চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা
চোখ উঠা বর্তমান সময়ে মারাত্মক রোগ গুলোর মধ্যে একটি। ডাক্তারি ভাষায় এই রোগকে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস। এটি চোখের একটি বিশেষ ধরনের সংক্রমণ যার কারণে চোখ লাল হয়ে যায় ও চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে ও কেতুর জমে। এই রোগের কারণে মূলত চোখের উপরের ” কনজাংটিভা ” নামক আবরণ সংক্রামিত হয়। যেহেতু এই রোগটি মারাত্মকভাবে অন্যের দেহে সংক্রমিত হয় তাই প্রথম থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।
চোখ উঠা রোগের কারণ, লক্ষণ ও চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের আর্টিকেলে। আশা করছি ব্লগ টি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
চোখ উঠার রোগের কারন
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে এই রোগের প্রধান কারণগুলো জানা দরকার। চোখ উঠা রোগের বেশ কয়েকটি কারণ ডাক্তাররা বর্ণনা করে থাকেন। অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, অপরিষ্কার ভাবে চলাফেরা এবং নিয়মিত চোখের যত্ন না নেয়া এই রোগের মূল কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম।
ডাক্তারদের মতে মূলত তিনটি কারণে চোখ উড়তে পারে…
- ব্যাকটেরিয়া
- ভাইরাস
- এলার্জি
চোখে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ কে ইনফেক্টিভ কনজাংটিভাইটিস বলে। এবং এলার্জির কারণে চোখ উঠলে তাকে এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস বলে।
চোখ উঠার লক্ষন
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা আলোচনার পূর্বে এ রোগের লক্ষণ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে ধারণা থাকা জরুরি। কেননা যত দ্রুত আপনি এর লক্ষণ গুলো চিনতে পারবেন তো দ্রুত এই রোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। যেমনটা আমরা বলেছিলাম মূলত তিনটি কারণে চোখ উঠা রোগ হয়ে থাকে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও এলার্জি।
ভাইরাসের কারণে চোখ উঠার লক্ষণ
ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে চোখ উঠলে চোখ লাল হয়ে যাবে, চোখ ফুলে যাবে এবং অনবরত পানি পড়তে থাকবে। অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে চোখ উঠলে চোখ এত বেশি পরিমাণ ফুলে যায় যে তিনি চোখে কিছু দেখতে পান না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস জনিত সমস্যায় চোখ উঠলে চোখ ব্যথা করতে পারে।
- চোখ লাল হয়ে যাবে।
- চোখ ফুলে যাবে।
- চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়বে।
ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ উঠার লক্ষণ
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা সঠিকভাবে নিতে হলে আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে চোখে কিসের সংক্রমণ হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হলে চোখে আঠালো ময়লা জমবে। হলুদ বা সবুজ রঙের পুজ জমবে।
- চোখ ব্যথা হবে
- চোখে ময়লা জমবে
- হলুদ বা সবুজ পূজ জমবে
এলার্জির কারণে চোখ উঠার লক্ষণ
আপনার যদি ফুলের রেণু, ধুলোবালি অর্থাৎ ডাস্ট এলার্জি জনিত সমস্যা থাকে তাহলে অত্যাধিক মাত্রা ধুলোবালি চোখে চোখ উঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া যারা নিয়মিত সুইমিং পুলের ক্লোরিনযুক্ত পানিতে গোসল করেন কিংবা অতিমাত্রায় কসমেটিক এর ব্যবহারের ফলে চোখে এলার্জি কনজাংটিভাইটিস বা এলার্জিক চোখ উঠা রোগ দেখা দিতে পারে।
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর লক্ষণ গুলো হলো
- চোখের সাদা অংশ লাল টকটকে লাল হয়ে যাওয়া
- প্রথমে এক চোখে আক্রান্ত হয় এবং পরে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে
- চোখে চুলকানি জালাপোড়া ও খসখসে ভাব দেখা দেয়
- চোখ দিয়ে পানি পড়ে
- চোখের পাতায় পুঁজ জমতে পারে বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠার পরে চোখ খুলতে কষ্ট হয়।
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা
এই পর্যায়ে আমরা চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। চোখ উঠা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে শুরুতেই ভারী ঔষধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা উচিত।
গরম পানি ও তুলা – চোখ উঠা রোগের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা টি হল সামান্য গরম পানিতে একটি পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে বারবার চোখ মুছতে হবে। এটি সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ কয়েক বার করতে হবে। নিয়মিত গরম পানি এবং তুলো দিয়ে চোখ পরিষ্কার এর ফলে চোখে ময়লা জমে না এবং নতুন করে কোন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারবে না।
মোবাইল কম্পিউটার থেকে দূরে থাকতে হবে – চোখ উঠা রোগ দেখা দিলে চোখে প্রেসার পড়ে এমন কোন কাজ বেশিখন করা যাবে না। যেমন মোবাইল কম্পিউটার এর দিকে টানা তাকিয়ে থাকা এবং অনেকক্ষণ টানা পত্রিকা পড়ার মতো কাজ গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এতে করে চোখের উপর প্রেসার পড়ে এবং চোখ ব্যথা করতে পারে।
পরিষ্কার পানি ব্যবহার করুন – চোখ উঠা রোগ দেখা দিলে অপ্রয়োজনে চোখে পানি লাগাবেন না। চোখে পানি লাগানোর প্রয়োজন হলে অবশ্যই পরিষ্কার পানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন। এবং সরাসরি চোখে পানি না লাগিয়ে তুলো বা কাপড় ভিজিয়ে চোখ মুছে নিতে পারেন।
পরিষ্কার জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন – চোখে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চেষ্টা করবেন পরিষ্কার রুমে অবস্থান করতে। যেহেতু চোখ উঠা রোগের মূল কারণ হচ্ছে ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ তাই এই সময়ে অপরিষ্কার জায়গায় যাওয়া একদম উচিত নয়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
চোখ উঠা রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন সাধারণত হয় না। উপরে আমরা চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা গুলো যেভাবে বলেছি সে নিয়ম গুলো সঠিক ভাবে করলে 7 থেকে 10 দিনের মধ্যে চোখ ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। তাই দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন এবং ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন।
তবে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অন্যথায় চোখের মারাত্মক অবস্থা হতে পারে। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
- দুই সপ্তাহ বা 15 দিনের পরেও ভালো না হলে
- চোখে অত্যাধিক পরিমাণে ময়লা জমলে
- চোখ মাত্রাতিরিক্ত ফুলে গেলে বা ব্যথা করলে
- অতিমাত্রায় চুলকালে
- অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হলে
শিশুদের চোখ উঠা রোগ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া উচিত। বিশেষ করে শিশুর বয়স 28 দিনের কম হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চোখ উঠার ঔষধ কি
চোখ উঠার ঔষধ কেমন হবে তা নির্ভর করে চোখে কেন উঠেছে তার উপর। যেমনটা আমরা উপরে বলেছি চোখ উঠার মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও এলার্জি মূলত এই তিনটি কারণে উঠতে পারে।
ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ উঠলে ডাক্তার মূলত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল আই ড্রপ দিবেন। এবং সাথে চোখ পরিষ্কার রাখার জন্য একটি সাধারণ আই ড্রপ এবং চোখে কন্ডিশন এর উপর নির্ভর করে কিছু সাসপেনশন দিতে পারেন। তাই নিজের থেকে কোন ড্রপ ব্যবহার না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ভাইরাস বা অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারণে চোখ উঠলে ডাক্তার এন্টিহিস্টামিন এন্টি এলার্জিক কিছু ঔষধ দিবেন। এবং সাথে কিছু আই ড্রপ বা মলম দেয়া হতে পারে। এলার্জি জনিত সমস্যার কারণে চোখ উঠলে রোগীর যেসব বিষয়ে এলার্জি আছে সেগুলো এড়িয়ে চলা জরুরী। যেমন ধুলোবালি, ফুলের রেণু কিংবা সুইমিং পুলের ক্লোরিন যুক্ত পানি।
চোখ উঠার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট
উপরে আমরা চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এ পর্যায়ে আমরা চোখ উঠা রোগের ঘরোয়া কিছু ট্রিটমেন্ট নিয়ে আলোচনা করব। এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে শুরু থেকেই কোন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন থাকতে হবে তা এক নজরে দেখে নিন…
- হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে বারবার চোখ পরিষ্কার করতে হবে
- চোখে সরাসরি পানি দেয়া যাবে না
- বিছানা চাদর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
- চোখ চুলকালে চোখে হাত দেয়া যাবে না
- কোন কারনে চোখে হাত গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে
- হাঁচি দেয়ার সময় নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এবং রুমাল ব্যবহার করতে হবে
- কালো চশমা বা সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে
- আই ড্রপ খোলার 28 দিন পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা যাবে। এরপর পেলে দিতে হবে
চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে?
চোখ উঠা বেশ ছোঁয়াচে একটি রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন চশমা, জামা কাপড় কিংবা বালিশ ব্যবহারে সুস্থ মানুষের চোখে এ রোগটি হতে পারে। এছাড়াও এই রোগটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় তাই আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশে বেশি সময় অবস্থান করলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
তবে উঠলেই বাইরে যাওয়া যাবে না বিষয়টা এমন নয়। পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চাইলে কর্মস্থল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে চোখ উঠলে কিছুদিন স্কুলে না যাওয়াই ভালো।
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা
উপরে আমরা চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। উপরের সবগুলো তথ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ থেকে নেয়া এর কোনো তথ্যই আমাদের ব্যক্তিগত নয়। চোখ উঠা রোগ নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
ব্লগ টি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু বা প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। বর্তমানে পরিবেশ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তাই আপনি সাবধান থাকবেন ও আপনার পরিবারকে সাবধানে রাখবেন। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন –
- ডাস্ট এলার্জি কেন হয় ও ডাস্ট এলার্জি চিকিৎসা বিস্তারিত
- পুরুষের চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার ক্রিম, ডার্ক সার্কেল দূর করার উপায়