বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কে অনেকে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। মূলত মুসলিম বা হিন্দুদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করে বিয়ে করলে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি আদায় করতে হয়। আজকে আমরা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩ কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব।
আশা করছি সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩ কত ?
দেশে ২০২২ সালের একুশে ডিসেম্বর বিবাহ এবং তালাকের ফি বাড়ানো হয়েছে বলে সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে মুসলিম মেরাজেস এন্ড ডিভোর্সেস ১৯৭৪ ক্ষমতায় তারা বিভিন্ন নীতিমালা সংশোধন করে ২৯ ডিসেম্বর প্রজ্ঞা জারি হয় এবং নতুন বছর হতে সংশোধনের কার্যকর করা হয়েছে।
বিবাহ তালাক সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী একজন নিকাহ রেজিস্টার পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি ১000 টাকা দেনমোহরের বা এর অংশবিশেষ এর জন্য ১৪ টাকা হারে বিবাহ নিবন্ধন আদায় করতে পারবেন। পূর্বে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজারে ১২ টাকা দেনমোহর বা এর অংশবিশেষের জন্য ১২ টাকা ৫০ পয়সা হারে বিবাহ নিবন্ধন ফি আদায় করতে হতো।
প্রতি ১ হাজারে ১.৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আবার এই বিধিমালা অনুযায়ী দেনমোহরের পরিমাণ যদি পাঁচ লাখ টাকায় বেশি হয় তাহলে পরবর্তী প্রতি এক লাখ টাকা দেনমোহরের জন্য ১০০ টাকা বিবাহ ফি আদায় করে নিতে পারবেন। তবে দেনমোহরের পরিমাণ বর্তমানে যাই হোক সেই সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় হয়ে থাকে।
কাজী অফিসের বিভিন্ন ধরনের ফি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ইং মোতাবেক মুসলিম বিবাহ তালাক নিবন্ধনের বর্তমান ফি এর অংশ হল বিবাহের প্রতি ১000 বা তার অংশ বিশেষের জন্য ১৪ টাকা ফি দিতে হয়।
দেনমোহরের সর্বনিম্ন অংশের ফি ২০০ টাকা দেনমোহরে পাঁচ লক্ষের অধিক হলে পরবর্তী প্রতি লক্ষ বা অংশ বিশেষের জন্য ১০০ টাকা, তালাক নিবন্ধন ফি এর জন্য ১০০০ টাকা বিবাহ ও তালাকের জন্য কমিশন ফি ৫০ টাকা কমিশনে যাতায়াত বাবদ প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা বহি তল্লাশি ফি ১0 টাকা প্রাপ্তি ফি ৫০ টাকা।
কাজী অফিসে বিয়ে করার নিয়ম
এখন আমরা জানব কিভাবে কাজী অফিসে বিয়ে করে। কাজী অফিসে বিয়ে করতে হলে প্রথমে আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার কিংবা যাকে বিয়ে করবেন অর্থাৎ বর বা কোণে দুই জনের বয়স আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হয়েছে কিনা।
বাংলাদেশের আইনে ছেলে মেয়ে উভয়ের বিয়ের বয়স নির্ধারিত আছে। বিয়ের বয়স অবশ্যই মেয়ের জন্য ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর হতে হবে। এছাড়াও চাইলে নিজের বন্ধু বান্ধব পরিচিত কাউকে অভিভাবক বানানোর মাধ্যমে কাজী অফিসে সহজেই বিয়ে করা যায়।
কাজী অফিসে বিয়ে করতে যা যা লাগবে
কাজী অফিসে বিয়ে করতে কি কি লাগবে তা জানব-
- আপনার বয়স
- নির্ধারিত বয়সের বেশি বা সমান হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলে নিয়ে যেতে হবে
- জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে এসএসসি পাশ নিবন্ধনপত্র সাথে নিয়ে গেলেই হবে
- ছেলে অথবা মেয়ে দুজনেরই দুই কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে এছাড়া বিয়ের সম্ভব হবে না
- বিয়ের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ দুজন মহিলা সাক্ষী থাকতে হবে
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে কাজীর দায়িত্ব
মুসলিম বিবাহ এবং তালাক রেজিস্ট্রেশন বিধিমালাতে রেজিস্ট্রি করার আগে কাজির কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ বিয়ের সব শর্ত পূরণ হচ্ছে কিনা তা দেখবেন। বিয়েতে ছেলে এবং মেয়ের পূর্ণ মতামত রয়েছে কিনা। উপযুক্ত সাক্ষি উপস্থিত থাকবে কি না সে সম্পর্কে দেখবেন।
কাজির কাজ হল বিবাহ ফর্ম পূরণ করা। মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য কাজি দায়ী থাকবে। সব তথ্য সত্যতা খুঁজে নেওয়া কাজির পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।
মুসলমানদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন
মুসলমানরা বিবাহ এবং তালাক আইরনের ১৭৪ মোতাবেক অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করন বিবাহের দিন বা কোন কারনে তা সম্ভব না হলে বিবাহের ৩০ দিনের মধ্যেই নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। মুসলমানদের ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকের ব্যবহার নিবন্ধন করবেন।
যে কাগজে বিবাহ নিবন্ধন করা হয় তাই কাবিননামা বা নিকাহ নামা নামে পরিচিত। কাবিন এ যা যা থাকবে তা হলো বিবাহ এবং বিবাহ নিবন্ধন তারিখ, স্বামী এবং স্ত্রীর নাম, ব্যক্তিগত পরিচয়, বয়স, বিবাহের সাক্ষীদের নাম পরিচয়, বিবাহ দেন মোহরের পরিমাণ, নগদ এবং বাকির পরিমাণ কাজির স্বাক্ষর ইত্যাদি।
নিবন্ধনের সময় কাজি যাচাই করবেন স্বামীর বয়স কমপক্ষে একুশ এবং স্ত্রীর বয়স কমপক্ষে ১৮ হয়েছে কিনা। বিবাহে স্বামী এবং স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি রয়েছে কিনা। বিয়ের সাক্ষীরা উপস্থিত কিনা এবং দেনমোহরের পরিমাণ যথাযোগ্য কিনা বা তা কত আদায় করা হয়েছে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরে বিবাহবন্ধনে নিবন্ধন করা হয়।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করলে শাস্তির বিধান
