দলিল তল্লাশি অনলাইনে, দলিল অনুসন্ধান 2023

দলিল তল্লাশি অনলাইনে

তল্লাশি মানে খোঁজাখুঁজি করা। যখন একটি দলিল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়। তখন তা অনুমোদন হলে বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তাই অনেকেই দলিল তল্লাশি অনলাইনে করা যায় কিনা বা দলিল অনুসন্ধান করার নিয়ম কি পুরাতন দলিল তল্লাশি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনলাইনে সার্চ করে থাকেন।

আজকে আমরা তাদের জন্যই দলিল তল্লাশি অনলাইনে করার নিয়ম পুরাতন দলিল তল্লাশি করার নিয়ম এবং জমির দলিল তল্লাশি কি এবং কেন প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

জমির দলের তল্লাশি কি?

দলিল তল্লাশি অনলাইনে

তল্লাশি অর্থ খোঁজাখুঁজি করা যখন একটি দলিল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয় তখন তা অনুমোদন দেয়া হলে বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। এরপর দলিল দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে দুটি সূচি তৈরি করা হয়। একটি সূচি তৈরি করতে হয় দাতা বা গ্রহীতার নাম বা বাবার নাম দিয়ে।

আরেকটি সূচি তৈরি করা হয় জমির মৌজা এর নাম দিয়ে অফিসিয়াল এই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য একটি দলিল সম্পাদন হওয়ার পর তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেজিস্ট্রি অফিসে জমা থাকে। এই নির্দৃষ্ট সময় পর গ্রহীতা কে দলিল প্রদান করা হয়। এই দলিল যখন কেউ হারিয়ে ফেলে কিংবা কোনভাবে নষ্ট হয়ে যায় তখন তার সার্টিফাইড কপি প্রয়োজন হয়।

তখনই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে সেই দলিলের সার্টিফাইড কপি ও সংগ্রহ করা যায়।

জমির তল্লাশি প্রয়োজন হয় কেন?

অনেকের নিজের জমি তল্লাশি প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ২০ বছর আগে একটি দলিল আপনার সংগ্রহে ছিল কিন্তু কোন কারণে সেটি নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা দলিলটি হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি দলিল নাম্বার কিংবা অন্যান্য তথ্য আপনার জানা নেই। এমতাবস্থায় কোন আইনি জটিলতার কারণে কিংবা মামলা মোকাদামার কারণে দলিলটি জরুরি প্রয়োজন হতে পারে।

তখন তল্লাশি ছাড়া বিকল্প পদ্ধতিতে জমিন নকল তোলা যায় না অর্থাৎ কাঙ্খিত দলিল খুঁজে পেতে হলে তল্লাশি করতে হবে।

দলিল তল্লাশি অনলাইনে করার নিয়ম

দলিল তল্লাশি অনলাইনে করা যায় কিনা তা আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই জানতে চায়। বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা গেলেও সব কাজ অনলাইনে করা সম্ভব হয় না। তার মধ্যে অন্যতম হল অনলাইনে করা যায় না। কেননা জমির দলিল তল্লাশি করার জন্য বিভিন্ন প্রসেসে কাজ করতে হয় সেজন্য আপনাকে সরাসরি রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে।

আর সেখানে আপনার জমি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করতে হবে। সেই সাথে ওই জমি তল্লাশি করার জন্য আপনাকে নির্ধারিত পরিমান ফি প্রদান করতে হবে এবং তারা বিভিন্ন প্রসেস আপনার দলিল তল্লাশি করবে। কিন্তু ঘরে বসে আপনি নিজে নিজে জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন না। বর্তমানে অনেকগুলো ওয়েবসাইট জমির দলিল অনলাইনে তল্লাশি করার নিয়ম দেখাবে মূলত সেগুলো কোন কাজে আসবে না।

দলিল তল্লাশি করার নিয়ম

জমির দলিল তল্লাশি কি এবং কেন করা হয় তা আমরা উপরে জানলাম। এখন আমরা জানবো জমির অনলাইনে দলিল তল্লাশি করার নিয়ম কি। যখন আপনি কোন জমির তল্লাশি করতে যাবেন তখন আপনার দলিল তল্লাশি মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যাবে। অর্থাৎ আপনি দুইভাবে অনলাইনে জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন। সেগুলো হল-

