নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করনীয়
নবজাতক শিশুর জন্মের পরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হল শিশুর প্রস্রাব বা পায়খানা না করা। সাধারণত কিছু সময় প্রস্রাব না করাটা স্বাভাবিক। তবে নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করনীয় কি ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সহ নবজাতকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর কথা আমরা জানবো।
নবজাতকের প্রস্রাব কম হবার কারন
সাধারণত জন্মের পর নবজাতকরা প্রস্রাব পায়খানা খুব কম পরিমাণে করে থাকে। তবে সে যতবারই মায়ের বুকের দুধ খাবে সে তত বেশি প্রস্রাব করবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ ঠিক ভাবে আসে না তাই নবজাতকের সঠিক ভাবে প্রস্রাব হয় না। তাই জন্মের পাঁচ থেকে সাত দিন পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রস্রাবের সমস্যা আছে কিনা তা দেখতে হবে।
আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়
নবজাতকের দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক
নবজাতক শিশুর জন্মের পর অনেক সময় ৬ থেকে ১০ বার প্রস্রাব করে। অনেক সময় অনেক শিশু তেমন বেশি করে না তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন শিশু জন্মের পর এক থেকে দুই সপ্তাহ পর থেকে বাচ্চা দিন ও রাতে ছয় অথবা তার বেশি প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চার প্রস্রাব সঠিক রয়েছে।
বাচ্চার প্রসাব পায়খানা ঠিকভাবে হচ্ছে কি না কিভাবে বুঝবেন?
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি বাচ্চা জন্মের দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১৫ দিন পর থেকে বাচ্চা যদি দিনে কমপক্ষে ৬ বার প্রসাব করে তাহলে ধরে নিবে বাচ্চার প্রসাব ঠিক আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা ১০-১২ বার ও প্রসাব করতে পারে। অর্থাত নূন্যতম ৬ বার প্রসাব করলে ধরে নিতে হবে বাচ্চার প্রসাব ঠিক আছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
অন্যদিকে, বাচ্চা যখন শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করে তখন ২ দিনে একবার পায়খানা করা নরমাল। কিছু কিছু ৩ দিনেও পায়খানা হতে পারে। কিন্তু ৩ দিন পার হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো। আবার মাঝে মাঝে
নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়
নবজাতক শিশুর জন্মের সময় বা জন্মের প্রথম দিন বাচ্চার একবার প্রস্রাব করাই যথেষ্ট। দ্বিতীয় দিন এক থেকে তিনবার প্রস্রাব করা যথেষ্ট। কারণ এই সময় মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে আসে না তৃতীয় দিনে ক্ষেত্রেও এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চা যদি একেবারেই প্রস্রাব না করে সেটা চিন্তার বিষয়। নবজাতক প্রস্রাব না করলে সে ক্ষেত্রে করণীয় হলো-
- বেশি বেশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো তবে
- ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা প্রস্রাব না করলে কোন ঝুঁকি নেই
- নবজাতকের মাকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ানো
- বাচ্চার শরীরের পানি শূন্যতা দূর করা
শিশুদের অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়ার কারণ
শিশুরা বিভিন্ন কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব করে থাকে।সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে বাচ্চাদের ঘনঘন প্রস্রাব হয় না।যেমন- পানি বেশি খাওয়ার ফলে এবং প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলে বারবার প্রস্রাব করে থাকে। তবে ঘনঘন প্রস্রাব করার অনেকগুলো কারণ বা রোগ রয়েছে। শিশুর অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ এর মধ্যে অন্যতম হলো-
- ডায়াবেটিস
- দীর্ঘমেয়াদি বা জন্মগত কিডনি রোগ
- মানসিক সমস্যা
- সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট জটিলতা
- কিডনির জন্মগত ত্রুটি
- রক্তে পটাশিয়ামের অভাব
- কিংবা ক্যালসিয়ামের আধিক্যতা
- সুনির্দিষ্ট কিছু ঔষধ খাওয়ার কারণেও শিশু অতিরিক্ত প্রস্রাব হতে পারে
শিশুদের অতিরিক্ত প্রস্রাব হলে করণীয়
কোন রোগের কারণে শিশুদের ঘন ঘন প্রস্রাব হলে তার চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যদি কোন রোগ ব্যতীত ঘনঘন প্রস্রাব হয় তাহলে অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। শুরুতে এর কারণ সনাক্ত করতে হবে।
- প্রথমে দেখতে হবে শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কিনা
- রাতে শিশুকে বেশি পানি খেতে নিরু উৎসাহিত করতে হবে
- সুনির্দিষ্ট সময়ের পর প্রস্রাব করার অভ্যেস করতে হবে
- কোন রোগের কারণে বেশি বেশি প্রস্রাব হলে তার চিকিৎসা করাতে হবে
- নিজ থেকে ওয়াশরুমে যাওয়ার যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে
শিশুর প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়ার কারণ
কোন কারনে ব্যাকটেরিয়া মূত্রথলিতে ঢুকে গেলে ইউরেনারি ট্রাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। এতে ব্লাডার ফুলে যায় পেটে নিচের অংশে যন্ত্রণা হতে পারে। যদি ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে কিডনিতে ইনফেকশন হতে পারে। বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে-
- বাচ্চার যদি জন্ম থেকেই বেশি কইউরেটাল রিফ্লাক্স ধরনের সমস্যা থাকে। এ সমস্যায় ইউরিন ব্লাডার থেকে বেরিয়ে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে পৌঁছে যায়। ফলে ইউরেনারী ট্রাক ইনফেকটেড হয়ে পড়ে।
- ব্লাডারে বিভিন্ন ধরনের রোগ থাকলে ব্লাডার খালি হতে পারে না
- ফাইনাল কর্ডে ব্যাথা লাগলে ওই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ থেকে ইনফেকশন হয়
- জন্ম থেকে যদি ইউরিনারি ট্রাক্টর গঠনে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই ইনফেক্টেড করে যেতে পারে
- বাচ্চা যদি ওয়াশরুমে যেতে অলসতা করে
- ওয়াশরুমে যাওয়ার পর নিজেকে ঠিকমতো পরিষ্কার না করে তাহলে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়
- ঘনঘন বাবল বাথ নিলে ইনফেকশন হতে পারে
- খুব বেশি টাইট জামা কাপড় পড়লেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়
শিশুর প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয়
শিশুর প্রস্তাবের ইনফেকশন হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং যত দ্রুত সম্ভব এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে কেননা প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে তা অতি দ্রুত কিডনিতে ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে। শিশুর প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে করণীয় হলো-
- বাচ্চাকে বেশি বেশি বাবল বাথ করতে দেওয়া যাবে না
- ঢিলে ঢালা অন্তর বাস ও জামা কাপড় পড়তে হবে
- বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে
- বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বোঝাতে হবে
- বাথরুম করার পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা শেখাতে হবে
- বাচ্চাকে দিনে একাধিকবার বাথরুমে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
সাধারণত নবজাতক দিনে তিন থেকে ছয় বার প্রস্রাব করে যদি এর থেকে কম প্রস্রাবের পরিমাণ হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব একদমই কম বা অতিরিক্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সঠিক সময় চিকিৎসা করলে বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয় না।
মন্তব্য
আজকে আমরা নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি অনেক কাজে লাগবে। নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয় কি সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
- শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
একটি ছেলে নবজাতক জন্মের পর থেকে ৪০ঘন্টা পেসাব হয়নি। পায়খানা হচ্ছে। তবে মায়ের দুধ এখনও কম আসছে। এখন পেসাবের জন্য করনীয় কি??
এত লম্বা সময় পেসাব না হওয়া ভালো লক্ষন নয়। দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন
২২ দিন বয়সের ছেলে, ৮/৯ ঘন্টা ধরে প্রস্রাব করেনি,নুনু শক্ত হয়ে আছে। করনীয় কি?
আসসালামু আলাইকুম। আমরা শুধুমাত্র ইন্টারনেট থেকে তথ্য কালেক্ট করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারি। আমরা ডাক্তার নই। আপনার রোগীর অবস্থা শুনে মনে হচ্ছে বিষয়টা খুব জটিল। দয়া করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১০ দিনের বাচ্চা প্রসাব করলে কান্না করে উপায় কি
কান্না করাটা স্বাভাবিক।অতিরিক্ত কান্না করলে প্রশাব, পায়খানা ঠিক আছে কি না চেক করুন। ঠিক না থাকলে দ্রুত ডাক্তার দেখান।