সাধারণত মুসলমানদের আইন অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধন না করলে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ধরা হয়। বর্তমান সময়ে বিবাহ নিবন্ধন না করলে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে। তাই সরকার প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতিদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন অতি শীঘ্রই করার জন্য আইন এর ব্যবস্থা করেছেন।
বিয়ের কত দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা যায়
বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিয়ের দিন রেজিস্ট্রি করা সব থেকে উপযুক্ত সময়। এতে করে পরবর্তীতে কোন বাড়তি ঝামেলা হয় না। তবে আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের দিন অথবা বিয়ের ৩০ দিনের মাঝে রেজিস্ট্রি করা যায়। বিয়ের দিন কোন কারনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ না হলে তার পরবর্তী সময়ে কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি আর করা হয়ে ওঠে না।
তাই যখনই বিয়ে পড়ানো হয় সেই সাথে সাথে রেজিস্ট্রি করে ফেলাই উত্তম।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা
যেহেতু বিইয়ের একমাত্র লিখিত প্রমাণ বা ডকুমেন্ট হচ্ছে এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিকাহনামা। সেহেতু বিয়ে সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমনও হতে পারে যে বিয়ে বৈধ না অবৈধভাবে কোন সন্দেহ পরবর্তী সংসার জীবনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সে ক্ষেত্রে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন কাজ করে। তাছাড়া বিয়ের পরবর্তী সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন স্ত্রী এবং সন্তানকে কোন কারণ ছাড়া ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী বিনা অনুমতি আরেকটি বিয়ে করলে বা স্ত্রীকে তালাক দিলে দেনমোহর থেকে বঞ্চিত করলে প্রতারণা করে বিবাহিত থাকা অবস্থায় আর কাউকে বিয়ে করলে এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতে মামলা করতে চাইলে প্রথমে বিয়ের প্রমাণ হিসেবে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিকাহ নামা আদালতে জমা দিতে হয়।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম
বিয়ের পর অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করা বাধ্যতামূলক। সকল ধর্মের মানুষদের জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশনে আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। বিবাহের সময় অনেকে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকে গুরুত্ব দেন না। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করবেন ভাবেন কিন্তু পরবর্তীতে বিয়ে করার কোন প্রমাণ বা দলিল না থাকলে অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
নিজের সচেতনতার জন্য এবং নিজের ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই বিবাহ নিবন্ধন প্রয়োজন। বিয়ের পরপরই আপনার বিয়ের রেজিস্টার রেজিস্ট্রেশন করেছেন তার কাছ থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে বিবাহের নিবন্ধন করে নিতে হবে।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর
কিভাবে আমি আমার বিয়ের সার্টিফিকেট পেতে পারি?
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল বিবাহের জন্য উপযুক্ত বিবাহ নিবন্ধকে কাছে বিবাহ নিবন্ধন প্রয়োজন। মুসলিম বিবাহের জন্য আবেদনকারীকে কাজী অফিসে বা রেজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
বিবাহ নিবন্ধন সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হব কিভাবে?
আপনি আপনার আইডি নম্বর এরপরে থ্রি টু ফাইভ ফাইভ ওয়ান নম্বরে ম অক্ষরটি এসএমএস করুন। পরবর্তীতে এসএমএসে আপনাকে আপনার বৈবাহিক অবস্থা এবং বিয়ের তারিখ সম্পর্কে তথ্য দেয়া হবে।
বাংলাদেশের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি কত?
যেকোনো পরিমাণ সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। প্রতি হাজারে ১২.৫০% ফি আদায় করতে হবে এবং দেনমোহর চার লক্ষ টাকার উর্ধ্বে হলে প্রতি লাখে অতিরিক্ত ১০০ টাকা আদায় করতে হয়।
বাংলাদেশে কি কোর্ট ম্যারেজ বৈধ?
১৮৭২ সালে বিবাহ নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজ বৈধ ২০২২ সালে কার্যকর করা হয়।
বিবাহের জন্য পাসপোর্ট এর প্রয়োজন আছে?
না বিয়ের জন্য পাসপোর্ট এর কোন প্রয়োজনই নেই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়
বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হতে কত দিন সময় লাগে?
বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হতে প্রায় ৩০ দিন এর মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হয়। দুই থেকে তিন মাসের ভেতর আপনি আপনার নিবন্ধন পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩
আজকে আমরা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্ক কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- শুভ বিবাহ বার্ষিকী স্ট্যাটাস বাংলা ফেসবুক ক্যাপশন
- সেরা ফটো ক্যাপশন, প্রোফাইল পিক ক্যাপশন
- নারীদের কবরের আজাব কেন বেশি হবে?