চাশতের নামাজের সময়
আল্লাহর সাথে কথোপকথনের উত্তম মাধ্যম হলো নামাজ। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত নিকটে আসা যায় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে যে কোন মনের ইচ্ছা বা গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা যায়। বিভিন্ন নফল নামাজের মধ্যে চাশতের নামাজ অন্যতম। অনেকেই চাশতের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক নিয়ম জানেন না।
আজকে আমরা চাশতের নামাজের সময়, চাশতের নামাজের ফজিলত এবংচাশতের নাজেজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, দোয়া ও নিয়ত
চাশতের নামাজ কি?
চাশতের নামাজ বা দোহার সালাত বা সালাতু দোহা হল ফজর এবং জোহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময় পড়ার জন্য নফল নামাজ। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না সে তিনটি হল- ১। প্রতি মাসে ৩ টি করে রোজা ২। চাশতের নামাজ এবং ৩। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিতরের নামাজ আদায় করা। (বুখারী হাদিস ১৩৭৫)
চাশতের নামাজের সময় জানার আগে চাশতের নামাজ কি তা সঠিক ভাবে জানতে হবে।
চাশতের নামাজ পড়ার সঠিক সময়
চাশতের নামাজের সময় সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে যে চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়। (সহীহ মুসলিম হাদিস ৭৪৭)। তবে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ দিনের চার ভাগের এক ভাগ শেষ হয় তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কাজেই চাশতের নামাজ বা সালাতুল দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং জোহরের নামাজের পরবর্তী মধ্যবর্তী সময়টা।
এক হাদিসে আছে আল্লাহর রাসূল বলেন যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে এবং সুর্য্য উদয় অবধি বসে আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সেই ব্যক্তির একটি হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ হয়। বর্ণনাকারী বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন পরিপূর্ণ পরিপূর্ণ পরিপূর্ণ অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ নয় পূর্ণ হজ এবং ওমরা সওয়াব। (তিরমিজি)
চাশতের নামাজের রাকাত
চাশতের এর নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। এছাড়া চার রাকাত আট রাকাত কিংবা ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। উম্মে হানি কর্তৃক বর্ণিত আমাদের নবী মক্কা বিজয়ের দিন তার ঘরে চাশতের নামাজ এর সময় আট রাকাত নামাজ আদায় করেছেন। (মুসলিম বুখারী মিশকাত নং ১৩০৯)। আশরাফ রাদিয়াল্লাহু বলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাত চারশতের নামাজ পড়তেন এবং আল্লাহর তৌফিক অনুসারে আরো বেশি পড়তেন। (মিশকাত ১৩১০ নং)
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ৪ রাকাত এবং প্রথম নামাজ যোহরের পূর্বে চার রাকাত পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ একেক হাদীসেচাশতের নামাজ এর রাকাত এক এক রকম বর্ননা থাকলেও কমপক্ষে দুই রাকাত এবং বেশি হলে চার রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া উত্তম।
চাশতের নামাজের সময় ও চাশতের নামাজ এর রাকাআত নির্দিষ্ট নয়।
চাশতের নামাজের নিয়ম
অন্য সব দুই রাকাত সুন্নত বা নফল নামাজের মতই এই চাশতের নামাজ আদায় করতে হয়। অর্থাৎ নিয়ত বাধার পর সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে প্রথম রাকাত এবং পরবর্তীতে সূরা ফাতিহার পর অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে এই নামাজ অন্য দুই রাকাত নফল নামাজের মত ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নিতে হয়।
তবে হাদিসে বর্ণিত আছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয় যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি সূর্যদয় এর পূর্বে কিছু ভক্ষণ না করে অর্থাৎ কোন খাবার না খেয়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করে এবং প্রতি রাকাত নামাজে সুরা ফাতিহার পর সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করে চাশতের নামাজ আদায় করে তার চল্লিশ বছরের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
অমর ইবনে শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা ও দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের বাণী- যে ব্যক্তি চাশতের নামাজ ১২ রাকাত আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা একবার আয়াতুল কুরসি একবার এবং সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করবে তার জন্য আসমান থেকে ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে এবং সে সকল ফেরেশতাগণ ওই ব্যক্তির আমলনামায় লিখে লিখতে থাকবে।
যতদিন না পর্যন্ত ইসরাফিল আলাইহি সালাম সিংগায় ফুতকার না দেয় এবং যখন কেয়ামত হবে তখন ওই ব্যক্তির নিকট ফেরেশতাগণ আসবেন এবং প্রত্যেক তাদের সাথে থাকবে ওই ব্যক্তি কবরে পাশে। ফেরেস্তাগুলো দাঁড়িয়ে থাকবে আর বলবেন হে কবরবাসী তুমি উঠো তুমি নিরাপত্তা প্রাপ্তদের মধ্যে একজন।
ইমাম মুজাহিদ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর বাণী অনুসারে যে ব্যক্তি চাশতের নামাজের চার রাকাত নামাজ প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা ১০ বার এবং আয়াতুল কুরসি ১0 বার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ১0 বার এবং সূরা কাফিরুন ১0 বার তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা দশবার এবং সূরা এবং সূরা ফালাক দশবার থেকে সূরা ফাতিহা ১0 বার এবং সূরা ইখলাস শেষ করে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ এবং সালাম ফিরায়। এরপর ৭০ বার ইস্তেগফার পড়বে তাহলে আসমান এবং জমিনের সমস্ত মানব দানবের অত্যাচার অবিচার হতে সে রক্ষা পাবে এবং দুনিয়াবী সত্তরটি ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
চাশতের নামাজের নিয়ত
সাধারণত স্পষ্ট করে নামাজের নিয়ত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা নেই। নামাজের নিয়ত মনে মনে আদায় করতে হয় তবে অনেক জায়গায় চাশতের নামাজ এর এই নিয়ত পাওয়া যায়-
নিয়ত- নাওয়াইতু আন উসা ল্লিয়া লিল্লাহি তাঁয়ালা আরবা রাকাতাই সালাতি দোহা ,সুন্নাতি রাসূলিল্লাহে তাআওলা মোতাওজ্জিহান ইলা জিহাতিল কবতীশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার
অর্থ- কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে নবীর সুন্নত দুই রাকাত চাশতের নামাজের নিয়ত করেছি আল্লাহ হু আকবার।
চারশতের নামাজের দোয়া
সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইলাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহুল আলিউল আজিম।
এই দোয়াটি পড়ার মধ্য দিয়ে আসমান এবং জমিনের সমস্ত মানব এবং দানবের অত্যাচার অবিচার হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং দুনিয়াবী শব্দটি ইচ্ছা পূর্ণ হয়।
চাশতের নামাজের ফজিলত
কোরআন এবং হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় নামাজের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে নিজে কিছু হাদিস বর্ণনা করা হল-
ইমাম তীব্র রানি নিজ গ্রন্থ হতে জানায় যে, জানা যায় যে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বলা হয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিশ্চয়ই জান্নাতে দোহানো একটি গেট রয়েছে আর এ গেট সম্পর্কে রোজ হাশরে মহান আল্লাহ বলবেন যারা সর্ব সব সময় দোহার নামাজ পড়েছেন আল্লাহর অনুগ্রহে তারা এই দরজায় প্রবেশ করবে।
হযরত আবু মুসারী রাদিয়াল্লাহু বর্ণিত হযরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন- যে ব্যক্তি চাশতের নামাজ এর ৪ রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বেহেস্তে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহুকে জানা গেছে যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাত আদায় করবে অতঃপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করতে থাকবে এবং সূর্যোদয়ের পথ দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে সে ব্যক্তি পূর্ণ হজের সওয়াব পাবে।
হযরত আবু গিফারি হতে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন- আবুজার তুমি যদি চাশতের নামাজ এর ২ রাকাআত নামাজ আদায় করো তখন তোমার নাম গাফি্লিনের মধ্যে লেখা হবে না। আর যদি ৪ রাকাত নামাজ আদায় করো তাহলে তোমার নাম মুত্তাকিদের মধ্যে লেখা হবে। আর যখন ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা হবে তাহলে ওই দিন তোমার থেকে কোন প্রকার গুনাহ প্রকাশ পাবে না। আর যদি ৮ রাকাত নামাজ আদায় করো তাহলে তোমার নাম প্রতিদিন লেখা হবে। আর যদি দশ রাকাত বা ১২ রাকাত নামাজ আদায় করো তাহলে মহান আল্লাহ তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন।
চাশতের নামাজের কুসংস্কার
চাশতের নামাজ নিয়ে অনেক কুসংস্কার পরিচালিত আছে এই সমাজে। এই নামাজের সূরা শামসুল জুহা পড়া হাদিসটি মিথ্যা। তাছাড়া যার সাথে নামাজ পড়লে বুজুহা নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার হাদিসটিও সহিহ নয়।
চাশতের নামাজ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
চাশতের নামাজ মূলত কয় রাকাত?
উত্তর- নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। তবে চাইলে আর ও রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারবেন।
এই নামাজ কখন পড়া হয়?
উত্তর- সূর্যের তাপ যখন পর হয়ে যাবে তখনচাশতের নামাজ পড়া হয় অর্থাৎ সূর্য উদয় এবং জোহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে
চাশতের নামাজ প্রতিদিন পড়া কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর- না এই নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন এই নামাজ পড়ে তাহলে সওয়াব লাভ করতে পারবেন।
চাশতের নামাজের জন্য কি কোন সূরা পাঠ করা বাধ্যতামূলক?
উত্তর- না চাচাশতের নামাজ এর জন্য কোন নির্দিষ্ট কোন সূরা পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয়।
চাশতের নামাজ কেন পড়া হয়?
উত্তর- হাদিসে বলা হয়েছে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে নফলের মধ্য দিয়ে। তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত ফরজ সালাতের পাশাপাশি নফল আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করা। নফল আমল গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চাশতের নামাজ।
মন্তব্য
আজকে আমরা চাশতের নামাজের সময় নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, দোয়া ও নিয়ত
- ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
- একাকি তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম