালন করে।
অতিরিক্ত না খাওয়া- শরীরের মেদ জমার অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত খাওয়া। তাই শরীরের মেদ দূর করতে হলে প্রথমে অতিরিক্ত বা সৌজন্যবোধ খাওয়া খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।কারন এই অভ্যাসগুলো ওজন বাড়িয়ে মেদ শরীরে জমানোর পেছনে ভূমিকা পালন করে।
কোন বেলার খাবার বাদ না দেওয়া- অনেকেই শরীরের মেদ কমানোর জন্য এক বেলার খাবার বাদ দিয়ে অন্য বেলা খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করে। এতে একবেলা খাবার খাওয়া বাদ দিলে ওপর বেলায় বেশি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ কারণে পেটে মেদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ধীরে ধীরে খাওয়া- পেটের মেদ কমাতে অবশ্যই ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত। তাড়াহুড়া করে খেলে খাওয়া ঠিকভাবে হজম হয় না ফলে এতে চর্বি বা ফ্যাটের পরিমাণ পেটে বসে যায়। যার ফলে শরীরে চর্বি বা ভুড়ির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই খাবার ধীরে ধীরে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া উচিত।
মেদ কমানোর খাবার
পেটের মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন খাবারের ভূমিকা অপরিসীম।শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ এর নাম জানার পূর্বে মেদ কমানোর খাবারের তালিকা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
- মটরশুটি
- সবুজ শাকসবজি
- লাল আটার রুটি
- লাল চাল
- তরমুজ
- কাজুবাদাম
- শসা
- লেবু মধু
- গরম পানি
- আদা পানি
- জিরা পানি
- গ্রিন টি
- দারচিনি এলাচ লবঙ্গ
- অ্যাভোকাডো
- জব বা জই
- পানি
- আপেল
- প্রিপারমেন্ট
মেদ কমানোর ব্যায়াম
মেদ কমানোর জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম চালু হয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় কোন একটি ভালো জিমে ভর্তি হয়ে ট্রেইনারের সাথে আলোচনা করে ব্যায়াম করলে।
- সাঁতার কাটা
- সাইকেল চালানো
- পালাটেজ
- নিয়মিত হাটা
- পুশ আপ
- ইয়োগা
ডাক্তারের পরামর্শ
শরীরের বিভিন্ন অংশের মেদ কমার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম অথবা ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয়। তাই না জেনে ভুলভাল ব্যায়াম বা ডায়েট করা উচিত নয়। একজন পুষ্টিবিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমেই নিজের ডায়েট চার্ট ঠিক করে নেওয়া উচিত। তাহলে খুব সহজে স্বাস্থ্যকর ভাবে শরীরের মেদ কমানো সম্ভব হবে।শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত।
মন্তব্য
আজকে আমরা শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ ও সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি সবার অনেক কাজে লাগবে।শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- মেয়েদের পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম
- সেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তালিকা সিলেট
- কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় ও ক্রিম এর নাম