ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? আপনার মনে যদি এইরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তাহলে আজকের ব্লগটি আপনার জন্য।
অনলাইন থেকে অনেক ভাবে ইনকাম করা যায় এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ২০২২ সালে এসে ফ্রীলান্সিং শব্দটি এখন আর কারো অজানা নয়। যেহেতু আপনি আমাদের ব্লক পড়ছেন তার মানে আপনি অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে ইতোমধ্যেই কিছুটা জানেন। এই ব্লগে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কি, কোথা থেকে শিখবেন এবং কিভাবে কাজ শুরু করবেন প্রত্যেকটি পয়েন্ট খুব ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো ।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং অর্থ মুক্ত পেশা। অর্থাৎ আপনি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অধীনে কাজ না করে নিজের মত কাজ করাকেই মূলত ফ্রিল্যান্সিং। যদিও ফ্রিল্যান্সিং অনেক বড় একটি সেক্টর কিন্তু বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমরা ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করা বুঝি অর্থাৎ আপনি আপনার কাজের দক্ষতা ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন আর এটাই হচ্ছে ফ্রীলান্সিং।ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে আরও গভীরে জানার আগে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাধারন সংজ্ঞা টা ভালোভাবে বুঝতে হবে। আর এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গেছেন ফ্রিল্যান্সিং বলতে কী বোঝায়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে ব্যক্তি দক্ষতা বিক্রি করে থাকে সাধারণত ফ্রিল্যান্সার বলে আর যার কাছে বিক্রি করা হয় তাকে বলা হয় বায়ার বা ক্লায়েন্ট। অর্থাৎ একজন সেলার তার দক্ষতা বিক্রি করবে বায়ারের কাছে। তাহলে আমরা এখন জেনে গেছি বায়ার এবং সেলার কি। সেলার হচ্ছে যে দক্ষতা বিক্রি করবে আর বায়ার হচ্ছে যে তার দক্ষতা কিনবেন। এখন কথা হচ্ছে একজন বায়ার কিভাবে সেলারকে খুঁজে পাবে? বায়ার এবং সেলার উভযইয়ের যেখানে মিলন ঘটে সেটাই হচ্ছে মার্কেটপ্লেস। অর্থাৎ মার্কেটপ্লেসে বায়ার সেলারকে খুঁজে পায় এবং তার কাছ থেকে তার দক্ষতা টা কিনে নেয়। তারমানে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে তিনটা ব্যাপারে খুব ভাল আইডিয়া থাকবেঃ
১। বায়ার।
২। সেলার।
৩। মার্কেটপ্লেস।
মার্কেটপ্লেসঃ
যেমনটা উপরে বলা হয়েছে বায়ার এবং সেলারের মিলন ঘটে মার্কেটপ্লেসে তাহলে এখন আমাদের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে অনলাইনে কাজ করার জন্য অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মার্কেটপ্লেসের নাম নিচে দেয়া হলোঃ
১। আপওয়ার্ক
২। ফাইবার
৩। ফ্রিল্যান্সার
৪। পিপল পার আওয়ার
৫। গুরু ডট কম
৬। ৯৯ ডিজাইন
৫। টপটাল
ডিল্যান্সার নামের একটি বাংলাদেশী মার্কেটপ্লেস সম্প্রতিক সময়ে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি প্রয়োজন?
যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি ফ্রিল্যান্সিং কি এখন আমাদের জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আমাদের কি কি প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং শুরুর পূর্বে অবশ্যই আপনার একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রয়োজন হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোবাইল দিয়েও ইনকাম করা যায় কিন্তু পরিপুর্নভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে অবশ্যই ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর প্রয়োজন পড়বে। শুরুর দিকে মোটামুটি মানের একটি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার হলে আপনি খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারবেন। এরপর আপনার প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট কানেকশন। হতে পারে সেটা ওয়াইফাই কিংবা মোবাইল ডেটা।
এই পর্যায়ে এসে আপনার মানসিক প্রস্তুতি এবং কম্পিউটার ম্যানেজ হয়ে গেছে এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন বিষয় দক্ষতা অর্জন করতে চান। দক্ষতা অর্জন এর পর আপনাকে যেকোন একটি মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলতে হবে এবং এরমধ্য দিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের জন্য প্রস্তুত।
কি কি কাজ করা যায়?
যদিও আপনি অনেক যদিও আপনি অনেক টপিকের ওপর এই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন কিন্তু বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমরা সাধারণত চারটা সেক্টরকে বুঝি
১। ওয়েব ডিজাইন
২। গ্রাফিক ডিজাইন
৩। ডিজিটাল মার্কেটিং
৪। ভিডিও এডিটিং
এই চারটি প্রধান সেক্টরের আবার বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সাবজেক্ট রয়েছে। শুরুর দিকে আপনি পুরো বড় সেক্টরের ফোকাস না করে যেকোনো একটি ছোট টপিক নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি ঠিক করলেন ওয়েব ডিজাইন নিয়ে কাজ করবেন কিন্তু ওয়েব ডিজাইন অনেক বড় একটি সেক্টর তাই আপনি যেটা করতে পারেন পুরো ওয়েবডিজাইন সেক্টর টাতে ফোকাস না করে ওয়েব ডিজাইনের ছোট্ট একটা পার্ট যেমন এইচটিএমএল, সিএসএস বাগ ফিক্স এর মত কাজগুলো দিইয়ে শুরু করতে পারেন। সময়ের সাথে সাথে নিজের স্কিল ডেভেলপ করবেন আর কাজের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আপনি শুরুর দিকে ছোট একটি টপিক নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন এবং সময়ের সাথে সাথে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
আপনি সরাসরি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন। সত্যি বলতে বাংলাদেশের বেশি ট্রেনিং সেন্টার ি মার্কেটপ্লেসে কাজ করার মতো করে যথেষ্ট পরিমাণ শেখাইয় না।সেক্ষেত্রে আপনার টাকা, সময় বিফলে যাবে। তবে কিছু কিছু ট্রেনিং সেন্টার আছে যারা সত্যিকার অর্থেই আপনাকে শেখাবে। তবে ভালো মানের ট্রেনিং সেন্টার খুঁজে পেতে একটু কষ্ট করতে হবে।
ভালো ট্রনিং সেন্টার খুজে পেতে সমস্যা হলে আপনি অনলাইন থেকে শিখতে পারেন। বর্তমানে অনলাইন থেকে শেখার সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব।অর্থাৎ আপনি সম্পূর্ণ ফ্রি তে যে কোন একটা টপিকের উপর নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন। এছাড়াও বর্তমানে বাংলা ভাষায় অনেক ভালো মানের কোর্স কিনতে পাওয়া যায়। আপনি যে কোন একটা কোর্স টাকা দিয়ে কিনে খুব সহজেই যেকোন একটা নির্দিষ্ট টপিক এর উপরে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। শুধু একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট কোর্স করে আপনি সব শিখে যাবেন এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনি যে কোন একটা কোর্স করার পরেও আপনাকে নিয়মিত নতুন নতুন টপিক শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
নিচে বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন করার জন্য ভালো মানের কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের নাম এবং লিংক দেয়া হচ্ছে আপনারা চাইলে সেখানে ঘুরে আসতে পারেন এবং আপনার টপিক এবং আপনি যে টফির কাজ করতে চান তার ওপর কোনো ভালো করে খুঁজে পেলে কিনে শেখা শুরু করতে পারেন
১। ইউটিউব
২। ইন্সট্রাকটরি
৩। লার্ন উইথ হাসিন হায়দার
৪। ঘুড়ি স্লার্নিং
কিভাবে কাজ শুরু করবেন?
এই পর্যায়ে এসে আমি ধরে নিচ্ছি আপনার যেকোন একটা টপিকের উপরে দক্ষতা অর্জন করা হয়ে গেছে। হতে পারে সেটা ডিজাইন গ্রাফিক্স কিংবা ডিজিটাল মার্কেটিং। এখন সময় এসেছে আপনার দক্ষতা বিক্রি করেন অনলাইনে কাজ শুরু করার আর এর জন্য প্রথমেই আপনাকে মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলতে হবে। যেমনটা আমরা বলেছিলাম মার্কেটপ্লেস হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে একজন ফায়ার ছেলের কে খুজে পাব।
কিছু সতর্কতাঃ
ধোকাবাজ হতে সাবধানঃ যেমনটা আমরা বলেছিলাম বর্তমানে আপনি চাইলে যেকোন ট্রেনিং সেন্টার থেকে কাজ শিখতে পারেন আবার একসাথে অনলাইন কাজ শিখতে পারেন। কাজ শেখার আগে আপনাকে অবশ্যই কনফার্ম হতে হবে যার কাছে যেখান থেকে আপনি শিখতে চাইছেন সে নিজে কতটা বিশ্বাসযোগ্যীবং দক্ষ।অনলাইন বা অফলাইনে যেখানে ভর্তি হন না কেন আপনাকে আগে খবর নিতে হবে ভালোভাবে যে এই কোর্সটা করে আসলে আপনি কতটুকু শিখতে পারবেন আর সত্যিকার অর্থেই তারা আপনাকে ভালোভাবে শেখাবে কিনা এবং শেখার পর আপনার যেকোন সমস্যায় সাপোর্ট দিবে কি না।
মার্কেটপ্লেস এ একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ আমরা সাধারণত কোন কিছু না বুঝেই সামান্য কাজ শিখে মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলি। পরবর্তীতে দেখা যায় আমাদের একাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যায় বা রিমুভ হয়ে যায়। বিশ্বমানের মার্কেটপ্লেসগুলোতে একবার একাউন্ট রিমুভ হয়ে গেলে বা সাসপেন্ড হয়ে গেলে পরবর্তীতে একাউন্ট খোলার খুবই কষ্টসাধ্য। এজন্য আমি রিকোয়েস্ট করব পরিপূর্ণভাবে কাজ শিখে তারপর একাউন্ট করবেন।