শাহবাগে ঘোরার জায়গা

শাহবাগে ঘোরার জায়গা ও জনপ্রিয় খাবার

শাহবাগে ঘোরার জায়গা

ঢাকার অন্যতম একটি স্থান হল শাহবাগ যা প্রায় ঢাকার মাঝখানে অবস্থিত। ঢাকায় ঘুরার জায়গা খুবই কম কিন্তু ঢাকায় যে কয়টি বিনোদন কেন্দ্র বা ঘোরার জায়গা আছে শাহবাগে তার বেশ কয়েকটি অবস্থিত। হাতে একদিন সময় থাকলে প্রায় সবকটি জায়গায় ঘুরে আসা যায়।

ঢাকার প্রায় অধিকাংশ বাসিন্দাই শাহবাগে পরিবার নিয়ে এসে নিজেদের অবসর সময় কাটান। আজকে আমরা শাহবাগে ঘোরার জায়গা ও জনপ্রিয় খাবার নিয়ে আলোচনা করবো।

শাহবাগ এর অবস্থান

শাহবাগ ঢাকার একটি কেন্দ্রবর্তী এলাকা । শাহবাগে পুলিশের একটি সদর দপ্তর থানা রয়েছে ।শাহবাগ ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। মূলত শাহবাগ মোড় বলতে এলিফ্যান্ট রোড ও মাওলানা ভাসানী এভিনিউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের চৌরাস্তা বোঝায়। শাহবাগ  নামক হোটেল থেকে এই জায়গার নামকরন করা হয়।

শাহবাগে অনেকগুলো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ।এখানে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হয়। যেমন- নববর্ষ ও বসন্ত উৎসব বই মেলা।

শাহবাগে ঘোরার জায়গার নাম

শাহবাগে ঘোরার অনেকগুলো জায়গা রয়েছে । এর সবকটি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।দেশী দর্শকের পাশাপাশি অনেক বিদেশি পরিদর্শকও শাহবাগের বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রতিদিন ভ্রমণ করতে আসেন।

নিচে আমরা শাহবাগে ঘোরার জায়গা গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি স্থাপনা নিয়ে আলোচনা করবো।

টিএসসির মোড়- পূর্বের টিএসসির মোড় এত বিখ্যাত না হলেও বর্তমানে টিএসসির মোড়ে অনেক মানুষ আড্ডা ও ঘোরাফেরার জন্য আসেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের স্রিট ফুড পাওয়া যায় এবং ছোট ছোট বাচ্চারা ফুলের মালাও বিক্রি করে থাকে এখানে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য অনেক জায়গাও তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-ঢাকার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অবস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগত সব মানুষের প্রবেশ অধিকার রয়েছে বলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ সে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখতে আসেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অনেক বড় থাকায় ওখানে বসে আড্ডা গান পিকনিক করা যায়।

জাতীয় গ্রন্থাগার-বাংলাদেশের শাহবাগে রয়েছে দেশের একমাত্র বড় গ্রন্থাগার যাকে জাতীয় গ্রন্থাকার নামে নামকরণ করা হয়। দেশের আর কোথাও এত বড় গ্রন্থাগার নেই।প্রায় প্রতিদিন অনেক ছাত্র-ছাত্রী এবং বই পড়ুয়া মানুষ এখানে বই পড়তে আসে ।এ গ্রন্থাগারও রয়েছে অনেক বড় একটি উদ্যয়ান। ভ্রমণের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার অনন্যস্থান। গ্রন্থাগারের সদস্য হলে বিভিন্ন ধরনের বই বাসায় এনে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়াযায়।

জাতীয় জাদুঘর- জাতীয় জাদুঘর ঢাকা শাহবাগের অবস্থিত। শাহবাগে ঘোরার জায়গা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এটি শাহবাগ মোড়ের পাশেই নির্মিত হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অনেক জিনিস সংরক্ষিত করা আছে যা শিশুদের জন্য বিনোদনে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।জাতীয় জাদুঘরের যে কেউ পরিদর্শন করতে পারে।

জাতীয় জাদুঘরে পরিদর্শনের জন্য প্রতিটি টিকেটের মূল্য ২০ টাকা বাচ্চাদের শিশুদের টিকেটের জন্য দশ টাকা। বিদেশি পরিদর্শকের জন্য ৫০০ টাকা ।খোলা থাকার সময় হচ্ছে শুক্রবার ব্যতীত অন্যান্য সরকারি ছুটির  দিন ছাড়া খোলা থাকে।

কাজী নজরুল ইসলামের কবর-কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা ২ বাংলার অন্যতম একজন বিখ্যাত কবি। এ কাজী নজরুল ইসলামের কবর ঢাকা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রাঙ্গণে অবস্থিত যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থইত। ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা কাজী নজরুল ইসলামের কবর দেখার জন্য শাহবাগ চলে আসতে পারেন।

রমনা পার্ক- বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগের পাশেই রমনা পার্ক অবস্থিত। ঢাকায় অনেকগুলো জায়গার মধ্যে রমনা পার্ক অনেক প্রসিদ্ধ। রমনা পার্ক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উদ্যান। অনেক খোলামেলা জায়গা এবং সবুজ পরিবেশ থাকার জন্য এখানে ঘোরাফেরা খুবই আনন্দদায়ক হয় এই রমনা পার্কে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয় বসন্ত উৎসব ,পহেলা বৈশাখ সহ বিভিন্ন ধরনের নাচ-গানের উৎসব পালিত হয়।