১। যাদের কাছে মূল দলিল আছে

২। যার কাছে কোন দলিল নেই

জমির তল্লাশি করার এ দুটি নিয়ম রয়েছে। নিচে আমরা আপনার কাছে জমির থাকলে কিভাবে তল্লাশি করবেন এবং জমির দলিল না থাকলে কিভাবে জমি দলিল তলাশী করবেন সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব।

জমির দলিল থাকলে দলিল তল্লাশি করার নিয়ম (আসল দলিল থাকলে)

যখন আপনার কাছে জমির আসল দলিল থাকবে তখন সেই জমির দলিল তল্লাশি করতে চাইলে প্রথমে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে আপনাকে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার পর আপনার দলিল তলাশী করার জন্য বেশ কিছু তথ্য দিতে হবে।

যেমন- আপনার দলিলটি কত সালে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। সেই দলিলের বালাম বইয়ের মধ্যে কত নম্বর পৃষ্ঠার মধ্যে আছে। আর কত পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে। যখন আপনি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে এই তথ্যগুলো প্রদান করবেন তখন রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে যে কাগজের মধ্যেই তথ্য গুলো প্রদান করবেন সেখানে অবশ্যই রেজিস্টরের স্বাক্ষর দিতে হবে।

এই তথ্যগুলা আপনি তখনই রেজিস্টার অফিসে গিয়ে দিতে পারবেন যখন আপনার কাছে জমির আসল দলিল থাকবে। যদি কোন ধরনের দলিল না থাকে তাহলে তথ্যগুলো দেওয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। নিচে সেটা উল্লেখ করা হলো।

জমির দলিল না থাকলে দলিল তল্লাশি করার নিয়ম (আসল দলিল না থাকলে)

উপরের আলোচনাতে যে পদ্ধতি গুলো দেখানো হয়েছে সেখানে আপনি জমির তল্লাশি অনলাইনে কিভাবে করবেন তা দেখানো হয়েছে যদি আপনার কাছে জমির দলিল থাকে তাহলে। কিন্তু যদি আপনার কাছে কোন দলিল না থাকে তখন আপনি কিভাবে জমির দলিল তল্লাশি করবেন তখন আমরা সেটাই আলোচনা করব।

জমির দলিল না থাকলে দলিল তল্লাশি করার জন্য প্রথমেই আপনাকে রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে এবং সেখানে সেই জমি বিক্রেতা গ্রহীতা বা ক্রেতা বা অন্য কোন পক্ষের নাম দিতে হবে। এছাড়াও আপনাকে উক্ত জমির মৌজা নাম্বার প্রদান করতে হবে। এছাড়াও জমির দলের তল্লাশি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়।

আপনাকে অবশ্যই দলিল তল্লাশি করার আগে উক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে।

দলিল তল্লাশি করার জন্য ফি কত?

দলিল তলাশি করার জন্য কত টাকা ফি দিতে হবে সেটা সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। জমির দলিল তল্লাশি এর পরিমাণ কত টাকা হবে সেটা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। যেমন আপনি যদি এক বছরের জন্য সূচিবই তল্লাশি করতে চান তাহলে আপনাকে ২০ টাকা ফি দিতে হবে।

কিন্তু আপনার সূচি বই তল্লাশি সময়সীমা যদি এক বছরের বেশি হয় তাহলে আপনাকে প্রথম বছরের জন্য ২০ টাকা এবং পরবর্তী বছরগুলোর জন্য আপনাকে ১৫ টাকা করে দিতে হবে। যখনই আপনি সূচি বই তল্লাশি করবেন তখন আপনার সর্বোচ্চ ফি এর পরিমাণ হবে ১৫০ টাকা অর্থাৎ আপনাকে এর বেশি টাকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

আবার সূচি বইয়ের মধ্যে আপনার দলিল যখন খুঁজে পাবেন তখন আপনাকে আরো কিছু ফি দিতে হবে। যেমন বালাম বই তল্লাশি করার জন্য আপনাকে মোট ১0 টাকা ফি দিতে হবে এবং একই সাথে আপনাকে ২০ টাকা কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। নকল দলিল ফি  ৫০ টাকার স্ট্যাম্পের মধ্যে লিখতে হবে।

এর এর পাশাপাশি আপনাকে জিএফি নামক একটি ফি দিতে হবে। যেখানে প্রতি পাতার জন্য আপনাকে ১৬ টাকা করে ফি দিতে হবে। এছাড়াও জিজিপি এর জন্য প্রতি দলিলে পাতার জন্য আপনাকে ২৪ টাকা করে দিতে হবে এবং যদি দলিলটি জরুরি ভাবে নিতে চান তাহলে আপনাকে জেবিসি এর জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হবে।

আর যদি আপনার দলিলটি চার পাতার বেশি হয় তাহলে আপনাকে প্রতি পাতার জন্য পনেরো টাকা করে দিতে হবে। তবে সত্যিকার অর্থে বর্তমানে যারা আপনাকে দলিল লেখার জন্য লেখক হিসেবে থাকবেন। তারা আপনার দলিল লেখার বিনিময় এর থেকে অনেক বেশি টাকা চার্জ করবে।

সে ক্ষেত্রে আপনার এক থেকে দুই হাজার বা তারও বেশি টাকা দলিল লিখার জন্য দিতে হবে।

জমির জমির দলিল তল্লাশি করা বৈধ নাকি অবৈধ?

জমির যে কোন ধরনের কাজ করলে তখন সে কাজটি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নাকি অবশ্যই প্রথমে জেনে নিতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে কোন ঝামেলায় না পড়েন। জমি রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৬২ ধারা অনুযায়ী কোন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিধান মেনে লিপিবদ্ধ বহি নকল করতে পারবে।

এছাড়াও সে আইনের ৫৭ ধারার মধ্যে উল্লেখ আছে যে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করার পর আবেদনকারী ৩ নং বহি লিপিবদ্ধ করতে পারবে। আর প্রয়োজন বোধহয় সেই ব্যক্তি ৩ নং গ্রহের সূচিপত্র বইও নকল করতে পারবে। এই নিয়মগুলোর পাশাপাশি উক্ত আইনের ৫৭ তম ধারাতে আরো বেশ কিছু আইনের কোথাও উল্লেখ রয়েছে।

যেমন ৫৭ ধারাতে উল্লেখ করা আছে সাবরেজিস্টারের মাধ্যমে ৩ নং এবং ৪ নং বহিঃ এর মধ্যে লিখিত বিষয়গুলো তল্লাশি করার মত বিধান রয়েছে। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে একজন ব্যক্তি ইচ্ছাগুলো যে কোন বছরের দলিল তল্লাশি করতে পারবে।

 দলিলের নকল কোথায় পাওয়া যায়?

বিভিন্ন সময় জমির নকল দলিল সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় তবে কোথায় বা কিভাবে আমরা জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে পারব সেটা আমরা জানি না। নিচের দেখানোর পদ্ধতি অনুসরণ করে জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন। যেমন জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে হলে সর্বপ্রথম আপনার নিকট অবশ্যই মূল দলিলের কপি থাকতে হবে।

আর যদি আপনার নিকট মূল দলিল থাকে তাহলে আপনাকে সবার প্রথমে রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে এবং আপনার মূল দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হওয়ার সময় সেই মূল দলিলের শেষ পৃষ্ঠার উল্টো দিকে উক্ত দলিলটি কত সালের কত নম্বর বালাম বইয়ের কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে যাবতীয় বিষয়গুলো দেখতে পারবেন।

এই বিষয়ে অবশ্যই সাব রেজিস্টার কর্তৃক স্বাক্ষর করা থাকবে। আর এই তথ্য গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের নকল উঠাতে পারবেন।

দলিল তল্লাশি অনলাইনে

দলিল তল্লাশি অনলাইনে

আজকে আমরা দলিল তল্লাশি অনলাইনে চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে।আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং দলিল তল্লাশি অনলাইনে আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply