বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ নাম
পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কম বেশি সবাই ভোগেন। পেটে গ্যাস হওয়া থেকে শিশুরাও বাদ যায় না। শিশুদের সাধারণত বড়দের চাইতেও বেশি পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে শিশুর শরীর, পেটে অনেক ব্যথা হয়ে থাকে।
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ নাম ও খাওয়ানোর নিয়মসহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
বাচ্চাদের কেন গ্যাস হয়?
বাচ্চাদের বিভিন্ন কারণে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। বাচ্চা যেহেতু মায়ের বুকের দুধ পান করে তাই খাবার নিয়ে মায়ের অসাবধানতার কারনেও বাচ্চার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। গ্যাসের সমস্যার কারণ গুলো জানা থাকলে তার সমাধান করতে সহজ হয়। বেশ কিছু কারনে বাচ্চার গ্যাস সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন –
- শিশুদের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে গ্যাস হতে পারে।
- যখন অতিরিক্ত কান্না করে বা খাওয়ার আগে বাতাস পেটে ঢুকে যায় তখন পেটে গ্যাস তৈরি হয়।
- শিশুর খাদ্য সঠিকভাবে হজম না হলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়।
- পরিপাকতন্ত্রে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরা ও শিশুদের পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ হতে পারে।
- নবজাতকের পেটে গ্যাস হওয়ার জন্য মায়েদের খাদ্য তালিকা কারণ হতে পারে।
- মায়েদের পেটে গ্যাস হলে মায়ের দুধ পান করার মাধ্যমে বাচ্চার পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়।
- জন্মের ৩ মাস পর্যন্ত নবজাতকের বেশি সমস্যা খুবই স্বাভাবিক। এ সময় বাচ্চাদের পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে সুগঠিত হয় তাই পেটে গ্যাস হয়।
- ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত এটা স্বাভাবিক কারণে সময় বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের খাবার প্রথমবারের মতো খাওয়া শুরু করে।
- খুব দ্রুত খেতে গেলে বাতাস বাচ্চার পেটে বাতাস চলে যায় যার কারণে গ্যাস হতে পারে
- বোতলের দুধে ফেনা থাকলে বাচ্চাকে ফর্মুলা খাওয়ানোর সময় বোতল যত বেশি ঝাকানো হয় তত বেশি ফেনা হয়।যা খাওয়ার ফলে বাচ্চার পেটে গ্যাস হতে পারে
- কিছু কিছু খাবারের কারণে বড়দের মতো বাচ্চাদেরও কিছু কিছু সবজিতে পেটে গ্যাস হতে পারে যেমন – বাধাকপি, ব্রক্লি।
- অস্বাস্থ্যকর বাইরের ভাজাপোড়া বা তেলের জিনিস খাওয়ার ফলে ও পেটে গ্যাস হতে পারে
- পরিমানমত পানি না খেলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে অনেক সময় পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস সমস্যার লক্ষণ
বাচ্চাদের যে কোন সমস্যা হলে তা মুহূর্তের মধ্যেই বোঝা যায়। কেননা বাচ্চার কোন সমস্যা হলে কান্নাকাটি শুরু করে এবং অসুস্থ অনুভব করে।। তবে বাচ্চাদের পেটে গ্যাস সমস্যার লক্ষণ গুলো জানা থাকলে চিকিৎসা শুরু করা যায়।
- বেশি সমস্যার ফলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
- প্রচুর পরিমাণে কাঁদতে থাকে কান্না প্রায়ই মারাত্মক ও তীব্র হয়ে থাকে।
- তার সাথে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে
- বারবার হাত মুষ্টি খোলা ও বন্ধ করা
- জোরে জোরে হাত পা ছাড়ানো
- হাঁটু এবং বুক এক্মসাথে করা
- পেট ফুলে যাওয়া
- খিটখেটে হয়ে যাওয়া
- দুধ ঠিক করে পান না করা
- পেট থেকে গ্যাস নির্গত হওয়া
- ঘুমের অসুবিধা হওয়া
- পায়খানা ঠিকভাবে না করা
- মুখ হালকা পিলে রং হওয়া
- বমি করা
নবজাতকের গ্যাস হলে করণীয়
নবজাতকের পেটে গ্যাস হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে তৎক্ষণাৎ কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন। ঘরোয়া ভাবে এর চিকিৎসা করা যায়। বিভিন্ন ব্যায়াম এবং মালিশের মাধ্যমে নবজাতকের পেটের গ্যাস নিঃসরণ করা যায়।
- সরিষার তেল হালকা গরম করে পেটে মালিশ করা
- জন্মের পর বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের শরীরের ব্যায়াম করানো
- গ্যাসের পরিমাণ বেশি হলে পেটে গরম শেক দেওয়া
- অমিডন এবং ফ্লাকোল সিরাপ খাওয়ানো
- এবং অবস্থা বেশি করেখারাপ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
ছোট বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ নাম
ছোট বাচ্চাদের খাবারের সমস্যার কারণে বা অন্যান্য অনেক সমস্যার কারণে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন কোম্পানি গ্যাসের সিরাপ পাওয়া যায়। তবে ভালো সিরাপ গুলোর নাম জানা থাকা প্রয়োজন।
১। flacol- এটি স্কয়ার কোম্পানির একটি ভালো মানের গ্যাসের ঔষধ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫ টাকা।
২। flatunil- এটি একমি কোম্পানির একটি বাচ্চাদের গ্যাসের ভালো সিরাপ গুলোর মধ্যে একটি। যার বর্তমান মূল্য ৩৫ টাকা।
৩। গ্যাসনিল- এটি স্কাইএফ কোম্পানির একটি গ্যাসের সিরাপ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ টাকা।
৪। lefoam- এটি ইনসেপ্টা কোম্পানির একটি গ্যাসের ওষুধ।যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ টাকা।
৪।নিউ ড্রপ- বেক্সিমকো কোম্পানির একটি গ্যাসের ঔষধ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ টাকা।
৫। semecon- এটি বাংলাদেশের বিখ্যাত ড্রাগ কোম্পানির একটি সিরাপ। বর্তমান বাজার মূল্য ৪৬ টাকা।
6। সিমেন- এটি এ সি আই কোম্পানির একটি গ্যাসের ঔষধ। যার দাম ৪০ টাকা।
৭। সিমেথি- এটির জেনিত কোম্পানির একটি গ্যাসের ঔষধ। বর্তমান মূল্য ৩০ টাকা।
বাচ্চাদের গ্যাস সমস্যার ঘরোয়া সমাধান
বাচ্চাদের এই পেটে গ্যাসের সমস্যার ফলে বাচ্চাদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। কিন্তু ঘরোয়া কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে বাচ্চাদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়া যায়।
১। খাওয়ানোর সময় সঠিক অবস্থান বজায় রাখা- দুই বছরে কম সকল শিশুকে বুকে দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথা এবং ঘাড় এমন একটি অবস্থানে রাখতে হবে জেনো পেট থেকে হালকা উপরে থাকে। এতে দুধ খাওয়ার সময় সরাসরি পেটে যায় এবং বায়ু উপরে উঠে আসে। এটি বোতলে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
২। শিশুকে খাওয়ানোর পর ঢেকুর তোলার অভ্যেস করা- নবজাতককে বায়ু নির্গত করার এটি একটি সর্বোত্তম উপায়। তাকে দুধ খাওয়ানোর সময় প্রতি ৫ মিনিট অন্তর একটু বিরতি নিয়ে শিশুকে উপুড় করে কাধের উপর রেখে আলতো চাপ দিয়ে তাকে গ্যাস বের করতে সাহায্য করুন।
৩। কান্না থামানো- বাচ্চারা কাঁদলে বায়ু গিলে ফেলে এবং তারা যত কান্নাকাটি করে তত বেশি বাতাস গিলে ফেলে। পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাচ্চাকে প্রধান উদ্দেশ্য হবে বিভিন্ন জিনিস বা শব্দের দ্বারা বাচ্চার কান্না যত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা সম্ভব বন্ধ করতে হবে।
৪। শিশুদের জন্য প্রোবায়োটিক- প্রবায়োটিক ইয়োগার্ট বা দই তে থাকে। যা বাচ্চাদের হজমে সাহায্যকারী যে ব্যাকটেরিয়া থাকে সেগুলো কে বাড়িয়ে দেয়। নতুন গবেষণায় দেখা যায় যে শিশুদের প্রোবায়োটিক যখন কয়েক সপ্তাহের জন্য দেওয়া হয় গ্যাস এবং পেটের সমস্যার সমাধানের সহযোগিতা করে।
৫। গ্রাইপ জল- শিশুদের গ্যাসের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কমাতে কয়েক দশক ধরে graip জল ব্যবহার করা হয়। গ্রাইপ ওয়াটার হল সোডিয়াম বাই কার্বনেট ও মউরি জাতীয় গাছের তেল এবং চিনির একটি দ্রবণ যা ৫ মিনিটের কম সময়ে গ্যাস থেকে নিরাপদে এবং কার্যকরীভাবে মুক্তি দেয়।
৬। গরম পানি দিয়ে গোসল করানো- বাচ্চাকে জন্মের পর হালকা গরম কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানির প্রভাবে পেট থেকে গ্যাস নির্গত হয় গ্যাস জমে থাকে না।
৭। হিং- যদি শিশুর গ্যাস সমসায় জর্জরিত হয় তবে সর্ষের দানার মতন দুটি হিং এর দানা তৈরি করুন। এবং গরম জলে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে দিলে অল্প পরিমাণ ব্যবহার করলে এটি গ্যাস মোচনে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি একটি মসলা তাই যে পরিমাণ বলা হয়েছে তার বেশি দেওয়া উচিত নয়।
বাচ্চাদের গ্যাস হলে প্রয়োজনীয় মালিশ
১। পেট মালিশ- শিশুদের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা অনেক হওয়ার ফলে বাচ্চার প্রতিদিন পেট মালিশ করতে হবে। বাচ্চার পেট মালিশের মাধ্যমে বাচ্চা পেটে গ্যাস কমানোর একটি অন্যতম উপায়। বাচ্চাকে চিত করে শোয়ানোর পর আস্তে আস্তে তার পেটে ঘড়ির কাটার দিকের মত ঘষতে থাকুন। তারপর তলপেটেও এই পদ্ধতিতে গ্যাস বের হতে সাহায্য করবে।
২। সরিষার তেল মালিশ- বাচ্চাকে অল্প পরিমাণ সরিষার তেল হালকা গরম করে পেটে মালিশ করলে এতে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর এবং ঘুমানোর পূর্বে মালিশ করলে পেটে গ্যাস জমে না।
৩। দুই হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল কে শিশুর পেটে রাখুন। তারপর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একই আঙ্গুল দিয়ে একের পর এক উঠানামা করান। বৃদ্ধাঙ্গুলের সাথে নাভির উপরের অংশে মালিশ করুন তারপর নাভির নিচে মেসেজ করুন নাভির ওপরে দুবার এবং নাভির নিচে বেশি করবেন না।
৪। মুন ওয়াকিং – বাচ্চার পেটে গ্যাসের ব্যথা হলে এই পদ্ধতিতে মালিশ করা যেতে পারে। শিশুর পেটে নিজের আঙ্গুল দিয়ে বা থেকে ডান দিকে মাসাজ করুন। আঙ্গুলির উপর ভর দিয়ে হাঁটার মতো এই মাসাজ হইয় বলে এই মাসাজ কে মুন অয়াকিং বলে। তবে মালিশ করার সময় নখ কেটে নেবেন যাতে বাচ্চার ব্যথা না লাগে।
৫। হাঁটুর কাছ থেকে পা ধরে পেটের দিকে মুড়ে দিন। দুই পা একসঙ্গে পেটের কাছে নিয়ে যাবেন তারপর পাঁচ সেকেন্ড এভাবেই থাকতে দিলে দিনে তিনবারে প্রক্রিয়া করলে বাচ্চাদের পেটে জমে থাকা গ্যাস সহজেই বের হয়ে যায়।
৬। সার্কুলার মাসাজ- নাভির কাছে থেকে বাম দিকে বৃত্তাকার মালিশ করুন। পেটের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। পুরো পেটের মাংসপেশির যাতে মালিশ হয় তার জন্য সেই বৃদ্ধ আঙ্গুল ধীরে ধীরে মাসাজ করা যাবে। তারপরে এভাবে বাঁদিকে ডান দিকে মেসেজ করতে হবে।
উল্লেখ্য- মেসেজ করার সময় বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করলে থেমে যেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস প্রতিরোধে করণীয়
যে কোন রোগ নিরাময় এর চেয়ে প্রতিকার বেশি ভালো। শিশুকে দেওয়া খাবারের উপর এবং তার গ্যাস উৎপাদনের উপর নজর রাখলে বোঝা যাবে কোন ধরনের খাবার দেওয়া উচিত বা কোন ধরনের খাবার দেওয়া উচিত নয়।
বাচ্চার মায়েদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। চিংড়ি মাছের মতো খাবার মসলাদার মাংস এবং কিছু সবজি যেমন- ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি
- শিশু যেন পেটের উপর ভর করে শোয়
- খেলার ছলে শিশুর পিঠে মৃদু চাপড় দিতে হবে
- বাচ্চা কে অতিরিক্ত খাওয়ানো যাবে না
- সব সময় বাচ্চার খেয়াল রাখতে হবে
কখন ডাক্তারের কাছে নিবেন
শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে শুরুতেই ঘরোয়া চিকিৎসা ও ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। এরপর ব্যথা না কমলে বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ দিয়ে দেখতে পারেন। সাধারণত গ্যাসের সিরাপ গুলো খাওয়ানোর পর দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু সিরাপ খাওয়ানোর পরেও যদি বাচ্চা কান্নাকাটি করেন তখন ডাক্তারের কাছে অবশ্যই যেতে হবে।
নিচের লক্ষণগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- দীর্ঘ সময়ের জন্য কান্নাকাটি করা
- জ্বর ও বমি হওয়া
- লম্বা সময় ধরে খাবার না খাওয়া
- অস্বাভাবিক আচরন করা
- পেট ধরতে গেলে কান্নার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া
মন্তব্য
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ নাম সহ বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ ও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম
- বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার ক্রিম – বাচ্চাদের স্কিন কেয়ার
- বাচ্চাদের কাশির সিরাপ – বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম