ইলেকট্রিক চুলা
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষ এখন যেকোন কাজ ই পূর্বের তুলনায় সহজভাবে করতে পারছে। বিভিন্ন যন্ত্রের কল্যানে আমাদের দৈনন্দিন জীবন পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন সহজ। রান্নার ক্ষেত্রে ও প্রযুক্তির কল্যানে এখন মাটির বা গ্যাসের চুলার বিকল্প হিসেবে বাজারে চলে এসেছে ইলেকট্রিক চুলা। ইলেকট্রিক চুলার দাম, ইলেকট্রিক চুলা বিদ্যুৎ খরচ সহ ইলেকট্রিক চুলা সম্পর্কে সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে আজকের এই আর্টিকেলে।
কেনো ইলেকট্রিক চুলে কিনবেন?
আপনি হয়তো ভাবছেন গ্যাসের চুলা থাকতে কেনো মানুষ ইলেকট্রিক চুলার দিকে ঝুকছে? বর্তমানে সরকারিভাবে নতুন কোন গ্যাসের লাইন দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু সে হিসেবে প্রতিদিন ই নতুন নতুন ভবন উঠছে। যেহেতু সরকারি গ্যাসের লাইন তারা পাচ্ছে না সেক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার গ্যাস নিতে হচ্ছে।
সাধারন একটি পরিবারে গড়ে প্রতিমাসে ২ টি সিলিন্ডার প্রয়োজন পরে যার বাজার মুল্য প্রায় ২ হাজার টাকা। অপর দিকে ওই একই পরিবার যদি ইলেকট্রি চুলায় রান্না করে তাদের খরচ পড়বে মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়াও গ্যাসের চুলার তুলনায় ইলেকট্রি চুলায় রান্না দ্রুত হয় ও রান্না করাও তুলনা মুলক সহজ। তাছাড়া এখনো গ্যস ওইভাবে পাওয়া যায় না আর পাওয়া গেলেও কিনতে হয় অনেক চড়া দাম দিয়ে। এইসব কারনেই মানুষ আস্তে আস্তে গ্যাসের পরিবর্তে ইলেকট্রিক চুলাকে বেশি পছন্দ করছে।
ইলেকট্রিক চুলার বিদ্যুৎ খরচ
ইলেকট্রিক চুলা যেহেতু বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলবে তাই বেশরভাগ মানুষের মূল চিন্তা থাকে এই চুলার বিদ্যুৎ খরচ নিয়ে। চলুন দেখা যাক এই ইলেকট্রিক চুলা কি পরিমান বিদ্যুৎ খরচ করে। বিভিন্ন ব্রান্ড এর উপর নির্ভর করে ও চুলার ধরনের উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ খরচের পরিমান বাড়ে কমে। আমাদের দেশে সাধারনত ভিশন, মিয়াকো কিংবা ওয়ালটন এর ইলেকট্রিক চুলা বেশি ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের চুলা সাধারনত ২ হাজার ৫০০ ওয়াট থেকে ৩ হাজার ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করে।
ইলেকট্রিক চুলার দাম
ইলেকট্রিক চুলার দাম জানার আগে চলুন দেখে নেই আমাদের দেশে সাধারনত কোন কোন ব্র্যান্ড এর ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারনত ভিশন, মিয়াকো, ওয়ালটন, কিয়াম ও আরো কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ড এর চুলা পাওয়া যায়। এই সকল চুলার দাম ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকার মত হয়ে থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চুলা ও চুলার দাম সম্পর্কে আরো ডিটেইলে জানবো।
ভিশন ইলেকট্রিক চুলা দাম
ভিশন আর এফ এল এর একটি পন্য। ভিশন এর দুই প্রকার এর চুলা বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়। একপ্রকারের চুলার শুধু স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যাবহার করা যায় আর অন্য মডেলে সব রকম পাত্র ব্যবহার করা যায়। তাই কেনার আগে অবশ্যই কনফার্ম হয়ে নিবেন আপনি কোনটা কিনছে। ভিশন ইলেকট্রিক চুলার দাম সাধারনত ২৯০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মিয়াকো ইলেকট্রিক চুলার দাম
বর্তমানে বাজারে কমদামে ভালো ইলেকট্রিক চুলা কিনতে চাইলে মিয়াকো ইলেকট্রিক চুলা কেনার কথা ভাবতে পারেন। মিয়াকোর বেশ কয়েকটি মডেল বর্তমানে বাজারে আছে। যার বাজার মূল্য ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটিসি – ৬৩৩ মডেলের ইলেকট্রিক চুলাটির দাম ২৫০০ টাকায়।
ওয়ালটন ইলেকট্রিক চুলার দাম
ওয়ালটন আমাদের দশীয় কোম্পানি। বরাবর ই কমাদামে সবচেয়ে ভালো জিনিস ক্রেতাদের কাছে দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করে রেখেছে। বাসার প্রয়োজনীয় জিনিসের মত ইলেকট্রিক চুলার বাজারেও ওয়ালটন এর অবস্থান খুবই ভালো। বাজারে ওয়ালটন এর বেশ কয়েকটি ইলেকট্রিক চুলার মডেল আছে যার দাম ৩২০০ থেকে শুরু করে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। ডব্লিউআইএচ ৩৭ এই মডেলের ইলেকট্রিক চুলা টি ওয়ালটন এর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত চুলা গুলোর মধ্যে একটা। এর বাজার মূল্য .৪ হাজার টাকা।
সিঙ্গার ইলেকট্রিক চুলার দাম
সিঙ্গার ইলেকট্রিক চুলার দাম ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
উপরে বর্নিত ব্র্যান্ড ছাড়াও বাংলাদেশে আরো বেশি কিছু ব্র্যান্ড এর ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যায়। যেমনঃ সেবেক ইলেকট্রিক চুলা, ওশান ইলেকট্রিক চুলা, ওশান ইলেকট্রিক চুলা,জেব্রা ইলেকট্রিক চুলা ও কনকা ইলেকট্রিক চুলা। সর্বোপরি আপনি ২০২২ সালে এসে ইলেকট্রিক চুলা কিনতে চাইলে আপনাকে কমপক্ষে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বাজেট রাখতে হবে। তবে আপনি চাইলে আপনার বাজেট ১৫ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারেন।দামের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করতে পারবেন।
প্রাপ্তিস্থান
ইলেকট্রিক চুলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হলো। দাম সম্পর্কে ও এখন পাঠকদের ভালো আইডিয়া হয়েছে আশা করি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইলেকট্রিক চুলা কিনতে চাইলে কথা থেকে কিনবেন। অন্যসব প্রোডাক্ট এর মত ইলেকট্রিক চুলা ও অনলাইন ও অফলাইন থেকে কিনতে পারবেন। অনলাইন থেকে কিনতে চাইলে দারাজ কিংবা অথবা ডট কম থেকে ক্রয় করতে পারেন। আর অফলাইন থেকে ওয়ালটন প্লাজা, ভিশন এমপোরিয়াম সহ স্থানীয় সকল ইলেকট্রিক দোকানে পাওয়া যাবে।
সতর্কতাঃ অনলাইন কিংবা অফলাইন যেখান থেকেই ক্রয় করুন না কেনো আপনাকে সচেতন হতে হবে। কারন জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এখন প্রচুর পরিমানে ডুপ্লিকেট পন্য বাজারে এসেছে। তাই চেষ্টা করবেন যেকোম্পানির পন্য সে কোম্পানির শোরুম থেকে পন্য নেয়ার। এছাড়া অফলাইন থেকে ক্রয়ের পুর্বে অবশ্যই দাম যাচাই করে নিবেন।
ইলেকট্রিক চুলার সুবিধা অসুবিধা
যেকোন পন্যের ই কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। ইলেকট্রিক চুলা ও তার বিপরিত নয়। আপনি যদি ডিসিশন নিয়ে থাকেন যে আপনি ইলেকট্রিক চুলা ক্রয় করবেন তাহলে আপনার অবশ্যই জানা উচিৎ এই চুলার ভালো ও খারাপ দিকগুলো কি।
ইলেকট্রিক চুলার সুবিধা
১। গ্যাসের তুলনায় খুবই কম খরচে রান্না করা যায়।
২। রান্নার পাত্রে ময়লা হয় না।
৩। গ্যাসের মত আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ইলেকট্রিক চুলার অসুবিধা
১। পাত্র সমানভাবে গরম হয় না। অর্থাৎ পাত্রের কিছু অংশ বেশি গরম ও কিছু অংশ কম গরম হয়।
২। পাত্র ছিদ্র হয়ে যায়।
৩। অনেক সময় খাবার সমানভাবে সেদ্ধ হয় না।
৪। কিছু কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করলে খাবারের পুষ্টিগুন কমে যায়।
শেষ কথাঃ
সব পন্যের ই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। তবে ইলেকট্রিক চুলার অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি। তাই ২০২২ সালে এসে যদি আপনি ইলেকট্রিক চুলা কিনতে চান তাহলে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা বাজেট রেখে আমাদের আজকের আর্টিকেলে বলা যেকোন একটি চুলা কিনে নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- প্লে স্টোর থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়
- সর্দি কাশি জ্বর ওষুধ ছাড়া কিভাবে ভাল করবেন
- Bitcoin কি? এখান থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়