ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো
গরমে কমবেশি সবারই ঘামাচি বা হিট রাশের সমস্যা হয়ে থাকে। যাদের শরীর বেশি ঘামে তাদের ঘামাচির সমস্যা খুব বেশি হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বাজারে ঘামাচি দূর করার এবং ঘামাচি থেকে দূরে থাকার বিভিন্ন ধরনের ঘামাচি পাউডার পাওয়া যায়। আজকে আমরা ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো এবং ঘামাচি পাউডার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের ঘামাচি পাউডার নাম
ঘামাচি কি?
সাধারণত গরমের সময় অতিরিক্ত ঘামের ফলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে শরীরে রেশের মতো লাল লাল ছিটে ছিটে ছোট ছোট দানা দেখা যায়। এগুলোকে ঘামাচি বা হিট রেশ বলা হয়ে থাকে। যা শরীরে প্রচুর পরিমাণে চুলকায় এবং ত্বক প্রচুর পরিমাণে জ্বালা করে। সাধারণত অতিরিক্ত ঘামের কারণে এই ঘামাচি হয়ে থাকে।
ঘামাচি হবার কারণ
অধিক ঘামের কারণে ঘামাচি দেখা দিতে পারে। সাধারণত অধিক ঘামের কারণে ত্বকের লোম ছিদ্র গুলো বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে ঘাম বের হতে পারে না। যার ফলে ও সেখান থেকে ঘামাচির সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের লোম ছিদ্র ছোট হয় তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অতি নাজুক হয়ে থাকে তাই ঘামাচিও খুব বেশি হয়ে থাকে এবং জ্বালা পোড়া চুলকানিও বেশি হয়ে থাকে।
গরমে সবচেয়ে ভালো ঘামাচি পাউডার
মিল্লাত ঘামাচি পাউডার
অনেক আগে থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যে পাউডারটি ব্যবহার হয়ে থাকে তা হল মিল্লাত ঘামাচি পাউডার। গরমের সময় এটি ছোট বড় সবার জন্য খুবই কার্যকরী পাউডার। এই পাউডার ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের গরম কিছুটা হলেও কমে যায় এবং ঘামাচি কমে যায়। শরীর ঘেমে গেলে ঘাম মুছে এই পাউডারটি ব্যবহার করলে সহজে ঘামাচি দূর হয়ে যায়।
তিব্বত ঘামাচি পাউডার
বাংলাদেশের যে কয়টি কোম্পানি খুব ভালো প্রোডাক্ট সেবা দিয়ে যাচ্ছে যাদের মধ্যে তিব্বত অন্যতম। তিব্বতের পাউডার সহ বিভিন্ন পণ্য বাজারে পাওয়া যায় তবে তিব্বত ঘামাচি পাউডার বাজারে খুবই প্রসিদ্ধ। বিক্রেতাদের পছন্দের তালিকা শীর্ষে রয়েছে তিব্বত ঘামাচি পাউডার। যা খুব সহজে ঘামাছি দূর করে এবং ঘামাচি জ্বালাপোড়া কমিয়ে দেয়।
আইস কুল পাউডার
বর্তমানে বাজারে আইস কুল পাউডার গরম কে কমানোর জন্য খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বরফের ঠান্ডা আভাস যা শরীরকে ঘাম মুক্ত করে এবং ঘামাচি থেকে মুক্তি দেয়। আইস কুল ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে কেননা এটি শরীরে মুখ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গে দিতে হবে চোখে পড়লে চোখ জ্বালাতন করতে পারে।
ডার্মিকুল পাউডার
ডার্মি কুল ঘামাচি পাউডার ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই শরীরে বিভিন্ন জায়গার ঘামাচি দূর হয় এবং গরমে সময় শরীরে হালকা লাল রঙের র্যাশ দেখা যায় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডার্মিকুলে রয়েছে বরফের ঠান্ডা ঠান্ডা বিভিন্ন উপাদান যা শরীরকে খুব সহজেই গরম থেকে মুক্তি দেয় এবং ঘামাচি দূর করে।
মেরিল পাউডার
বর্তমানে বাজারে মেরিল ব্র্যান্ড টি আমাদের অতি পরিচিত একটি ব্র্যান্ড। অনেক আগ থেকে এ্টি বাজারে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে আসছে। এই ব্র্যান্ডের পাউডার অনেক উন্নত মানের হয়। মেযরিলের বেবি পাউডার ছাড়াও বড়দের পাউডার পাওয়া যায় সেটা ব্যবহারে খুব তাড়াতাড়ি ঘামাচি দূর হয়ে যায়।
সাবধানতা
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাউডার পাওয়া যায়। এর মধ্য সবগুলো ব্র্যান্ড বা পণ্য একদমই ভালো নয় অনেকেই কম দামে পাউডার কিনতে যায় যেগুলোর মান একদমই নিচু হয়। এসব পণ্য ব্যবহার করলে রোদ ধুলাবালি এসব থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে না। এছাড়াও স্কিনের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং ঘামাচি চুলকানি বেড়ে যেতে পারে।
তাই পাউডার কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ডের এবং যে ব্যান্ডের ভ্যালু আছে সেটাই ব্যবহার করা উচিত।
ঘামাচি পাউডার এর দাম
মেরিল পাউডার- ১০০ গ্রাম ৮৫ টাকা
হিমালয়া প্রিক্লি হিট পাউডার- ১০০গ্রাম ১২১ টাকা
মিল্লাত ঘামাচি পাউডার- ১০০ গ্রাম ৭০ টাকা
মিল্লাত কুলকুল পিকলি হিট প্রাইস- ১০০ গ্রাম ৫০ টাকা
মুলতানি মাটি পাউডার- ৯০ টাকা
ব্যানানা পাউডার- ২২৮ টাকা
আইস কুল পাউডার- ১০০ গ্রাম ৬০ টাকা
তিব্বত ঘামাচি পাউডার- ১০০ গ্রাম ৬৫ টাকা
ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
গোলাপজল- গোলাপ জলের সঙ্গে চার চামচ মধু এবং সামান্য পরিমাণ সাধারণ পানি মিশিয়ে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে বরফ জমিয়ে নিতে হবে। এরপর বরফকে নরম কাপড়ের জড়িয়ে ঘামাচির উপর হালকা করে বুলিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এটি বেশি দেওয়া যাবে না কেননা বেশি দিলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
কাঁচা আলু- কাঁচা আলু ঘামাচি তাড়ানোর অব্যর্থ ওষধ। আলু খুব পাতলা করে গোল গোল চাকার মতো কেটে নিতে হবে। ঘামাচি জায়গার উপর আলুগুলো আলতো করে চাপিয়ে দিতে হবে এ অবস্থায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে ঠান্ডা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ঘামাচি নির্মূল হয়ে যাবে। আলু চুলকানি মাত্রা কমায়। তাই ঘামাচির কষ্ট কমে যাবে।
বরফ– খুব ছোট বাচ্চাদের এটি না দেওয়াই উত্তম। তবে অন্যান্যদেরও খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। দুই থেকে তিনটি বরফের চাক তোয়ালে এর মধ্যে রেখে জড়িয়ে নিতে হবে। ঠান্ডা তোইয়আলে ঘামাচির জায়গায় আলতো করে বোলাতে হবে। শরীরে দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। বরফ আরামদায় এবং ধর্মগ্রন্থের অস্বস্তি কমে যায়।
লেবুর রস- নিয়মিত লেবুর রস পান করলে ১২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ঘামাচির যন্ত্রণা কমে যায়। তাছাড়াও একটি লেবুর রস সাথে এক গ্লাস জল নিয়ে অল্প মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করাতে হবে।লেবু গরমে কম ঘাম হতে সাহায্য করে।
নিমের পেস্ট- ত্বকের হাজারো সমস্যা সমাধান হলো এই নিম। ঘামাচি বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যার জন্য নিমের পেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতা হালকা শুকিয়ে নিতে হবে তারপর সেগুলো থেঁতো করে জল মিশিয়ে একটি পেস্ট বানাতে হবে। ঘামাচির জায়গায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পেস্ট্টা লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ধুয়ে ফেললে যে কোন বয়সের মানুষের ঘামাচির জন্য এটা খুব ভালো কাজ করবে।
নারিকেল তেল- নারিকেল তেল জলীয় ভাব ধরে রাখতে খুবই সাহায্য করে। তাছাড়া চুলকানি কমাতে বা জ্বালাপোড়া কমাতে এর জুড়ি নেই। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘামাচির জায়গায় খুব অল্প পরিমাণ নারিকেল তেলের প্রলেপ লাগিয়ে দিতে হবে। সকালে নরম শুকনা কাপড় দিয়ে হালকা করে মুছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে মাথায় সুগন্ধযুক্ত যে তেল দেওয়া হয় সেটা ব্যবহার না করাই ভালো।
ঘামাচি হলে করণীয়
- ঘামাচি জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই সাধারণত ঘরোয়া ভাবে যত্ন নিলে বা পাউডার ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালোভাবে পরের দিন সকালে শরীর পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- বাজারে ঘামাচি প্রতিকারে বিভিন্ন সাবান লোশন বা পাউডার পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়
- তবে অবৈজ্ঞানিক উপায় ঘামাচির চিকিৎসা নিলে সাধারণ সমস্যা থেকে নানা ধরনের জোটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
- সম্ভব হলে দিনে দুইবার গোসল করতে হবে
- গোসল করার সময় অবশ্যই কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে হবে
- ঘামাচি বেশি থাকলে বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না
- ঘামাচি হলে নখ দিয়ে চুলকানো থেকে দূরে থাকতে হবে
- গোসলের পানিতে কোন অ্যান্টিসেপটিক লোশন ব্যবহার করতে হবে
- তাছাড়া গোসলে পানিতে লেবুর রস নিম পাতার রস মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতেও শরীর ফ্রেশ থাকবে এবং জীবাণু কম হবে
- শরীর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- গরমে হালকা রঙের ঢিলে ঠেলা পোশাক পরতে হবে
- বেশি গাঢ় বা টাইট পোশাক পরলে ঘামাচি সমস্যা বেড়ে যায়
- গরম পানিতে এক কাপ ওটস মিল ভিজিয়ে রাখুন তা ঠান্ডা হলে পেস্ট করে ঘামাচির স্থানে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে ঘামাচি দূর হয়ে যাবে
- বেকিং সোডা ব্যবহারে ঘামাচির চুলকানি কমাতে সাহায্য করে
- গোসলের পানিতে তিন থেকে পাঁচ টেবিল বেকিং সোডা মিশিয়ে বিশ মিনিট গায়ে ব্যবহার করলে কমে যাবে
- প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার এই গরমে খেতে হবে
- সব সময় ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে
- শরীর বেশি না ঘামায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
- অতিরিক্ত ঘামালে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে
চিকিৎসকের পরামর্শ
অনেক সময় ঘামাচিতে লাল লাল ভাব দেখা যায়। র্যাশ বা ঘা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই তাড়াতাড়ি নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিন কিউরিল অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কেলা মিলন লোশন ঝাকিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত শরীরে ঘন্টাখানেক ধরে লাগিয়ে রেখে সেটি ধুয়ে ফেলতে হবে। এরকম তিন চার দিন দিলে ছেড়ে যেতে পারে।
তাছাড়া যদি ফোসকা বা ঘা হয়ে যায় বামনানা সমস্যা দেখা দিতেই থাকে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
মন্তব্য
আজকে আমরা ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো এবং গরমে কিভাবে নিজের শরীরের যত্ন নিতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে একটা আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলটা সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। গরমে নিজের যত্ন নিন সুস্থ থাকুন।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের ঘামাচি পাউডার নাম
- কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় ও ক্রিম এর নাম
- চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম