ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
হ্যালো বন্ধুরা। পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সারাবিশ্বে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি খেয়াল করেন আপনার দাদা কিংবা নানাদের আমলে প্রত্যেকের ৮/ ১০ জন করে সন্তান ছিল কিন্তু বর্তমানে বলা হয় দুটি সন্তানের বেশি নয় একটি হলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে সন্তান বেশি হলে তাদের ভালোভাবে লালন-পালন করা সম্ভব হবে না। তাদেরকে উন্নত জীবনযাপন করানো যাবে না। আজকে আমরা দেখবো ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জায়েজ কিনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইসলাম।
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি জায়েজ কি না
ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জায়েজ তবে সে ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে নিচে আমরা শর্ত গুলো নিয়ে আলোচনা করব। আপনি যদি এই জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেন যে এখন সন্তান হলে তাকে কি খাওয়াবেন তাহলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ হারাম। অর্থাৎ রিজিকের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ” রিজিকের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। কেননা আমি তোমাদের এবং তোমাদের সন্তানদের রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকে ” সন্তান না নেয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় তার রিজিকের চিন্তা তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ হারাম।
তবে কিছু কিছু শর্তে ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ এ ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে চলনে সে শর্ত গুলো জেনে নেয়া যাক।
- প্রথম শর্ত হচ্ছে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না। ইসলামী শুধুমাত্র অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জায়েজ। সেটা হতে পারে কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছরের জন্য কিন্তু স্থায়ী ভাবে কখনোই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না।
- এখন প্রশ্ন হচ্ছে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কখন ইসলাম। এক্ষেত্রে ইসলাম কিছু নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে শুধুমাত্র এই শর্তগুলো পূরণ করলে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যায়। শর্তগুলো হলো……
- পরপর দুটি বাচ্চার গ্রহণের মাঝখানের সময়ে গেট নেয়া যাতে বাচ্চা লালন পালনের সহজ হয় সে উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে বাচ্চা গ্রহণ না করা।
- বাচ্চা লালন পালনে অপারগ হলে
- শারীরিক কোনো সমস্যার কারণে ডাক্তারের সামরিকভাবে বাচ্চা গ্রহণ করতে নিষেধ করলে।
উপরের এই কয়েকটি শর্তের বাইরে যে কোন কারনে বাচ্চা গ্রহণ না করা, বাচ্চা নষ্ট করে ফেলা অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়।
আরো পড়ুন – পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি – জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও অস্থায়ী পদ্ধতি
অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
যেমনটা আমরা বলেছি ইসলামী শুধুমাত্র অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জায়েজ আছে বিশেষ কিছু শর্তে। এখন আমরা অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হচ্ছে এমন পদ্ধতিতে শারীরিক কোনো পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য বাচ্চা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। বাংলাদেশের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি চালু আছে। নিচে আমরা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
- বাইরে বীর্য স্থলন করা
- কনডম ব্যবহার করা
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা প্লিল খাওয়া
- নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জন্মবিরতি ইনজেকশন নেয়া
আমাদের দেশে এই কয়েকটি অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এছাড়াও বর্তমানে আরো অনেক পদ্ধতি বের হয়েছে।
নব দম্পতির জন্য জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি
নব দম্পতি রা এ বিয়ের পরপরই বাচ্চা নিতে চান না। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বর্তমানে অনেক রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল কিনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অস্থায়ী কর্মচারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে বিয়ের পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। যেহেতু শরীরে হরমনের কিছু পরিবর্তন ঘটায় তাই আপনার শরীরের জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে এবং কিভাবে সেবন করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন তা অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেমিকন, পিউলি, নরিক্স। প্রত্যেকটি পিলের ই কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। তাই আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন আপনার জন্য কোন পিল টি সবচেয়ে ভালো হবে।
আরো পড়ুন – জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি বিস্তারিত – ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি বাংলাদেশের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করা। কেননা এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। কিন্তু শুনে অবাক হবেন যে নির্দিষ্ট নিয়মে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণের দিক নারীর আপনার শরীরে মারাত্মক কিছু ক্ষতি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদিও বর্তমানে অনেক আধুনিক এবং উন্নত মানের বাজারে এসেছে নুযা শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করে না তেমন কোনো ক্ষতি করে না।
নিচে আমরা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি
- সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল টানা ২৮ দিন খেতে হয়। কোন কারণে আপনি যদি গ্যাপ দেন সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে শরীরে হরমোনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে অনেক লম্বা সময় ধরে প্রিয় গ্রহণের ফলে শরীরে স্থূলতা অর্থাৎ চলবে বাড়তে পারে।
- অনেক লম্বা সময় ধরে প্রেম গ্রহণের ফলে নারীর গর্ভে ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- উল্লেখ্য ৪১ বছরের পরে নারীদের এমনিতেই গর্ভধারণ ক্ষমতায় কিছুটা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারী অনেক আগে থেকে পিল গ্রহণ করেন তাদের গর্ভে ধারণ ক্ষমতা ৩৮ এর পরেই কমে যেতে পারে।
- তবে কেউ যদি শুরু থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এবং নিয়ম মেনে প্রেম রতন করে সে ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেবে না। তাই অবশ্যই গ্রহণের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কি জায়েজ
উপরে আমরা চেষ্টা করেছি ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কি জায়েজ – জন্মনিয়ন্ত্রন নিয়ে ইসলাম কি বলে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আশাকরি আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ গুলো পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমরা নিয়মিত লাইফস্টাইল ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন – বাচ্চা নেয়ার আগের প্রস্তুতি ও খাবারের তালিকা – গর্ভধারণের সঠিক নিয়ম