শিশু পার্ক- শিশুদের জন্য একমাত্র শিশু পার্ক হলো শাহবাগের শিশু পার্ক। যা পূর্বে শহীদ জিয়া শিশু পার্ক নামে পরিচিত। বর্তমানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে ।আশা করছি শিশুদের জন্য আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে ।শিশু পার্কের প্রতি টিকিটের মূল্য ১৫ টাকা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না। শিশু পার্কে প্রতিটি রাইডের মূল্য ১০ টাকা। এই শিশুপার্কে প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান- রমনা পার্কের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগের অন্যতম একটি জায়গা । জেখাণে শিখা চিরন্তন রয়েছে যা মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জ্বালিয়েছিলেন। এখানে রয়েছে বদ্ধভূমি যেখানে ১২ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা করা হয়েছিল । প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এই  উদ্যানে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ।দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকেরা এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলা অডিটরিয়াম- ঢাকার শাহবাগে এই বাংলা অডিটোরিয়াম অবস্থিত । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশে বাংলা অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে ।বাংলা অডিটরিয়াম শাহবাগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অপজিটে অবস্থিত। 16 ডিসেম্বরের, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা করা হয়।

পহেলা বৈশাখ উৎসব-প্রতিবছর শাহবাগে পহেলা বৈশাখ উৎসব পালিত হয় ।পহেলা বৈশাখের সময় শাহবাগের রমনা পার্কের বটতলায় অনেক বড় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে ।হাজার হাজার মানুষ তা উপভোগ করে ।পহেলা বৈশাখে নাচ গান সহ বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়।

বইমেলা- দেশের বিভিন্ন স্থানে বইমেলা পালিত হলেও ঢাকার শাহবাগের সবচেয়ে বড় বইমেলা উদযাপিত হয় ।যেখানে বইমেলা বিভিন্ন ধরনের স্টল থাকে ।দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিখ্যাত সব বইয়ের স্টল গুলো এখানে থাকে। বইমেলায় পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধরনের নাট্য মঞ্চ অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাগের জনপ্রিয় খাবার

শাহবাগ বিভিন্ন ধরনের ঘোরার জায়গার জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে অনেক ধরনের মজার মজারই স্ট্রীট ফুড পাওয়া যায়। যা ঢাকা শাহবাগ সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়।  রাস্তার পাশেই এই মুখরোচক খাবারের দাম খুব কম হয়ে থাকে বিধায় সব ধরনের মানুষ খেতে পারে।

বটতলার খিচুড়ি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার নিচে ক্যাম্পাসে বটতলার নিচে বিখ্যাত জনপ্রিয় খিচুড়ি পাওয়া যায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই খিচুড়ি খাওয়ার জন্য প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় করেন। খিচুড়ির সাথে মুরগির মাংস দেওয়া হয়ে থাকে।

সিঙ্গারা চপ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরিয়ার থাক সাহাবাকে বিভিন্ন ধরনের মজার চপ পাওয়া যায় ।আলুর চপ , বেগুনের চপ, চিকেন চপ চিংড়ির চপ সহ বিভিন্ন ধরনের চপ পাওয়া যায়। যার প্রতিটির মূল্য ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পানিপুরি ফুচকা-শাহবাগ মোড় প্রধানত বিখ্যাত এ পানিপুরি বা ছোট ফুচকার জন্য। পানিপুরি এবং ফুচকা বেশিরভাগ মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। ফুচকার প্লেট ২০ টাকা থেকে শুরু করে বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন ফ্লেভারে ফুচকা হয়ে থাকে মিষ্টি , টক , ঝাল।

  • ঝালমুড়ি
  • বিভিন্ন ধরনের ফলের ভর্তা
  • আইসক্রিম

সতর্কতা-  শাহবাগ এলাকা অনেক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে বলে এখানে চুরি ছিনতাই অহরহ হয়ে থাকে । সেজন্যই যারা এই শাহবাগে ভ্রমণ করতে যাবেন তারা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন । নিজের ব্যাগ ফোন ,মোবাইল , মানিব্যাগ সহ সেফ থাকবেন। প্রয়োজনে শাহবাগ মোড়ে শাহবাগ থানা অবস্থিত পুলিশের সাহায্য নেবেন।

শাহবাগ কিভাবে যাবেন

শাহবাগ ঢাকা শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ায় যেকোন যায়গা থেকে খুব সহজেই বাসে চলে আসা যায়। এছাড়াও সিএনজি বা উবারের মত প্রাইভেট যানবাহনে করেও খুব সহজে শাহবাগ মোড় বা বাসস্ট্যান্ড এ চলে আসতে পারেন।

উপরে আমরা যে কয়টি শাহবাগে ঘোরার জায়গা নিয়ে আলোচনা করেছি তার প্রায় প্রত্যেকটি শাহবাগ মোড় থেকে পায়ে হাটা দূরত্বে অথবা রিক্সায় করে যাওয়ার মত দূরত্বে অবস্থিত।

শাহবাগে ঘোরার জায়গা

মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদের সাথে শাহবাগে ঘোরার জায়গা ও এর জনপ্রিয় খাবার ও খরচ সম্পর্কে আর্টিকেল আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি ।আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে ।

আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন । আমরাও আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply