গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন

স্বাভাবিক প্রেগনেন্সির সময় তলপেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার কারণে গর্ভবতী মায়েদের তলপেটের ব্যথা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাত্রাতিরক্ত ব্যথা হয় অথবা শারীরিক জটিলতার কারণে ব্যথা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত ব্যথা হলে প্রথমেই এর কারণ জানতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা কেন হয় এবং এই রোগের চিকিৎসা কি এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানবে আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

গর্ভাবস্থায় তলপেটের ব্যথা কেন হয়?

সাধারণত গর্ভাবস্থায় জরায়ু প্রসারিত হয়। নারীদের জরায়ু থেকে কুচকি পর্যন্ত দুটি বড় লিগামেন্ট থাকে গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হয়ে যাওয়ার কারণে তা লিগামেন্টের কাছাকাছি চলে আসে ফলে যন্ত্রণা হয়। সাধারণত দ্বিতীয় ত্রেই-মাসিকে এই ব্যথা বাড়ে। গর্ভবতী মায়েদের এই ব্যথা খুবই কমন। প্রেগনেন্সির সময় এই ব্যথা কষ্টদায়ক হলেও তেমন ক্ষতিকর নয়।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু কারনে গর্ভাবস্থায় তলপেটের ব্যথা দেখা দিতে পারে। যেমন –
  • রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন
  • গ্যাস জনিত পেইন
  • কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত পেইন
  • ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হলে কি করনীয়

যেমনটা আমরা বলেছি গর্ভাবস্থায় তলপেট ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবে ঠিক কি কারনে ব্যথা হচ্ছে তা জানা থাকলে তা থেকে প্রতিকারের পাওয়া সহজ হবে। এই পর্যায়ে আমরা গর্ভবতী নারীদের তলপেটে ব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কিছু কারণ ও এর থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায় সংক্ষেপে আলোচনা করব

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন

নারীদের জরায়ু থেকে কুচকি পর্যন্ত দুটি বড় লিগামেন্ট থাকে। গর্ভাবস্থায় জরায়ু স্বাভাবিক আকৃতির চেয়ে কিছুটা বড় হয় এবং তার রাউন্ড লিগামেন্ট এর কাছে চলে আসে। এমন অবস্থায় ওঠাবসা করতে গেলে অথবা হাঁচি কাশি দিতে গেলে কিছুটা ব্যথা অনুভব হতে পারে। সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় এই ব্যথা লক্ষ্য করা যায়। প্রেগনেন্সির সময় এই ব্যথা বেশ কষ্টদায়ক হলেও তেমন ক্ষতিকর নয়।

প্রতিকারের উপায়

রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন থেকে বাঁচতে হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। হাঁচি কাশির সময় সাবধানে সামনে ঝুঁকে কাশি দিতে হবে এ ছাড়া ওঠা বসার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং ধীরে ধীরে উঠতে হবে।

প্রেগনেন্সি গ্যাস পেইন

গর্ভাবস্থায় গ্যাস জনিত তলপেটের ব্যথা খুবই কমন একটি রোগ। প্রথমে তলপেটে ব্যথা শুরু হয় এবং তা ক্রমান্বয়ে পেট, বুক ও গলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। গর্ভাবস্থায় গ্যাস জনিত তলপেটের ব্যথার জন্য প্রজেস্টেরন হরমোন দায়ী। প্রেগনেন্সিতে শরীর হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে খাদ্যনালির কার্যকারিতা কিছুটা হ্রাস পায় এবং খাবার দেরি করে হজম হয়। খাবার হজম হতে যত বেশি সময় লাগে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় যেহেতু খাবার কিছুটা দেরিতে হজম হয় তাই কোলনে খাবার বেশিক্ষণ থাকার ফলে গ্যাসের সৃষ্টি সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার পাওয়ার উপায়

  • একবারে একাধিক খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খাও
  • পানি ও তরল জাতীয় খাবার বেশি খান
  • খাবার গ্রহণের পর শুয়ে বা বসে না থেকে হাটাহাটি করার চেষ্টা করুন
  • ব্যভারেজ জাতীয় তরল পুরোপুরি বাদ দিন
  • এমন খাবার গ্রহণ করা যাবে না যা থেকে গেছে গ্যাস হতে পারে

কোষ্ঠকাঠিন্যের পেইন

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত তলপেটের ব্যথা আরেকটি সাধারণ রোগ। বেশ কিছু কারণে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সাধারণত হরমোনের মাত্রাতিরোক্ত তারতম্য, অতিরিক্ত বিশ্রাম এবং বিভিন্ন দুশ্চিন্তার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়াও খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও পানি না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

প্রতিকারের উপায়

  • খাবারের পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইভার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে
  • পরিমাণ মতো পানি খেতে হবে
  • নিয়ম করে হালকা শরীরচর্চা বা ইয়োগা করতে হবে
  • এর পরেও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন

জরায়ু প্রসাবের ব্লাডারের ঠিক উপরেই থাকে। সাধারনত প্রেগনেন্সির ৬  সপ্তাহ পার হলে জরায়ুর আকৃতি কিছু বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ব্লাডারে চাপ দেয় ফলে প্রসাব ঠিকভাবে বের হতে পারে না। পরবর্তীতে এটি কিডনিতে প্রভাব ফেলে। ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এর ফলে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসব যন্ত্রনা, কম ওজনের বাচ্চা, প্রসাবের রাস্তায় ঘা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও এটি বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে হয় না তবে আপনার যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ভীত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

প্রতিকার পাওয়ার উপায়

  • মিষ্টি ছাড়া তাজা ফলের জুস খান
  • বেশি বেশি পানি পান করুন
  • যৌন মিলনের পর প্রসাব করুন
  • কোন ভাবেই প্রসাব আটকে রাখবেন না

গর্ভবতী নারীর পেটের ডান পার্শ্ব ব্যাথা

আমাদের বক্ষদেশে ডায়াফ্রাম নামক এক বিশেষ ধরনের মেমব্রেন থাকে। বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে বক্ষ পিঞ্জরের নার্ভে কিছুটা ব্যথা অনুভব হয়। এটি গর্ভাবস্থায় খুব ই কমন একটি রোগ। এর কোন চিকিতসা নেই এবং ডেলিভারি হয়ে গেলে এই ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যাবে।

সাধারনত গর্ভাবস্থায় পেটের ডাম পাশে কিংবা বাম পাশে মাঝে মাঝে কিছুটা ব্যথা অনুভব করেন। এটি কোন মারাত্মক রোগ নয়। বাচ্চা বড় হতে শুরু করলে পেটের ভেতর এই ধরনের কিছুটা ব্যথা অনুভব হয়। সময়ের সাথে এই ব্যথা অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং ডেলিভারির পর এই ব্যথা সম্পূর্ন কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন

মন্তব্য

আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের  উপকারে আসবে। গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply